ব্যা-ব্যা-ব্যায়ামাগার – আখড়া

মুছে যায় – ১০

আগের পর্বে

পশ্চিমবাংলাই হোক বা পূর্ববঙ্গ, খাবারের তালিকায় মুড়ো, মুন্ডু বা কল্লা জুড়ে গেছে অলক্ষ্যেই। মাছের মুড়ো থেকে শুরু করে পণ্টক মুন্ডু-- সবেরই কদর বাংলার রন্ধনশিল্পে। রয়েছে ব্রেন চপে পণ্টক ঘিলুর প্রচলনও। আর মুড়িঘণ্টের বিকল্প তো নেই আজও। রুই-কাতলা বাদে গলদা চিংড়ির মাথার কদরও কম নয় রান্নায়। তার সুস্বাদু হলুদ ঘিলু যে আলাদা একটা আমেজ তৈরি করে, তা না বললেও চলে। রন্ধনের পুরাণে বিভিন্ন স্বাদের মস্তকের এই ভূমিকার আলোচনার পর আজ শুরু হচ্ছে নতুন পর্ব... 

'ব্যা-ব্যা ব্ল্যাকশিপ' অথবা বা বাঁ ব্ল্যাকশিপ নয়।
ব্যা-ব্যা-ব্যায়ামাগার।
ভাঁজার জায়গা।
বুক ডন, বৈঠক। প্যারালাল বার। বেঞ্চ প্রেস। ল্যাটারাল৷ গার্লিং। লাটাই। দিশি ব্যবস্থা। সেই যেমন 'স্বদেশি যুগ' থেকে, ১৯০৪-০৫। ব্যায়ামাগার। সেখানে লোহার বারবেল, ডাম্বেল। কাঠের মুগুর। লোহা তোলা। রডে ওজনের চাকা বসিয়ে, ঢুকিয়ে দিয়ে বেঞ্চপ্রেস।
এর বহু বছর পর, আমরা বুঝতে পারলাম, বডি বিল্ডার আর ওয়েট লিফটারের ফারাক। কুস্তি একটা আলাদা শরীর চর্চার ধারা। দাও পেঁচ - দাও প্যাঁচ।
ফ্রি স্টাইল। গ্রিকো-রোমান। গোবরবাবু - গোবর গোহ। গামা পালোয়ান, ভীমভবানী।
কুস্তির আখড়ায় কাঠের ভারি মুগুর ভাঁজা। আখড়া বা আখড়ার মাটি নরম, ঝুর ঝুরে, তাতে সর্ষের খোল বা খইল। সর্ষের তেল ঢালা৷ 

'মহর্ষি' দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের আদরের রবি - বালক রবি কুস্তি করে। কুস্তি করে দেবেন ঠাকুরের তৃতীয় পুত্র  হেমেন্দ্রনাথ ঠাকুর। তাঁর পুত্র ক্ষিতীন্দ্রনাথ ঠাকুর৷  যিনি 'মুদীর দোকান' আর 'কলকাতার চলাফেরা' সহ নানা বই লেখেন৷ সুভগেন্দ্রনাথ - শিল্প সংগ্রাহক, কবি, চিত্রকর, জীবন রসিক সুভো ঠাকুরের বাবা যিনি। তাঁর অন্য আর এক পুত্র বাসবেন্দ্রনাথ  -শিল্পী - লেখক - বাসব ঠাকুর৷ আর অন্যজন টুবো ঠাকুর৷ তাঁর ভালো নাম ক্ষিতীন্দ্রনাথ।
সুভো ঠাকুরের বিখ্যাত কবিতার বই 'অতন্দ্র আলতামিরা'। এছাড়া তাঁর 'নীল রক্ত লাল হয়ে গেছে', 'অলাতচক্র', 'প্যানজি ও পিকো' আর্ট কালেকশনের অষ্টপ্রহর, 'বিস্মৃতিচারণা' সহ আরও বহু বই৷ 'ভবিষ্যৎ', 'অগ্রগতি' সম্পাদনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পরে প্রকাশ করেছেন 'সুন্দরম'। আর্ট পেপারে ছাপা অসাধারণ পত্রিকা৷ ক্যালকাটা গ্রুপে রথীন মৈত্র, রথীন মিত্র, পরিতোষ সেনদের সঙ্গে ছিলেন তিনি৷ গোপাল ঘোষও ছিলেন, কী এই গ্রুপে?
এই সুভো ঠাকুর তাঁদের জোড়াসাঁকোর বাড়িতে কুস্তি লড়তেন, তাঁদের গুরু ছিলেন পহেলোয়ান। ফলে খালি গা, ল্যাঙোট, উরু থাবড়ান, থাবড়াতে থাবড়াতে প্রতিপক্ষ বা প্রতিদ্বন্দ্বীকে ললকার - 'আ যা, আ যা বলা'। 

ঘনাদার লেখায় প্রেমেন্দ্র মিত্র 'বাংলা কাঁচি', 'ধোবি কা পাট' নিয়ে বলেছেন। এও কুস্তির দাও - প্যাঁচের মধ্যেই পড়ে।
মলযুদ্ধ বহু প্রাচীন, এই ভারতভূমিতে। ক্রীড়া, প্রাণান্তক খেলাধুলো, শত্রু নিকেশের মাধ্যমও বটে। মহাভারতে মধ্য পাণ্ডব ভীম মগধরাজ জরাসন্ধকে আহ্বান করেন কি মল্লযুদ্ধে? নাকি ভীম নন, জরাসন্ধই মল্লযুদ্ধের প্রস্তাবক৷ ভীম ও জরাসন্ধ দুজনেই ছিলেন অতি সবল, অভিজ্ঞ মল্লযোদ্ধা। দুর্যোধন, দুঃশাসন, শ্রীকৃষ্ণ, বলরাম - বলভদ্র - রোহিণী পতি হলধর - বলভদ্র ছিলেন প্রথিতযশা মল্লযোদ্ধা - কুস্তিগীর৷ গ্রিস ও রোমেও ছিল কুস্তি চর্চা।
কথা হচ্ছিল ব্যায়ামাগার বা ব্যায়াম ক্লাব নিয়ে। বডি বিল্ডিংয়ে রেজ পার্কের নাম শুনি ষাট দশকের শেষে। পৃথিবী বিখ্যাত বডি বিল্ডার তিনি।

করিম নামে একজন বডি বিল্ডার ষাটের দশকের শেষ দিকে বিভিন্ন ব্যায়াম প্রদর্শনীতে অংশ নিতেন পাড়ায় পাড়ায়। বিশেষ করে সি পি আই এর যুব সংগঠন যুব সংঘের উদ্যোগে।
করিম আন্তর্জাতিক যুব উৎসবে ভারতের প্রতিনিধি হয়ে বিদেশ গেছিলেন। যেমন গায়ক প্রহ্লাদ ব্রহ্মচারী অথবা লোকগায়ক অংশুমান রায়। প্রহ্লাদ ব্রহ্মচারী 'আমি কি হেরিলাম জলের ঘাটে গিয়া' তখ৷ অনেকেরই মুখে মুখে,   সুরে - বেসুরে। অংশুমান রায়ের 'রামের মা লো রামের মা/ রামের বিহা দিলে না/ রামের বিহা জনক পুরে/ জনজ রাজার বিটিকে...। অথবা ' দাদা পায়ে পড়ি রে/ মেলা থেকে বউ এনে দে' এবং 'সাঁঝে ফোটে ঝিঙাফুল সকালে মলিন গো....'।

আরও পড়ুন
মুড়ো, মুন্ডু, কল্লা

অংশুমান রায় আত্মহত্যা করেন। কেন করলেন, কী জন্য? তার একটাই উত্তর, কে জানে!
তো সে যাই হোক, আন্তর্জাতিক যুব উৎসব ফেরত করিমের নানা শো দেখেছি। মঞ্চে খালি গায়ে, আলো আর মিউজিক সহযোগে তিনি শো - বডি শো করতেন। শুধুমাত্র একটি সুদৃশ্য ফালি রঙিন অন্তর্বাস পরে।
বুক নাচাতেন করিম সুরের তালে তালে, সঙ্গে আলোর খেলা। হাতের মাসল, পায়ের মাসল - সব। 

তখনও মধ্য গগনে মনতোষ রায়। মনোহর আইচ। এঁদের নামের আগে 'বিশ্বশ্রী' বসে। আছেন আয়রন ম্যান নীলমণি দাসের ছাপান ব্যায়াম চার্ট, আসনের চার্ট, ছবি এবং বই।
মনতোষ রায়ের ছেলে মলয় রায় তখনও অত নামি হয়ে ওঠেননি। বিষ্ণু ঘোষ - বিষ্টু ঘোষ পুরোমাত্রায় আসন থেরাপিতে আছেন ষাটের দশকে। তাঁর জামাই বুঢঢা বসু, তিনিও আসন, প্রাণায়াম বিশারদ। 

আরও পড়ুন
টোকাটুকি, টুকলি, চোতামারা

বিষ্টু ঘোষ পদ্মাসন, ময়ূরাসন, ভূজঙ্গাসন, শলভাসন, বদ্ধ পদ্মাসন, বজ্রাসন, কোমল মুক্তাসন এমন নানা আসন ক্রিয়ায় অতি দড়৷ বুঢঢা বোসও তাই।
বিশ্বশ্রী মনোহর আইচ দীর্ঘদিন সার্কাসে ছিলেন। খর্বকায়, মাথা জোড়া টাক এই মানুষটিকে কাছ থেকে দেখি দৈনিক বসুমতী দপ্তরে, ১৬৬ নম্বর বিপিন বিহারী গাঙ্গুলি স্ট্রীটে, বসুমতী সাহিত্য মন্দিরে। লাল রঙের বাড়ি, একে বারে বড় রাস্তার ওপর। আশেপাশে অনেক সোনার দোকান। ট্রাম লাইন। তখনও শিয়ালদা ফ্লাইওভার হয়নি।
মনোহর আইচ - 'বিশ্বশ্রী' মনোহর আইচ 'দৈনিক বসুমতী' অফিসে এলেন কলার-ওলা লাল সিন্থেটিক গেঞ্জি আর শাদা ফুলপ্যান্ট পরে৷ দৈনিজ বসুমতীর সম্পাদক প্রশান্ত সরকারের ঘরেই বসলেন তিনি। 

কথায় কথায় হাতের বাইসেপ ফুলিয়ে দেখান৷ শক্ত কিনা দেখার জন্য অন্যদের হাত দিয়ে টিপতে বলেন। স্পর্শ করে দেখি, শক্ত যেন পাথর।
ষাট -সত্তরে ব্যায়ামাগারেরা মূলত বামপন্থীদের হাতে, পরের দিকে অনেকটাই ভলে যায় নকশালপন্থীদের হাতে। তখন জিম-ফিম স্বপ্নেরও বাইরে৷ দুর্গাপুজোর অষ্টমী তিথিতে মহাবীর পুজো - মূল প্রসাদ বলতে ছোলা ভেজান আর আখের গুড়। সেই সঙ্গে কাটা ফল। সন্দেশ হলেও হতে পারে।
দুর্গাষ্টমীর দিন মহাবীর - হনুমানের পুজো। ফলে 'কেলাব', ভাঁজা সব বন্ধ।
কিন্তু অতি উৎসাহী 'ব্যায়াম পাগল'দের ঠেকাবে কে? এরকমই একজন ভাঁজা পাগল পার্থ - পার্থসারথী ভট্টাচার্য। মিস্টার ইনডিয়া৷ মিস্টার ইউনিভার্সে থার্ড র‍্যাঙ্ক৷ 

আরও পড়ুন
ছিটকিনি পাইপগান ক্রমশ ক্রমশ...

'কামাগ্নি' বলে একটি হিন্দি ছবিতে অলোকনাথ আর টিনা মুনিমের সঙ্গে তিনি। মূল চরিত্রে থেকেও ডায়ালগহীন।
তিনি বিজয় মল্লিকের ক্লাবে বন্ধ দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে ব্যায়াম শুরু করতেন। বিজয় মল্লিকের ক্লাব দক্ষিণ কলকাতায়। পার্থ থাকেন কালিঘাট, ১৬/১ ঈশ্বর গাঙ্গুলি স্ট্রিটে। তাঁর ব্যায়াম বেলার প্রথম দিকে 'শ্রীমা' কম্পিটিশনে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। তারপর আরও অনেক টুর্নামেন্টে জয়।
বিজয় মল্লিক তাঁর ক্লাবের দরজা ভাঙা হয়েছে শুনে লোকজন যোগাড় করে হাজির। তাঁর গলায় কণ্ঠি, বৈষ্ণব মন্ত্রি হওয়ার চিহ্ন। সম্ভবত ভবানীপুর অঞ্চলে তাঁর ক্লাব। তিনি অন্ধকার ক্লাব ঘরের ভেতরে পার্থসারথীকে ভাঁজতে দেখে ক্রম বিস্মিত। 

মানিকদার ক্লাবে পরে এক্সসারসাইজ করতেন পার্থ। কেওড়াতলা শ্মশানের কাছে সেই ক্লাব। মানিকদাকে 'গুরু' মানতেন দেবু বলে একজন। ব্যায়াম করেন, মানিকদার ক্লাবেই। একটি ব্যাটারির বিজ্ঞাপনে খবরের কাগজে তাঁর বড় ছবি ফুটে উঠতে দেখেছি। সেই দেবু যে কোথায় হারালেন!
বালিতে স্বাস্থ্যচর্চা, ব্যায়ামচর্চার ধারাবাহিকতা বহু পুরনো। পরিতোষদার ক্লাব, ভোরোদার ক্লাব, কোটিয়াদার ক্লাব, এসব ছিল। বালি জোড়া অশ্বত্থতলা বিদ্যালয়ে কমার্স নিয়ে পড়া অমিয়, অমিয় সাউ ছিলেন ভালো বডি বিল্ডার। উত্তরপাড়ার 'হেভি'-ও ছিল নামকরা ব্যায়ামবিদ।
বালির কামার পাড়ায় ছিল 'মহবীর ব্যায়াম সমিতি'। সেই এক্সসারসাইজ ক্লাবে ১৯৬৯ সালে এসেছিলেন অসীম চট্টোপাধ্যায়। তখনও তিনি প্রেসিডেন্সি কনসোলিডেশন পান। রোগা, ঝকঝকে৷ শাদা পাঞ্জাবি, সামান্য কাজকরা, নীল সুতোয়। শাদা পায়জামা। পায়ে নীল স্ট্র্যা পড বাটার হাওয়াই।

আরও পড়ুন
চান্দ্রায়ণ

অসীম তখন 'কাকা' নামেই বেশি পরিচিত। 'মহাবীর ব্যায়াম সমিতি'তে বসে বসে তিনি গ্রাম দিয়ে শহর ঘিরে ফেলার বিশেষ মুদ্রা সংকেত তৈরি করেছিলেন ডান হাতে। বুড়ো আঙুল শহর, অন্য আঙুলেরা গ্রাম৷ বাকি চার আঙুক দিয়ে বুড়ো আঙুলকে ঘেরা হল।
সেদিন অসীম চট্টোপাধ্যায়কে উত্তরপাড়ায় পল্টু সেনের (অমর সেন) কাছে পৌঁছে দিই। 'মহাবীর ব্যায়াম সমিতি' ছিল চেতলাতেও।
'বাগবাজার ব্যায়াম সমিতি'র গোবরাদা ছিলেন বামপন্থী রাজনীতির সমর্থক। অ্যাকশানে থেকেছেন একসময়। ঢোলা পায়জামা, ছিটের ফুলহাতা শার্ট, হাতা গুটিয়ে পরা৷ গোবরাদার ছেলেপুলে - 'বাহিনী' যথেষ্ট শক্তিশালী ছিল।

কালিঘাটের দাশু- বরুণের ব্যায়ামাগার খুবই নাম করা ছিল এক সময়।
কংগ্রেস- জাতীয় কংগ্রেস পোষিত বরুণ বামপন্থীদের মিছিলে  চার্জ করার জন্য শক্তিশালী হাতবোমা বাঁধা তৈরির সময় ধু-উ-ড়ু-ম-ধু-উ-ড়ু-ম-বার্স্ট। তাতেই বরুণের দুহাত উড়ে গেল, মাংস, হাড়, খন্ড- বিখণ্ড, ছড়িয়ে, ছিটকে, ছেতরে পড়ল৷ সেই থেকে বরুণ হয়ে গেল 'হাতকাটা বরুণ'। দড়িভরা, ঢিলে পায়জামা যার পায়ের ঘের যথেষ্ট বড়, আর সেই সঙ্গে ফুলহাতা শার্ট, চোখে মোটা লেন্স - হাই পাওয়ারের চশমা৷ এই হল বরুণ।

আরও পড়ুন
পান-বিড়ির গুমটি

রাসবিহারী মোড়ের কাছাকাছি সদানন্দ রোডে বরুণ - দাশুর ব্যায়ামাগার। তার সামনেই একটা সিমেন্টের উঁচু ধাপির ওপর বসে থাকতে দেখেছি বরুণকে।
বালির পরিতোষদা, যিনি ব্যায়াম ক্লাব চালাতেন, তাঁর চেহারা বেশ চমৎকার। লম্বা, ভালো হাইট, ফরসা। গালে দাড়ি। মাথার চুল পাতলা। রঙিন লুঙ্গি আর পাঞ্জাবি পরতেন। বালি-বেলুড় সীমান্তে তাঁর ক্লাব। বালি লাগোয়া উত্তরপাড়াতেও ছিল বেশ কয়েকটি ব্যায়ামাগার।  

১৬৬ নম্বর বিপিন বিহারি গাঙ্গুলি স্ট্রীটে দৈনিক বসুমতী অফিসে বিশ্বশ্রী মনোহর আইচ নানা কথা বলেন। ভারতীয় জনতা পার্টি - বি জে পি র হয়ে লোকসভা আসনে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন, এর বহু বছর পর। সে বছরই অভিনেতা ভিক্টর ব্যানার্জিও বিজেপি ক্যান্ডিডেট।
আসন করিয়ে যাঁরা, তাঁদের  দু চক্ষে দেখতে পারেন না মনোহর আইচ। 'আয়রন ম্যান' নীলমণি দাশ ও আর এক বিশ্বশ্রী মনতোষ রায় তিনি যথেষ্ট খড়গ হস্ত। ফ্যানাভাত খেয়ে এক্সসারসাইজ করা যায় না, বডিও হয় ন, মনোহর আইচের সাফ কথা। মাসল ডেভেলপ করতে হলে মাংস খেতে হবে। ডিম। অ্যানিমেল প্রোটিন। মনোহর আইচ এইসব কথার বহুবছর পর বিজেপি ক্যান্ডিডেট হয়ে জিততে পারেন নি। এক্সসারসাইজ, ভাঁজা, ব্যায়াম ইত্যাদির সঙ্গে কাপড়ের ল্যাঙোট, তার সম্পর্ক অচ্ছেদ্য। ল্যাঙোট ব্যবহার করেন ভারতীয় সাধু-সন্ন্যাসী যোগীরা আর কুস্তিগির ও ব্যায়াম করিয়েরা। ল্যাঙোটকে শুদ্ধ বাংলায় বলে কৌপীন। আর একটু চলিত করে নিলে 'কপনি'।  সেই কথায় আছে না, 'আপনি আর কপনি'। কৌপিন বা অন্তর্বাস সনাতন ধর্মীয় - হিন্দু সন্ন্যাসীদের অঙ্গ লঙ্গ। 

অতিরিক্ত কৌপিন ব্যবহারে পুরুষত্ব - লিঙ্গোত্থান নষ্ট হয়, এমন মতও প্রচলিত আছে। পুংলিঙ্গ মুখ দীর্ঘদিন উর্ধ্বদিকে থাকলে নাকি পুংশক্তি ব্যহত হয়।
মনে পড়ে, ষাটের দশকে কলকাতা ময়দানে কুস্তির আসর বসত। দারা সিং, রণধাওয়া, 'কালা শের', 'ব্ল্যাক টাইগার', - এঁরা ছিলেন পরস্পর পরস্পরকে চ্যালেঞ্জ দেওয়া পাহেলয়ান। সবটাই অবশ্য বানানো - গট আপ৷
এই কুস্তি প্রতিযোগিতার বক্স করে বিজ্ঞাপন করে বেরত 'যুগান্তর', 'আনন্দবাজার পত্রিকা'য়। সম্ভবত প্রতি রবিবার এই কুস্তির আসর কলকাতা ময়দানে। দারা সিং তখন বহু হিন্দি সিনেমার হিরো। সঙ্গে নিশি, হেলেন, মুমতাজ। একেবারে তৃতীয় শ্রেণীর - থার্ড গ্রেড মুভি। 

পরে দারা সিং রামায়ণ - রামানন্দ সাগরের টি ভি রামায়ণে রামভক্ত বজরংবলী সাজেন। তার আগে 'আনন্দ' ছবিতে তাঁকে আমরা পাই আখড়ার গুরুজি হিসেবে। যাঁকে কথার মাধুর্যে টেনে এনে রাজেশ খান্না পাড়ার রকবাজদের কড়কে ঠান্ডা করান। দারা সিং পরে ভারতীয় জনতা পার্টির সাংসদ হন।
যে ময়দানী কুস্তির কথা একটু আগে বলেছি, দারা সিং, রণধাওয়া, কালা শের তারই সংগঠিত রূপ হয়ত টি ভি তে সম্প্রচারিত ডাব্লিউ ডাব্লিউ এফ কুস্তি। যা অনেকে মন দিয়ে দেখেন আজও। কিক-বক্সিং, বক্সিং, কুস্তি - সবই দেখনদারি হয়ে ওঠে সিনেমা আর টেলিভিশন চ্যানেলের কল্যাণে৷
কুস্তির ফ্রি স্টাইল, গ্রেকো - রোমান, ভারোত্তোলনের ফেদার ওয়েট, লাইট ওয়েট, ব্যানটম ওয়েট, হেভিওয়েট, ডোপ টেস্ট, স্টেরয়েডবাজি - সব মিলে মিশে যায় একসঙ্গে, এই লেখা লিখতে লিখতে।

অলংকরণ - প্রণবশ্রী হাজরা

Powered by Froala Editor