ধর্ষণে অভিযুক্তের জামিন, নিজের গায়েই আগুন দিলেন ক্ষুব্ধ তরুণী

নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে উত্তাল সারা দেশ। উঠে আসছে একের পর এক বিক্ষোভ, প্রতিবাদ। আর এর আড়ালে ঢাকা পড়ে গেল আরেকটি ‘অবিচার’-এর ঘটনা। এবারও স্থান উত্তরপ্রদেশ। ঘটনা ধর্ষণের। আর বিচার না পাওয়ার। কয়েকদিন আগের ঘটনা। ১৬ ডিসেম্বর। সেই ১৬ ডিসেম্বর, ৭ বছর আগে যে তারিখে দিল্লিতে ধর্ষণের পর নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় নির্ভয়াকে। আর, মাত্র চারদিন আগে, উত্তরপ্রদেশের উন্নাও-তে নিজের গায়েই আগুন দিলেন এক তরুণী। নিজেই। কারণ, আদালতের রায়ে তাঁকে ধর্ষণে অভিযুক্ত ব্যক্তিটি আগাম জামিনে মুক্তি পেয়েছে।

লক্ষ্ণৌয়ের হাসানগঞ্জ কোতয়ালি অঞ্চলের বাসিন্দা এই তরুণীর সঙ্গে প্রায় ১০ বছরের সম্পর্কে ছিলেন ব্যক্তিটি। কিন্তু সেই ব্যক্তি তাঁকে বিয়ে করতে অসম্মত হয়। বারংবার অস্বীকার করার ফলে এই তরুণী ২রা অক্টোবর ধর্ষণের অভিযোগ এনে এফআইআর করেন ব্যক্তিটির বিরুদ্ধে। কিন্তু আগাম জামিন পায় ঐ ব্যক্তি। তার পরিবারের বিরুদ্ধে যুবতীর আনা হত্যার চেষ্টার অভিযোগও কার্যত বাতিল হয়ে যায়। ধোপে টেকে না ক্রমাগত ভয় দেখানো, এমনকি আপোষের জন্য চাপ দেওয়ার অভিযোগও। ক্ষোভে হতাশায় কেরোসিন ঢেলে নিজেকে জ্বালিয়ে দেন ২৩ বছরের ওই অভিযোগকারিণী। জ্বলন্ত অবস্থায় পুলিশের চৌহদ্দিতে দৌড়ে যান তিনি। সেই অবস্থায় তাঁকে জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রায় ৭০% পুড়ে যাওয়া এই মেয়েটিও মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে।

এই সমস্ত খবর এক দ্বন্দ্বের সামনে দাঁড় করিয়ে দেয় আমাদের। প্রথমেই আঙুল ওঠে রাষ্ট্রের দিকে। তার ভূমিকা নিয়ে। নাগরিক নিরাপত্তার প্রশ্নে কতটা সরব রাষ্ট্র? প্রতিদিন সমাজের এই অধঃপতন কতটা মানানসই বিশ্বের দরবারে? একের পর এক তরুণী, যুবতী, কন্যা। রাষ্ট্র নির্বিকার, নিশ্চুপ। কিন্তু আর কত? কিছুদিন আগে এই উন্নাওতেই এক যুবতীকে জ্বালিয়ে দেন জামিনে মুক্তি-পাওয়া অভিযুক্ত। অবশেষে দিল্লিতে মারা যান সেই তরুণী। এবার ক্ষোভে নিজেই গায়ে আগুন দিলেন আরেকজন। কতটা ক্ষুব্ধ ও অসহায় ও অপমানিত বোধ করলে একজন নিজের গায়েই আগুন দিতে পারে? আমি-আপনি বুঝতে পারব না হয়তো। পারলেও, কিছু করতে পারব কি?

নির্যাতনের এক স্বচ্ছ, সাবলীল ছবি পরপর উঠে আসছে গোটা দেশজুড়ে। আর কতদিন দগদগে ক্ষত বয়ে বেড়াবে এই গণতন্ত্র? কখনও প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে কৃতকর্ম মুছে ফেলার কুৎসিত উদ্যোগ। কখনো ভয় দেখিয়ে, ক্ষমতাবলে জামিন। এ কেমন আইন ব্যবস্থা? মাসের পর মাস, বছরের পর বছর চলে ধর্ষণ মামলা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিচারই পায় না অভিযুক্ত। প্রমাণের অভাবে বেকসুর খালাস পেয়ে যায়। কিছুদিন আগেই উন্নাও গণধর্ষণ এবং খুন মামলায় অভিযুক্ত বিধায়ক কুলদীপ সেঙ্গারকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। সাজায় তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও পঁচিশ লক্ষ্য টাকা জরিমানা ঘোষণা করা হয়। সাজা যেমনই ঘোষণা হোক না কেন, তাতে মানসিকতা বদলাবে কি? জানা নেই।

খুব তো বেশি কিছু না, একটু নিরাপত্তা চাইছেন সবাই। দেশের কাছে। খুব বেশি কিছু চেয়ে ফেলা কি? প্রতিটা পুড়ে যাওয়া দেহ, প্রতিটা যৌন হেনস্থা, প্রতিটা শরীরী হয়রানির দমবন্ধ অভিজ্ঞতাই আসলে আমাদের এই পোড়া দেশের 'স্বচ্ছ' গণতন্ত্রের গায়ে দীর্ঘশ্বাস।