পোষা ছাগল, হাসপাতালে, জেলখানায়, শ্মশানঘাটে

‘কচি পাঁঠা বৃদ্ধ মেষ
দধির অগ্র ঘোলের শেষ…’

এরকম একটা কথা— কাহাবত বা কহাবত প্রচলিত আছে বহু বছর ধরে। সেই কথা যাত্রা ধরে যদি এগোনো যায়, তাহলে দেখব আশির দশকে এসএসকেএম— পিজি হাসপাতাল জুড়ে বেআইনি খাটাল— গরু, মোষ, ছাগল, শুয়োর। এসএসকেএম-এর ক্লাস ফোর স্টাফেরা অনেকেই পোষেন হাসপাতাল চত্বরে গরু-মোষ, ছাগল। তখন বামফ্রন্টের শাসন। পূর্ত মন্ত্রী যতীন চক্রবর্তী— সর্বমান্য জ্যাকিদা। আরএসপি-র বিপ্লবী সমাজতন্ত্রী দলের এমএলএ, মন্ত্রী। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পূর্তমন্ত্রী জ্যাকিদা। অনেকে আবার পেছনে তাঁকে বলেন, ‘হরতালদা’। যতীন চক্রবর্তী— জ্যাকিদা ঘোর মোহনবাগানী। খেলার মাঠে যান নিয়মিত। এক সময় রেগুলার কুস্তি করতেন। ছিলেন অনুশীলন সমিতির স্বাধীনতা সংগ্রামী, ব্রিটিশ ভারতে। পরে রেভেলিউশানারি সোসালিট পার্টি— আরএসপি। ত্রিদিব চৌধুরী— ঢাকুবাবু, মাখন পাল, নিখিল দাস, অরবিন্দ পোদ্দার, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, ননী ভট্টাচার্য। এঁরা সবা অনুশীলন সমিতির। অনুশীলন সমিতি থেকে আরএসপি। পর্তুগিজ একনায়ক সালাজারের দখলে থাকা গোয়া-দমন-দিউ— তার বিরুদ্ধে ‘গোয়া মুক্তি আন্দোলন’, সেই মুভমেন্টের অন্যতম নেতা ছিলেন ত্রিদিব চৌধুরী, রামমনোহর লোহিয়া প্রমুখ। জেপি— জয়প্রকাশ নারায়ণও ছিলেন কী এই আন্দোলনে? গোয়ায় সালাজারের কুখ্যাত জেলে ছিলেন ত্রিদিব চৌধুরী। এই প্রায় সর্বজন মান্য গণনেতা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতেন বহরমপুর কেন্দ্র থেকে— লোকসভায়। জিততেন— টানা জিততেন ত্রিদিব চৌধুরী। একটানা সাংসদ তিনি, সুবক্তা। যাক, আবার ফিরি জ্যাকিদা— হরতালদা— যতীন চক্রবর্তীর প্রসঙ্গে। যতীন চক্রবর্তীর ব্যায়াম করা পেটানো স্বাস্থ্য। চোখে কালো ফ্রেমের— লাইব্রেরি ফ্রেমের চশমা। সর্বদা চুরুট মুখে। হাভানা চুরুট না বার্মা চুরুট, বলা মুশকিল। যতীন চক্রবর্তীর থেকে চুরুট টানায় কোনো ভাবেই পিছিয়ে ছিলেন না সি পি আই ( এম) নেতা প্রমোদ দাশগুপ্ত। প্রমোদ দাশগুপ্ত  বিপ্লবী পান্নালাল দাশগুপ্তর তুতো ভাই। পুরো হাতা আদ্দির পাঞ্জাবি খুব সরু করে গুটিয়ে, হাতের গুলো বা গুলি বার করে পরা। সরু পাড় মিলের ধুতি টেনে, মালকোঁচা দিয়ে পরা। পায়ে চামড়ার জুতো। বাড়িতে লুঙ্গি, খালি গা। তবে মুখে সর্বদা জ্বলন্ত চুরুট। ‘জ্যাকিদা’ খুব সাংবাদিক-সন্নিধানে বিশ্বাসী। যোগাযোগ, যোগাযোগ। সাবেক পিজি হাসপাতাল— এসএসকেএম-এ বেওয়ারিশ দিশি কুকুর, শুয়োর ধরার ছবি খবর, সব খবর কাগজে। অনেক বাংলা খবরের কাগজের পয়লা পাতায়। বিশেষ করে ‘যুগান্তর’ আর ‘দৈনিক বসুমতী’-র প্রথম পাতায়। ‘বেঙ্গল ল্যাম্প কেলেঙ্কারি’ নিয়ে যতীন চক্রবর্তী বিরাগভাজন হন তখনকার মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর। তা নিয়ে অনেক জলঘোলা হয়। যতীন চক্রবর্তীকে নিয়ে শারদীয় ‘অমৃত’তে উপন্যাস লেখেন শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়। এই আখ্যানের নাম— ‘বাঘের পিঠে’। যতীন চক্রবর্তীর মেয়ে মারা যান বেশ কম বয়সে। সেই শক— আঘাত সহ্য করতে হয়েছিল যতীন চক্রবর্তীকে। তো সে যাই হোক, যতীন চক্রবর্তী পুলিশ, প্রেস— সাংবাদিক ফোটোগ্রাফার নিয়ে এসএসকেএম-এ বেওয়ারিশ দিশি কুকুর, ছাগল, গরু, মোষমুক্ত করার চেষ্টা করেন। পেছনে পেছনে পুলিশ, সাংবাদিক ও চিত্রগ্রাহকরা। জ্যাকিদা বহু সময়ই নিজে তাঁর গাড়িতে তুলে নিতেন সাংবাদিক, চিত্র সাংবাদিকদের। তারপর তাঁদের নিয়ে অ্যাকশান স্পটে যেতেন। আবার তুলে নিয়ে আসতেন তাঁদের ‘অকুস্থল’ থেকে। রাম চাটুজ্যে— হুগলির তারকেশ্বর কেন্দ্র থেকে মার্কসবাদী ফরওয়ার্ড ব্লক-এর হয়ে নির্বাচনে দাঁড়িয়ে জিততেন। শোনা যায় তারকেশ্বর শিব মন্দিরের সামনে ভোটের ঠিক আগে, সকাল থেকে তিনি স্নান সেরে খালি গায়ে, হাতে আকন্দের মালা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতেন। তারকনাথের মন্দির থেকে কেউ পুজো দিয়ে বেরতে গেলে তাঁর সামনে নিজের গলার পৈতেতে ডান হাতের তর্জনী ও বুড়ো আঙুল ছুঁইয়ে বলতেন, বাবার মাথায় জল ঢেলে এলেন? এই প্রশ্ন শুনে তারকেশ্বরের মাথায় জল, দুধ ঢেলে আসা জন তো একটু থতমতই খেলেন। দুধ পুকুরে স্নান সেরে তিনি ‘জল’ ঢেলেছেন ‘বাবা’-র মাথায়। কেউ কেউ শেওড়াফুলির নিমাইতীর্থ ঘাট থেকে নিয়ে এসেছেন গঙ্গাজল। তারকনাথের পুজোর জন্য। কেউ বা শ্রাবণ বা বৈশাখ মাস ছাড়াও অন্য অন্য মাসেও পুণ্যার্থী, শিবভক্তরা শেওড়াফুলির নিমাইতীর্থ ঘাট থেকে গঙ্গাজল নিয়ে আসেন তারকেশ্বরে আরাধনার জন্য। রাম চট্টোপাধ্যায় বা রাম চাটুজ্জের জিজ্ঞাসা এই যে জন যিনি পুজো দিয়ে বেরচ্ছেন, তিনি তারকেশ্বর বিধানসভা কেন্দ্রের ভোটার কি না। রাম চট্টোপাধ্যায় এইভাবে জানতেন বা জানতে চাইতেন তাঁর হওয়া না হওয়া ভোটদাতার মনোভাব। রাম চাটুজ্জে এরপর নাকি সেই তারকেশ্বর মন্দির ফেরত ভক্তজনের হাতে নিজের হাতে ঝোলানো আকন্দের মালাটি ধরিয়ে দিয়ে বলতেন, আমি ব্রাহ্মণ সন্তান। আমি ভোরবেলা খালিপেটে— উপোস করে বাবার মাথায় জল ঢেলে, বাবার পুজো সেরে ভিজে কাপড়ে এখানে দাঁড়িয়ে আছি। আপনি একবার বলুন, এই পুজোতেই নিবেদন করা আকন্দমালা ছুঁয়ে একবার বলুন আপনার দামি ভোটটি আমি পাবই। এরকম অভিজ্ঞতার কথাযাত্রা রাম চট্টোপাধ্যায়ের জীবন নিয়ে। যাঁরা দেখেছেন তাঁর এই ভোট ক্যাচিং পদ্ধতি। তাঁদেরই কারও কারও কাছ থেকে এই তথ্য পেয়েছি। তাঁদের কেউ কেউ বলেছেন, রামবাবু কীভাবে তাঁর বিধানসভা আসার গাড়িতে ঠাসাঠাসি বা গাদাগাদি বললে কম বলা হয়, শুয়োর গাদা দিয়ে থাকা যাবে বলে, পারলে গাড়ির মাথায় লোক তুলতেন। এ যাবে, ও যাবে— সবাইকে নিয়ে রাম চ্যাটার্জি যাবেন। তিনি এমএলএ কাম মন্ত্রী। এরকম কালারফুল পার্সোনালিটি বঙ্গ রাজনীতিতে খুবই কম এসেছন। থাক রাম চাটুজ্জের কথা। আপাতত আবার ফিরি যতীন চক্রবর্তী— হরতালদা— জ্যাকিদার কথায়। যতীন চক্রবর্তী ইন্দিরা গান্ধীর প্রয়াণের পর তাঁর চিতাভস্মের কলসি— অস্থি কলস নিয়ে তিনি ঠিক কোথায় রাখবেন, মাথায়, বুকে না পেটে, তা নিয়ে নাকি যথেষ্ট ধাঁধাঁ ও ধন্দে ছিলেন, এমনই খবর করেছিল তখনকার খবরের কাগজ। মন্ত্রী যতীন চক্রবর্তীর অস্থিকলস ভাসানোর আগে, কলকাতা বিমানবন্দরে এই ছাই-কলসি ধরার ছাপা হয়েছিল কলকাতা থেকে প্রকাশিত সমস্ত বাংলা দৈনিকে। দু-একটি ইংরাজি দৈনিকেও। যতীন চক্রবর্তী কুস্তি করতেন নিয়মিত, একসময়। মোহনবাগানের খেলা থাকলে যেতেন কলকাতা ময়দানে, ফুটবল ম্যাচ দেখতে। এই ময়দানি উপস্থিতি তাঁর নিয়মিত। এইসব কথা উঠে এল ছাগমাংস, ছাগল পোষা, ইত্যাদি প্রভৃতি নিয়ে। জেলের ভেতরও অনায়াসে ছাগল পোষা হত। বিশেষ করে সত্তর দশকে, ষাটেও। সেইসব ছাগল অধিকাংশই পাটনাই। দিশি ছাগলও ছিল। জেলখানা ছাড়া বিভিন্ন শ্মশানভূমিতেও অনবরত ছাগল প্রতিপালনের ব্যবস্থা। কারণ কথাতেই আছে ‘পাগলে কী না বলে/ ছাগলে কী না খায়?’ এর উত্তরে বলা আছে, মানে বলা মুখ তৈরি হয়ে গেছে পা গলে মিথ্যে কথা বলে না। ছাগলে ঘুষ খায় না। হাওড়া জেল, উলুবেড়িয়া জেল, সত্তর দশকে— এইসব জেলেই ছাগ প্রতিপালন, প্রায় প্রকাশ্যে। প্রায় কেন, প্রকাশ্যেই। সবই জেল-জমাদার, জেল-সিপাই, জেল জমাদারের আনুকূল্যে। ছাগীদুগ্ধ, ছাগ মাংস— সবই প্রকাশ্যে বিক্রি। ষাট দশকে বালি পাঠকঘাট শ্মশানে দেখেছি রোগী— পরে মৃতর ময়লা, ছেঁড়া কাঁথাকানি, তোশক, বালিশ, পাশবালিশ, সবার মধ্যেই ধাঙড়-হরিজন-মেথর-ডোম ইত্যাদি প্রভৃতি শব্দমালার মধ্যেই বেড়ে ওঠে ছাগল, শুয়োর, কুকুর, টিয়াপাখি। মেথর-ভাঙ্গি-হরিজনরা তখনও সাফাইকর্মী হয়ে ওঠেননি। বালি পাঠকঘাটে শ্মশান চাণ্ডাল— গঙ্গাপুত্র— ডোমেরা যেমন থাকেন, তেমনই থাকতেন দু-এক ঘর সাফাইকর্মী। যদিও বালি মিউনিসিপ্যালিটির কর্মচারী হিসাবে হরিজন-মেথর-ভাঙ্গিরা থাকতেন অতি অপরিচ্ছন্ন বারোমাস নোংরা কাদাডোবা খানিকটা জায়গা জুড়ে। পদ্মবাবু রোডের ওপর তাঁদের সেই বস্তি। বালি জোড়া অশ্বত্থতলা বিদ্যালয়-এর সামনে থেকে ডান দিকে কাচকল, কামারপাড়ায় ঢোকার মুখ, বুরুশ কোম্পানি, কামারপাড়ায় ঢোকার মুখে দশ দশরথ হাজরাদের মুদিখানার দোকান— দশরথ আমার সহধ্যায়ী ছিল, তারপর খানিক এগোলে ‘আশুতোষ গ্রন্থাগার’। বালি তরুণ সংঘের সঙ্গে যুক্ত এই লাইব্রেরির বইয়ের— গল্প-উপন্যাস ইত্যাদির সংখ্যা যথেষ্ট ভালো। বালিতে ‘বালি সাধারণ গ্রন্থাগার’ বহু পুরনো আর তার বইয়ের সংগ্রহও বিপুল। বি-ই-শা-ল বাড়ি। পাশেই বালি এসি মাঠ, বালি মিউনিসিপ্যালিটি, একেবারে জিটি রোডের ওপর যাকে বলে। উল্টোদিকে— ওপারেই বালি থানা। বালি পাবলিক লাইব্রেরি বা সাধারণ গ্রন্থাগারের পাশে বালি শান্তিরাম বিদ্যালয়, যা আগে পরিচিত ছিল টমসন স্কুল হিসাবে। তো সে যাই হোক। পদ্মবাবু রোডের বাঁদিকে ফাঁকা মাঠে নিচু নিচু ঘরে হরিজন বস্তি। সত্তর দশকের গোড়ার দিকে বালির পদ্মবাবু রোডের ওপর হরিজন বস্তিতে গেছিলাম না ভাঙা সিপিআই (এমএল)-এর সংগঠন করতে। একদম নিচু নিচু ঘর। শুয়োরেরই খোঁয়াড় যেন। কোমর বেঁকিয়ে, মাথা যথেষ্ট নিচু করে ঢুকতে হয় এখানে। ঝাপসা, ভ্যাপসা গুমোট গন্ধ ঝুলে থাকে এইসব ঘরে। তার ভেতরই বালি মিউনিসিপ্যালিটির মেথর। যাঁদের মেয়েরা ছোটো, ধারাল লোহার কাটারিতে বাঁশ চেঁচে চেঁচে সরু সরু কাঠি বার করে ঝুড়ি বোনেন— ছোটো ঝুড়ি, বড়ো ঝুড়ি, আরও বড়ো ঝোড়া। ছোটো ঝুড়িতে আদা। বড়ো ঝুড়িতেতে আলু আর আলু। অন্য কোনো তরকারিও এখানে। এছাড়া শাক ধোয়া, তাল গোলার জন্য আলাদা একটু পোক্ত ঝুড়ি আছে। সব মিলিয়ে বাঁশ, বেতের তৈরি কারিগরি। আঁতুড়ে কাপড়— নবীন মায়ের শাড়ি, রং খেলা ধুতি-শাড়ি বা পুরুষ মানুষের শীত-গ্রীষ্মের পুরনো তেলধুতি— এইসব দিয়েই ঝুড়ি কেনা হত। সেইসঙ্গে মুড়ি খাওয়ার জন্য বেতের তৈরি ছোটো ধামি, বেতে বোনা ধামা। 

ষাট, সত্তর দশকে বাড়ি বাড়ি বাসনউলিরা আসতেন পুরনো কাপড়ের বদলে কাচ, কলাই করা, অ্যালুমিনিয়ামের বাসন বিক্রি করতে। ক্রাউন— মুকুট মার্কা অ্যালুমিনিয়ামের জিনিস সবচেয়ে পোক্ত আর দামিও। সেইসঙ্গে ন্যাড়া রাজা ছাপ অ্যালুমিনিয়ামের বাসনকোসন। আর ছিল জাহাজ আর নৌকো মার্কা অ্যালুমিনিয়াম বাসন। হিন্দু বাঙালি বাড়িতে কলাই করা বাসন খুব একটা চলত না। বিশেষ করে তথাকথিত উচ্চবর্ণের— ব্রাহ্মণ পরিবারে। কাচের জিনিস এঁটো হলে ফেলে দেওয়া হত। যেমন ভাদ্র ও চৈত্র মাসের শেষে— সংক্রান্তিতে পোড়ামাটির ভাতের হাঁড়ি। কাচকড়া— পোর্সেলিনের, বাসন, কাচের বাসন-কোসন, শরবত সেট, তথাকথিত উচ্চবর্ণের— মূলত পাশ্চাত্য বৈদিক ব্রাহ্মণ পরিবারে ব্যবহার্য তালিকায় ছিল না। অথচ কাচের কলসি রাখতেন একটু পয়সাদার জনেরা। পাশ্চাত্য বৈদিক ব্রাহ্মণ পরিবারেও। ‘অশোক’ মার্কা কাচের গেলাস ছিল ষাট দশকে। সেইসঙ্গে ‘বেঙ্গল পটারিজ’-এ তৈরি পোর্সিলিন— কাচকড়ার তৈরি ছোটো-বড়ো কাপ-ডিশ, প্লেট, টিপট, ওষুধ, ওষুধের পর জল খাওয়ার জন্য টিপট চেহারারই ছোটো জিনিস। এসব জিনিসও ভাতের এঁটো হয়ে গেলে ফেলে দেওয়াই নিয়ম ছিল তখন। আবার চুল কাটা হলেও ফাটা— ফাটল ধরা কাঁপে আ খাওয়া বিধেয় নয়। 

কথা শুরু হয়েছিল কচি পাঁঠা, বৃদ্ধ মেষ নিয়ে। বয়স্ক তেলদার— চর্বিঅলা ভেড়ার মাংস তো সত্যিই সুস্বাদু। নিউ মার্কেটে পাওয়া যেত গ্রামফেড মাটন— শুধু ছোলা খাইয়ে খাইয়ে গত্তি লাগানো খাসি। মালদহে একবার মালদহ বইমেলার উদ্বোধন করতে গিয়ে দিশি পাঁঠার চমৎকার মাংস খেয়েছিলাম। তার হাড়গুলি পুরনো খেটো, খেঁড়ো কাতলার কাঁটা যেমন, অনেকটা তেমনই। কিলো দশ-বারোর কাতলা। তার বুকের কাঁটা যতটা পোক্ত— মজবুত, ততটাই মোটা ও মসৃণ মাঠের ঘাস খাওয়া ছাগলের— পাঁঠার হাড়। পাঁচ-ছ কিলো ওজন বড়ো জোর, কাটার আগে। মালদহে শীতে রাস্তার ধারে ধারে বেগুনপোড়া আর কলাইয়ের রুটি। ওখানেই তৈরি হচ্ছে। মূলত নারীরা বিক্রি করেন এই বেগুনপোড়া, কলাই-রুটি। সঙ্গে তরল আচার, কাঁচা লঙ্কা— অপূর্ব স্বাদ। যতদূর জানি ইসলাম ধর্মের নারীরা তৈরি করেন ও বিক্রি করেন এই রুটি। রাতে, শীতের ঠান্ডা বাতাস। মাঝারি গামলা ধরনের মাটির উনোনে কাঠ কয়লার আয়োজন, তাতে অনেকটা যেন দক্ষিণী ইডলির সংস্করণ ভাপা পিঠা। ভাপা পিঠে বললেও তাঁকে ভুল কিছু বলা হয় না। সেই পিঠে ঝাল আচার, নয়তো গুড় দিয়ে খাওয়া চলে। যার যেমন অভিরুচি। হাসপাতাল, জেলখানা বা শ্মশানের লাগোয়া জমিতে ছাগল, ভেড়া, কোথাও কোথাও মোষও, কখনও সখনও— যাকে বলে একাবারে পুরোদস্তুর খাটাল। দমদমাইয়া মানে দমদম জেলের পণ্ডিতের সঙ্গে হাওড়া জেলের অষ্টা, তেলিয়া বিশু, রুটি ভোলা, তেলেঙ্গী স্বপন— এদেরও নানা সময়ে ঝাড়পিটের দীর্ঘ ইতিহাস আছে। হাওড়া মল্লিক ফটক জেলের ললিত, পালোয়ান বা পাহেলোয়ান, এরাও পণ্ডিতের গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে যথেষ্ট ক্ষমতাবান লড়ুইয়ে। পণ্ডিত তার গায়ের শক্তি, বুদ্ধি এবং তৎপরতায় হাওড়া— মল্লিক ফটক গ্যাংকে অনায়াসে পটকে দিত। কি যে ফেরোশাস তার অ্যাটিটিউড, খুংখার তৎপরতা ভাবা যায় না। 

আরও পড়ুন
জেলখানা, কোর্ট লকআপ, ছাগল

অষ্টা সালকিয়ার মাস্তান। তার দল, খুব বড়ো নয়। ছোটো গ্যাং কিন্তু তার বেশ নাম ডাক, নানা দিকে। কুখ্যাতি যাকে বলা চলে। অষ্টার কথায় পরে আসছি। সালকিয়া বা সালকের পারিজাত সিনেমা বেশ নাম করা তখন আর কাছে অতি বিখ্যাত ‘শীশমহল’ নামে থিয়েটার হল। ‘শীশমহল’ বন্ধ হয়ে গেছে বহু বছর। ‘পারিজাত’ সিনেমা— সালকের ‘পারিজাত’ সিনেমাও বন্ধ বহু বছর। ঝাঁপেলাঠি লিলুয়ার ‘শ্রমিক’ হলে, পরে যা ‘চন্দন’ বলে সিনেমা হল হয়েছিল মাখলার ‘দীপক’ সিনেমা, বালির শ্রীকৃষ্ণ সিনেমা হল, উত্তরপাড়ার গৌরী টকিজ, আলমবাজারের ‘অনন্যা’ সিনেমা, সবই বহু বছরের পুরনো স্মৃতিজড়িত। সম্ভবত ‘দীপক’ ছাড়া সবই বন্ধ। মাখলার ইটখোলা, টালিখোলা বিখ্যাত।

আরও পড়ুন
‘সেনা’— তথাকথিত সেনারা ও অন্যান্য

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
সেরেস্তা ও অন্যান্য