সমকামিতা কোনো অসুস্থতা নয়। বিশ্বের প্রায় অধিকাংশ দেশই মান্যতা দিয়েছে সমকামিতাকে। কিন্তু মিশরে গেলে দেখা যাবে উল্টো ছবিই। প্রতিবাদের পরেও সমকামিতার বিরুদ্ধে প্রশাসনের মনোভাব পাল্টাচ্ছে না কিছুতেই। এলজিবিটি সম্প্রদায়ের মানুষদের ওপর চলছে ধরপাকড় এবং পুলিশি নির্যাতন। ‘হিউম্যান রাইটস ওয়াচ’-এর (এইচআরডব্লু) সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে ধরা পড়ল মিশরের সেই হিংস্র চরিত্রই।
মৌখিক হয়রানির পাশাপাশিই সমানভাবে চলছে শারীরিক নির্যাতন। সমকামিতার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া ৯ ব্যক্তির সাক্ষাৎকার নিয়েছিল আন্তর্জাতিক সংস্থা এইচআরডব্লু। আর সেখানেই উঠে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। কেবলমাত্র পুলিশের আধিকারিকেরাই যে অত্যাচার চালাচ্ছেন, এমনটা নয়। বরং কারাগারের অন্যান্য বন্দিদেরও তাঁরা প্ররোচিত করছেন সমকামী নির্যাতনে। সমকামীদের দিতে হচ্ছে ‘ভার্জিনিটি’ টেস্টও। ৯ জনের মধ্যে ৫ জনকেই বাধ্য করা হয়েছে পায়ুপথ পরীক্ষার জন্য।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন এবং চিকিৎসার নৈতিকথাও লঙ্ঘন করছে মিশরের প্রশাসন। স্পষ্টই এমনটাই দাবি করছেন আইচআরডব্লু’র কর্মকর্তারা। এমনকি সমকামিতার ‘অপরাধে’ দীর্ঘ চার মাস বন্দি থাকাকালীন আইনি পরামর্শ নেওয়ারও সুযোগ পাননি নির্যাতিতরা। বরং সরকারি কাগজে ‘অপরাধ’ স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছিলেন তাঁরা।
২০১৭ সালে মিশরে আয়োজিত একটি মিউসিক কনসার্টে এলজিবিটি সম্প্রদায়ের বেশ কিছু মানুষ উড়িয়েছিলেন রামধনু পতাকা। লেবাননের ব্যান্ড ‘মাশ্রু লীলা’-র প্রধান গায়কও সেই অনুষ্ঠানে প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছিলেন নিজের পরিচয়। আর তারপরেই মিশরে শুরু হয় পুলিশি ধরপাকড়। পতাকা উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে মামলা-মোকদ্দমা থেকে নির্যাতন সবই চলতে থাকে অবাধে। ঘটনার বিরুদ্ধে সরব হলে প্রতিবাদিদেরও পরিণতি ওই একই।
তবে আশ্চর্যের বিষয়, মিশরে সমকামিতা সাংবিধানিকভাবে নিষিদ্ধও নয় ঠিক। যার কারণ হয়তো মিশরের অত্যন্ত রক্ষণশীল মনোভাব এবং ধর্মীয় ভাবাবেগ। নির্দিষ্ট আইন না থাকায় ‘বৈষম্যমূলক প্রতারণা’ এবং ‘পতিতাবৃত্তি আইন’-এর আওতায় এনেই নিষ্ঠুর হিংস্রতা ছড়াচ্ছে মিশরের পুলিশি ব্যবস্থা। চলছে সমকামী এবং এলজিবিটি সম্প্রদায়ের মানুষদের চিহ্নিতকরণের কাজ। যা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বর্তমানে। কিন্তু এই প্রথার শেষ কবে? কীভাবেই বা সম্ভব রেশ টানা? তা কার্যত বুঝে উঠতে পারছেন না আন্দোলনের সক্রিয় কর্মীরাই...
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের বড়ো প্রাপ্তি; পরিচয় পেতে আর বাধ্যতামূলক নয় মেডিক্যাল পরীক্ষা