আবির আর ফুটবলেই মিটে যাক দ্বন্দ্ব - বাঙালির গর্বের দিনে, ইস্ট-সমর্থকের চিঠি

কাল যখন তোরা সবুজ-মেরুন আবির ওড়াতে ওড়াতে বাড়ি ফিরছিলিস, আমি তখন বারান্দায়। বিশ্বাস কর, আমার লাল-হলুদ জার্সিটার দিকে তাকিয়ে কান্না পাচ্ছিল। আমি কাঁদিনি, বরং একটা অন্য আনন্দ পাচ্ছিলাম। তোদের ‘আমরা কারা, মোহনবাগান’ - শুনে আনন্দ হচ্ছিল এই ভেবে যে, আবার বাংলাতে আই লিগ, হ্যাঁ সেই বাংলাতে, সেই বাঙালির হাতে। রহমানদা বরুণদার সঙ্গে নাচছে, সবুজ মেরুন আবির উড়িয়ে। হ্যাঁ ঠিক এটাই দেখলাম - রহমানদা, বরুণদা, একসঙ্গে, এটা বাংলা যেখানে ধর্ম ভাগ হয় না। বিশ্বাস কর, ও-পাড়ার বুল্টি যখন সারা চুলে আবির মেখে চিৎকার করছিল, তখন আমার মনে হয়েছিল ওকে একটু লাল-হলুদ আবিরও মাখিয়ে দিই, আজ ও কিছু বলবে না। আমাদের যুদ্ধটা শুধু মাঠে, তার পর আমরা আবার সব্বাই সব্বাইকে জড়িয়ে ধরি, পুজোয় একসঙ্গে ঠাকুর দেখি, দোলে রং মাখাই, বিড়ি ভাগ করে খাই।

আরও পড়ুন
হোলির দিনেই ভারতজয়, আইলিগে ফের বাজিমাত মোহনবাগানের

দাদু গল্প করত সোনার বাংলার। আমি তো এখানেই সেটা দেখতে পাই। না হলে বল, তোরা জিতলে আমার আজ আনন্দ হচ্ছে কেন? কেন মনে হচ্ছে আজ একটু চিৎকার করে বলি, ফুটবলটা বাঙালির খেলা, ধর্মটা নয়। জানিস, এই ঘটি বাটি আছে বলেই হয়তো এখনও আমরা বেঁচে আছি, টম এন্ড জেরির মতো ছুটেই যাচ্ছি অবিরত, আসলে একে অপরকে ছাড়া আমরা বাঁচতে পারি না।

আরও পড়ুন
ইস্টবেঙ্গল গোল করলেই বিড়ি ধরাতেন হীরালাল, মোহনবাগানের ছিল ‘ছাতা-ঘোরানো মণ্ডল’

জানিস কাল বাবা মিষ্টি এনে বলল 'তোরা তো হগল ডুবাইলি, এগুলারে কাল ওগো দিস', আসলে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবটা বাবার দেশের বাড়ি, পদ্মা নদীর অনন্ত; আমি রেখে দিয়েছি সেই মিষ্টি। তোরা এলে তোদের দেব। আজ বাঙালির জয়ের দিন, ফুটবলের জয়ের দিন, জয়ের দিন সমস্ত মনুষ্যত্বের। তোদের জন্য লাল-হলুদ আবির রাখা থাকল।