ফায়ারিং স্কোয়াডে গুলি কিংবা প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদ - পৃথিবীর কিছু দেশে ধর্ষণের শাস্তি এমনই!

ধর্ষণ; শুধু একটি অপরাধ নয়। একটি সামাজিক অসুখ। কিন্তু এর প্রতিকার কীভাবে সম্ভব, ধর্ষকের উপযুক্ত শাস্তিই বা কী; এরকম নানা প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেওয়া সত্যিই অসম্ভব। তবে সারা পৃথিবীতে কিন্তু ধর্ষকদের নানারকম শাস্তির বিধান রয়েছে। কোনো শাস্তি বেশ লঘু, কোনো শাস্তি আবার রীতিমতো মর্মান্তিক। একনজরে দেখে নেওয়া যাক পৃথিবীর নানা দেশে ধর্ষকদের শাস্তির বিধান।

সবচেয়ে কঠোর শাস্তির কথা বললেই প্রথমেই মনে আসে মৃত্যুদণ্ডের কথা। পৃথিবীর নানা দেশেই ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। তবে মৃত্যুদণ্ড মানে শুধুই ফাঁসি নয়। চিনে যদিও ফাঁসির মাধ্যমেই ধর্ষকদের মৃত্যু নিদান করা হয়। তবে সব ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় না। সামান্য কিছু ক্ষেত্রে ধর্ষক প্রাণে বেঁচে যায়। কিন্তু অপরাধের শাস্তি হিসাবে তার ক্যাস্ট্রেশন করা হয়। ধর্ষণ তো নয়ই, স্বাভাবিক যৌন সংসর্গও আর সম্ভব হয় না তার পক্ষে।

তবে পৃথিবীর অনেক দেশেই মৃত্যুর নিদান বেশ মর্মান্তিক। ঠিক যেমন সৌদি আরবে। নানা ধরনের ভয়াবহ আইনের জন্য পরিচিত এই দেশ। আর এখানে ধর্ষণের শাস্তি শিরশ্ছেদ। প্রকাশ্য দিবালোকে সমবেত মানুষের সামনে ধর্ষকের মাথা কেটে ফেলা হয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে। তবে শিরশ্ছেদের আগে অভিযুক্তকে মাদক দ্রব্য দিয়ে অচেতন করে রাখা হয়। কিন্তু সৌদি আরবে ধর্ষণের বিচারের জন্য মাত্র সপ্তাহ খানেক সময় দেওয়া হয়। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই প্রকৃত অপরাধীর পরিবর্তে নিরপরাধ মানুষের শাস্তি হয় বলে অভিযোগ তোলেন অনেকেই।

সৌদি আরবের মতোই আরেক কঠোর আইনের দেশ উত্তর কোরিয়া। সেখানে ধর্ষককে শাস্তি দেওয়া হয় গুলি করে হত্যা করে। মৃত্যুকূপে ধর্ষককে দাঁড় করিয়ে ফায়ারিং স্কোয়াডের সদস্যরা পরপর গুলি করতে থাকেন। আর একের পর এক গুলির আঘাতে প্রাণ হারায় সে। যেন মৃত্যুর আগে ধর্ষিতার যন্ত্রণা বুঝিয়ে দেওয়াই এই আইনের উদ্দেশ্য। আফগানিস্তানেও সাধারণত মাথায় গুলি করেই হত্যা করা হয় ধর্ষককে। কিছু ক্ষেত্রে অবশ্য ফাঁসিও দেওয়া হয় সেখানে।

ইজিপ্ট এবং ইরানেও ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। এই দুই দেশে অবশ্য ফাঁসি দেওয়া হয় অপরাধীকে। তবে কিছু কিছু দেশে আবার ধর্ষণের শাস্তি বেশ অল্পই। যেমন রাশিয়ায় সাধারণত ৩ থেকে ৬ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয় অপরাধীকে। কিছু ক্ষেত্রে মেয়াদ বাড়ানো হয়। তবে তাও ২০ বছরের বেশি নয়। নরওয়েতেও ৪ বছর থেকে ১৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড দেওয়া হয় অপরাধীকে। ইজরায়েলের ক্ষেত্রে এই সময়সীমা ১৬ বছরের। আমেরিকায় যদিও ধর্ষককে মৃত্যুদণ্ড আর দেওয়া হয় না। কিন্তু অপরাধীকে সারা জীবন কারাগারে থাকতে হয়। একমাত্র যদি কোনোভাবে প্রমাণিত হয় যে সে দোষী নয়, তাহলেই মুক্তি সম্ভব। ভারতেও সাধারণত যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয় ধর্ষককে। তবে সেই মেয়াদ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ১৪ বছরের। কিছু ক্ষেত্রে আজীবন কারাবাসের নিদান দেওয়া হয়। তবে ধর্ষণের অপরাধে মৃত্যুদণ্ডের নিদানও ভারতের আইনে অসম্ভব নয়।

আর এর মধ্যেই সম্প্রতি নাইজেরিয়ায় নতুন আইনে ধর্ষককে ক্যাস্ট্রেট করার আইন লাগু করা হয়েছে। তবে এর মধ্যে সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়, যে দেশে ধর্ষণের বিরুদ্ধে আইন যত কঠোর, সেদেশে ধর্ষণের ঘটনাও ঘটে বেশি। ফলে কঠোর শাস্তিই যে সমাধানের রাস্তা এনে দিতে পারে, সেকথা জোর দিয়ে বলা সম্ভব নয়।

আরও পড়ুন
থানা অব্দি পৌঁছয় না অনেক ধর্ষণের ঘটনাই, ক্ষোভে ফুঁসছেন উত্তরপ্রদেশের সমাজকর্মী রূপরেখা ভার্মা

Powered by Froala Editor

More From Author See More