দার্জিলিং ও তার চায়ের গল্প (দুই)

সময়ভ্রমণ - ৩৭
আগের পর্বে

চায়ের মান নির্ধারিত হয় তার বাজারের দামের উপরেই। তবে উৎকৃষ্ট চায়ের পিছনে থাকে বহু পরিশ্রম, নানা ধরণের হিসাব। কোন মাটিতে কোন প্রজাতির গাছ চাষ হচ্ছে, কীভাবে প্রক্রিয়াকরণ হচ্ছে, সব মিলিয়েই গুণমান গড়ে ওঠে। জানা যায় চিনের আফিমের চাষ কমিয়ে আনতেই চা চাষ শুরু হয়। সেখান থেকেই তা দার্জিলিং-এ আসে। প্রথম প্রথম রাজপরিবার এবং অভিজাতদের মধ্যেই তা সীমাবদ্ধ ছিল। অন্যদিকে আসামের চা ছিল বুনো প্রজাতির। রবার্ট ফরচুনের উদ্যোগে চৈনিক চায়ের চাষ শুরু হয় দার্জিলিং-এ। তবে তবে ই এইচ এম কক্স জানিয়েছেন, চৈনিক চায়ের চাষ শেষ পর্যন্ত পণ্ডশ্রম হয়। দার্জিলিং-এ এখন যেসমস্ত চা চাষ হয় তাদের উৎস নাকি আসামেই। বিষয়টি জেনে নেওয়া যাক আরও গভীরে...

দার্জিলিং চায়ের সুলুকসন্ধান নিচ্ছি। যে চা আমরা কালেভদ্রে খেতে পাই এবং যে চা বাইরের চা-সৌখিন উচ্চবিত্ত বৃত্তে চালান যায়, তা কি উৎসে চৈনিক, না অহমিয়া? ফরচুনের আনা চায়ের গাছবীজের বংশধরদের মধ্যে কিছু কি টিঁকে আছে আদৌ দার্জিলিং অঞ্চলে? 

ফরচুনের আনা গাছ দার্জিলিং এসে পৌঁছচ্ছে ১৮৪৯-৫০এ(নির্দিষ্ট সময় বলা সম্ভব নয়), ক্যাম্পবেল তাঁর নিজের বাগানে তা লাগাচ্ছেন ওই সময়েই। ১৮৫৩ নাগাদ, কি আরো আগে, সাকুল্যে গোটা দুই-তিন বাগান ছিলো বটে, কিন্তু দার্জিলিং পাহাড়ে ভালো করে চা-চাষ শুরু হচ্ছে ১৮৫৬-৫৭ নাগাদ। এই খবর পাওয়া যাচ্ছে হান্টার সাহেবের বাংলার সংখ্যাতাত্বিক বিবরণ-এর দার্জিলিং অংশে। 

হান্টার সাহেবের এই লেখা ঔপনিবেশিক ইতিহাসের প্রধান আকরবিশেষ, তবে ১৮৫৩ সালের আগে চা বাগান সে অর্থে দার্জিলিংয়ে ছিলই না। এটা জানা গেল কী করে বলি। মার্কিনি রান্নাবই লিখিয়ে জেফ কোলার দার্জিলিং চায়ের ইতিহাস নিয়ে একটি সুস্বাদু বই লেখেন ২০১৫ সালে, সেখানে তিনি ১৯৮৭তে প্রকাশিত তুষার কান্তি ঘোষের লেখা টি গার্ডেন্স অব ওয়েস্ট বেঙ্গল বইটি থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে বলছেন, ক্যাম্পবেল সায়েব চাইছিলেন, ফরচুন একবার দার্জিলিংয়ে আসুন। ঘোষকে উদ্ধৃত করে কোলার বলছেন, ১৮৫৩ সালের এপ্রিল মাসে পাঠানো ক্যাম্পবেলের একটা রিপোর্টে এটা বলা ছিল। খুঁজতে খুঁজতে সেই 'রিপোর্ট' পাওয়া গেল, ১৮৫৪ সালে কলকাতার বেঙ্গল গ্যাজেট অফিস থেকে ছাপা তৎকালীন বাংলা সরকারের নির্বাচিত নথির সতেরো নম্বর খণ্ডে, 'রিপোর্ট অন দার্জিলিং' শিরোনামে  যা সংকলিত করেছিলেন ডব্লিউ বি জ্যাকসন, এস্কোয়ার, দার্জিলিং সদর আদালতের হাকিম। যেহেতু দার্জিলিং, এবং ক্যাম্পবেল তখনো অবধি সেখানকার দণ্ডমুণ্ডের কর্তা, বিভিন্ন সরকারি লোকজনকে লেখা তাঁর নানাবিধ চিঠি ও সই করা বিবিধ বিচিত্র দস্তাবেজ আদি সে রিপোর্টে আছে। তন্মধ্যে অন্যতম দার্জিলিংয়ে চা-চাষ নিয়ে কলকাতার ফোর্ট উইলিয়মস্থ কোম্পানিসরকারের রাজস্ব বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব এ. গ্রোট(এস্কোয়ার)কে ১৮৫৩-র আঠাশে এপ্রিল তারিখের নাতিদীর্ঘ পত্র, যার মধ্যে কিনা রবার্ট ফরচুনের উল্লেখ আছে:

‘...চা-চাষ ও চা তৈরির ক্ষেত্রে এই পাহাড়ি এলাকার জলবায়ু ও মাটি কতটা উপযুক্ত, সে বিষয়ে শ্রেষ্ঠ মতামত দরকার। শ্রী ফরচুন...এখন চীনে, ফেরার পথে যদি তিনি কলকাতা হয়ে যান, এখানে তাঁর আসাটা একান্তই গুরুত্বপূর্ণ। যা চা চাষ ইতিমধ্যে করা হয়েছে, এবং পশ্চিম পাহাড়ের তুলনায় এখানকার জলবায়ু ও মাটি বিষয়ে তাঁর মত পেলে খুব ভালো হয়...এত অভিজ্ঞ একজনের মতামত পেলে এক্ষেত্রে(চা চাষে) ব্যক্তি উদ্যোগ ঠিক দিশা পাবে, অন্যদিকে সরকারও মনস্থির করতে পারবেন যে পরীক্ষামূলক চাষে নেটিভদের কতটা উৎসাহ ও সাহায্য দরকার…

আরও পড়ুন
দার্জিলিং ও তার চায়ের গল্প (এক)

আমার হিসেব অনুযায়ী, সাত থেকে দু হাজার ফুটের মধ্যে বিভিন্ন উচ্চতায় ২০০০ মতো গাছ আছে, যাদের বয়স কয়েক মাস থেকে বারো বছর।...’

আরও পড়ুন
দার্জিলিং-এর গপ্পোগাছা (তিন)

অর্থাৎ, ১৮৫৩ নাগাদ দার্জিলিংয়ে জ্যান্ত চা গাছ সব মিলিয়ে মোটে হাজার দুয়েক, তাদের ভিতর ১৮৪১ সালে ক্যাম্পবেলের 'নিজের হাতে' লাগানো গাছও আছে। ফলে, দু-তিনটে কেন, একটাও বড়সড় বাগান ছিল, এমন মনে হয় না। 

আরও পড়ুন
দার্জিলিংয়ের গপ্পোগাছা (দুই)

ফরচুন-পূর্ব সময়ে, দার্জিলিংয়ে চা-চাষের একেবারে আদ্যিকালে কি ঘটেছিল তা নিয়েও ক্যাম্পবেলের লেখা একটি 'নোট' খুঁজে পাওয়া গেল ১৮৪৮-এ কলকাতার বিশপস কলেজ ছাপাখানা থেকে ছাপা হওয়া এগ্রিকালচারাল য়্যান্ড হর্টিকালচারাল সোসাইটির জার্নালে। এই নোটে সোসাইটির সদস্যদের ক্যাম্পবেল জানাচ্ছেন দার্জিলিং-য়ে চা চাষের অগ্রগতির তাজা খবর। ১৮৪১-এ ড: ওয়ালেখ ক্যাম্পবেলের কাছে কিছু চা-বীজ পাঠান। সে বীজের জাতও চৈনিক, কুমায়ুনের পাহাড়ে তা লাগানো হয়েছিল। এখানে বলে রাখা দরকার, চীনা হলেই তা সর্বোৎকৃষ্ট হবে এরকম নিয়ম নেই। চীনের সত্যিকারের ভালো জাতের চা ভারতে নিয়ে আসেন ফরচুন, কিন্তু সে আরো বছর দশেক পর। তার আগে ভারতে চীনা চায়ের যে বীজ এসেছে, তা মূলত চীনের উপকূলবর্তী এলাকা(ক্যান্টন) থেকে। এই চায়ের জাত ভালো ছিলো না, কিন্তু উপায়ান্তর না থাকায়(কোম্পানির লোকজনকে চীনের ভিতরের দিকে যেতে দেওয়া হত না, ফলে ভালো জাতের চা ছিল নাগালের বাইরে) ওই চা-ই কুমায়ুন পাহাড়ে লাগানো হয়েছিল। 

আরও পড়ুন
দার্জিলিংয়ের গপ্পোগাছা

ড: ওয়ালেখকে নিয়েও দু এক কথা বলতে হয়। ওয়ালেখের পুরো নাম ন্যাথানিয়েল ওয়ালেখ। আদি দেশ ডেনমার্ক, কিন্তু কোম্পানিশাসিত ভারতে তিনি কাজ করেছেন দীর্ঘকাল, তিনি না থাকলে ভারতে চায়ের চাষ শুরু হতো কিনা সন্দেহ। প্রায় তিন দশক ধরে ওয়ালেখ কলকাতার নতুন উদ্ভিদ উদ্যান-যাকে এখন আমরা বটানিক্স নামে জানি-সামলান, পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের গাছপালা সেখানে নিয়ে আসেন। তাঁর জীবদ্দশায়, ভারতীয় উপমহাদেশের গাছপালার বিষয়ে তাঁর চাইতে বেশি কেউ জানত না। কলকাতা বটানিক্সের কর্তা ও উদ্ভিদ বিৎ হিউ ফ্যালকনার, যাঁর আমলে ফরচুনের আনা চায়ের বীজগাছ কলকাতার বাগানে পৌঁছোয়, ছিলেন ওয়ালেখের সাক্ষাৎ শিষ্য। হিমালয়ে চা চাষ শুরু করার প্রাথমিক উদ্যোগ ফ্যালকনারের। দার্জিলিং এলাকা কোম্পানির হাতে আসা মাত্রই ফ্যালকনার ওই অঞ্চলে যান, দীর্ঘ সময় ধরে বনেপাহাড়ে ঘুরে ঘুরে বীজ চারা সংগ্রহ করেন। ওয়ালেখ কলকাতার বাগানে সেই বীজচারা লাগানোর জন্য আলাদা করে জায়গা বরাদ্দ করেন। কোম্পানিভারতে চা চাষের শুরুর গল্পটা সারা রোজ তাঁর বইতে বড় সুন্দর করে বলেছেন। 

ক্যাম্পবেলের কথায় ফিরি। চা বিষয়ক নোটে তিনি জানাচ্ছেন, তাঁর লাগানো প্রথম গাছগুলো ১৮৪৪ অবধি দিব্যি বাড়ছিল। তার পর থেকে তিনি খোঁজ রাখতে পারেননি, যে জমিতে গাছ লাগানো হয়েছিল তা অন্য কারুর মালিকানায় চলে যায়। ১৮৪৬-এর অগস্ট মাসে আসাম থেকে জনৈক ম্যাকফারলেন সাহেব দার্জিলিং-এ আসেন, অহমদেশীয় চা সম্পর্কে তাঁর বিশেষ অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান ছিল। ক্যাম্পবেল তাঁকে নিয়ে দার্জিলিং-এর চা দেখাতে নিয়ে যান। ভালো করে দেখাশুনো সেরে ম্যাকফারলেন বলেন, গাছের অবস্থা যথেষ্ট ভালো, ব্যবসায়িক ভিত্তিতে লাগানো হলে এ থেকে ভালো উপার্জন হতে পারে। উৎসাহিত হয়ে ক্যাম্পবেল আসাম থেকে নতুন বীজ ও চারা আনান, নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে সেগুলো রোয়া হয়। ৪৭-এর মে মাস অবধি তারা তরতরিয়ে বাড়ছিলো। নোটটা লেখার সময়, ক্যাম্পবেলের বাগানে মোট গাছ ছিলো সাত হাজার। সেগুলোর কিছু অহমদেশীয়, কিছু চৈনিক। ক্যাম্পবেল চাইছিলেন শুধু চৈনিক গাছ রাখতে। তাঁর সুস্পষ্ট মত ছিল, পশ্চিম কুমায়ুন পাহাড়ে যে চা হয়, ওইরকম মানের চা দার্জিলিং-এও করা যেতে পারে। 

দার্জিলিং চায়ের আদিপর্বে-অর্থাৎ ১৮৪১ থেকে ১৮৪৯-এর প্রাক-ফরচুন পর্যায়ে- আসামের চা লাগানো হয়, দেখাই যাচ্ছে। আর নিচু জাতের চীনা, মানে ক্যান্টনের চা। ১৮৫৩ নাগাদ যে হাজার দুই গাছ ছিলো, তাদের মধ্যে ফরচুনের আনা ভালো জাতের চীনা গাছ কটা ছিলো, সে প্রশ্নের উত্তর এখন পাবার উপায় নেই। 

১৮৬২ সালের ভারতবর্ষের শাসন বিবরণ(য়্যানালস অব ইন্ডিয়ান য়্যাডমিনিষ্ট্রেশন) উদ্ধৃত করে ও'ম্যালির দার্জিলিং গ্যাজেটিয়ার বলছে, ১৮৫৬-য় প্রথম চা বাগান শুরু হয় আলুবাড়িতে, যার মালিক ছিল কার্শিয়াং য়্যান্ড দার্জিলিং টি কোম্পানি(যা পরে দার্জিলিং টি কোম্পানি নামে পরিচিত)। ওই বছরই লেবঙ গিরিশিরায় আর একটি বাগান গড়ে ওঠে, দার্জিলিং ল্যান্ড মর্টগেজ ব্যাংকের মালিকানায়। ১৮৫৯-এ ধুতেরিয়া বাগান শুরু করেন ড: ব্রুহাম। ১৮৬০ থেকে ৬৪-র মধ্যে দার্জিলিং টি কোম্পানির আরো চারটে বাগানের পত্তন হয়: গিং, আম্বুটিয়া, তাকদা আর ফুবশেরিং। ওই সময়ের মধ্যে আরো যে যে বাগান বসে তাদের বর্তমান(বিংশ শতাব্দীর গোড়ায়) নাম মকাইবাড়ি, পান্ডম আর স্টেইনথল।

হান্টারের হিসেব অনুযায়ী, ১৮৫৭ ও ১৮৭২-র মধ্যে দার্জিলিংয়ের পাহাড়ে অন্তত ৩৩টা বাগান বসে গেছে। পাহাড় তরাই হইহই করে আবাদ হচ্ছে, দার্জিলিং জেলায় ১৮৭২ নাগাদ মোট বাগান সংখ্যা ১১৩, বেশির ভাগই তরাইয়ে। ক্যাম্পবেল নিজেও বাণিজ্যিক চা-চাষে নেমে পড়েছিলেন। সেটা অবশ্য তিনি অবসর নিয়ে দেশে, অর্থাৎ ব্রিটেনে ফিরে যাবার পর। দার্জিলিং-এর সবচাইতে বড় চা-কোম্পানি সেসময় দার্জিলিং টি কোম্পানি। কিছুসময়ের জন্য ক্যাম্পবেল তার অন্যতম ডিরেক্টর হয়েছিলেন।

১৮৮৮ নাগাদ দার্জিলিং থেকেই ছাপা হচ্ছে জনৈক নামহীন চা-করের (প্ল্যান্টার) লেখা নোটস অন টি ইন দার্জিলিং। এই বইতে চা-চাষ এবং চা বিষয়ে বহু তথ্য দেওয়া আছে। তার মধ্যে অন্যতম, পাহাড়ের ভালো বাগানগুলোয় শুধুই চৈনিক চা লাগানো হয়। আসাম আর সঙ্কর প্রজাতির(আসাম আর চীন মিলিয়ে) গাছ নিয়ে একটা কলরব হুড়োতাড়া শুরু হয়েছে বটে, লেখকের মন্তব্য, কিন্তু সেটা টিঁকবার নয়। পাহাড়ের জলহাওয়ায় ভালো করে চায়ের চাষ করতে চাও তো চীনা লাগাও, লেখক বলছেন। আসাম চা লাগাতে চাইলে সমতল নিচু জমিতে, পাহাড়ে নৈব নৈব চ। মনে হয়না, এই উপদেশ সব চা-কর গ্রহণ করেছিলেন। বিশ শতকের গোড়ার দিকে ও'ম্যালি তাঁর গ্যাজেটিয়ারে বলছেন কিছু কিছু পুরোনো অভিজ্ঞ চা-কর এখনো বিশুদ্ধ চৈনিক গাছ লাগানোর পক্ষপাতী বটে, ‘অহমদেশীয়’(আসাম ইনডিজেনস) জাতটা ইদানিং চলছে বেশি। চীনা আর আসাম জাত মিলিয়ে যে সঙ্কর জাত, সেটাই মোটের ওপর দার্জিলিং-এর পক্ষে উপযুক্ততর, বলছেন ও'ম্যালি। 

জেফ কোলারের বইটায় দার্জিলিং পাহাড়ের চা-বাগানগুলোর হালের অবস্থা নিয়ে বিস্তারিত তথ্য আছে। এছাড়া, ২০০০ সালে প্রকাশিত নিক হলের দি টি ইন্ডাস্ট্রি বইটাও তথ্যবহুল। এই দুই লেখকেরই বক্তব্য, দার্জিলিং পাহাড়ের চা বাগানে এখনো বিস্তর চৈনিক জাতের চা গাছ টিঁকে আছে, তবে তার সঙ্গে আসাম সঙ্কর ও চীনা সঙ্করও আছে যথেষ্ট পরিমাণে। নিক হল বলছেন, চৈনিক জাতের চা-ই যে সর্বোৎকৃষ্ট, এ ধারণাটা ঠিক নয়, দিশি আসামি চা থেকেও ভালো জাতের চা হয়। 

আরো খোঁজখবর নিয়ে দেখলাম, মেলানোমেশানো গাছ থাকার কথাটা ঠিক। একশো দেড়শো বছরের পুরনো সব বাগানে বহু পুরনো গাছ থাকাটাই স্বাভাবিক। পুরনো চৈনিক জাতের গাছ, যা থেকে মাস্কাটেল গোত্রের মহার্ঘ্য চা তৈরি হয়, সেগুলোর পাতা দেবার ক্ষমতা বয়সের সঙ্গে সঙ্গে কমছে। মধ্যিখানে দেখা গেল, পুরনো গাছ তুলে নতুন গাছ লাগালে আগের মতো গন্ধস্বাদ হচ্ছে না। তদুপরি, চৈনিক জাতের গাছের তুলনায় আসাম জাত পাতা দেয় বেশি। এছাড়াও, পাহাড়ের বাগানগুলো ছড়িয়ে আছে বিভিন্ন উচ্চতায়, জলবায়ুতে, মাটিতে। সব গাছ এক জায়গায় ভালো হবে, তার কোন মানে নেই। ফলে একটা বাগানের মধ্যেই বিভিন্ন জাতের গাছ থাকবে, হয়তো কখনো কখনো একসঙ্গেও। চীনা হোক আর অহমিয়া, দু জাতের গাছেরই দার্জিলিং পাহাড়ের মাটিতে গোত্রবদল ও জন্মান্তর ঘটেছে। সে ঘটুক, এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়, ফরচুনের আনা চৈনিক বীজগাছের বংশধরেরা দার্জিলিং পাহাড়ের ঢালে এখনো সবুজ ও মনোরম নিসর্গ। 

এবং ভালো ব্যবসা। কিছু বছর আগে দার্জিলিং চায়ের গায়ে জি আই ছাপ লেগেছে। দার্জিলিং পাহাড়ের রাজনৈতিক ভূগোলের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে পাহাড়ের চা। কিছু কিছু জিনিস বিক্কিরিতে ভূগোলের মার্কা বা ব্র্যান্ডটা জরুরি, যেমন স্কটদেশীয় হুইস্কি। ওইরকম, দার্জিলিং-এর চা, সেখানে অন্য জায়গার চা ভেজাল দিয়ে কেউ দার্জিলিং বলে চালাবে, তা হবে না। দার্জিলিং-এর কুয়াশামেঘকাঞ্চনজঙ্ঘা, দার্জিলিং-এর সবুজ, দার্জিলিং-এর চা। পর্যটন হোক আর চা, ঠিকঠাক ব্র্যান্ডিংটাই আসল।

Powered by Froala Editor