তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের বড়ো প্রাপ্তি; পরিচয় পেতে আর বাধ্যতামূলক নয় মেডিক্যাল পরীক্ষা

রূপান্তরকামীদের ‘তৃতীয় লিঙ্গ’-এর অধিকার দিয়েছে আদালত। কিন্তু ‘তৃতীয় লিঙ্গ’ হিসাবে নিজের পরিচয়ের জন্য আবেদন প্রক্রিয়া নিয়ে ধোঁয়াশা ছিলই। এই আবেদনের জন্য বাধ্যতামূলক ছিল মেডিক্যাল পরীক্ষা। তবে সেই ব্যবস্থারই অবসান হতে চলেছে এবার। কেন্দ্রীয় সামাজিক ন্যায়বিচার ও ক্ষমতায়ন মন্ত্রকের জারি করল নতুন বিধি। এই নতুন আইন অনুযায়ী, এখন থেকে আর পরিচয় আদায়ের জন্য দরকার হবে না চিকিৎসা পরীক্ষার।

জুলাই মাসে এই বিষয়টিতেই একটি খসড়া জারি করেছিল কেন্দ্র। এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায়ের আবেদন মঞ্জুর করার জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল ব্যক্তির লিঙ্গ যাচাইয়ের প্রক্রিয়া। সেই ফলাফলের ভিত্তিতে বাছাই ও প্রমাণীকরণ করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে। আর এই সিদ্ধান্ত ঘিরেই উঠে এসেছিল একাধিক বিতর্ক। ‘অধিকার কেড়ে নেওয়া’-র অভিযোগ উঠেছিল আইনের বিরুদ্ধে। পাশাপাশি যৌন হেনস্থার ঘটনাও সামনে এসেছিল বিক্ষিপ্তভাবে। 

গত ২৫ সেপ্টেম্বর নতুন এই আইন বিধির খসড়া প্রকাশিত হয়। সেখানে উল্লেখিত হয়েছে, আবেদনকারীর মৌখিক বিবরণের যথার্থতার সাপেক্ষেই যাচাই করা হবে তাঁদের পরিচয়। লিঙ্গ পরিচয়ের জন্য আবেদন করতে গেলে ঐ ব্যক্তিকে কেবলমাত্র দাখিল করতে হবে একটি হলফনামা। কিছুদিন পর থেকে অনলাইনেও পাওয়া যাবে এই পরিষেবা। ততদিন সশরীরে জেলা শাসকের কাছে উপস্থিত থেকেই যাচাই করতে হবে পরিচয়।

“সরকার বা বোর্ড এটা যে বুঝেছে, সেটাই অনেক বড়ো প্রাপ্য। অনেক মানুষ আছে যাঁরা শারীরিকভাবে এই পরীক্ষা নিতে পারেন না। অনেক হরমোনাল ইঞ্জেকশন তাঁদের শরীর নিতে পারে না। আবার এমনও অনেকে রয়েছেন যাঁদের আর্থিক অবস্থা তেমন নয় তাই পরীক্ষা করাতে পারছেন না। কিন্তু মনের দিক থেকে তাঁরা ট্রান্সজেন্ডারই। যতটা শরীরের দিক থেকে বিষয়টা, ততটাই তো মনের দিক থেকে। সুতরাং সেক্ষেত্রে একজন রূপান্তরকামীকে বাধ্য করেই ‘নারী’ বা ‘পুরুষ’ বলতে হত। এর আগে সুপ্রিম কোর্ট বিষয়টাকে কিন্তু ‘সেলফ প্রোক্লেমড’-ই করতে বলেছিল। দ্বিতীয় কমিশন তেমনটাই ভেবেছে, এটার জন্য তাদেরকে ধন্যবাদ...” বলছিলেন রঞ্জিতা সিনহা, অ্যাসোসিয়েশন অফ ট্রান্সজেন্ডার হিজরা ইন বেঙ্গলের মুখ্য সচিব।

নতুন আইনে বলা হয়, কোনো বাবা-মা চাইলে তাঁদের শিশুদের জন্যও তৃতীয় লিঙ্গের পরিচয়পত্রের আবেদন করতে পারেন। কিন্তু আজকের সমাজে এখনও তৃতীয় লিঙ্গের ধারণাকে দেখা হয় খানিকটা নিচু চোখেই। ফলে সংশয় থেকে যাচ্ছে এই বিষয়ে কতটা কার্যকরী হবে এই আইন। রঞ্জিতা সিনহা জানালেন, “ন্যাশনাল কাউন্সিল হয়েছে। আমরা এবার তাঁদের কাছে আবেদন জানাব সচেতনতা গড়ে তোলার জন্য। যতটা এইচআইভির জন্য হয়েছে, যতটা ‘বেটি পড়াও বেটি বাঁচাও’ এর জন্য হয়েছে, তেমনই ট্রান্সজেন্ডারদের জন্যেও সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। শুধু কলকাতার মতো শহরদের দেখলে তো হবে না। কারণ ভারতবর্ষের অন্যান্য অঞ্চলে তো অ্যাওয়ারনেস এক নয়। সেই জায়গাটায় টিভিতে, রেডিওতে, বাড়ি বাড়ি গিয়ে ক্যাম্পেনের পরিকল্পনা যদি না হয়, তবে এই সমস্যাটার সমাধান হবে না।” 

কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের পর আরও একটা সাফল্য পেলেন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষেরা। তবে সরকারকে সচেতনতার প্রকল্প নিতে হবে রাজ্য এবং জেলা স্তরে। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের জন্য সেই পরিকাঠামো তৈরি হলে আর লিঙ্গ বৈষম্য থাকবে না। শেষ হবে বিদ্বেষ। এমনটাই মনে করছেন রঞ্জিতা সিনহার মতো সক্রিয় কর্মীরা... 

আরও পড়ুন
এলজিবিটি অধিকারের পাশে বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেট, শুরু হল সচেতন কর্মশালা

Powered by Froala Editor