দার্জিলিংয়ের গপ্পোগাছা

সময়ভ্রমণ - ৩১
আগের পর্বে

ঔপনিবেশিক শাসনের নিয়ম মেনেই ‘নেটিভ’ উপাধি পেলেন দার্জিলিং-এর স্থানীয় মানুষরা। হাওয়া বদলের উদ্দেশ্যে যাওয়া বাঙালির কাছেও নেটিভরা নেটিভই। তাঁরা দার্জিলিং-কে চিনেছেন সাহেবদের চোখ দিয়েই। স্বর্ণকুমারী দেবীর ‘দার্জিলিং পত্র’ পড়লে বোঝা যায় স্থানীয় লেপচা ভূটিয়াদের তিনি কতটা হীন দৃষ্টিতে দেখেছেন। উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর লেখায় অবশ্য অনেকটাই শ্লেষের ইঙ্গিত। কিন্তু সেখানেও আমরা-ওরা বিভাজন থেকেই যায়। পরবর্তীকালে অবনীন্দ্রনাথ এবং গগনেন্দ্রনাথ। কিন্তু এইসব নিসর্গের দৃশ্যের মাঝে চাপা পড়ে গিয়েছিল দার্জিলিং পত্তনের হিংস্রতা। বাঙালি আজও পাহাড়ের অধিবাসীদের আলাদাভাবেই দেখে। কিন্তু দার্জিলিং বাংলার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। আর তাই পৃথক গোর্খাল্যান্ডের দাবিকে ঘিরে গেল গেল রব ওঠে।


গল্প করার, শোনার, বলার এবং পড়ার দুশো মজা আছে। কোন গল্প কোথা থেকে শুরু হয়ে কোথায় গড়ায়, কোথায় গিয়ে মেশে, কোথায় যে শেষ হয়, তার থই পাওয়া যায় না। আসলে সেরকমভাবে দেখতে গেলে গল্পের শুরুশেষ বলে কিছু আছে কিনা কে বলবে। এই যে কবে থেকে দার্জিলিং আসি যাই, ম্যাল থেকে হাঁটতে হাঁটতে জলাপাহাড় যাই, দার্জিলিং থেকে ঘুম-জোড়বাংলো যাই জলাপাহাড়ের একটু নিচের কাটাপাহাড় হয়ে, কে জানতো কাটাপাহাড় জায়গাটায় রাশি রাশি গল্প জমা হয়ে আছে। দার্জিলিং শহর থেকে শিলিগুড়ি নামার যে মূল সড়ক, হিলকার্ট রোড, তা আজকাল হামেশা একমুখী করে রাখা হয়, গাড়ি যায় কাটাপাহাড় হয়ে। দার্জিলিং-এর আশপাশটা ইদানিং যেমন বেমক্কা ও বেরং বাড়িঘরে ভর্তি, কাটাপাহাড় জায়গাটাও তাই, তদুপরি পাহাড়টা মোটামুটি ন্যাড়া, মাঝেমধ্যে এক আধটা একলসেড়ে ধুপি, বসন্তে হঠাৎ ঝলসে ওঠা রক্তিম রডোডেনড্রনগুচ্ছ, তবে সেসব ফুলকে ধারণ করে আছে যে শাখারা তারা নিতান্তই ম্রিয়মাণ, উদ্ধত তো নয়ই, তাদের শিখরও নেই। মোটের ওপর, কাটাপাহাড় নিয়ে আগ্রহী হবার কারণ ছিল না। কিন্তু ওই যে, গল্প। আচমকা একটা বিদিশি লেখায় কাটাপাহাড়ের কথা পড়ে চমকে উঠলাম। সে গল্পের কথা বলি। 

এই গল্পটাও একটাই গল্প নয়। ডেভিড ডাউনিং বলে একজন ব্রিটিশ লেখকের নাম শোনা ছিল। তিনি ইতিহাসনির্ভর গুপ্তচরকাহিনি বা স্পাই থ্রিলার লিখে থাকেন, এটাও জানতাম। লা কার বা কিছু পুরোনো এরিক অ্যামবলারের মতো নামডাকওয়ালা না হলেও, নাজি জর্মনি এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী ইউরোপ নিয়ে তাঁর বেশকিছু সু-গবেষিত ও তথ্যনিষ্ঠ উপন্যাস ও অন্যান্য লেখা রয়েছে। সে সব লেখার অনেকগুলোই পড়েছি। সেই ডেভিড ডাউনিং সাহেব যে দার্জিলিং নিয়ে, সায়েবি আমলের বাংলা ও ভারত নিয়ে, এমনকি ভারতীয় বিপ্লবীদের প্রথম বিশ্বযুদ্ধকালীন সশস্ত্র অভ্যুত্থানপ্রচেষ্টা, যাঁর নেতৃত্বে স্বয়ং বাঘাযতীন, তা নিয়ে একটা আস্ত বই লিখে ফেলেছেন, কে জানত? যে লেখাটার কথা বলছি, সেটা চিন থেকে শুরু হয়ে খণ্ডে খণ্ডে বাংলা ও ভারত ঘুরে, আয়ারল্যান্ড ও মেক্সিকো হয়ে নভেম্বর বিপ্লবের রাশিয়ায় পৌঁছোয়, সেখান থেকে তাসখন্দ ও মধ্য এশিয়া ঘুরে দিল্লিতে। এতে আশ্চর্য হবার কিছু নেই। ঔপনিবেশিক সায়েবরা তাঁদের দশ হাজার নাফাধান্দায় পৃথিবীর যে যে মুল্লুকে পৌঁছেছিলেন, উপনিবেশ-বিরোধী লড়াইও সেই সেই দেশ পরিক্রমা করেছে। একটাই লড়াই নয়, আলাদা আলাদা লড়াই, কিন্তু সেই লড়াইয়ের সৈনিকদের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ থাকত। সে সময় এক দেশ থেকে অন্য দেশে যাতায়াত সহজসাধ্য ছিল না, সরকারি ডাকবিভাগের মাধ্যমে চিঠিপত্র লেনদেন করাও বিপজ্জনক। জাহাজঘাটায়, রেল স্টেশনে পুলিশের নজর থাকত। ফলে বিপ্লবীদের যাওয়া-আসা হত নানান কায়দায়, প্রায়ই ছদ্মবেশে বা পায়ে হেঁটে। বাঘা যতীনের অন্যতম সহযোগী ছিলেন নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য, পরে যিনি এম এন রায় নামে খ্যাত হন। ডাউনিং-এর যে বইটার কথা বলছি সেখানে এম এন রায় ভট্টাচার্য নামে উপস্থিত। তিনি ব্রিটিশ গোয়েন্দা বিভাগের চোখ এড়িয়ে পালান, আমেরিকা হয়ে মেক্সিকোতে গিয়ে থিতু হন। বাঘা যতীন ও তাঁর অন্য সহযোদ্ধারা হয় ধরা পড়েন কিম্বা ব্রিটিশদের সঙ্গে লড়াই করে মারা যান। ব্রিটিশ গোয়েন্দা বিভাগের সমকালীন দলিল ইত্যাদি ঘেঁটে সেই সময়ের অনুপুঙ্খ বিবরণ হাজির করেছেন ডাউনিং। 

দার্জিলিংয়ের গল্পে ফিরি। ডাউনিংএর 'ওয়ান ম্যান্স ফ্ল্যাগ' গল্পটা শুরু হচ্ছে দার্জিলিং থেকে। গল্পের নায়ক, ব্রিটিশ গুপ্তচর/গোয়েন্দা জ্যাক ম্যাককল ঘুরতে ঘুরতে গন্ধ শুঁকে দার্জিলিং-এ এসে উপস্থিত। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলছে, বাংলার বিপ্লবীরা জার্মানদের সাহায্য নিয়ে ব্রিটিশ সরকারকে উৎখাত করতে চাইছেন। জ্যাক ও অন্য গোয়েন্দারা বুঝতে চাইছেন, ভারতপ্রবাসী জার্মানদের সঙ্গে বিপ্লবীদের যোগাযোগ আছে কিনা, থাকলে কোথায়, কীভাবে। কলকাতার জার্মানরা সেসময় কাটাপাহাড় সেনানিবাসের জেলে বন্দি। দার্জিলিং-এ তখন মোটরগাড়ি চলাচল শুরু হয়েছে, তবে সব রাস্তায় নয়। জ্যাক ম্যাককল দার্জিলিং থেকে কাটাপাহাড় গিয়েছিলো টাঙ্গা করে। 

আরও পড়ুন
দার্জিলিং-এর বহু গল্প

কাটাপাহাড়ের সেনাছাউনিটি পুরনো। সেভাবে দেখতে গেলে, কাটাপাহাড় ছাউনিই দার্জিলিংয়ের প্রথম ও আদি সেনানিবাস, জলাপাহাড় নয়। জলাপাহাড় ছাউনির শুরুটা হয়েছিল সেনাদের স্বাস্থ্যাবাস হিসেবে, অসুস্থ গোরা সেনারা সেখানে সেরে উঠতে যেত। জলাপাহাড় ও কাটাপাহাড় ছাউনিতে দিশি সেপাইদের রাখা হত না। এমনকি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের গোড়ায় যখন কাটাপাহাড়ে জেল বানানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, সে জেল ছিল শুধুমাত্র যুরোপীয় বন্দিদের জন্য, নেটিভদের সেখানে ঠাঁই ছিল না। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ গিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এল, কাটাপাহাড় জেল আবার চালু হল। অপ্রকাশিত ও এখনো পর্যন্ত অসম্পূর্ণ(সে কারণে লেখকের নাম দেওয়া সমীচীন নয়)একটি গবেষণাপত্রের পাণ্ডুলিপি হাতে এসেছে, যার প্রায় সবটাই সমকালীন গোয়েন্দা রিপোর্ট ও স্বরাষ্ট্র দপ্তরের নথিপত্র অনুসরণে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কাটাপাহাড়ে যে বন্দিদের রাখা হয়েছিল তাদের নিয়ে অনেক খবর ও তথ্য সে পাণ্ডুলিপিতে আছে। সে সব গল্পে ফিরত আসব। 

কাটাপাহাড়ের জেলে জ্যাক ম্যাককল যে সব জার্মান বন্দিদের জেরা করেছিল তার ভিতর ব্রিটিশ ভারতের ও পৃথিবীর অন্যতম বড়ো জাহাজ কোম্পানি লয়েড শিপিং কোম্পানির এক উচ্চপদস্থ কর্মচারীও ছিলেন। যুদ্ধের সময়গুলো বাদ দিলে, সায়েবে-সায়েবে মিল ছিল, ব্রিটিশ উপনিবেশে জার্মান কোম্পানিরা দিব্যি ব্যবসা করত। ফ্রেড পিনের লেখায়-ও অন্যত্র-জানলাম, দার্জিলিং-এর সঙ্গে জার্মানি ও জার্মানদের নিবিড় সম্পর্ক ছিল, সত্যি কথা বলতে কি, দার্জিলিংয়ের প্রসিদ্ধতম চা-কর(প্ল্যান্টার) পরিবার ছিলেন জার্মান। সূদুর মোরাভিয়া থেকে ধর্মপ্রচারক হিসেবে আসা জোহান ও সোফি ওয়ে(হ্ব)রনিক দার্জিলিং-এ খুঁটি গাঁড়েন, ধর্মপ্রচার ছেড়ে দিয়ে কাঠ-ব্যবসা শুরু করেন, পাকেচক্রে চা-চাষও। তাঁদের সন্তানাদি চা-ব্যবসা চালিয়ে যান। ওয়ে(হ্ব)রনিকদের সঙ্গে দার্জিলিং এসেছিলেন স্টোলকে দম্পতি, জোয়াকিম ও ডরোথি। এই পরিবারও চা-চাষের সঙ্গে যুক্ত হন। দার্জিলিংয়ের বনপাহাড়ে চা-চাষ কীভাবে শুরু হল, কী ঘটল তারপর, এসব নিয়ে বহু গল্প আছে। থাকার কথাও, দার্জিলিংয়ের সঙ্গে চা ব্যাপারটা অচ্ছেদ্য বন্ধনে জড়িয়ে। কিন্তু সে গল্পও পরে। আপাতত যেটা বলবার, বন্ধু-শত্রু আর ওরা-আমরার হিসেবটা আদতে খুব গোলমেলে, কে কখন শত্রু আর কে কখন বন্ধু তা ঠাওর করা মুশকিল। 

আরও পড়ুন
দার্জিলিংপত্তনের পর

যেমন, ধনী ও শিক্ষিত বাঙালিরা দার্জিলিংপত্তনের সময় থেকে সায়েবসঙ্গ করেছেন, নেটিভদের থেকে নিজেদের আলাদা করে দেখেছেন, রেখেছেন। আবার, পাহাড়ের আপিস-কাছারি ব্যবসাপত্রে সমতলের বাঙালিরা ঢুকেছেন, দার্জিলিংয়ে আলাদা বাঙালি মহল্লা তৈরি হয়েছে, যেখানে মরসুমি হাওয়া-বদলানো নয়, স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেছেন বহু মানুষ। বিশ শতকের মাঝামাঝি, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, সায়েবি দার্জিলিং-এর বয়স যখন মোটে একশো, শহর এলাকায় বাস করতেন এক হাজারের বেশি বাঙালি। এই হিসাবটা এ জে ড্যাসের ১৯৪৭-এর দার্জিলিং গ্যাজেটিয়ার থেকে নেওয়া।  আরো তিরিশ বছর পর, সরকারি জনগণনা অনুযায়ী, ১৯৭১-এ দার্জিলিং পুরো এলাকার বাঙালি জনসংখ্যা চোদ্দশোর কাছাকাছি। তার পর থেকে সরকারি জনগণনায় ভাষা, জাতি ইত্যাদির প্রকাশ্য উল্লেখ বন্ধ হয়ে যায়। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে জানি, যে সব বাঙালিরা দার্জিলিং-এ বা অন্য পাহাড়ি শহরে বসবাস করতেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাহাড়িদের সঙ্গে তাঁদের সামাজিক যোগাযোগ বেড়েছিল। সব শহরেই বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েসন তৈরি হয়েছিল বটে, কিন্তু পাহাড়ের পালাপার্বণে, যথা দুর্গাপুজোয়, বাঙালি ও পাহাড়িরা উভয়ত যোগ দিতেন। কখন যে বাঙালি-পাহাড়ি, পাহাড়-সমতল এই সব বিভাজন আমরা-ওরার তীব্র সাম্প্রদায়িক অসুয়ায় বদলে গেল, তা বলা কঠিন। মৈত্রেয়ী দেবীর কথা উল্লেখ করে আগে বলেছি, এর পিছনে প্রভূত সায়েবি ইন্ধন ছিল। শুধু যে ধনাঢ্য বাঙালিরাই সায়েবসঙ্গ পছন্দ করতেন, সায়েবদের অনুকরণ করতেন, তা নয়। নেপাল থেকে দার্জিলিং-এ আসা পাহাড়িদের মধ্যে অবস্থাপন্ন উঁচুজাতের লোকজন অথবা স্থানীয় মাতব্বররা ছিলেন, কিছু মানুষ সায়েবদের প্রীতিভাজন হয়ে বিত্ত ও পদের অধিকারী হয়েছিলেন। সায়েবদের তৈরি গোর্খা সেনাবাহিনীর লোকেরাও অনেকেই অবসরের পর পাহাড়ে ঘরবাড়ি বানিয়েছিলেন। তাঁদের কাছে বাঙালি অপেক্ষা সায়েবশাসন বেশি পছন্দের ছিল, সন্দেহের অবকাশ নেই। শিলিগুড়ির বাসিন্দা ও দার্জিলিংয়ে কমিউনিস্ট আন্দোলনের অন্যতম নেতা সত্যেন্দ্র নারায়ণ মজুমদার তাঁর কাঞ্চনজঙ্ঘার ঘুম ভাঙছে নামের বইতে বলছেন, চল্লিশের দশকেই দার্জিলিংয়ের বিত্তবান পাহাড়িদের মধ্যে বাঙালি ও সমতল বিদ্বেষ প্রকট, পৃথক গোর্খা অঞ্চলের দাবি তখনই উঠতে শুরু করেছে। সত্যেন্দ্র নারায়ণ মজুমদার এখন প্রায় বিস্মৃত ব্যক্তিত্ব, তাঁর লেখাও দুষ্প্রাপ্য। ব্রিটিশবিরোধী লড়াইয়ের সৈনিক সত্যেন্দ্র আন্দামানফেরত সোজা দার্জিলিংয়ের চা-বাগানে প্রবেশ করেন। সেই প্রবেশ আসলে অন্য, হয়তো বা অনুপ্রবেশও। দার্জিলিং চায়ের স্বাদগন্ধ ও বাগানের ছককাটা নিসর্গের পিছনে সস্তা শ্রম ও চূড়ান্ত শোষণের যে পৃথিবী লুকিয়ে, তার ভিতরে ঢুকেছিলেন তিনি। সে গল্পও আলাদা করে বলা দরকার। 

বাঙালিরা যে মুহূর্ত থেকে সায়েবদের শত্রু বলে ভাবতে থাক যেন, সেই শত্রুতা সমতল থেকে পাহাড় উজিয়ে উঠে এল দার্জিলিংয়ে, স্বয়ং লাটসায়েবের দিকে ছুটে গেলো বাঙালি বিপ্লবী, পক্ষান্তরে সন্ত্রাসীর গুলি, পাহাড়ি শহরের যে সুনির্মিত, সুরক্ষিত সামাজিক ঘেরাটোপে সায়েব এবং তদানুসারী বাঙালিরা সুস্থ হতেন ও আমোদ করতেন, সেখানে বড়সড় ধাক্কা লাগল। ভবানী প্রসাদ ভট্টাচার্যের কথা আগে এসেছে। তাঁকে ফাঁসি দেওয়া হয়। যা সেভাবে জানা ছিল না, তাঁর সঙ্গীদের কথা। ভবানীর সঙ্গে উনিশশো চৌতিরিশের ৮ই মের দার্জিলিং গুলিকাণ্ডে আরো অনেকেই যুক্ত ছিলেন। কলকাতা হাই কোর্টে সে বছরের শেষ দিকে এই মামলা ওঠে জনৈক ডার্বিশায়ারের এজলাসে। ভবানীর ফাঁসি বহাল রেখে ও অন্যদের বিস্তারিত সাজার বিবরণ দিয়ে যে বিচারবয়ান বা রায় লেখা হয়, সম্প্রতি সেটা পড়ার সুযোগ হল। পড়ে চমকে উঠলাম। ভবানীদের দলে উজ্জ্বলা মজুমদার ওরফে অমিয়া মজুমদার ওরফে মলয়া ওরফে মলিনা দেবী ওরফে লীলা নামের একটি উনিশ বছরের মেয়ে ছিলো। সেটা উনিশশো চৌত্রিশ। বাঙালি মেয়েরা তখনো ঘরগেরস্থালি ছেড়ে বাইরে সেভাবে বেরোন না, দার্জিলিংয়ে লাটসায়েব মারতে আসা তো দূরস্থান। কিন্তু উজ্জ্বলার ক্ষেত্রে সেটা মুখ্য বিবেচ্য ছিল না, অন্তত রায়ের বয়ানে তো নয়ই। একজন দুজন করে বাঙালি মেয়েরা স্বাধীনতার লড়াইতে সক্রিয় অংশ নিচ্ছিলেন, সুতরাং উজ্জ্বলা বিরল ব্যতিক্রম ছিলেন, এমন বলা যাবে না। কিভাবে তিনি দলে এলেন, সেখানে তাঁর ভূমিকা ঠিক কি ছিল, দলের অন্যরা কে কী করেছিলেন, কীভাবে গোটা ঘটনার পরিকল্পনা করা হয়েছিল, এসব নিয়ে রায়ে যা বলা আছে, তা নিয়েও বিস্তারিত গল্প ফাঁদা যায়। সে গল্প পরেরবার।

আরও পড়ুন
দার্জিলিংপত্তন: লয়েডের চিঠি ও লয়েডবিদায়

Powered by Froala Editor