লীলা, দেবদীপাবলি, রামবাবুর দোকান

মুছে যায়? — ৪৬
আগের পর্বে

সত্তরের দশকের মাঝামাঝি সময়ে কাশীর ঘাটে সার বাঁধা সুসজ্জিত নৌকা। সেই বজরা ভাড়া করে থাকেন অনেক হিপি, হিপিনী। উদ্দাম যৌনজীবন, বাধাহীন নেশা। কাশীর অর্থনীতি তখন অনেকটাই নির্ভরশীল ভাড়াটেদের ওপরে। সে-ছবিও বদলে যেতে থাকল দ্রুত। কাশীতে সম্পন্ন বাঙালিদের বড়ো বড়ো বাড়ি বিক্রি হয়ে গেল রাতারাতি। বিগত কুড়ি বছর কাশিতে দক্ষিণীদের সংখ্যা বেড়েছে দ্রুত। তাঁর বাড়ি ভাড়া নিচ্ছেন, কিনছেনও। কাশী বর্তমানে ছেয়ে গেছে বড়ো বড়ো দক্ষিণী খাবারের দোকানে। তারপর...

কাশী ও বারাণসী অথবা বেনারস এক সময় বাঙালি প্রাধান্যে যথেষ্ট অন্যরকম ছিল, মানে বনারস মেশান একটা বাঙালি সংস্কৃতির ধারক ও বাহক ছিল, এনিয়ে কাশীর বাঙালিদের তো বটেই, কলকাতার বাঙালিদেরও গর্বের কোনো শেষ ছিল না। দশাশ্বমেধ বাজারে নানা ধরনের ছোটো-বড়ো মাছ পাওয়া যাওয়ার কথা আগেই লিখেছি। কাশীতে নানা ধরনের শাক, তা কলমি, বেমো, গিমা, লাল শাক, নটে শাক— সবই হতে পারে। রামনগরের বড়ো বড়ো— প্রায় লউকি বা ছোট লাউয়ের সাইজের চকচকে, অফ হোয়াইট গোলাকার বেগুন ছিল টেস্টলেস— প্রায় স্বাদহীন। সেই বেগুন ভাজা খেতে অনেক সর্ষের তেল টানে— লাগে। পোড়া খাওয়া চলে সেই বেগুন। এছাড়াও গঙ্গা ঘেঁষা দিয়ারা— পয়োস্তি জমিতে ফুটি, কাঁকুড়, কাকরির চাষ।

ফুটি প্রসঙ্গে মনে পড়ল বাঙি বা বাঙ্গির কথা। পিতৃদেব অমরনাথ রায়ের মুখে শুনেছি ঢাকায় ফুটর থেকে একটু ছোট সাইজের বাঙি, তা গুড় দিয়ে খেতে হয়। পূর্ববঙ্গে— অখণ্ড বঙ্গভূমের পূর্ব ভাগে বাঙি বা বাঙ্গি ছাড়াও ছিল নোনা— অনেকটা যেন আতার স্বাদ, বড়ো বড়ো ফল হয়, গা টা  সমান, আতার যেমন হয় খাঁজকাঁটা কাঁটা, তেমন নয় মোটেই। সেই নোনা অবশ্য পাওয়া যায় এ বঙ্গেও, যদিও গত কয়েক দশকে তার বিলুপ্তি হয়েছে অনেকটাই। ক্ষিরা নামে খুব ছোট আর মিষ্টি এক ধরনের শশা পাওয়া যেত অখণ্ড বঙ্গের পূর্বভাগে, সেই ক্ষিরা চাষও বিলুপ্ত হয়ে গেছে প্রায়।

পূর্ববঙ্গে পাওয়া যেত ডোউয়া, সেও চল্লিশের দশকে, তার সঙ্গে সঙ্গে কাউ। হ্যাঁ, কাউ, ভাগ্যিস তখন তথাকথিত গো-রক্ষকদের হিংস্র উপদ্রব তখন বাড়েনি, না হলে কাউ খাওয়া বেরিয়ে যেত, ছোটো ছোটো মেয়েদের, বয়স্কা নারী অথবা গর্ভবতী পোয়াতি রমণীদের। কাউ চেহারায় অনেকটা যেন মিনি কাঁঠাল, তেমনই এবড়ো খেবড়ো গা, তাদের, বড়োজোর হাতের দু আঙুল তিন আঙুল মাপের, পাকলেও টকসা স্বাদ থাকে। সর্ষের তেল, নুন, সামান্য মিষ্টি দিয়ে মাখা কাউয়ের স্বাদ মা— গায়ত্রী রায়, বড়মাসিমা— ঊষারানী ভট্টাচার্যের জিভে।

কাউ, নোনা, বাঙি— এদের কথা এখন থাক। বাঙি খাওয়ার জন্য ভালো চিনি পাওয়া যেত না অখণ্ড বঙ্গের পূর্ববঙ্গে, চল্লিশের দশকে, তাই গুড়, এখো বা আখের গুড়।

আরও পড়ুন
দক্ষিণীরা ক্রমশ কাশীর দখল নিচ্ছেন

‘কাশীর চিনি’ পাওয়া যেত পূর্ববঙ্গে। মূলত নিষ্ঠাকাষ্ঠা মানা পাশ্চাত্য বৈদিক ব্রাহ্মণ পরিবারে এই ‘কাশীর চিনি’ ব্যবহার হত। ‘কাশীর চিনি’ লালচে, মিহি, তাকে পরিষ্কার করে সাদা, ঝকঝকে রঙ পাওয়ানো হত না, দানাদার— দানা সমেত ছিল না সেইসব চিনি। ‘কাশীর চিনির’ সঙ্গে সঙ্গে কাশীর কোনো সম্পর্ক আদৌ আসে কিনা জানা নেই। পাশ্চাত্য বৈদিক পরিবারের বিধবারাও ব্যবহার করতেন গুড় নয়ত ‘কাশীর চিনি’। বিভিন্ন পুজোয়, অর্চনায় ব্যবহার করা হত ‘কাশীর চিনি’। সৈন্ধব লবণ, করকোচ নুন ব্যবহার করতেন ‘অতি শুদ্ধতায়’ বিশ্বাসী পাশ্চাত্য বৈদিক ব্রাহ্মণ পরিবারের সংস্কারবান জনেরা, সেই সঙ্গে পতিহীন বিধবারাও। করকোচ লবণ হয়তো বা খনিজ কোনো লবণ। সাধারণ নুন, নানাভাবে ‘স্পর্শ’ দোষাক্রান্ত হয়ে নৌকো— খোলা নৌকোতে আসত গঙ্গাপথে। নুনের নৌকোয় কোনো ছই— ঢাকনি বা আড়াল থাকত না। ছইবিহীন খোলা সেই নাওয়ে ডাঁই করা নুনের সঙ্গে সঙ্গে জন্মাত স্পর্শদোষ। কারণ, এই নুন-নৌকোর মাঝিরা ছিলেন মূলত ইসলাম ধর্মের মানুষ অথবা বর্ণবাদী সমাজের অতি নিম্নস্থানে অবস্থান যাঁদের, সেই ‘প্রান্তিক’, ‘অপর’ বা রবীন্দ্রনাথ যাঁদের বলেছেন ‘নোটোর দল’ বা ‘রাজার এঁটো’, সেই হিসাবেই তাঁদের অবস্থান। সেই ‘ওরা’— তথাকথিত নিম্নবর্গীয়রা আর ইসলাম ধর্মের মানুষরা এইসব লবণ নাও— নৌকা টেনে আনেন।

আরও পড়ুন
বারাণসীর ভৃগু-পন্ডিত, গতজন্ম, তারও আগের আগের জন্মে…

এইসব মাঝি মাল্লাদের স্পর্শ, নাকি তৈরি করে স্পর্শদোষ। এছাড়াও তাঁদের পা ছোঁয়ানো নুন তথাকথিত উচ্চবর্গীয়রা খাবেন কীভাবে? নুনেই তো প্রায় পা ডোবানো থাকত তাঁদের। নাও চালিয়ে আনতেন যাঁরা, এছাড়াও হাগা-মোতা— মল-মূত্র ত্যাগ, সবই তো সেই নৌকো ধরেই, ফলে অশুদ্ধ অশুদ্ধ। অথচ মনে রাখতে হবে নুন আর গঙ্গাজলের বেনিয়ানগিরি করে কলকাতার কত কত নামি পরিবার যথেষ্ট পরিমাণে টাকা করে ফেললেন। কেউ কেউ সেই টাকা ফুঁ ফুঁ করে এক ফুঁ, দুই ফুঁ, তিন ফুঁ— ফুঁক্কার দিয়েই, ফুঁ মেরে মেরেই ফুঁকে দিলেন— পায়রা, বেশ্যা, নাচনেওয়ালি, বাইজি, আর রক্ষিতাদের পায়ে পায়ে। পোষা বেড়ালের বিয়ে দিতেন তাঁরা। রক্ষিতা— রাঁড় পোষা নিয়ে চলত বন্দুকবাজি, লাঠিবাজি। এ বাবুর পায়রা ও বাবুর মোসাহেব উড়িয়ে নিয়ে গেলে সে এক মহামারী কাণ্ড, খুনোখুনি, রক্তপাত, কোর্ট-কাছারি, মোকদ্দমা।

আরও পড়ুন
বারাণসী–বেনারস–কাশী

কাশী, কলকাতা, লখনউ— এই কালচারে খানিকটা কাছাকাছি তো ছিলই। কলকাতার বউবাজার বা বৌবাজারে শেষ বাইজিরা ছিলে সত্তর দশকেও। আশির দশকে তাঁরা প্রায় নেই হয়ে গেলেন। এখন তো শূন্য একেবারে। দোতলা, তিনতলা, চারতলা, মূলত চারতলা, তিনতলার প্রাচীন বাড়িরা, বাইরে টানা, চওড়া ঝুলবারান্দা, ভেতরে বড়ো বড়ো ঘর, উঁচু উঁচু সিলিং, সেখানে ঘুঙরু— ঘুঙরুর আওয়াজ, ঘুঙুরের শব্দ, রাত বাড়লেই— নাহ, ‘ইয়ে ঘুঙরু টুট গ্যয়ে’ নয়, দিব্যি ঘুঙুরের নিজস্ব আমন্ত্রণ।

আরও পড়ুন
ধর্মশালা, ধরমশালা, কিছু কথা

কাশী বা লখনউয়ের বাইজিরা অতি বিখ্যাত তাঁদের আদা, মুজরা বা মুজরো পেশ করার মধ্যে, এঁরা অনেকেই ইসলাম ধর্মের মানুষ। এমনিতে ছুয়া— ছুত, জাতপাত, বামুন কায়েত, বদ্যি বিচার, তার ওপর ‘ছোটো জাত’, ‘নিচু জাত’— এসব বিচার তো আছেই, কিন্তু নারী সম্ভোগে ফূর্তি— বিলাসে জাতপাত সব দূরে চলে যায়, সে কী কলকাতা, কী বনারস আর কী লখনউয়ে।

কাশীতে— কাশীতে নয়, কাশীর ওপারে রামনগর বা ব্যাসকাশীতে লীলা নামে একটি অসাধারণ অনুষ্ঠান হয় বহু বহু বছর ধরে আশ্বিন মাসে অনন্ত চতুর্দশীর দিন শুরু হয় ‘লীলা’। এদিন— মানে অনন্ত চতুর্দশীর দিন জন্ম হয়েছিল দশানন লঙ্কেশের। দশমুণ্ডধারী রাবণ জন্মালেন অনন্ত চতুর্দশীর দিন। রাতে— প্রতি রাতে, আশ্বিন মাসের শুরুতে ‘লীলা’ শুরু হয়। নিজের পালতু— পোষা রাজহস্তির পিঠে স্বয়ং কাশীনরেশ— কাশীরাজ। আমরা হয়তো অনেকেই জানি বা জানি না কাশীরাজ— কাশীনরেশ থাকেন ব্যাসকাশী বা রামনগরে, তাঁর প্রাসাদে। সেখানে তাঁর পুরনো ও নতুন গাড়ি, হাতি, ঘোড়া, কামান-বন্দুক, তলোয়ারধারী সিপাহী, অঙ্গরক্ষক— দেহরক্ষী। 

আশ্বিন মাসে অনন্ত চতুর্দশীর দিন শুরু হয়ে যায় লীলা। চারপাশে হ্যাজাক আলো, ডে লাইট আর পেট্রোম্যাক্সের শোঁ শোঁ আলোবাহার। আমি যে সময় ‘লীলা’ দেখি ব্যাসকাশী বা রামনগরে গিয়ে, সে তো রাত নামলেই অন্ধকার, অন্ধকার, চারপাশে শোঁ-শোঁ, শোঁশোঁ করে জেগে থাকা পাম্পদার পেট্রোম্যাক্কস, হ্যাজাক।

আশ্বিনের অন্ধ অন্ধকার গিলে নিচ্ছে পেট্রোম্যাক্সের রোশনাই, অনায়াসে। চারপাশে কিছু স্থবির আলোপোকা, হঠাৎই আলোক ধুনকিতে প্রাণ পেয়ে যেন উড়ন্ত ডানার অভিসারে।

অন্ধকারে প্রায় মিশে থাকা কাশীনরেশ— কাশীরাজের হাতির হাওলায় আঁটা রুপোর ছত্র বা ছত্রী যেন কোনো অনায়াস উজ্জ্বলতায় জেগে উঠছে মাঝে মাঝেই, সেই আধো আবছায়া— অন্ধকারে পেছন থেকে সেই গজকে দেখলে অন্যতর কোনো ভিশনারি মায়া তৈরি হতে থাকে। দৃষ্টিমায়া। দৃষ্টিবিভ্রম নয়, দৃষ্টিমায়া।

সেই রাজহস্তি বা হস্তিনীর পিঠে কাশীরাজ, তাঁর সঙ্গে সঙ্গে লীলা চলছে— রাম, লছমন, ভরত, সীতা মাইয়া, হনুমানজি। আশ্বিনের অনন্ত চতুর্দশী থেকে কুঁয়র পূর্ণিমা— কার্তিক মাসের কুঁয়র পূর্ণিমা— কার্তিক মাসের প্রথম দিন, শেষ হবে লীলা। রামজি আর সীতামাইয়া দাঁড়াবেন পাশাপাশি। রাবণ বধ হয়ে গেছে। এবার রাম রাজা হবেন। কিন্তু এরপর যে সীতামাইয়ার বনবাস, লব-কুশের জন্ম মুনির আশ্রমে, অন্যায়, অবিচার— অগ্নিপরীক্ষার ছুতোয় সীতাকে বেঘর করা, তাঁর পাতাল প্রবেশ— এসব থাকে না কিছুই। কিস্যু থাকে না।

যাঁরা দেখেছেন এই এক মাসের লীলা নামের জীবন্ত রামায়ণ, তাঁরা কেউ কল্পনাও করতে পারবেন না কী অসম্ভব চাহিদা এই লীলার, অন্তত ষাট, সত্তর আর আশির দশকে তো বটেই।

লীলা হতে থাকে এক বি-ই-রা-ট প্রান্তর জুড়ে প্রায়। লীলা চলমান। কাশীরাজ— কাশীনরেশকে নিয়ে চলতে থাকা রাজহস্তির সঙ্গে সঙ্গে রামায়ণও চলে। চলতে থাকে।

আশ্বিনে, কার্তিকে ষাট, সত্তর দশকে শিরশিরোনি শীত। সেই আবছা আবছা কুহুরি— কোহরা বা কুয়াশা জড়ানো চারপাশ এমনিতেই বেশ রহস্যময়— কুহকি। তার মধ্যে রাজার হাতি চলেছে, তার গোদা গোদা পায়ে এর মধ্যেই অনুসরণ করছে ভিড়, ভিড়— লোকজন। প্রথম শীতের শিহর যেন নেমে আসছে প্রকৃতি জুড়ে। হিম, হিম, হিম নামছে খোলা ময়দান জুড়ে। বহু মানুষ এসেছেন নানা জায়গা থেকে লীলা দেখতে কাশী শহর— সিটি, টাউন থেকে তো বটেই। গ্রাম— দিহাত থেকেও। তখনও যদিও নেমে আসেনি ঘন শীত। কিন্তু হিম তরাসে সে তো আর এক অনন্ত জীবনের খেলাধুলো।

এ যেন অতি সম্প্রসারিত রূপে হাবিব তনবির অথবা ব্রেশটের নাটক। চলমান— চলন্তা সেই পালা প্রবেশ। বাল্যে, প্রথম কৈশোরে দেখা লীলা নামের এই পালা স্মরণে থেকে গেছে আজও। সাধারণ মানুষ— অতি গরিবজনে বিশ্বাস করেন আজও রাজদর্শনে পুণ্য হয়। বিপুল পুণ্যার্জন। এ এক অদ্ভুত বিশ্বাস। এ শুধু আমাদের দেশেই নয়, আছে অন্য অন্য দেশেও, যথেষ্ট পরিমাণে। সেই বিষয়ে আর বিস্তারিত বলতে চাই না। তবু কাশীরাজকে— কাশীনরেশকে লীলা দেখতে দেখতে প্রণাম করতে থাকেন অনেকেই, দু হাত জোড় করে। সমর্পণের প্রণাম, দু হাত জোড় করে। কখনও ভূমিতে শুয়ে পড়ে, সাষ্টাঙ্গেও। যদিও সাষ্টাঙ্গ প্রণাম করে ছোটোরা, কমবয়সিরাই বেশি।

কার্তিক মাসেই শিখ ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা গুরু নানকজির জন্ম তিথি উপলক্ষে কাশীতে দশাশ্বমেধসহ ঘাটে ঘাটে জ্বালানো হয় প্রদীপ। প্রদীপ। এই আলো-উৎসবের নাম দেবদীপাবলি। দেব-দীপাবলির আলোয় আলোয় বারাণসীর উত্তরবাহিনী গঙ্গা জেগে থাকে অন্য কোনো মাত্রা নিয়ে।

দেবদীপাবলির কথা এখন থাক। কার্তিকের কার্তিকী পূর্ণিমায় ঘন নয়। হালকা হালকা কোহরা— কুয়াশা ভেদ করে সে যেন এক অসীম, অনন্তের জাগরণ। কত কত প্রদীপ, সেই প্রদীপের আলোকময়তা, আলোরেখায় সমাদৃত প্রাণের উৎসব। দূর থেকে নয়, যথেষ্ট কাছ থেকে উড়ে আসা উত্তরবাহিনীর বাতাস কেমন করে যেন আলোড়িত করতে চায় সেই আলোকময়তাকে।

দশাশ্বমেধ ঘাট জেগে থাকে আলোর উৎসারে। লীলা, লীলা, লীলা— সাধারণ মানুষের মুখে মুখে সেই লীলাময় অভিনয়কলা, স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ। লীলায় মজে থাকা। ধনী, দরিদ্র সবাই আসছেন নিজের নিজের দর্শন— আকাঙ্খা, বিশ্বাস নিয়ে। আসছেন, চলে যাচ্ছেন। যখন কাশী, রামনগর সেতু হয়নি— গঙ্গার ওপর দিয়ে তখনও তাঁরা আসতেন, এখনও আসেন। এত এত তথাকথিত রাম-রাজনীতির পরও তো তাঁরা আসেন, দেখেন লীলা।

গোধূলিয়া, রামাপুরার দিক থেকে কাশীর দশাশ্বমেধ ঘাটে আসতে দশাশ্বমেধের আগেই রাম ভট্টাচার্যের আর্ট আর অ্যান্টিক-দোকান। দোকানে অরিজিন্যাল কম ফেক বেশি, দেখলেই বোঝা যায়। অন্তত যাঁরা একটু আধটু অ্যান্টিক দ্রব্য বোঝেন, নাড়াচাড়া করেন। কাশীতে পুরনো বাড়ির বহু সামগ্রী, তার মধ্যে বাঙালিদের বাড়িই বেশি, বহু খাট, চেয়ার, টেবল, আরামকেদারা— ইজিচেয়ার, কাচ, ব্রোঞ্জ আর পোর্সিলিনের ফুলদানি, পোর্সিলিনে তৈরি নানা ধরনের বিলিতিন পুতুল, পিতলে তৈরি পুতুল, কাচের পেপারওয়েট, পিতলের পেপারওয়েট, সবই অল্পস্বল্প। ভালো জিনিস এলেই বিক্রি হয়ে যায় ফ্যান্সি প্রাইসে। অ্যান্টিক কেনা-বেচা বেশির ভাগটাই কালেকটারের শখের ওপর, পছন্দের ওপর। সংগ্রাহক— কালেকটার যেটা পছন্দ করবেন, তার ওপরই দাম নির্ধারিত হয়, তার ওপর পিরিয়ড পিস হলে তো কথাই নেই।

রামবাবুর দোকান থেকে কেনা— সংগ্রহ করা কিছু কাশীর-স্কুলিংয়ের পেইন্টিং খুব বড়ো নয়, মূলত যা নর্তকী আর দেবী-দেবতার ছবির ওপর নির্ভরশীল, তা দেখি সুভো ঠাকুর ও আরতি ঠাকুরের বড়ো পুত্র সিদ্ধার্থ ঠাকুরের কাছে। 

সুভো ঠাকুরের মানে সুভো ঠাকুর আর আরতি ঠাকুরের তিন সন্তান— সিদ্ধার্থ, সুন্দরম ও পুপে। পুপে কন্যা। সিদ্ধার্থর ডাক নাম গেটু। তো সে যাই হোক, রাম ভট্টাচার্যর দোকান থেকে সংগ্রহ করা সেই পটচিত্রর কথা মনে আছে এখনও। বিশেষ করে ময়ূরবাহনা চতুর্ভুজা সরস্বতী।

Powered by Froala Editor