আপ্লুত উদয়শঙ্কর জাপটে ধরলেন তাকে

শঙ্কর সরণি - ৩২
আগের পর্বে

ভারত থেকে ফিরে গিয়ে আমেরিকায় একের পর এক অনুষ্ঠান। প্রত্যেকেই ক্লান্ত হয়ে পড়ছিলেন। সেইসঙ্গে ভিতরে ভিতরে তৈরি হচ্ছিল অসন্তোষ। অসন্তোষের আগুন থেকে একদিন উদয়শঙ্করের সঙ্গে দেবেন্দ্রশঙ্করের হাতাহাতিও হয়ে গেল। দেবেন্দ্রশঙ্করকে সমর্থন করে দাঁড়িয়েছিলেন আরেক ভাই রাজেন্দ্রশঙ্কর এবং তিমিরবরণ। সেই ব্যথা শরীরের থেকেও বেশি আঘাত করেছিল মনে। তিমিরবরণ তাঁর পরিকল্পনা মতো আমেরিকা সফরের পর দেশে ফিরতে চাইলেন। কিন্তু উদয় রাজি নন। অবশেষে অ্যালিস বোনারের মধ্যস্থতায় আরও কিছুদিন থেকে গেলেন তিমিরবরণ। অনুষ্ঠান হল ইংল্যান্ড এবং ফ্রান্সে। কিন্তু এরপর আর স্পেনে যেতে রাজি হলেন না তিমির। উদয় বোঝালেন, যোগ্য সরোদশিল্পী ছাড়া দল টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। তিমিরবরণ আশ্বাস দিলেন, তিনি দেশে ফিরে স্বয়ং উস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ সাহেবকে রাজি করাবেন দলে যোগ দেওয়ার জন্য। উদয় অবাক হলেন, কৃতজ্ঞতাও জানালেন। কিন্তু তিমিরবরণের অনুপস্থিতিতে ভেঙে গেল দল।

ভারতবর্ষ থেকে ১৯৩৩-এ দল নিয়ে দ্বিতীয়বার বিদেশ গেলেন উদয়শঙ্কর। দেড় বছরের মধ্যে ১৯৩৫-এই আবার ফিরলেন তিনি। একা ফিরলেন। ভেঙে গিয়েছে আগের দল, কিন্তু থেমে থাকলেন না উদয়শঙ্কর। মেতে উঠলেন নতুন করে দল গড়ার কাজে। কলকাতায় এলগিন রোডের কাছে, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর নিবাসের পাশেই, ভাড়া নেওয়া হল দুটো বাড়ি। একটা ঈষৎ বড়ো, অন্যটা একটু ছোটো। বড়ো বাড়িতে থাকতেন উদয়, মহড়া হত ওখানেই। ছোটো বাড়িতে থাকতেন বাকিরা। রাজেন্দ্র- দেবেন্দ্রও এলেন। রবিশঙ্কর তো আছেনই। তিমিরবরণের চলে যাওয়ার পর, দলের সংগীতের ভার সম্পূর্ণত গ্রহণ করেন বিষ্ণুদাস শিরালী। দেশে ফিরে ১৯৩৪-এর মাঝামাঝি তিমিরবরণ যোগ দিয়েছেন নিউ থিয়েটার্সে। উদয় তাঁকে স্মরণ করিয়ে দিলেন তাঁর প্রতিশ্রুতি। সুরের আচার্য আলাউদ্দিন খাঁ সাহেবকে দলে যুক্ত করার কঠিন দায়িত্বটিতে উদ্যোগী হবেন তিমিরবরণ। প্রবল উত্তেজনা নিয়ে প্রতীক্ষায় রইলেন উদয়শঙ্কর।

এই সময়ই উদয়শঙ্কর আর হরেন ঘোষের উদ্যোগে প্রকাশ্যে এলেন ভরতনাট্যমের বিশ্রুত প্রতিভা বালা সরস্বতী। বালা তখন নিতান্ত তরুণী। সে সময় সেনেট হাউসে একটি অনুষ্ঠানে নৃত্য পরিবেশন করলেন বালা। রবিশঙ্কর এখন রীতিমতো নৃত্য পারঙ্গম।  তিনি শিখছেন কত্থক। নৃত্যশিল্পীর প্রয়োজনে ধীরে-ধীরে তালিম দিয়ে, গড়ে নেওয়া হয়েছে এমনকি তিমিরবরণের ভাই শিশিরশোভনকেও। রইলেন নগেন দে, যিনি যোগ দিয়েছিলেন গতবার। এশিয়া ট্যুরের আগে চলল এইসব রদ-বদল। এই সময়ই দলে নতুন যুক্ত হলেন অভিজাত, নবাবি পরিবারের দুই কন্যা। রামপুর নবাবের উত্তরাধিকার এঁরা, জোহরা এবং উজরা বেগম। অসামান্য সুন্দরী এই সহোদরাদ্বয়। সহজ, সদাচঞ্চল। তেমনই নানা গুণের অধিকারী। জোহরা বেগম অধিক পরিচিত জোহরা সেহগাল নামে। ১৯৪২-এ তিনি বিবাহ করবেন কামেশ্বর সেহগলকে। ধীরে-ধীরে হয়ে উঠবেন এক অনন্য ধারার অভিনেত্রী। এই প্রজন্মের কাছে অবশ্য তিনি বেশি পরিচিত ‘চিনি কম’ ছবির অমিতাভ বচ্চনের মায়ের চরিত্রাভিনেতা হিসেবে।

দুই ভিন্ন বয়সে বালা সরস্বতী

 

উদয়শঙ্করের অনুরোধে  কলকাতায় তাঁর এই বাসাবাড়িতে কিছুদিনের জন্য এলেন গুরু শঙ্করণ নাম্বুদ্রি। এলেন সপুত্র।  উদয়ের জন্য তাঁর দ্বার থাকবে সদা অবারিত, তিনি বিস্মৃত হননি সেই আশিস। স্বয়ং বরোদার রাজা তাঁর পৃষ্ঠপোষক। মহারাজার দরবারের সম্মানিত কলাকার তিনি, তবু গ্রহণ করলেন উদয়ের আমন্ত্রণ। কেরালার নিষ্ঠাবান ব্রাহ্মণ নাম্বুদ্রি শুধুমাত্র নৃত্যশিল্পীই নন, ছিলেন সবিশেষ পণ্ডিতও। বেদ, পুরাণ, শাস্ত্র ছিল তাঁর নখদর্পণে। তাঁর পাঠকসত্তার প্রভাবটি অব্যর্থ প্রকাশ পেত নৃত্যনৈপুণ্যে। নৃত্য-অন্দরের যে সূক্ষ্ম লীলাকলা, সুগভীর ব্যঞ্জনায় তা উঠে আসত তাঁর অভিনয়ে। ঐতিহ্যকে আঁকড়ে ছিলেন জীবনেরই মতো, অবিচ্ছেদ্য করে। গুরু নাম্বুদ্রির কাছে শুরু হল উদয়ের পুরাণ পাঠ আর নৃত্যশিক্ষা। লক্ষণীয়, উদয়ের জীবনের এই অধ্যায়টি। পৃথিবীর স্বীকৃতি নিয়ে ফিরেছেন তিনি, অথচ এখনও অসম্পূর্ণ তাঁর শিক্ষা, বোঝা যায় রবীন্দ্রনাথের এই কথাকে কতখানি গুরুত্ব দিয়ে, সশ্রদ্ধচিত্তে গ্রহণ করেছিলেন উদয়শঙ্কর। শুধু হৃদয়ে গ্রহণ করেছিলেন, তাই নয়, তাঁকে করেছিলেন বাস্তবায়িত। বরোদায় গুরু নাম্বুদ্রিকে দেখেই উদয় গ্রহণ করতে চেয়েছিলেন তাঁর শিষ্যত্ব, একথা ঠিক। তবে ১৯৩১ আর ১৯৩৫-এর মধ্যে তাঁর জীবনে এসেছে বিস্তর পরিবর্তন। উত্তরোত্তর খ্যাতি পেয়েছেন তিনি, ভেঙে গেছে দল। যে কোনো কারণে চাইলেই বিরত থাকতে পারতেন তিনি, কিন্তু তেমনটা ছিল না তাঁর অভিপ্রায়। ওই বিপুল খ্যাতির মায়াটিকে বিলক্ষণ সরিয়ে রেখে তিনি গ্রহণ করলেন নাম্বুদ্রির শিষ্যত্ব।

আরও পড়ুন
দল ভেঙে দিলেন উদয়শঙ্কর

দুই ভিন্ন বয়সে জোহরা সেহগাল

 

গুরু নাম্বুদ্রির সান্নিধ্যেই  উদয় গড়ে তুললেন তাঁর নৃত্য, ‘কার্ত্তিকেয়’। পুরাণে কার্ত্তিকেয় জন্মপ্রসঙ্গে রয়েছে বহুবিধ ভাষ্য। তার মধ্যে মূলত গৃহীত হয় ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ। তখন পার্বতীর সঙ্গে বিহাররত শিব, তাঁর তেজ ভূপতিত হয় পৃথিবীতে। কিন্তু সেই বীর্যধারণে অসম্মত পৃথিবী, তা ছুড়ে দেন অগ্নিতে। ভীতগ্রস্ত অগ্নি তা নিক্ষেপ করেন শরবনে। শরের সেই অরণ্যে তা থেকে আকার নেয় একটি অসামান্য বালকের। সেই বালককে ওই বনে দেখতে পেলেন কৃত্তিকারা। স্তন্য দিয়ে করলেন লালন। কালেভদ্রে দেবতাদের কাছে সে কথা অবগত হয়ে, তাঁকে আনয়ন করলেন পার্বতী। কৃত্তিকাগণ কর্তৃক পালিত বলে তাঁর নামকরণ করা হল কার্ত্তিকেয়। দানবের সঙ্গে যুদ্ধে এই দেবসেনাপতি কার্ত্তিকেয়ই রক্ষা করেন দেবকুলকে। এই নৃত্যই একদিন সম্পূর্ণত পেশ করলেন গুরু নাম্বুদ্রি। ঘন্টাখানেকেরও বেশি সময় ধরে। কথাকলি নৃত্যে শিল্পীর প্রসাধনে থাকে শিল্পিত অতিকায় এক রঙের প্রয়োগ। চরিত্র বিশেষে বদলে যায়, মুখ্য বর্ণের ব্যবহার। সঙ্গে থাকে বিপুলাকৃতি বেশসম্ভার। সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম মুখাবয়বের ব্যবহার এবং মুখাবয়বের পেশি-সঞ্চালন। নৃত্যের বিশেষত্ব তাঁর নাটকীয়তায়। আর সুবিস্তৃত এক আখ্যানের অভিনয়ে।

আরও পড়ুন
উদয়শঙ্করের নাচ, ঢিলে কাঁচুলিতে ষোড়শী, বললেন ক্ষুব্ধ রবীন্দ্রনাথ

গুরু নাম্বুদ্রির কাছে কথাকলি শিখেছিলেন রবিশঙ্করও। গুরু সম্পর্কে বলেছিলেন রবিশঙ্কর, ‘one of the greatest। অনেক নাম মনে পড়ে কিন্তু গুরু-- he was something different—যে ওরকম acting করতে পারে। ওরকম যে express করতে পারে without language খালি মুদ্রা দিয়ে, আমি আর দেখিনি।... চব্বিশ ঘন্টা মন্ত্র আউড়াচ্ছেন, অথচ যেই stage-এ নামলেন, একেবারে অন্য মানুষ, সে মেয়ের পার্ট করছেন তো চোখের সামনে দেখবে তিনি মেয়ে হয়ে গেছেন। আর কী ইরোটিক plays সব— রাবণ-রম্ভার একটা scene করেছিলেন। The rape of Rambha, উনি রাবণ করেছিলেন। এক ঘন্টা ধরে নাচ দেখাতেন। আমি আশ্চর্য হয়ে যেতাম। কী করে উনি পারেন এসব করতে। যখন মেয়েদের ভাবনাগুলো দেখান exactly মেয়ে তখন। তারপর দেখাতেন এক চোখ দিয়ে জল পড়ছে, আর এক চোখে হাসি। He could really bring tears in one eye। এটা একটা আশ্চর্য ব্যাপার।’

সামনের সারিতে উদয়শঙ্কর, গুরু শঙ্করণ নাম্বুদ্রি এবং বাবা আলাউদ্দিন খান

 

আরও পড়ুন
অহঙ্কারের ইনজেকশন চলেচে, বললেন রবীন্দ্রনাথ

গুরুর সেই নৃত্যে মুগ্ধ হয়ে কথাকলি ভঙ্গির ওপর ভিত্তি করে পাঁচ থেকে সাত মিনিটের সময়সীমায় উদয়শঙ্কর নির্মাণ করলেন ‘কার্ত্তিকেয়’। উদয়শঙ্করের সৃষ্টিতে অবিসংবাদী জনপ্রিয়তা লাভ করল সেই নৃত্য। উদয়শঙ্করের আরো কিছু কিছু নাচের রয়েছে কিছু বিশেষ নির্মাণ-প্রেক্ষিত। একবার দল নিয়ে গিয়েছিলেন শিলচর। সেদিন অনুষ্ঠান নেই। রাতের বেলা পাহাড় ঘেরা পথে হাওয়া বইছে মিঠে। গাড়ি চলেছে। উদয় চলেছেন এক সরকারি নিমন্ত্রণ রক্ষার কাজে। সেদিন পূর্ণিমা। রুপোলি আলো ইলশে গুঁড়ি হয়ে ঝরছে পথে। হঠাৎ দেখলেন পথের মাঝে তিরতির করে বয়ে চলেছে, ঝরনার জল। ওদিকে যাবে না গাড়ি, ঘুরে যেতে হবে। কিন্তু উদয় নামতে চাইলেন সেইখানেই। একটু হাঁটতেই দেখলেন সামনে ধবধবে সাদা তাঁবু গাঁথা। কলাগাছের কাঁদি আর ফুলের মালা দিয়ে সাজানো চারদিক। সঙ্গে ছোট্ট ছোট্ট মাটির প্রদীপ। বাহারি পোষাকে সেজেছে সকলে। মার্জিত, লোকায়ত। স্থানীয় লোকজন মেতেছে নিজেদের উৎসব পালনে। ভরা নিকষ রাতের গায়ে রত্ন-মণির ঝলক তুলেছে মাটির দীপ। কয়েক ক্ষণ যেতে না যেতেই প্রকৃতির নিখাদ স্তব্ধতাকে সঙ্গী করে বেজে উঠল মাদল। যেন আকাশকে চমকে দিয়ে গগনবিহারী করে তুলল তার অনুরণনকে। মণিপুরী সাজে নাচ শুরু করলে মেয়েরা-ছেলেরা। কৃষ্ণলীলা চলছে তখন। অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখলেন উদয়শঙ্কর। আচমকা পথের মাঝে এ দৃশ্য যেন অসম্ভব, স্বর্গীয় মনে হল তাঁর।

এই রাতের অভিজ্ঞতায়, মূলত মণিপুরী নাচকে আশ্রয় করে, একটি নৃত্য নির্মাণ করলেন উদয়শঙ্কর। নাম দিলেন ‘নিরাশা’। এক জনপদ। নিজ জনপদভূমে আনন্দ-উচ্ছ্বাসে মেতে রয়েছে যুবক-যুবতী। রয়েছে মগ্ন কোলাহলে। সেইখানেই এসে পৌঁছয় এক আগন্তুক। অপ্রস্তুত, সংকুচিত। ওই জনপদের একজন হয়ে মিশে যাবার তাঁরও মনোগত অভীপ্সা। কিন্তু দ্বিধাদীর্ণ সে। দ্বিধাগ্রস্ত তার পদক্ষেপ। উল্টোদিকে তার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে স্থানীয় নরনারী। মেয়েদের মধ্যে ঔৎসুক্য। তাদের ভ্রু-রঙ্গে কৌতুক। তাদের কৌতূহল ঢেউ তোলে। কিন্তু নিরুত্তাপ ছেলের দল। তাদের নিষেধ টের পেয়ে সরে এল মেয়েরাও। তারপর চলে গেল সকলে। ব্যর্থ, ভগ্নমনোরথ আগন্তুক ফিরে গেল অনেকখানি নিরাশা নিয়ে। প্রবহমানের সঙ্গে দেখা হল নবীনের, অসম্পন্ন রইল অন্তরঙ্গ হতে চাওয়ার আকাঙ্ক্ষা। একটি সহজ ভাবনাকে আশ্চর্য মুদ্রায় নৃত্যে পরিবেশন করেছিলেন উদয়শঙ্কর।

আরও পড়ুন
আজ কোথায় যেন বেসুর বাজল সব

এবার দেশে এসে উদয় গেলেন নসরতপুর, তাঁর মামারবাড়ি। তাঁর মাতামহ অভয়চরণের জমিদারি এইখানেই।  তাঁর দুর্বাধ্য কৈশোরের অগণন স্মৃতিলগ্ন হয়ে আছে এই নসরতপুর। যে জনভূমিতে তাঁর অন্তরাত্মাকে প্রথম স্পর্শ করেছিল নাচের বোল, তাঁর জীবনে নৃত্যের আবির্ভাবের সেই মুহূর্ত, তিনি ফিরলেন সেই নসরতপুরে। গেলেন সেইখানে। উচ্চকুল, জমিদারের পক্ষে কী নিষিদ্ধ সেই স্থান। তাঁর মনে পড়ছে, সেইদিন। গ্রামের প্রান্তে অন্ত্যজরা মেতেছে উৎসবে। মশালের আলো আগুন হয়ে উড়ছে আকাশে। মাটির দাওয়ায় ভাসছে রোশনাই। মদ্যপানে বুঁদ, তবু নির্ভুল বোল উঠছে ঢোলে। স্ফূর্তির এমন উছল মেজাজ, কী অকল্পনীয়। চিৎকার-হুল্লোড়-তাল-লয়ের সেই গণ্ডিতে দেখা দিল এক যুবক। মাথাভর্তি ঝাঁকরা চুল, কুচকুচে সুঠাম, সৌম্যদর্শন। ভুবনের যত আনন্দ আর লয় অঙ্গে জুড়েছে সে। নেচে চলেছে মাতাদিন। ঝাঁকরা চুল হেলিয়ে পড়ছে তার মুখে। নাচ বুঝি দোলা দিয়েছে তার মর্মে। ওই ছন্দোবন্ধনে সেদিন বাঁধা পড়েছিল উদয়ের নিভৃত অন্তর। আজ তিনি খুঁজতে এসেছেন সেই মাতাদিনকে।

উদয়শঙ্কর নির্মিত ‘কল্পনা’ চলচ্চিত্রে রয়েছে একটি দৃশ্য। একটা গ্রাম। এক উৎসবমুখর রাত। গ্রামীণ মানুষ আনন্দে উল্লাসে মেতেছে উদ্দাম নৃত্যে। উদয়ন দেখে তাঁর স্ত্রী কামিনী, সেই সমস্ত কিছু থেকে নিজেকে সরিয়ে রেখেছে দূরে।  উদয়ন কাছে এসে স্ত্রীকে অনুরোধ করে, ওই নাচ দেখার জন্য। কী অপূর্ব সেই নাচ। বিরক্ত কামিনী বলে, এইসব গেঁয়ো নাচ পছন্দ নয় তার। উদয়ন উত্তর দেয়, ইয়ে হি গঁওয়ার তো হামারে দেশ কে প্রাণ হ্যায়।

নসরতপুরে উদয়কে দেখতে ভিড় জমেছে। অছুত পল্লীতে ধুম লেগেছে আজ। জমিদারবাবু তিনি, তায় বড়ো হইছেন হেই। নিজে যেচে এয়েছেন তাদের ভিটেয়। প্রান্তে থাকা মানুষগুলোর নজর-চাহনিতে লাজ-শরম। হই-হই করে তারা ডাকতে থাকে, লোকজনের তাড়ায়-তাড়ায় নিজের মাটির ঘর থেকে বেরিয়ে এল বিস্মিত, বেবাক প্রৌঢ় মাতাদিন। আপ্লুত উদয়শঙ্কর জাপটে ধরলেন তাকে, ওই চামার ‘গঁওয়ার’ মাতাদিনকে।

Powered by Froala Editor