ভোট, চোট, ফোট

মুছে যায়? - ৩৮
আগের পর্বে

গোপনে চিনে গিয়েছিলেন সৌরেন বসু। ফিরে এসে 'হিন্দুস্থান স্ট্যান্ডার্ড' পত্রিকায় তিনি চিনের পরিস্থিতি নিয়ে দীর্ঘ প্রতিবেদন লেখেন দু-তিন কিস্তিতে। যা নিয়ে বিপুল হইচই পড়ে যায় রাজনৈতিক মহলে। দৈনিক বসুমতীর চারের পাতায় উত্তর সম্পাদকীয় লিখতেন তিনি। শারদ সংখ্যায় লিখতেন অসীম চট্টোপাধ্যায়। 'স্ট্যামাক' নামের ওষুধ কোম্পানিতে ইউনিয়ন করতেন তিনি। রাজনৈতিক কারণে তিনি কানু সান্যালের কাছাকাছি আসলেও খুব বেশিদিন স্থায়ী হয়নি সমঝোতা। সিঙ্গুরে জমি আন্দোলনের সমর্থনে দাঁড়িয়েছিলেন কানু সান্যাল। তারপর...

হাওড়া জেলার অতি বর্ধিষ্ণু গ্রাম বলে কথিত বালি গ্রামে ভাড়া উঠে চলে আসি হাওড়ার শিবপুর থেকে। ১৯৫৩ সালের ৬ নভেম্বর কলকাতার চেতলায় জয়নুদ্দিন বা জৈনুদ্দিন মিস্ত্রি লেনে, ৪০/১ এ জৈনুদ্দিন মিস্ত্রি লেনে পিসিমার বাড়িতে আমার জন্ম। শিবপুরে চাষা-ধোপা পাড়া লেন, জি টি রোড এবং ওঙ্কারমল জেটিয়ার ভাড়া বাড়ি, পরপর পাল্টানো হয়েছে। চাষা-ধোপা পাড়া লেনের ঢ্যাংমশাইদের বাড়ি একতলা— তাতেই ভাড়া থাকতাম আমরা। ওঙ্কারমল জেটিয়া রোডের বাড়িটিও একতলা, সেখানেই ভাড়াটে জীবন। জি টি রোডের বাড়িটি ছিল দোতলা। ১৯৫৯ সালের মার্চ মাসে বালিতে ভাড়াটে হিসাবে উঠে আসেন আমার পিতৃদেব অমরনাথ রায়। সঙ্গে মা— গায়ত্রী রায়। বড়সড় পাঞ্জাব লরিতে ঠাসা আমাদের সাংসারিক মালপত্র, একটি বড়সড় অলওয়েভ সেট মার্কনি রেডিও আর আরও অনেক অ্যাঁকোঢ্যাঁকো— সাংসারিক জিনিসপত্র— কাঁসা-পেতলের বাসন, তামার বড় কলসি। নাহ, আমাদের কোনো ড্রেসিং টেবল, আলমারি, মিটসেফ ছিল না। ছিল বড়বড় কালো কালো, খুব জবরদস্ত— মজবুত স্টিলের ট্রাঙ্ক। যেমন কিনা ম্যাজিকের দল বা সি আর পি, বি এস এফ, আর্মির থাকে। আর ছিল ছোট, গায়ে গোল গোল খুরোদার এক লোহার সুটকেস আর একটি চামড়ার শক্তপোক্ত সুটকেস— দুটোই মা এবং বাবার বিবাহস্মারক।

১৯৫৯ সালের মার্চে বালিতে গৌরীশঙ্কর ভট্টাচার্যের বাড়িতে ভাড়াটে হিসাবে বাবা— অমরনাথ রায় আসেন। মাস ভাড়া পঁচিশ টাকা। এই বাড়ির ঠিকানা— ৬৭ নম্বর গোস্বামী পাড়া রোড।
যে বড় পাঞ্জাব লরিতে জিনিস ঠেসে আমরা এসেছিলাম, সেই লরিতেই আমার মা, বাবা— মালের সঙ্গে। বাবা কাপড়ে জড়ান মার্কনি সেটটি, যেটি ১৯৫৩ সালে বানানো হয়েছিল হাওড়ার রঘুবাবুকে দিয়ে, খরচ হয়েছিল দুশো টাকা, খুব পোক্ত আর চমৎকার রেডিও। কাঠের ক্যাবিনেট, ভেতরে আলো জ্বলে। কানেকশান হওয়ার পর রেডিওটিতে কাঁটা আছে, নব ঘোরাতে হয়। এই বেতার যন্ত্রটি আমাদের অনায়াসে ধরে দিতে পারে রেডিও পাকিস্তান, ঢাকা, বি বি সি, ভয়েস অফ আমেরিকা, রেডিও মস্কো, রেডিও পিকিং।

বাবা অল ইন্ডিয়া রেডিওর খবর শুনতেন মন দিয়ে। তাঁর দৈনিক খবরের কাগজ কেনার সামর্থ্য ছিল না।

৬৭ নম্বর গোস্বামী পাড়া রোডের যে বাড়িতে ভাড়া এলাম আমরা, সেখানে পাশেই একটি ব্রহ্মদৈত্যখ্যাত বেলগাছ। পায়খানা অনেক দূরে, ঘর থেকে। গৌরীশঙ্কর ভট্টাচার্যদের পাশাপাশি দুটো খাটা পায়খানার পাশে অন্যের জমিতে একটি ব্যবহার না হওয়া পোড়ো পায়খানা— যার মধ্যে বিষাক্ত সাপেদের আড্ডা, পাশেই বকুল বৃক্ষ, একটি। ফুলের সিজনে বকুল ফুলেরা পড়ে থাকে ঘাসের ওপর।
এসব কথা বলা এই জন্যে ভোটের বাজারে আমার মনে পড়ে গেল প্রথম নির্বাচন দর্শনের কথা। আর স্পষ্টভাবে সেটা বালিতেই।

আরও পড়ুন
সৌরেন বসু, অসীম চট্টোপাধ্যায়, অচলপত্র

লোকসভা আর বিধানসভায় নির্বাচন একসঙ্গে। বালিতে তখন রাজনৈতিক— নির্বাচনী প্রতীক বলতে না ভাঙা জাতীয় কংগ্রেসের জোড়া বলদ, অটুট ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি— সি পি আই-এর কাস্তে-ধানের শীষ। অখিল ভারতীয় জনসঙ্ঘের প্রদীপ। বালি কেন্দ্রের বিধানসভায় তখন সি পি আই-এর প্রার্থী পতিত পাবন পাঠক। জাতীয় কংগ্রেসের শৈলেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়। লোকসভায় কৃষ্ণকুমার চট্টোপাধ্যায়, কমিউনিস্ট পার্টির শ্রমিক নেতা মহম্মদ ইলিয়াস। অখিল ভারতীয় জনসঙ্ঘের হয়ে এই লোকসভা আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতেন অধ্যাপক হরিপদ ভারতী। সুদর্শন, সুবক্তা, হাওড়ার নরসিংহ দত্ত কলেজের অধ্যাপক হরিপদবাবু এই লোকসভা সিটে কখনও জিততে পারেননি। এই সিটে জিততেন সি পি আই-এর মহম্মদ ইলিয়াস। তারপর এক সি পি আই ভেঙে দুই হলে— সি পি আই ও সি পি আই (এম) হলে, জিততেন সি পি আই (এম)-এর সমর মুখোপাধ্যায়। ইলিয়াস— মহম্মদ ইলিয়াস হেরে যেতেন, সেটা ১৯৬৪ সালের অতি দুঃখজনক পার্টি ভাগের পর।

বালি স্কুল মাঠে রাজনৈতিক সভা, নির্বাচনী সভা হয়েছে। বালি স্কুল মাঠের সভায় দীর্ঘকায়, শ্রমিক নেতা পতিত পাবন পাঠককে দেখেছি। দেখেছি সমর মুখোপাধ্যায়কেও। পতিত পাবন পাঠকের গায়ের রং ময়লার দিকে। মাথার কালো চুল উল্টে আঁচড়ান। শীতের দিনে সাদা আদ্দির পাঞ্জাবির পর কালো, গরম জহরকোট, ধুতি। সমর মুখার্জি বা সমর মুখোপাধ্যায় চূড়ান্ত ফর্সা। ধুতি-শার্ট। চোখে কালো ফ্রেমের চশমা। ক্লিন শেভেন। যতদূর মনে পড়ে পতিত পাবন পাঠকের নাকের নিচে একটি ডাকাতিয়া গোঁফ।

আরও পড়ুন
পূর্ণ নামে সুশীতল রায়চৌধুরীর দলিল

বালির পাঠক পাড়ায় পতিতবাবুদের বড়, পৈতৃক বাড়ি। পতিত পাবন পাঠক বালি জুট মিল-সহ একাধিক কারখানার শ্রমিক সংগঠন দেখেন।

বালিতে মা— গায়ত্রী রায়, বাবা অমরনাথ রায় প্রথম ভোট দিলেন ষাট দশকের গোড়ায় গোড়ায়। তখন বাজারে চালু স্লোগান—

ভোটে দেবেন কীসে
কাস্তেধানের শীষে

ভোট দেবে কোথায়
জোড়া বদল যেথায়।

জোড়া বলদের দুধ নেই
কংগ্রেসেরও ভোট নেই

জোড়া বলদের আটটা ঠ্যাঙ
কংগ্রেসকে মারো ল্যাঙ

আরও পড়ুন
চন্দ্রপোল্লা রেড্ডি মারা গেলেন কলকাতায়

তখন ছাপানো পোস্টার জাতীয় কংগ্রেস আর অখিল ভারতীয় জনসঙ্ঘের। কমিউনিস্ট পার্টির ছাপানো পোস্টার কম। হাতে লেখা পোস্টার— পুরনো ‘যুগান্তর’, ‘দৈনিক বসুমতী’, ‘স্টেটসম্যান’, ‘হিন্দুস্তান স্ট্যান্ডার্ড’, ‘আনন্দবাজার পত্রিকা’-র গায়ে লাল রং বা আলতা দিয়ে, বাড়িতে তৈরি করা তুলিতে, খালি মাটির ভাঁড়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নারকেল কুরে দেওয়া মালায় পোস্টার লেখার রং। কী সুন্দর হাতের লেখা সব, টানটান।

দেওয়ালে জোড়া বদল আঁকা খুব শক্ত। কাস্তে ধানের শীষও। জনসঙ্ঘের দেওয়াল লিখন করে দেন আর্টিস্ট, অর্থের বিনিময়ে। জোড়া বলদও তাই— পেশাদার শিল্পীর তুলিতে অর্থের বিনিময়ে। কাস্তে-ধানের শীষ কমিউনিস্ট পার্টির সমর্থকদের রং-তুলিতেই। এইসব কথা লিখতে লিখতে মনে পড়ল ষাটের দশকের প্রায় শেষ লগ্ন থেকে সি পি আই (এম), সি পি আই নিজেদের দলের নির্বাচনী প্রতীক দিয়ে ব্যাজ তৈরি করান। প্লাস্টিকের গোল ব্যাজ, তার ওপর তাঁদের প্রতীক।

আরও পড়ুন
ঝাড়গ্রাম, ঝাড়খণ্ড আন্দোলনের কয়েকটি টুকরো

তখন দেওয়াল লিখন, ছাপানো পোস্টার কম। হাতে লেখা পোস্টার বেশি— কমিউনিস্ট পার্টির ক্ষেত্রে। ১৯৬৪-র পার্টি ভাগের পর সি পি আই (এম)-এর নির্বাচনী প্রতীক কাস্তে-হাতুড়ি-তারা কাস্তে ধানের শীষ আঁকার তুলনায় অনেকটাই সহজ।

তখন সি পি আই (এম)-এর প্রধান দুটি নির্বাচনী স্লোগান—

ভোট দিন বাঁচতে
তারা হাতুড়ি কাস্তে

ভোট পাবে কারা
কাস্তে হাতুড়ি তারা

ফরোয়ার্ড ব্লকের নির্বাচনী প্রতীক সিংহ আঁকাও ছিল বেশ ফৈজতের। ফরোয়ার্ড ব্লককে পুরুল্যা— পুরুলিয়ার কোনো কোনো অঞ্চলে সাধারণ মানুষ বলেন বাঘ পার্টি। সিংহ প্রতীক হিসাবে নির্বাচনী লড়াইয়ে আর লাল পতাকায় লাফ দেওয়া— উল্লম্ফিত ব্যাঘ্র। এক কোণে কাস্তে হাতুড়ি, এই হচ্ছে ফরোয়ার্ড ব্লকের পতাকা। যতদূর জানি সুভাষচন্দ্রের তৈরি করা রাজনৈতিক দল ফরোয়ার্ড ব্লকের পতাকায় লালের ওপর শুধুই লাফ দেওয়া বাঘ ছিল। এক কোণে কাস্তে হাতুড়ি নয়।

মনে পড়ে উত্তরবঙ্গে ফরোয়ার্ড ব্লকের মজবুত সংগঠন। কমল গুহ, নির্মল বসু, অমর রায় প্রধান। অমর রায় প্রধান পরে নিজের দল তৈরি করেন। কমল গুহও বেরিয়ে এসে নতুন দল করেছিলেন। পরে আবার ফিরে যান ফরোয়ার্ড ব্লকে। শীলভদ্র মাজী, ধীরেন ভৌমিক প্রমুখ সুভাষবাদী ফরোয়ার্ড ব্লক— এই নামে একটি রাজনৈতিক সংগঠন মানুষ ছিলেন।

শ্যামপুকুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে দাঁড়াতেন জননেতা হেমন্ত বসু। এই প্রধান জননেতা খুন হন। কারা, কে তাঁকে হত্যা করল, তা নিয়ে বহুমত। পাণ্ডবেশ্বর মুখার্জি (পাণ্ডে) ছিলেন এই হত্যা মামলার প্রধান আসামী। তাঁর হয়ে যে দুজন প্রখ্যাত আইনজীবী দাঁড়াতেন তাঁদের নাম সোমরাজ দত্ত ও সন্তোষ দত্ত। সন্তোষ দত্ত যেমন বড় আইনজীবী, তেমনই অতি বিখ্যাত অভিনেতা। তাঁর অভিনীত বহু চরিত্র স্মরণীয় হয়ে আছে সেলুলয়েড স্বপ্নে। সত্যজিৎ রায়ের অতি বিখ্যাত লালমোহন গাঙ্গুলি— ‘জটায়ু’ তাঁর অন্যতম শ্রেষ্ঠ কাজ।

জননায়ক হেমন্ত বসু মন্ত্রী ছিলেন যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভায়। তিনি ছিলেন অকৃতদার, স্বাধীনতা সংগ্রামী।

শ্যামপুকুর বিধানসভা কেন্দ্রে এক সময় সর্ব ভারতীয় ফরোয়ার্ড ব্লকের হয়ে নির্বাচনে দাঁড়াতেন নলিনী গুহ, পরে সুব্রত বসু। নলিনী গুহও ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী। তিনি হেমন্ত বসু হত্যার পর ভোটে দাঁড়াতেন ফরোয়ার্ড ব্লকের হয়ে। সুব্রত বসু নেতাজি-পরিবারের মানুষ।

বালিতে ষাট দশকের গোড়ায় গোড়ায় যে নির্বাচন, তাতে মা আর বাবা ভোট দিতে গেলেন বালি বঙ্গশিশু বালিকা বিদ্যালয়-এ। সেখানেই ভোট কেন্দ্র। তখন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের আলাদা আলাদা ভোট বাক্স। বাইরে নির্বাচনী প্রতীক আঁকা।

সম্ভবত বসন্তদিনে ভোট। লোকসভা বিধানসভা নির্বাচন একসঙ্গে। জাতীয় কংগ্রেসের নির্বাচনী পোস্টারে পণ্ডিত জবাহরলাল নেহরু ও মহাত্মা গান্ধীর ছবি। বেশিরভাগ ছবিতেই পণ্ডিত নেহরু। সঙ্গে প্রার্থীর নাম আর নির্বাচনী প্রতীক জোড়া বলদ। কমিউনিস্ট পার্টির ছাপানো পোস্টার খুব কম। সেখানে লাল রঙের কাস্তে-ধানের শীষ আর প্রার্থীর নাম, বাংলায় হিন্দিতে। সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডের ওপর, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই। অখিল ভারতীয় জনসঙ্ঘের সবই ছাপা পোস্টার। সেখানে নির্বাচনী প্রতীক দিয়া— প্রদীপ। এক কোণে জনসঙ্ঘ প্রতিষ্ঠাতা শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ছবি। সেই সঙ্গে প্রার্থীর নাম, হিন্দিতে, বাংলায়।

সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডে শুধু নির্বাচনী প্রতীক আলো দেওয়া প্রদীপ। ব্যস, আর কিচ্ছু না। সেই পোস্টারও মেরে দেওয়া হয়েছে দেওয়ালে দেওয়ালে, যেখানে জনসঙ্ঘ-প্রার্থী। মা, বাবা ভোট দিতে যেতেন কাচা, পরিষ্কার জামা-কাপড় পরে। স্নানটান সেরে। ভোট দেওয়া ছিল তাঁদের কাছে এক উৎসব বিশেষ।

তখন গেছি মায়ের সঙ্গে ভোট কেন্দ্রে। ভোট কেন্দ্রের বাইরে। ভেতরে চট ঘেরা জায়গায় ব্যালট বক্স, প্রতীকে, ছাপ দিতে হয় ব্যালট পেপারে। লম্বা ব্যালট পেপার। তখন বাজারে, ফলস ভোট, প্রক্সি ভোট কথাটা ব্যাপকভাবে আসেনি। কিন্তু ফলস ভোট বা প্রক্সি ভোট আছে। ফলস ভোট দেওয়ার জন্য কালো বোরখাও আছে।

জাতীয় কংগ্রেস বা অখিল ভারতীয় জনসঙ্ঘের পোস্টার বেশিরভাগ সময়েই গরুতে খেত। কারণ বেশিরভাগ ছাপা পোস্টারই লোক দিয়ে লাগানো, শত পোস্টার— একশো পোস্টার লাগিয়ে দিলে এক টাকা পাওয়া যাবে, সে রকম চুক্তি। অনেক সময় দেওয়ালে না লাগিয়ে সরাসরি ওজন দরে বিক্রি করে দেওয়া হত সেইসব ছাপিয়ে আনা পোস্টার। গরুতে, ছাগলে পোস্টার খেত নাগালের মধ্যে থাকার জন্য। আটার আঠা দিয়ে লাগান হয়েছে পোস্টার। আকর্ষণ সেই গোলা আটার।

তখন নির্বাচন মানে ভোটের ছড়া। চাপান— পাল্টা উত্তর। ভোটের এইসব ছড়া নিয়ে আমার একটি পাতলা— চটি পকেট বই প্রকাশিত হয়েছিল ‘প্রতিক্ষণ’ প্রকাশন সংস্থা থেকে। নাম— ভোটের ছড়া ও অন্যান্য।

এই বইটি নিয়ে বি বি সি’তে— বি বি সি-র বাংলা বিভাগে প্রোগ্রাম হয়। প্রোগ্রাম করেন এক অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় নামী কবির নাতনি। কিন্তু আমার প্রাপ্য কুড়ি পাউন্ড আমি আজ পর্যন্ত পাইনি। সে আজ সাতাশ-আঠাশ বছর আগের কথা। আর বাংলা চ্যানেলের এক অতি নামজাদা উপস্থাপক কার্টুন সহ ভোটের ছড়া পরিবেশন করতে গিয়ে বলেছিলেন, এই সব নির্বাচনী ছড়া তিনি রাস্তায় ঘুরে ঘুরে সংগ্রহ করেছেন। মিথ্যে কথা আর কাকে বলে। সেও আজ থেকে বছর দশেক আগে। তারও মূলধন আমার ‘ভোটের ছড়া ও অন্যান্য’।

Powered by Froala Editor