উদয়কে ভুলে যাও, উদয়শঙ্করকে মনে রাখো

‘কল্পনা’র শুটিংয়ের সময় আনন্দশঙ্করকে ভর্তি করা হয়েছিল মাদ্রাজেরই একটা স্কুলে। শুটিং শেষ হলে উটকামন্ড, কোদাইকানাল, দার্জিলিংয়ে চলল বোর্ডিং স্কুলের খোঁজ। শেষে পছন্দ হল গোয়ালিয়রের সিন্ধিয়া স্কুল। ‘অস্তাচল’ নামে সেখানে ছিল একখানা ঘর। সূর্য যখন অস্ত যেত, ছেলেরা পাজামা-পাঞ্জাবি পরে মাটিতে বসে সেই ঘরে শুরু করত প্রার্থনা। পাশ্চাত্য- শিক্ষার সঙ্গেই প্রকৃতির সঙ্গে ওতপ্রোত হয়ে থাকা এই ভারতীয় জীবনবোধ ভালো লেগেছিল অমলা আর উদয়শঙ্করের। এইখানেই ভর্তি করা হল আনন্দশঙ্করকে। সন্তান প্রতিপালনের অসামান্য কিছু নজির রয়েছে ছোট্টো আনন্দশঙ্করকে লেখা অমলাশঙ্করের চিঠিতে। দূরে-থাকা পুত্রের বোধ-চিন্তনকে কী অপূর্ব ভঙ্গিতে গড়ে তুলছেন মা। ৩ অগস্ট ১৯৫৪-র একটি চিঠিতে, লক্ষ করব, চিঠির শুরুতেই তৈরি করছেন সন্তানের আত্মপ্রত্যয়। তারপর জরুরি খবরাখবর দেওয়ার সময় যাতে কিছু বাদ না পড়ে তার সমাধান কী হতে পারে সেই সম্পর্কে নির্দেশ। তারপর এলেন অত্যন্ত দরকারি এক প্রসঙ্গে। প্রথমে লিখলেন, ‘তোমাকে সবাই স্কুলে ভালোবাসেন ও তোমার প্রশংসা করেন জেনে আমাদের খুব আনন্দ হয় and we feel proud of you!’, ‘তুমি এই চিঠিখানি পেয়েই আমাদের জবাব দেবে আর তখন এই চিঠিখানি সামনে রেখে তবে চিঠি লিখো— তাহলে আমাদের সব enquiries-এর উত্তর দিতে পারবে।’ তারপর বললেন, ‘আমরা জানি তুমি খুব সুন্দর বাংলায় চিঠি লিখতে পারো।… তোমার ইংরাজী চিঠির ভুল দেখবে? 6 mistakes in three lines! So why not write in Bengali and do the same mistakes?’ সন্তানকে নিজের চলার পথের ভুলগুলি নিয়ে নির্ভীক হওয়ার পাঠের সূত্রেই মা গড়ে দিচ্ছেন মাতৃভাষার সঙ্গে তার সম্বন্ধ। তারিখহীন আরেকটা চিঠিতে লিখছেন, ‘জুলুমবাজদের কখনও ভয় কোরো না এবং নিজে কখনও জুলুম কোরো না। ওদের অগ্রাহ্য কোরো। আর যদি ওদের সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতিয়ে ফেলতে পার তাহলে তো চমৎকার!’ এ কথার ভেতর মায়ের নীতিকথা আছে। কিন্তু প্রায়োগিক ক্ষেত্রে জটিল পরিস্থিতিকে আয়ত্তে আনার থাকতে পারে বিকল্প পথও, রইল তারও হদিশ।

‘কল্পনা’ ছবিটি বাণিজ্যিক সাফল্য পায়নি, তা ঠিক। তবে তা সমাদৃত হয়েছিল সমালোচক মহলে। দেশ-বিদেশ থেকে সে ছবির প্রদর্শনের অনুরোধে এসেছিল আমন্ত্রণ। লেখিকা পার্ল বাক-এর একটি প্রতিষ্ঠান ছিল, ইস্ট-ওয়েস্ট অ্যাসোসিয়েশন। ১৯৪৮- এর শেষের দিকে আমেরিকা থেকে এসেছিল এই আমন্ত্রণ। তারপর রাশিয়ার বলশয় থিয়েটারে প্রদর্শিত হয় এই ছবি। ইউরোপ হয়ে আমেরিকারও বহু জায়গায় ভ্রমণ অব্যাহত থাকে এই চলচ্চিত্রের। নিউ ইয়র্কে প্রদর্শনের সময় উপস্থিত ছিলেন জন মার্টিন, ওয়াল্টার টেরি, রেনোয়া এবং ফ্ল্যাহার্টি। 

আনন্দশঙ্কর আর অমলাশঙ্কর

 

‘কল্পনা’ যখন ঈষৎ সাড়া ফেলেছে এদিক-ওদিক, সে সময়ের আছে একখান মজার ঘটনা। দিল্লি থেকে তার এল, come immediately with Kalpana। সেইমতো উদয়শঙ্করদের এক বন্ধু, তাঁর নাম পণ্ডিত, দিল্লিতে তাঁদের সমস্ত বন্দোবস্তের জন্য লিখে দেওয়া হল তাঁকে। দিল্লি পৌঁছে উদয় আর অমলা হতবাক, তাঁদের জন্য হাজির বিরাট হুড খোলা এক লিমুজিন। তাঁরা দুজনেই থ, এমন রাজকীয় বন্দোবস্ত কীভাবে সম্ভব হল পণ্ডিতের পক্ষে! ড্রাইভারকে জিজ্ঞাসা করা হল, গাড়ি কোথায় যাচ্ছে? উত্তর এল, লালা শ্রীরামের বাড়ি। উদয়শঙ্কর আপত্তি জানালেন, তিনি উঠবেন ইম্পিরিয়াল হোটেলে। ড্রাইভার জানালে, পণ্ডিতজি নে ট্রাই কিয়া লেকিন অ্যাকোমোডেশেন নেহি হ্যায়। রুষ্ট উদয়শঙ্কর বললেন, পণ্ডিতজি নে ট্রাই কিয়া, আভি উদয়শঙ্কর ট্রাই করেগা। বাধ্যত ড্রাইভার নিয়ে গেল ইম্পিরিয়ালে। অমলাশঙ্কর গাড়িতে একলা অপেক্ষা করছেন। ড্রাইভারের পাশের সিটে খেলা করছে দুটো ফুটফুটে ছেলে। কৌতূহলবশত জানতে চাইলেন, কার বাচ্চা? চালকের কাছ থেকে উত্তর এল, ইন্দুজি কা। সচকিত হয়ে অমলা জানতে চাইলেন, এ গাড়ি কার? ড্রাইভার জানালে, পণ্ডিতজি নে ভেজা— প্রাইম মিনিস্টার। ওই শিশু দুটি ইন্দিরা গান্ধির দুই পুত্র, রাজীব আর সঞ্জয়। আর সেই গাড়ি পাঠিয়েছিলেন স্বয়ং জওহরলাল নেহরু। ত্রস্ত অমলা কোনোক্রমে উদয়কে জানালেন, এ পণ্ডিতজি আমাদের পণ্ডিত নয়।

আরও পড়ুন
কল্পনা: জন্ম দিতে চায় এক অখণ্ড ভারতবোধকে

আমাদের উল্লিখিত আনন্দশঙ্করকে লেখা প্রথম চিঠিটার সময়ে অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন অমলাশঙ্কর। যেদিন নার্সিং হোমে ভর্তি হলেন অমলা, সেদিন ভোরে বারান্দায় দাঁড়িয়ে উদয় দেখলেন আকাশে উজ্জ্বল হয়ে রয়েছে শুকতারা। উদয় বললেন, মেয়ে হবে। ৭ জানুয়ারি ১৯৫৫-য় তাঁদের ঘরে এল কন্যাসন্তান। প্রথমে ভেবেছিলেন মেয়ের নাম রাখবেন শুকতারা। তারপর ঠিক হল, মমতা।  

আরও পড়ুন
কল্পনা: উদয়শঙ্করের ভারতজিজ্ঞাসা

উদয়শঙ্কর, অমলাশঙ্কর ও আনন্দশঙ্কর

 

আরও পড়ুন
শুরু হল ‘কল্পনা’র প্রস্তুতি

অমলাশঙ্কর জানিয়েছিলেন, ১৯৫৩ সালের পর থেকে কমে এসেছিল তাঁদের বিদেশ যাওয়া। বিদেশেও স্কুল খোলার প্রস্তাব এসেছিল বহু। সাংস্কৃতিক কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব এসেছিল ক্যালিফোর্নিয়া থেকে, কোনোটাতেই রাজি হননি উদয়শঙ্কর। দেশের মাটিতেই কিছু করতে চাইছিলেন তিনি। সেন্টার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগও নেওয়া হয়েছিল ইতিউতি। গোয়ালিয়রের প্রাচীন একটা অংশ দিতে চেয়েছিলেন তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী। আলমোড়ার পর পাহাড় নিয়ে দ্বিধা তৈরি হয় উদয়শঙ্করের, ফলত সম্মতি পাওয়া গেল না এ ক্ষেত্রেও। এসময়ে তাঁদের জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিলেন পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী ডা. বিধানচন্দ্র রায়।

আরও পড়ুন
আমিই সব, এ দুর্বলতা ছিল উদয়শঙ্করের

বিধান রায়ের ইচ্ছা এবং উদ্যোগেই মাদ্রাজ থেকে বাসা বদলে কলকাতায় এলেন উদয়শঙ্কর। নতুন করে অমলা মেলে বসলেন তাঁর সংসার। তখনও প্রতিষ্ঠিত হয়নি রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়। তবে ওখানকার হলেই রিহার্সাল শুরু করলেন উদয়শঙ্কর। তৈরি হল ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল অ্যাকাডেমি অফ ডান্স অ্যান্ড ড্রামা’। নৃত্যবিভাগে উদয়শঙ্কর, ড্রামা বিভাগের দায়িত্বে প্রখ্যাত অভিনেতা অহীন্দ্র চৌধুরী এবং সংগীত বিভাগে এলেন সুবিখ্যাত রমেশ বন্দ্যোপাধ্যায়। উদয়শঙ্করকে দেওয়া হল বছরে তিন মাস করে ট্যুরের স্বাধীনতা। দিল্লি থেকে আমন্ত্রণ এল বুদ্ধলীলা শ্যাডো প্লে-র জন্য। উদয়শঙ্কর বললেন রিহার্সালের জন্য প্রয়োজন বড়ো স্টেজ। অ্যাকাডেমির স্টেজের আয়তন বাড়ানো দরকার। বিধান রায় তৎক্ষণাৎ তাই করলেন। এ প্রসঙ্গে একটি অসাধারণ মন্তব্য করেছিলেন অমলাশঙ্কর। প্রতিষ্ঠানের কেজো-বিষয় নিয়ে রোজ যুঝতে হয় যাঁদের, একথা তাঁরা টের পাবেন আরো বেশি করে। বলেছিলেন, ‘উনি [বিধান রায়] সিদ্ধান্ত নিতেন খুব তাড়াতাড়ি, আর এ ধরনের ব্যাপারে অযথা মিটিং করে সময় নষ্ট করতেন না।’

বার্ধক্যে উদয়শঙ্কর

 

কিন্তু এ বিষয়গুলি যখন এলো প্রশাসনিক জটিলতার আওতায়, ব্যাহত হল স্বাধীনতা। নেমে এল নানা ধরনের বাধা।  সামান্য সব কাজের জন্য প্রয়োজন হয়ে পড়ল সরকারি অনুমোদন। রুষ্ট হতেন উদয়শঙ্কর। একদিন দিলেন পদত্যাগ-পত্র। বিধান রায় দুঃখিত হলেন কিন্তু সম্পর্কে অটুট রইল আন্তরিকতা, উদয়শঙ্করকে বুঝতেন তিনি।

১৯৬১-তে রবীন্দ্রজন্ম শতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে উদয়শঙ্কর তৈরি করলেন ‘সামান্য ক্ষতি’। মূল সুর পরিচালনা করলেন রবিশঙ্কর। কিন্তু রবিশঙ্কর ব্যস্ত থাকায় ট্যুরে সুরের দায়িত্ব নিলেন লক্ষ্মীশঙ্কর। এই প্রযোজনা স্পর্শ করল নৃত্য ঐতিহ্যের এক অভাবনীয় খ্যাতি। 

এইখানে এসে এবার থামতে হয় খানিক। জিরিয়ে বলে নিতে হয় দু-এক কথা। শঙ্কর-সরণির আখ্যান এবার ধীরে গুটিয়ে নেওয়ার পালা। বিস্মিত হতে পারেন পাঠক, এ পর্বে এখনও আমরা দাঁড়িয়ে আছি সবে ষাটের দশকের গোড়ায়। উদয়শঙ্করের মৃত্যু ঘটে,  ২৬ সেপ্টেম্বর ১৯৭৭। এখনও তাঁর জীবনের বাকি অনেকখানি। তবে? খুব মন দিয়ে যদি লক্ষ করি উদয়শঙ্করের জীবনের পর্বগুলি, দেখব, ‘কল্পনা’ নির্মাণের সময় পর্যন্ত চূড়ান্ত সৃজনশীল তিনি, সৃষ্টিমুখর। মেতে রয়েছেন নানান অভিনব ভাবনাচিন্তায়। ধারণ করে রয়েছেন সংঘবদ্ধভাবে কাজ করার ধৈর্যশীল, সহিষ্ণু মন। সংসারের প্রতি জাগরুক তীব্র আবেগ-অনুরাগ। শিল্পীর নির্লিপ্তি আর নিরাসক্তি দিয়ে তখনও ডিঙিয়ে যেতে পারেন তুচ্ছাতিতুচ্ছ জাগতিক যতেক ঝঞ্ঝাট। তার বছর দশেক পরেও, ‘কল্পনা’ পর্বটির মতো না প্রবল নিরীক্ষামূলক না হলেও, তিনি ব্যাপৃত পূর্ণাঙ্গ নৃত্য-পরিকল্পনায়, তখনও অনড় তাঁর আকাশচুম্বী যশ, লোকপ্রিয়তা।  

ডা. বিধানচন্দ্র রায়

 

সম্ভবত ষাটের দশকের প্রাককালে শুরু হল এর ভাঙনকাল। ধীরে, খুব সন্তর্পণে যেন ঘটল এর একটা আদ্যন্ত পালাবদল। তাঁর চরিত্রের ওপর বয়ে গেল প্রলয়। তাঁর উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব, তাঁর উপস্থিতি, তাঁর আচরণের স্থৈর্য-র মতো বিষয়গুলি এতদিন মন্ত্রমুগ্ধ করেছে মানুষকে। অথচ প্রৌঢ়ত্বে খসে পড়ল সেই দুর্মূল্য চারিত্রিক আভূষণ। ক্রমে তাঁকে ঘিরে ধরল অন্যায্য ক্ষোভ-ক্রোধ, অসন্তোষ-অহং, অবুঝপনা আর অসামঞ্জস্য। কলাকারের শরীর থেকে খসে যাচ্ছে তাঁর দেহপট, অধরা হয়ে উঠছে নিখুঁত মুদ্রা। প্রতিনিয়ত সেই প্রকাণ্ড অবলুপ্তিকে তটস্থ দ্রষ্টা হয়ে গ্রহণ করার বাধ্যবাধকতা, কী নির্মম, কী বেদনাবহ! উদয়শঙ্করকে গ্রাস করল অপরিমিত বেসামাল মদ্যপান। তাঁর সৃষ্টির মেজাজ যে নিশ্চিহ্ন হয়েছে, তা তো নয়, শ্যাডো প্লে, ব্যালে, পরে ‘শঙ্করস্কোপ’ সবই থাকবে বহমানতায়, তবু এ বুঝি অপরিচিত এক উদয়শঙ্কর। কেউ কেউ নিশ্চয় বলবেন, সেই অপরিচিত সত্তাও তো উদয়শঙ্করেরই, তাকে বাদ দিয়ে দেখা কি উদয়শঙ্করকে অথবা তাঁর জীবনকেই খণ্ডিত করে দেখা নয়? নতমস্তকে স্বীকার করে নিতে হয় তা। তবুও এর সপক্ষেও বলতে হয় কথা। আমাদের খোঁজ এক মানবের। ত্রুটি-বিচ্যুতিময় মানবের। কিন্তু শুধু ত্রুটি-বিচ্যুতি আর স্খলনের খোঁজ সে নয়। তাই এ পথটুকু আমরা পেরিয়ে যাব দ্রুত।

অমলার বাবা অক্ষয়কুমার নন্দী চিরদিনের আদর্শবাদী মানুষ। উদয়শঙ্করের জীবনভঙ্গি নিয়ে তাঁর ভেতরে কখনও তৈরি হয়েছিল প্রশ্ন। তাঁর অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন তিনি। সে ঘটনায় অত্যন্ত আহত হয়েছিলেন অমলা। স্বামীর অসম্মানে সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেন পিতৃগৃহে যাতায়াত। পয়লা অগস্ট, ১৯৫২-য় বোনকে লেখা একটি চিঠিতে প্রকাশ পেয়েছিল সেই অভিব্যক্তি। অমলা লিখেছিলেন, ‘যে-গৃহে শঙ্করের আহ্বান নেই সে গৃহ যতই আপন হোক না কেন আমার কাছে অবরণীয়’। অথচ আদর্শগত সেই ব্যবধানই এবার দুর্লঙ্ঘ্য প্রাচীর গড়ে দিল অমলা আর উদয়ের মাঝেও। নিশ্চুপ অমলা তখন একলা দাঁড়িয়ে আছেন কঠিন দুর্বহ সেই শোক-সন্তাপে। সেসময় অক্ষয় রইলেন কন্যার পাশটিতে। পায়চারি করতে-করতে অমলাকে একদিন বলেছিলেন তিনি, ‘অম, তুমি উদয়কে ভুলে যাও, উদয়শঙ্করকে মনে রাখো’। অক্ষয় নন্দীর সেই কথাখানা যে আমাদের খোঁজেরও অভিমুখ।

Powered by Froala Editor