ষাইট ষষ্ঠী ষাইট…

মুছে যায়? — ৪৭
আগের পর্বে

কাশীর ঠিক বিপরীত পারে রামনগর বা ব্যাসকাশীতে ‘লীলা’ নামে একটি অনুষ্ঠান হয়। অনন্ত চতুর্দশীতে রাবণের জন্ম উপলক্ষেই এই অনুষ্ঠান। হ্যাজাক, ডে লাইট, পেট্রোম্যাক্সের আলোয় সেজে ওঠে গোটা রামনগর। পোষ্য হাতির পিঠে করে এদিন রাস্তায় নামেন কাশীনরেশ। তাঁর সঙ্গে সঙ্গে চলে লীলা। জীবন্ত রাম, লক্ষণ, সীতা, ভরত, হনুমান। চলমান এই উৎসব পালিত হয় বিরাট প্রান্তরজুড়ে। লীলা দেখতে দেখতে সাষ্টাঙ্গ প্রণাম করে অনেকে। কার্তিক মাসে গুরু নানকজির জন্মতিথি উপলক্ষে কাশীতে পালিত হয় দেব-দীবাপলি। সেদিন প্রদীপের আলোয় জেগে থাকে দশাশ্বমেধ ঘাট। তারপর…

বাঙাল আর ঘটিদের ষষ্ঠী নিয়ে প্রচুর ভেদাভেদ। বাঙালদের একটাই বড়োসড় ষষ্ঠী— অরণ্যষষ্ঠী বা জামাই ষষ্ঠী। সেইসঙ্গে নীলষষ্ঠী। অরণ্যষষ্ঠীকে আমষষ্ঠীও বলে থাকেন কেউ কেউ। ষষ্ঠীতে মানে ষষ্ঠীব্রত পালনের ব্যাপারে আদি পশ্চিমবঙ্গীয় কিছু হিন্দু বাঙালি, কতটা অগ্রগামী, তার প্রমাণ অরণ্যষষ্ঠী বা জামাইষষ্ঠীর সঙ্গে আছে তাঁদের চাপড়, চাপড়া বা চাবড়াষষ্ঠী, অশোকষষ্ঠী, দুর্গাষষ্ঠী, লুণ্ঠনষষ্ঠী বা লোটন ষষ্ঠী, শেতলষষ্ঠী। সেইসঙ্গে নীল ষষ্ঠীও আছে পশ্চিমবঙ্গীয় ষষ্ঠী তালিকায়।

বাঙালদের আমষষ্ঠী, অরণ্যষষ্ঠী বা জামাইষষ্ঠীর সঙ্গে ঘটিদের জামাইষষ্ঠীর ফারাক অনেকটাই। মা-কে দেখতাম আতপ চাল বেটে পিটুলি তৈরি করে, ঘন সেই চালবাটায় গুঁড়ো অথবা বাটা হলুদ মিশিয়ে ষষ্ঠী-পুতুল তৈরি করতেন। সেই পুত্তলির রং হলুদ। তাঁর স্তন ভারী। কোলে পো কাঁখে পো। তাঁর কোলে একটি গ্যাদা বাচ্চা আরও দুটি নিচে শোয়ানো। সেইসঙ্গে পিটুলি দিয়েই মা গড়তেন কালা বা কালি বিড়াল আর ধলা বিড়াল। পূর্ববঙ্গের বহু জায়গায় বেড়ালকে বিলোই বা মেকুর বলার রেওয়াজ ছিল।

ষষ্ঠী মূর্তি— মা যা গড়তেন, তা যেন কোনো প্রিমিটিভ পুতুল, যেমন কিনা হরপ্পা আর মহেঞ্জোদারোয়, অথবা আরও আরও কোনো ইন্দো-সভ্যতায় ক্রমাগত খননের ফলে বেরিয়ে আসে পোড়ামাটির গোটা, ভাঙা বা আধভাঙা পুতুল, অনেকটা যেন সেরকমই এই পুত্তলি-গড়ন।

ষষ্ঠী ঠাকরোনের— বাঙালরা বলে থাকেন ষষ্ঠীঠাইরেন, তাঁর পায়ের কাছে পিটুলিতে তৈরি বিদ্যাধরীর কঙ্কণ, হাগদো-বড়া, তপ্ত-বড়া। এসবই বাঙালদের ষষ্ঠী ঠাইরেনের বততো কথায় উঠে এসেছে।

আরও পড়ুন
লীলা, দেবদীপাবলি, রামবাবুর দোকান

কালো পাথরের ছোটবাটিতে কাঁচা দুধ। তার ভেতর করমচা। সেই করমচা, কখনও পাকা— লালচে, কখনও কাঁচা— সবুজ। কাঁচা— জ্বাল না দেওয়া গরুর দুধের ভেতর করমচা দিলে সেই দুধ কেটে বা ফেটে যেতে বাধ্য। তো সে যাই হোক, সেই করমচা— দুধে চোবামো করমচা আসলে ষষ্ঠীঠাকরোন বা ঠাইরেনের গোদ। আর দুধের— ফেটে-কেটে যাওয়া দুধ হল গোদের পুঁজের রূপকথা। হ্যাঁ, গোদা পায়ের গোদের পুঁজ। দেবীর কী করে গোদ হয় কে জানে?

আরও পড়ুন
দক্ষিণীরা ক্রমশ কাশীর দখল নিচ্ছেন

অশ্বত্থ অথবা কাঁঠাল গাছের সপত্র ডাল ভেঙে এনে তার নিচে এই পিটুলিতে গড়া ষষ্ঠীর আসন। ঢাকার— ঢাকা থেকে আসা বাঙালজনেরা এই অশ্বত্থগাছের ডালের নিচে বসাতেন ষষ্ঠী। ফরিদপুরের লোকেরা কাঁঠাল গাছের নিচে পাততেন ষষ্ঠীর আসন। 

আরও পড়ুন
বারাণসীর ভৃগু-পন্ডিত, গতজন্ম, তারও আগের আগের জন্মে…

গরমের ফল— আমের টুকরো, পাকা কাঁঠাল ভেঙে তার কোয়া, সে রস খাজা হতে পারে, হতে পারে গালা কাঁঠাল, সেইসঙ্গে কালোজাম, জামরুল। পূর্ববঙ্গে লিচু অনুপস্থিত অন্তত তিরিশ চল্লিশ পঞ্চাশ দশকেও। লিচু গাছ সেভাবেই নেই। তবে ডোউয়া বা ড্যাফল, কাউ, নোনা, বুনো আতা— সব আছে। রয়েছে আঁটি সর্বস্ব দেশি খেজুর।

আরও পড়ুন
বারাণসী–বেনারস–কাশী

কাঁঠাল বা অশ্বত্থপাতায়, যে গাছের ডালের নিচে বসানো হত পিটুলিতে তৈরি ষষ্ঠীঠাকরুন, ষষ্ঠী ঠাকরোন বা ষষ্ঠী ঠাইরেনকে, সেই গাছেরই পাতায় পাতায় ভেজানো আলো বা আতপ চাল— আতপ তণ্ডুল, পাকা কলার টুকরো— বাঙাল বাড়ি হলে, মানে অখণ্ড বঙ্গের পূর্বভাগে হলে সবরি, মোহনবাঁশি, মর্তমান, বিচা কলা বা বিচিদার বা বীজদার কলাও লাগত পুজোয়। বিচি কলায় শিরনি বা সিন্নি মাখা হত, অপূর্ব তার স্বাদ। শনি-সত্যনারায়ণ পুজোয় সিন্ন অবশ্যম্ভাবী। কাঁচা আটা, বিচা কলা, বাতাসা, আখের গুড়, গরুর কাঁচা দুধ। সব মিলিয়ে সিন্নি। শনি ঠাকুরের নাম না করে ‘বড়ো ঠাকুর’, ‘বারের ঠাকুর’ বলারও রেওয়াজ আছে।

শনি পুজোর পাঁচালি, সত্যনারায়ণের পাঁচালি— সবই আছে আলাদা আলাদা। সাধারণভাবে শনি পুজো হয় ঘরের বাইরে, উঠোনে। হিন্দু বাঙালি জীবনে একসময় শনি-সত্যনারায়ণ পুজো দেওয়ার রেওয়াজ ছিল যথেষ্ট। ইদানিং শহরে অত শনি-সত্যনারায়ণ পুজো, পাঁচালি পড়ার বিষয়টি দেখা যায় না।

সত্য-নারায়ণ কথা আপাতত থাক। পুনরায় ফিরে আসি ষষ্ঠী বততো বা ষষ্ঠীঠাইরেনের বততো প্রসঙ্গে।

কাঁঠালপাতা বা অশ্বত্থপাতার ওপর ফল-ফুলারি। বাঙাল পরিবারে ‘বায়না’-র একটা ব্যাপার আছে। তালপাতার নতুন হাতপাখা, তাতে বোঁটা সমেত সুপুরি, দেশি খেজুর— অবশ্যই বোঁটা সমেত, ন্যাকড়ায় বাঁধা ধান, বাঁশের কড়ল ষাটটি, তালপাতার পুরনো পাখা কেটে একটি খেলনাঘরের মিনি হাতপাখা— সব কিছু নতুন লাল সুতোয় বেঁধে পুকুর— পুষ্করিণী বা নদীতে ডুব দিয়ে আসেন সন্তানবতী মায়েরা। তারপর সেই ভিজে পাখা দিয়ে বাসাত করতে করতে বলেন, ষাইট ষষ্ঠী ষাইট। 

কালো পাথরের ছোটো বাটিতে কাঁচা দুধে ভেজান করমচা ষষ্ঠী ঠাইরেনের গোদের প্রতীক— অথচ প্রসাদ হিসাবে বিলি করা হয় সাধারণ জনের মধ্যে।

মা, খুড়িমা— কাকিমা, আজিমাদের— ঠাকুমাদের কাছে অনুমতি চায় ছোটরা। জিজ্ঞেস করে উচপিচ খাই?

উত্তর আসে, খাও।

তখন তো সেই কাঁচা দুধে ডোবান করমচা আর কেটে যাওয়া, নষ্ট হয়ে যাওয়া দুধ দেওয়া হয় উচপিচ হিসাবে।

মায়ের কাছ থেকে পুত্রসন্তান ‘বায়না’ পান। ষাইট ষাইট ষাইট উচ্চারণসহ পাখার বাতাস। বায়নায় থাকে খোসা সমেত গোটা কলা, আস্ত আমি। তারপর দুপুরের আহার।

ফরিদপুর জেলার কোথাও কোথাও সন্তানদের ‘বায়না’ দেওয়ার সময় ফলসমেত তালপাখার ভার মাথায় রেখে জানতে চাওয়া হয়, আমার বোঝা বহন করতে পারবে তো? আমার বোঝা বহন করবি তো? এইরকম ধরনের প্রশ্ন হতে থাকে, মায়েরা করেন ছেলেকে। ‘বায়না’র সঙ্গে নতুন জামা, গেঞ্জি অথমা জামা দেওয়ার রেওয়াজ ছিল তখনও, এখনও আছে।

ফরিদপুরের সব পরিবারে কিন্তু আমার ভার বহন করতে পারবি তো বলে মায়ের জিজ্ঞাসা ছিল না। কোনো কোনো পরিবারে ছিল।

ষষ্ঠী ঠাকরোনের সামনে আলপনা। আলপনার ওপর পাতায় সাজানো কাটা ফল, আতপ চাল। সেইসঙ্গে ষষ্ঠীর ব্রতকথা। এক সওদাগর আর তার সাত ছেলে। সওদাগরের বদলে কখনও কখনও রাজাও হয়ে যেত ব্রতের নায়ক। তো সে যাই হোক, সওদাগরের ছেলের বউ বড্ড ছোঁচা, সব জিনিস দিনরাত চুরি করে খায়। এমন কি পূজার সামগ্রী-প্রসাদও। আর, চুরি করে খায় শুধু না, এই চৌর্যবৃত্তি নামক অপকর্মের ব্যাপারে দোষ দেয় মা ষষ্ঠীর কালা বিড়াল বা কালি বেড়ালের ওপর।

কালি বিড়াল কুপিত হয় আর সে সওদাগরের ছেলের ছেলেকে একটা একটা করে ঘাড়ে কামড় দিয়ে চুরি করে এনে রেখে দেয় ষষ্ঠীর পায়ের কাছে। এভাবে সাত সাতটি ছেলে চলে আসে ষষ্ঠীর কাছে। এই গল্প আরও আছে। গল্প গড়াতে থাকে নিজের নিয়মে। সেই কথাযাত্রায় এই লোভা বা লুভিষ্টি বউয়ের একজন শাশুরি থাকে। সেই অতি কড়া শাশুড়ি সেই ‘লোভী’ বউয়ের সাত হাত জিভ মাপ করে ঠিক সাত আঙুল রেখে কেটে দেয়। জিভ কাটার আগে শাশুড়ি-মা বৌমার লম্বা জিভটি মধুমখামে জড়িয়ে নিয়ে তারপর মাপ করে কাটে।

এই যে কাহিনি, আপাতত বলা হল যেটুকু, তার একটা ফেমিনিস্ট টেক্সট হতে পারে— নারীবাদী পাঠ, পুনর্পর্যালোচনা, মিথের। নাহ, আপাতত সেই নির্মাণে যেতে চাইছি না। তারপর সেই সওদাগর বা রাজার, সওদাগর হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি ব্রতকথা অনুসারে, সেই ব্যবসায়ী— ‘সাধু’ বলেও বলা হয়ে থাকে তাকে, ব্রতকথায় ‘সাধু’ আর তার বউ অনেক অনেক কাকুতি-মিনতি করতে করতে করতে শেষ পর্যন্ত আবারও পুত্রসন্তান পাওয়ার বর অর্জন করে। এইসব সওদাগর পুত্ররা আসলে অভিসম্পাত অভিসম্পাতে মানব শরীরের চেহারা পায়। তারা আসলে শাপভ্রষ্ট বিদ্যাধর।

অর্থাৎ সওদাগর পত্নী অষ্টমবার গর্ভবতী হওয়ার পর শেষ যে পুত্রটি জন্মায় সওদাগরের, সেও তো শাপভ্রষ্ট বিদ্যাধরই। এমনই বলে ব্রতচলন। মুখে মুখে বলা, মা-খুড়িমা-জ্যেঠিমা-আজিমাদের থেকে শোনা বততোবাণী।

এই কথাচলনে সওদাগরের অষ্টম ছেলেটি বেশ আবদেরে, গোঁড়ার এবং জেদিও। মুখের কথা খসাতে না খসাতেই তার সেই প্রার্থিত জিনিসটি চাই-ই চাই।

ফলে বিদ্যাধরীর কঙ্কণ আসে ব্রতকথায়। আসে হাগদো-বড়া আর তপ্ত-বড়ার ইতিহাস। তার আগে মধুমখামের কথা বলা যাক, যার গায়ে জড়িয়ে সওদাগরের পুত্রবধূর সাত হাতের জিভ সাত আঙুল করে দিয়েছিল সওদাগর গিন্নি— গৃহিণী। মধুমখাম কোনো বাঁশ বা কাঠের তৈরি খুঁটি জাতীয় কিছু হবে, যাতে জড়িয়ে বধূর জিহ্বা কর্তন।

ব্রতকথা অনুযায়ী শাপভ্রষ্ট বিদ্যাধর জন্মাবার সময়ই কথা আদায় হয়ে যায়, তার আট বছর হলেই যখন সে পায়খানায় বসে বড়া খেতে চাইবে, তখনই তাঁকে দিতে হবে হাগদো-বড়া। তারপর আবার অতি-গরম তপ্ত-বড়া খেতে চাইবে, তখন তাঁকে দিতে হবে তপ্ত-বড়া, ওই পায়খানায় বসে মলত্যাগ করার সময়ই। বততোর কথা অনুযায়ী এইভাবে হাগতে হাগতেই গরম গরম ডালের বড়া খাবে সেই ছেলে। তারপর তার যখন বিবাহ হবে, ষোল বা আঠার বছর বয়সে, তখন সে বিয়ের আসরে বার বার হাঁচবে। আর যতবার হাঁচবে, ততবার তার ভাবি বধূকে বলতে হবে—

জিও জিও শ্বশুর নন্দন

যার প্রতাপে পরি মালা আর চন্দন

যতবার হাঁচি ততবার সওদাগর নাতির ভাবি স্ত্রীর একই ছড়া অথবা ছিকুলি, যা শুনতে শুনতে আর স্বর্গে ফিরে যাওয়ার কথা ভাববে না এই মনুষ্যরূপী বিদ্যাধর। এরপর আসে বিদ্যাধরীর কঙ্কণের গল্প। সেই পরণকথার ছায়া ছন্নতায় জ্যৈষ্ঠের গাড় দুপুর ক্রমশ যেন তাপহীন হতে থাকে।

পূর্ববঙ্গের হিন্দু বাঙালি মায়েরা ভাত নয়, লুচি পরোটাও নয়, সুপক্ক আম, পাকা কলা, নারকেল কোরা, দিশি খেজুর, জাম, জামরুল সব মিলিয়ে ফলার। পশ্চিমবঙ্গবাসীদের কাছে আবার ফলার দু’রকম— ‘কাঁচা ফলার’ আর ‘পাকা ফলার’। সেই ‘কাঁচা ফলার’ আর ‘পাকা ফলার’-এর হিসাবে নয় আসা যাবে পরে।

রাতে মুগের জালা, মানে মুগ ডাল ভেজানো, তার সঙ্গে নারকেল কোরা, চিনি। দুপুরে ফলাহার ভারীই পড়ে। কারণ এত এত ফলের সঙ্গে দুধ আর পাকা কাঁঠাল। অন্ন নেই। পুত্রর কল্যাণে, হয়তো কন্যার কল্যাণেও এই ষষ্ঠীর ব্রত। কিন্তু মেয়ে সন্তানের জন্য ‘বায়না’, পাকা আম-কলাসহ নানারকম ফল, নতুন জামা ইত্যাদি দিয়ে ‘ষাইট-ষষ্ঠী-ষাইট’ উচ্চারণ খুব কম বাড়িতেই হতে দেখেছি।

এর সামাজিক প্রেক্ষিত, কেন, কী বৃত্তান্ত— আশা করি ভেঙে বলার নয়। অর্থ যথেষ্ট সহজবোধ্য। পশ্চিমবঙ্গের অরণ্যষষ্ঠী ব্রত সম্পূর্ণ ভিন্ন। সেই প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে মনে পরে যায়, মা-ষষ্ঠীর দুই বেড়াল কালা বিড়াল আর ধলা বিড়াল, তাদের মা তৈরি করতেন চালবাটা পিটুলি দিয়েই। সেই বেড়ালের— কালা বিড়ালের রং হত ‘সুলেখা’ কোম্পানির দোয়াতের কালি দিয়ে। ‘সুলেখা’র রয়্যাল ব্লু বা ব্লু ব্ল্যাক যেটা আসত বাড়িতে কাচের তৈরি মস্যাধারে তা থেকেই নিয়ে কালা বিড়ালের বর্ণময় উপস্থাপনা।

বেশির ভাগ বাঙালি মধ্যবিত্ত তখন ব্যবহার করেন কাচের দোয়াতবন্দি সুলেখা কালির রয়্যাল ব্লু বা ব্লু ব্ল্যাক। তা দিয়েই ষষ্ঠীর বেড়ালের গাত্ররঞ্জন। রং করা। কাচ বা প্লাস্টিকের তৈরি ড্রপারে কালি তুলে তুলে মেশানো পিটুলির সঙ্গে। তারপর কালি বা কালা বিড়ালের নির্মাণ-পর্ব।

পশ্চিমবঙ্গে ষষ্ঠীর থান অনেক বেশি। হুগলির আরামবাগের কাছাকাছি গ্রামে আমি দেখি ষষ্ঠীর থান। পাথরের ষষ্ঠী মূর্তি। পূর্ববঙ্গে সেই তুলনায় ষষ্ঠীর থান কম। কিছু কিছু বৃক্ষ পূজা আছে। সন্তানবতী হতে না পারা নারী সেখানে মানতের ঢিল বাঁধেন, এ বঙ্গে, ও বঙ্গে।

মধ্যবিত্ত হিন্দু বাঙালি রমণী ‘বাটা’ দেন জামাইকে, কন্যাসন্তান, পুত্র সন্তানকেও, জামাইয়ের হাতে বাঁধা হয় রঙিন সুতলি, হলুদ সুতো, সাদা সুতো। নতুন তালপাতার পাখা জলে ভিজিয়ে এনে তাঁরা বাতাস করেন সন্তানদের, জামাতা বাবাজীবনকেও, কিন্তু মুখে ‘ষাট ষাট, ষাট ষষ্ঠী ষাট’ বলেন। ষাইট ষাইট বলেন না।

Powered by Froala Editor