সৌভাগ্য স্বয়ং এসে দাঁড়ালেন

শঙ্কর সরণি - ১০
আগের পর্বে

আনা পাভলোভের দল ছাড়ার পর বেশ অর্থসংকটে পড়তে হল উদয়শঙ্করকে। ভেরা অথবা রাণী মৃণালিনী, কেউই তাঁর পাশে এসে দাঁড়ালেন না। শকি আর অ্যাডিলেডকে নিয়ে গড়ে তুললেন নতুন দল। অর্থের প্রয়োজনে হোটেলে ক্যাবারে নৃত্যও করেছেন উদয়। লন্ডন থেকে তাঁকে চলে যেতে হল প্যারিস। সেখানেও হোটেলেই কাজ নিলেন। জার্মানিতে দেখা হয়ে গেল পুরনো বন্ধু শান্তিলালের সঙ্গে। শান্তিলাল আর অ্যাডিলেডের বিবাহের পর শকিও সেখানে থেকে গেলেন। উদয় ফিরে এলেন প্যারিসে। এই সময় ভারতীয় নৃত্যশাস্ত্রের ইতিহাসে সন্ধান পেলেন পেশিতে ঢেউ তোলার রীতির। সেই থেকেই জন্ম নিল তাঁর নৃত্যের বিশেষ ঘরানা।

প্যারিসে একটি ব্যালে স্কুলের কর্ত্রী ছিলেন জঁ রনসে। তিনি নিজেও সুপরিচিত নৃত্যশিল্পী। ভারতীয় নাচ শেখাবার জন্য তাঁর স্কুলে তিনি আহ্বান জানালেন উদয়শঙ্করকে। সৌম্য, সপ্রতিভ এই তরুণের নৃত্যকলা এবং শিখিয়ে তোলবার রীতি-নীতি আগ্রহান্বিত করে তুলল আশপাশকে। ভারতীয় নৃত্যকলা উদগ্রীব হয়ে চেয়ে দেখলেন তাঁরা। একদিন সেখানেই এলেন ফরাসি দুই কন্যা। মিশেল দ্য ম্যুর আর সিমন বারবিয়ে।

সিমন বারবিয়ে, অনৈসর্গিক তাঁর রূপরাশি। ‘লাবণ্য’ শব্দটি বুঝি মূর্তি নিয়ে আবির্ভূত হয়েছিল তাঁর অবয়বে। অপ্সরার মতো দেহের শোভা। নয়নভুলানো ছিল তাঁর উপস্থিতি। উদয়শঙ্কর নৃত্যঘরানার এক অবিচ্ছেদ্য নাম সিমন, উদয়শঙ্কর যাঁকে ডাকবেন নতুন নামে। উদয়শঙ্করের দেওয়া সেই নামেই ভারতবর্ষ তাঁকে জেনেছে, গ্রহণ করেছে পরম গুণমুগ্ধতায়। তিনি সিমকি। নতুন নাম পেয়ে সিমকি জানতে চেয়েছিলেন, তিনি কী ডাকবেন উদয়শঙ্করকে? উদয় বলেছিলেন, দাদা। সিমকি উচ্চারণ করলেন, ডাডা। ‘ড’-এর সঙ্গে ‘দ’-এর ধ্বনিগত তফাতটা ধরিয়ে দিলেন উদয়। এরপর থেকে এই ভারতীয় উচ্চারণে চিরদিন নির্ভুল, নিখাদ ছিলেন তিনি।

পিয়ানোয় সিমকির স্বকীয়তা ছিল অবর্ণনীয়। সময়হারা এক ঘোর লেগে যেত তাঁর সুর রচনায়। আদ্যন্ত এই গুণী মেয়েটিকে নিজের সবটুকু উজাড় করে শেখাতে গিয়ে উত্তরোত্তর চমৎকৃত হলেন উদয়শঙ্কর। নৃত্যপটিয়সী এই কন্যার পরিবেশন যেন অলৌকিক আলোকবৃত্ত রচনা করে নেয়। আয়াসহীন, মায়াময় তাঁর নৃত্যভঙ্গি। নিখুঁত  লয়ের জ্ঞান। মুদ্রায় আলংকারিক মাধুর্য। সবচেয়ে কৌতূহলোদ্দীপক বিষয়, তাঁর গড়নে, অভিনয়ে- অভিব্যক্তিতে সে যেন ষোলো আনা ভারতীয়। সিমকির সাক্ষাতেও এই বিস্ময় প্রকাশে নিজেকে বাধা দিলেন না উদয়শঙ্কর। সদ্যোজাত হৃদয়ানুভূতিটি সিমকিও প্রকাশ করলেন অকপটে। উদয়শঙ্করের সান্নিধ্যে ভারতবর্ষ নামে একটি কখনও না-দেখা দেশ, ক্রমশ জেগে উঠছে তাঁর চেতনালোকে।       

রাজপুত বধূর বেশে উদয়শঙ্কর।

 

আরও পড়ুন
এখানে তোমাকে মানায় না শঙ্কর

জঁ রনসে উদ্যোগী হয়ে উঠলেন উদয়শঙ্করের নৃত্য পরিবেশনের ব্যাপারে। যোগাযোগ করলেন প্যারিসের নানা নৃত্যপ্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে। বন্দোবস্ত হল কিছু অনুষ্ঠানের। উদয়শঙ্করের জীবনে সিমকির শৈল্পিক পদক্ষেপ উদবেজিত করে তুলল তাঁকে। তিনি আগ্রহী হয়ে উঠলেন নতুন নতুন ভাবনায়। সেই সময়েই আনা পাভলোভার সঙ্গে তাঁর যৌথ শিব-পার্বতী নৃত্যটিকে পুনর্বার মঞ্চায়িত করতে চাইলেন তিনি। অনুষ্ঠানগুলিতে তাঁর একক ভূমিকায় রাখলেন গন্ধর্ব নৃত্যকে। গন্ধর্ব ও অপ্সরা নৃত্যে সঙ্গে নিলেন মিশেল দ্য ম্যুরকে। শিব-পার্বতীতে সঙ্গী হলেন সিমকি। সঙ্গে রইল আরো বিশেষ একটি পর্ব। রাজপুত বধূর নৃত্য। ঘাগড়া-চোলি, রেশমি আঁচল, বাহুতে বাজুবন্ধ। গলাভরা মুক্তোর কণ্ঠহার নেমেছে ধাপে-ধাপে। মাথার বাঁদিকে দুলছে ঝুমুর পাশা, কান ভরে রয়েছে ভারী জড়োয়ার দুলে। খোঁপায় সাজানো পাতাবাহার। কুন্দফুলের মতো দুটি অধর, কপালে আঁকা কুমকুম। ক্ষীণ কটিদেশ আর কী তীব্র মোহময়ী আবেদন। দর্শক হতবাক হয়ে চেয়ে রইলেন। নৃত্যে বুঁদ হয়ে থাকতেন তাঁরা। কিছুক্ষণ অতিক্রান্ত হলে ধীরে-ধীরে তাঁরা চমকে উঠতেন একে-একে।  রাজপুত বধূর বেশে নৃত্যের অনন্য সূক্ষ্মতায় মঞ্চে অবতীর্ণ হয়েছেন, স্বয়ং উদয়শঙ্কর।    

ফরাসি দৈনিকগুলি হয়ে উঠল উচ্ছ্বসিত। সিমকি এবং মিশেলের শুধু নাচ নয়, ভিন দেশের মুদ্রার নিখুঁত আত্তীকরণের অকুণ্ঠ প্রশংসা করলেন সকলে। সংবাদপত্রগুলি উদয়শঙ্করকে ঘিরে তাদের উচ্ছ্বাসকে প্রকাশ করল অকৃপণ ভাষায়। নারীর গতি, বিভঙ্গ সর্বোপরি নমনীয়ত্বকে কী আশ্চর্য কৌশলে ধারণ করেছে উদয়শঙ্করের পর্যবেক্ষণ।

রাজপুত বধূর বেশে উদয়শঙ্কর।

 

ফ্রান্সে গিমে দম্পতি ছিলেন বিশেষভাবে স্বনামধন্য। রুচির সাযুজ্যে এক অন্যতর আবেগ ছিল তাঁদের দাম্পত্যে। ভারতবর্ষকে তার শেকড়ের ভেতর থেকে জানবার এক অনিবার ইচ্ছা কাজ করত তাঁদের মননে। সেই অনুষঙ্গেই তাঁরা সংগ্রহ করতে শুরু করেন ভারতীয় শিল্প-ভাস্কর্যের বিচিত্র সব নমুনা। ধীরে ধীরে সেই সঞ্চয় বিশালাকার ধারণ করে নির্মিত হয়ে ওঠে গিমে মিউজিয়মে। সেইখান থেকেই আমন্ত্রণ এসে পৌঁছল উদয়শঙ্করের কাছে। তাঁর শিল্পের মধ্যে দিয়ে ভারতীয় সংস্কৃতিকেও গিমে দম্পতি অন্তর্ভুক্ত করতে চান তাঁদের সংগ্রহশালায়। এইখানে নৃত্যে অংশগ্রহণের পর যুগপৎ খ্যাতি আর সম্মানের অধিকারী হলেন তিনি। কিন্তু সেইসব ব্যতিরেকে এই অভিজ্ঞতা তাঁর ভেতর ক্রিয়াশীল হয়ে উঠল অন্যভাবে।

আরও পড়ুন
উদয় নিজেও দাঁড়ালেন দর্পণের সামনে

বিদেশীয় আবহ অথচ স্বদেশি বাতাবরণে কাজ করতে গিয়ে দেশের গরিমা আরো মহিমময় হয়ে জেগে উঠল তাঁর চেতনায়। আশ্চর্য এক অভাব আর অতৃপ্তি বোধ করলেন তিনি। দেশকে জানার স্বল্প পুঁজি নিয়ে তাঁর তারুণ্যে তিনি ছেড়ে এসেছিলেন তাঁর মাটি। তারপর থেকে দেশকে, দেশের শিল্পসম্পদকে তিনি কখনও জেনেছেন বইয়ের পাতায়, খুব অদ্ভুতভাবে কখনও জেনেছেন বিদেশি খ্যাতনামা ব্যক্তিদের কর্মকাণ্ডে। দেশকে আবিষ্কারের খণ্ডাংশ তাঁর কাছে এসে পৌঁছেছে অন্যের হাত-মারফত। এবার তিনি স্বয়ং, সম্মুখ-প্রত্যক্ষতায় লাভ করতে চান তাঁর দেশকে। স্বদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে তিনি লাভ করতে চান তার রং তার রসকে। পদার্পণ করতে চান দেশের খাসমহলে।           

প্যারিসের বাইরে থেকে ডাক এল তাঁর। দেশের বাইরে যেতে রাজি হলেন না মিশেল। উদয় আর সিমকি পৌঁছোলেন সুইটজারল্যান্ডের বার্ন শহরে। শীতের বার্ন বরফের ফুল ফুটিয়ে রেখেছে চতুর্পার্শ্বে। সুউচ্চ বরফ-বৃক্ষের পদতলে বিছিয়ে রাখা তুষারের নকশাতোলা শীতলপাটি। সফেন সমুদ্রের মতো ঢেউ তুলে অনড় ছড়িয়ে আছে  ছোটো-বড়ো হিমশৈল। স্টেট থিয়েটার, সকাল সাড়ে আটটায়, রবিবার, উদয়শঙ্করের শো। অকল্পনীয় ঠাণ্ডা, ঘরের বাইরে এসে দাঁড়ায় মানুষের সাধ্য কী? তায় রবিবারের সকাল উপাসনার জন্য পূর্বনির্দিষ্ট। উদয়শঙ্কর প্রমাদ গুনলেন। বিষাদবিধুর ভগ্নমনোরথ উদয় ভাবলেন, তবে কি প্রায় দর্শক-শূন্য রঙ্গালয়ে পরিবেশিত হবে তাঁর নৃত্য। যথাসময়ে উঠল যবনিকা। চোখ তুলে উদয় দেখলেন, কানায়-কানায় পূর্ণ রঙ্গালয়। উদ্বৃত্ত নেই একটি দর্শকাসনও।

অ্যালিস বোনার।

 

পরবর্তী অনুষ্ঠান জুরিখের কুরশাল থিয়েটারে। উদয়শঙ্কর-সিমকির শিল্পপরিবেশন, উপস্থাপনা ভাবুকদের মনে একটা ছাপ রেখে দিল। উদয়শঙ্করের শিল্পপ্রয়োগের অভিনবত্ব বিষয়ে বাক্যালাপের প্রবাহ ক্রমে হতে থাকল বিস্তৃত। একদিন সৌভাগ্য স্বয়ং এসে দাঁড়ালেন তাঁর দরবারে। অনুষ্ঠানের শেষে ব্যস্ত উদয়শঙ্কর জিনিসপত্তর নিয়ে তোলপাড়। রঙ্গালয়ের তরফ থেকে কেউ জানালেন, এক ভদ্রমহোদয়া অপেক্ষারত তাঁর জন্য। পরিশ্রান্ত উদয় গেলেন তাঁর কাছে। সৌজন্য বিনিময়ের সময় আগন্তুক জানালেন, তাঁর নাম অ্যালিস বোনার।

আরও পড়ুন
দেখা করতে চাইলেন খোদ আনা পাভলোভা

অ্যালিস বোনার একজন সুইস সুনিপুণ চিত্রকর, এক ভুবনবিদিত ভাস্কর, এক প্রথিতযশা শিল্পতত্ত্ববিদ। শিল্প নিয়ে বহুবিচিত্র তাঁর নিরীক্ষা। এক বিচিত্রকর্মা মানুষ তিনি। কিন্তু আমাদের কাছে তাঁর সবচেয়ে আন্তরিক পরিচয়টি হল, তিনি ইন্ডোলজিস্ট, ভারতত্ত্ববিদ। ‘প্রিন্সিপলস অফ কম্পোজিশন ইন হিন্দু স্ক্যাল্পচার’ নিয়ে পরে বই লিখবেন তিনি। ভূষিত হবেন ‘পদ্মভূষণ’ পুরস্কারে। ১৮৮৯-এ তাঁর জন্ম, ১৯২৭-এ উদয়শঙ্করের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ ভারতবর্ষের শিল্প-ইতিহাসেও এক অনন্য স্বর্ণোজ্জ্বল সূত্রপাত।

অনেকগুলি দিন আলাপের জন্য নিজেদের সময় দিলেন তাঁরা। কখনও রেস্তোরাঁয়, কখনও অ্যালিস বোনারের বাড়িতে, কখনও-বা প্রয়োজনের বেড়া-ভাঙা পদচারণায়। বোনার খুব মন দিয়ে শুনলেন, চিত্রশিল্পী হতে চেয়ে উদয়ের ভিনদেশে আসার কথা। তারপর রটেনস্টাইন। আনা পাভলোভা। ভারতীয় শিল্প-ইতিহাসের বিপুল গ্রন্থ-বলয়ে বিদেশ-বিভুঁইয়ে তাঁর স্বদেশলাভ। উদয়শঙ্করের শিল্পান্বেষণের ধাপগুলি আর বাঁকবদলগুলিকে তিনি শুনলেন সুগভীর অনুসন্ধিৎসায়। শিল্পকে নিয়ে উদয়শঙ্করের অবিরত জিজ্ঞাসাকে দেখতে দেখতে আমাদের মনে হয়, এ বুঝি উদয়শঙ্করের, এক শিল্পীর নির্মাণের ইতিহাস। কিন্তু আরো বৃহত্তর আর সমান্তরাল সত্যটি হল, তা এক ভারতশিল্পের জন্মবৃত্তান্তও বটে।

অ্যালিস বোনারের ভাস্কর্যে  উদয়শঙ্কর।

 

অগাধ-অনিঃশেষ ধনসম্পদের অধিকারী ছিলেন অ্যালিস। তাঁর পিতা ছিলেন সুইটজারল্যান্ডের বিশিষ্ট শিল্পপতি। প্রাসাদোপম ছিল তাঁদের আবাসভূমি। হাওয়াবদলের জন্য প্যারিসেও ছিল নিজস্ব মহল। কিন্তু বিলাস-বৈভব নয়, কারু-ঐশ্বর্যে ছিল, তাঁর মতি। তাঁর চিন্তাজগতের অধীশ্বর ছিল দৃশ্য-ছবি, আকার-প্রকার, মূর্তি-ভাস্কর্য। দেশ-কালের সরহদ্দ-পেরোনো মানুষের, দুর্নিবার খোঁজে সর্বদা অসীম হয়ে থাকত তাঁর আগ্রহ। মানুষকে জানতে চাওয়ার মধ্যেও তাঁর ছিল এক সহৃদয় স্বয়ংসম্পূর্ণতা। একদিকে তাঁর প্রজ্ঞা, যা সমস্ত সংস্কারের বাইরে দাঁড়িয়ে নিরাসক্ত সারস্বত-সাধনায় খুঁজতে চাইছিল আদি-অনন্ত মানবের গতিপথটিকে। অন্যদিকে বাস্তব জীবনে দীন মানুষের শোকে-সন্তাপেও তিনি দিনাতিপাত করতেন আড়ম্বরহীন, উদার ছত্রছায়ায়। ইউরোপের সর্বক্ষেত্রের কলা-কুশলীদের দৈন্যমুক্তিতে তাঁর উদ্যোগ ছিল বহুমাত্রিক। তাঁর এই দ্বিবিধ অবদান শিল্পীর সঙ্গে মনুষ্যত্বের কাহিনিকেও করে তোলে আর্দ্র।    

আরও পড়ুন
সাজলেন শিব, খালি গা, নকশা-তোলা আভূষণ

অ্যালিসের প্রতিবেশে দাঁড়িয়ে নিজের কথা বলতে-বলতেই উদয়ও আবিষ্কার করলেন সেই অ্যালিসকে। তাঁর বৈদগ্ধ্যকেও, তাঁর হৃদয়টিকেও।  অ্যালিস একদিন উদয়ের মূর্তি গড়বার ইচ্ছাপ্রকাশ করলেন। গল্প চলে, চলতে থাকে অ্যালিসের হাত। উদয় নানান কথায় থাকেন, মূর্তির কাজও দেখেন একটু-আধটু। কিন্তু যেদিন শেষ হল কাজ, মুহূর্তের জন্য থমকে রইলেন উদয়শঙ্কর। হাজার কথার হররায় নয়, সৃষ্টির মধ্যে দিয়ে স্রষ্টাকে দেখে ঘোর লেগে গেল তাঁর। বিস্ময়ে আর শ্রদ্ধায় হতবাক রইলেন তিনি।

Powered by Froala Editor