এলজিবিটি অধিকারের পাশে বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেট, শুরু হল সচেতন কর্মশালা

ঠিক দুই বছর আগের কথা। এরকমই এক সেপ্টেম্বর মাসে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারা বিলুপ্ত হয়। সমকামিতাকে স্বীকৃতি দেন বিচারকেরা। সেদিন রামধনুর রঙে ছেয়ে গিয়েছিল আকাশ। সবার মুখে একটা শব্দ, ‘আমরা পেরেছি’। এবার বোধহয় লাঞ্ছনা, অত্যাচার কম হবে। একটু শ্বাস পাবেন তাঁরা…

দুই বছর পরে, আরও একটা সেপ্টেম্বরে দাঁড়িয়ে কী মনে হচ্ছে তাঁদের? কী দেখছি আমরা? এলজিবিটি সম্প্রদায়ের মানুষদের কি ‘মানুষ’ বলে গণ্য করা হচ্ছে। উত্তর কী আসবে, সেটা জানাই। সমাজ আর আইন— এই দুটো তো এক জিনিস নয়। একটি ঘটনার কথায় আসা যাক। ২০ জুলাই বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের অন্তর্গত নারায়ণপুর থানায় বিনা অভিযোগে নিয়ে যাওয়া হয় সঞ্জিত নামের এক সমকামী যুবককে। তারপর চলে অকথ্য অত্যাচার, কুরুচিকর মন্তব্য। সুরক্ষা যাঁদের হাতে, তাঁরাই কিনা নিজেদের জায়গা থেকে সরে যাচ্ছেন। বরং সমস্ত দিক থেকে অত্যাচারের মাত্রাটা বাড়ছে। 

এমন পরিস্থিতিতে সঞ্জিতের সঙ্গে ঘটা অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছিল সোশ্যাল মিডিয়া। এগিয়ে এসেছিল সংগঠন ‘প্রান্তকথা’। এগিয়ে এসেছিল প্রহরও। সব মিলিয়ে পুলিশের কাছে ঘটনার সঠিক তদন্ত করার দাবি জানানো হয়। প্রমাণিত হয়, সঞ্জিত সম্পূর্ণ নির্দোষ। শুধুমাত্র সমকামী হওয়ার জন্য তাঁকে এমনভাবে নিগৃহীত হতে হল। এদের শাস্তি কী হবে? পুলিশের উপরমহল যেভাবে যা শাস্তি দেবে তাদের, দিক। কিন্তু সঞ্জিত তো একা নন; বাইরে তাকালে আরও হাজার হাজার সঞ্জিত রোজ লাঞ্চিত হচ্ছে। তাঁরা কোথায় যাবেন? কী করবেন?  

এই কথা চিন্তা করেই বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেট এবং প্রান্তকথা’র তরফ থেকে আয়োজন করা হল একটি বিশেষ কর্মসূচি, যার নাম ‘Care@Rainbow’। প্রান্তকথার পক্ষ থেকে বাপ্পাদিত্য মুখোপাধ্যায় প্রহরকে জানালেন, “আমরা বিধাননগর কমিশনারেটকে জানাই যে সম্ভব হলে এলাকায় সচেতনতা শিবির তৈরি করতে পারি, প্রচার করতে পারি। তাতে ঠিক হয়েছিল ৬ সেপ্টেম্বর এই উদ্যোগের আনুষ্ঠানিক সূচনা হবে। কিন্তু প্রণব মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুতে রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা হয়ে যায়। ফলে ১৪ তারিখ অনুষ্ঠানটি করা হবে বলে ঠিক হয়। আরও বেশি পরিমাণে কর্মশালায় যাতে ট্রান্সজেন্ডার আইন ও অন্যান্য বিষয়গুলো উঠে আসে সেটাও দেখব আমরা।”

সম্ভবত ভারতের মধ্যে এই প্রথম কোনো পুলিশ কমিশনারেট এমন একটি উদ্যোগের পথে পা বাড়াল। উপস্থিত ছিলেন বিধাননগর কমিশনারেটের সিপি, ডিসিপি, হেডকোয়ার্টারস-সহ সমস্ত পুলিশ অফিসাররা উপ্পস্থিত ছিলেন এই অনুষ্ঠানে। ছিলেন ট্রান্সজেন্ডার আন্দোলনের নেত্রী রঞ্জিতা সিনহা। লিঙ্গ বা জাতি ভিত্তিতে নয়, সঠিক মানুষ যাতে বিচার পান সেটাই দেখা দরকার পুলিশকর্মীদের। তাঁদের ওপর ভরসা করে আছি আমরা সবাই। তাঁরাই যদি এমন কাজ করেন, তাহলে বাকি সাধারণ মানুষরা কোথায় যাবেন! ভবিষ্যতে রামধনুর ‘কেয়ার-এর পথ আরও সুন্দর আর সুগম হয়ে উঠল। সঞ্জিত বিচার পেল বটে, কিন্তু এখন আরও হাজার সঞ্জিতের মুক্তির অপেক্ষায় সবাই… 

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
স্যানিটারি প্যাডের পর, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের অধিকারের লড়াইয়ে শামিল কলকাতার ‘প্যাডম্যান’ শোভন