চান্দ্রায়ণ

মুছে যায় - ৬

আগের পর্বে

সে সময়ে পান-বিড়ির দোকান বলতে রাস্তা বা গলির মোড়ে ছোট্ট টংঘর। দেয়ালে আলকাতরা মাখানো তিন দিকে টিনের ঘের, একদিক ফাঁকা। পাওয়া যেত চারমিনার, উইলস, ক্যাভেন্ডার, লেক্স, মেপল, পানামা, পাসিং শো প্রভৃতি ব্র্যান্ড। গুমটির ভেতরে চলতে থাকা রেডিও একটানা গাইত রফি, হেমন্ত, মান্না দে, গীতা দত্ত, আশা, লতা প্রমুখের গান। সিনেমাতেও বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল সিগারেটের চল, উত্তম কিংবা সৌমিত্রের মুখে ধোঁয়া-বৃত্ত। সিগারেটের পাশাপাশিই বিড়ির কথাও উল্লেখযোগ্য। জেলখানায় এই বিড়িই প্রায় ডলারের সমান মূল্যবান, এতটাই মহার্ঘ ছিল এ জিনিস। অন্যদিকে ক্যাপসটেনে মোড়া হাতে বানানো সিগারেটের চলও ছিল। চারু মজুমদারের চেন স্মোকিংয়ের অভ্যাসের কথা মাথায় রেখে কেউ চারমিনারের নামও দিয়েছিলেন ‘চারুবাবু’। তবে সিগারেটের তালিকায় পরে যোগ হয়েছিল চুরুট, হুকাম পাইপ প্রভৃতি।

উত্তরায়ন, দক্ষিণায়ন নয়, চান্দ্রায়ণ।
'চন্দ্রায়ন' নয়, চান্দ্রায়ণ।
সূর্যের উত্তরায়ন, দক্ষিণায়নের হিসেবে সনাতনী ভারতীয় বিশ্বাস অনুযায়ী কিছু পুরাণকথার দেবলোক - দেবতারা, জাগেন, ঘুমোন – নিদ্রা যান।
কুরু পিতামহ ভীষ্ম - গঙ্গাপুত্র ভীষ্ম কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে ভয়ানক ভাবে শরাহত হওয়ার পর নিজের স্বেচ্ছামৃত্যুর ক্ষণ নির্বাচন করেছিলেন, সূর্যের এই অয়নাংশ হিসাব করেই। মহাভারতের এই কাহিনি সুতো আমাদের অনেকেরই অজানা।
'চন্দ্রায়ণ' হল ভারতীয় প্রযুক্তিতে তৈরি মহাকাশ পথে নিক্ষিপ্ত গতি। এই তো সেদিন হল, খাটলেন - পরিশ্রম করলেন ভারতীয় বিজ্ঞানীরা। বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে নাম করার চেষ্টা করল এক অপশক্তি৷ রাজনৈতিক ভাবে যারা সাংঘাতিক সংঘবদ্ধ, কু-তত্ত্বের আড়ালে৷
'চান্দ্রায়ণ' বলতে গেলে ফিরতে হবে - সোজা বাংলায় মুখ ফেরাতে হবে ১৯৩৪-৩৫ -১৯৩৬ সাল-টাল নাগাদ অখন্ড ভারতের অবিভক্ত বঙ্গের কলকাতার বাগবাজার অঞ্চলে।

১৯১১-তে মোহনবাগান - ভূতি সুকুল, অভিলাষ ঘোষদের 'মোহনবাগান অ্যাথলেটিক ক্লাব' 'ইস্ট ইয়র্ক'কে ২-১ গোলে পরাজিত করে আই এফ এ শিল্ড জিতে নিল। আবার এই ১৯১১তেই বঙ্গভঙ্গের  - বঙ্গভঙ্গ প্রস্তাবের ছয় বছর পর কলকাতা থেকে ভারতবর্ষের রাজধানী চলে গেল দিল্লিতে।
মুঘলিয়াত, পাঠান ডায়ানেস্টি - সব শাসকেরই ভারত শাসনের কেন্দ্রভূমি ছিল দিল্লি। তার আগে পৃথ্বীরাজ চৌহান ও অন্যরা সকলেই দিল্লিমে।
ব্রিটিশ ইন্ডিয়া - ইস্ট ইন্ডিয়া কম্পানির শাসন বা 'মহারানি' ভিক্টোরিয়ার হুকুমত - সবেতেই কলকাতাকে ক্যাপিটাল মেনেছে, দুভাবে। ব্রিটিশ ইন্ডিয়ায় পোস্ট সিপয় মিউটিনি পর্বে একরকম। সিপাহি বিদ্রোহের আগে আর এক রকম। এর কারণ কি মিউটিনি -  সিপাহি বিদ্রোহের বাগি সিপাহিদের নির্ঘোষী কামান - বন্দুক, তলোয়ারের শনন শনন - সাঁই সাঁই। গোলা ফাটার ধু -উ -ড় - ড়ু- ম গর্জন।  অশ্ব আর হস্তিদের হ্রেষারব আর বৃংহণ? আর বাগি বিদ্রোহী সিপাহি - তাঁদের নেতৃত্ব - ঝাঁসির রানি  - লক্ষ্মীবাই,  নানা সাহেব, তাঁতিয়া টোপে, কুনওয়ার সিং - এঁদের রণ গর্জন - 'চলো দিল্লি'। যা পরবর্তী সময়ে - বহুবছর পর আইএনএ-র আজাদি সেনারা একই রণধ্বনি তুলেছিল নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু, শাহনওয়াজ, সেহগল, ধিঁলো, লক্ষ্মী সেহগলের নেতৃত্বে।

১৭৫৭-তে পলাশীর যুদ্ধ। পলাশীর আম্রকাননে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজদৌল্লার পরাজয় লর্ড ক্লাইভ, জগৎশেঠ, উমিচাঁদ, রায়দুর্লভ, মিরজাফর, ঘসেটি বেগমদের চক্রান্তে।
মিরজাফর - মিরকাশিমের 'নবাবি জামানা' শেষ হতে দেরি হয়নি। ১৭৭২-এ মকসুদাবাদ বা মুর্শিদাবাদ থেকে সুবে বাংলা তথা ভারতবর্ষের রাজধানী কলকাতায়। ১৯১১ তে তা আবার দিল্লিতে চলে যায়। চতুর, বানিয়া ব্রিটিশ যে ভয়ে মুঘলিয়তের সদর দপ্তর দিল্লি থেকে সরিয়েছিল, একই ভিয়ে, তখন সদা জাগ্রত বিদ্রোহী বাংলা, পাঞ্জাব ও মহারাষ্ট্র - বোমা, পিস্তল,  রিভলভারের শব্দে - বারুদ গন্ধের সঙ্গে সঙ্গে 'রক্তে আমার লেগেছে আজ সর্বনাশের নেশা' লেখা পোস্টার পড়ছে কলকাতায়, হাসতে হাসতে ফাঁসির ম্যানিলা রোপে চুম্বন করছে ছেলেরা, সেই ভয়েই কি ব্রিটিশ রাজধানী গুটল? ১৯০৫ থেকে ১৯৩৪ - সে যে বড় অগ্নিক্ষরা দিন।

থাক, ওসব কথা, ১৯৩৪-৩৫-১৯৩৬ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দরজায় দাঁড়িয়ে আছে পৃথিবী।
তখন গান্ধীজি, সুভাষচন্দ্র, পণ্ডিত জহরলাল নেহেরু, রুজভেল্ট, উইনস্টন চার্চিল, যোশেফ স্তালিন, অ্যাডলফ হিটলার, বেনিতো মুসোলিনি, তোজো, সব মিলিয়ে পৃথিবীর - সমস্ত দুনিয়া জুড়ে প্রবল রাজনৈতিক ঘূর্ণাবর্ত।
এই সময়েই বাগবাজারে আনন্দ চ্যাটার্জি লেন থেকে মহেন্দ্র বসু লেনে উঠে আসা রায়পরিবারে চান্দ্রায়ণের আয়োজন। চান্দ্রায়ণ করা হয় তাঁরই, যিনি প্রবল অসুস্থ - হয় সেরে উঠবেন, নয় দু-চোখ বুজবেন, - 'গয়া - গঙ্গা - গদাধর - হরি' - দু চোখে তুলসীপাতা, বুকের ওপর জগদীশবাবু -- জগদীশ ঘোষের গীতা। দাম চার - আনা। ছ আনা বড়জোর। তারপর 'বল হরি হরিবোল... বল হরি...'।
শান্তি- স্বস্ত্যয়ন, প্রায়শ্চিত্ত।  পতাকি 'রিষ্টি যোগ', 'গন্ডে পা' - সবই তখন অতিপ্রচলিত হিন্দু বাঙালি জীবনে। আনন্দ চ্যাটার্জি লেনেই তখন অতি বিখ্যাত পটুয়া যামিনী রায় ভাড়া থাকেন। সেই সঙ্গে বাংলা ভাষার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কথাকার তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়।

আরও পড়ুন
পান-বিড়ির গুমটি

যামিনীবাবু - 'যামিনী পটুয়া'-র সঙ্গে দেখা করতে ছোট লাট কে সি আনন্দ চ্যাটার্জি লেনে চলে আসেন সান্ত্রী পরিবেষ্টিত হয়ে। হয়ত বাঁকুড়ার বেলতোড় থেকে আসা এই পটুয়ার পটও কিনতে।
যামিনীবাবুর ছেলে-মেয়েরা সবাই একটু আধিটু ছবি সৃজনে। তাঁর এক পুত্র ডাকনামে পটল, ভালো নামে অমিয়, রাজা মনীন্দ্র চন্দ্র নন্দীর নামে যে স্কুলটি, সেই বিদ্যালয়ের ছাত্র।
তার সহধ্যায়ী অমরনাথ - অমরনাথ রায়। অমিয় তো পরে নামকরা ছবি আঁকিয়ে শোনা যায়, যামিনীবাবুর ছবি নকলে- কপিতে তিনি 'মাস্টার'।
তারাশঙ্কর ততদিনে 'সপ্তপদী', 'না' - এইসব গমগমে আখ্যান লিখে ফেলেছেন কি?
যামিনী রায়, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় - দুজনেই বাজার করতে বেরোন, কাছেই। দর করেন, তখনও নতুন বাড়ি করে 'কল্লোলিয়া' শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়ের বাড়ির উলটো দিকে উঠে যাওয়া হয়নি তারাশঙ্করের। হয়ত টালা পার্কের লাগোয়া জমি অপেক্ষা করে তাঁরই জন্যে।
বড় পরিবার তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তাঁর মেয়েদের নাম - বাণী, গঙ্গা। ছেলেরা সনৎকুমার, সরিৎকুমার। সনৎকুমার বাংলা আখ্যান নির্মাণ করতেন। খুব আলাপ ছিল সরিৎকুমারের সঙ্গে। সনৎকুমারের সঙ্গে অতি সামান্য। সনৎকুমার তারাশঙ্করের একটি অসম্পূর্ণ আখ্যান শেষ করে ছিলেন কি? ১৯৭০ সালে তারাশঙ্করের প্রয়াণের পর? 'শতাব্দীর মৃত্যু' কি শেষ হল সনৎকুমারের হাতে?

আরও পড়ুন
ঋতু, ঋতুবন্ধ – ঋতুসংহার

সরিৎবাবুর সঙ্গে গেছি লাভপুর। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্কুলের অনুষ্ঠানে, সেও অনেকদিন আগে। সঙ্গে তারাশঙ্করের নাতনি - লেখক - কাঞ্চনকুন্তলা মুখোপাধ্যায়।  তাঁর সহজীবনের মানুষ শ্যামল রায়। ওঁদের কন্যা ইমলি তার তারাশঙ্করের আর এক নাতি কবি ও সঙ্গীত বিশারদ বিশ্বদেব মুখোপাধ্যায়। তাঁর আর এক নাম - দেবব্রত মুখোপাধ্যায়। দেবুদা তখন আকাশবাণীতে চাকরি করেন। হিন্দুস্থানী রাগসঙ্গীতে অসামান্য দখল। বড় কবিও দেবুদা।
সে এক অভিজ্ঞতা।
যাক,  আবারও ১৯৩৪-৩৫-৩৬ এর কলকাতার বাগবাজারে ফিরি। যামিনী রায়ের ছবি তখন সাহেবরা খুব কেনে৷ দশ টাকা, আট টাকায় বিক্রি হয় তাঁর আয়তনে ছোট কাজ। যামিনীবাবুরও বড় পরিবার। বাঁকুড়ার বেলিয়াতোড় বা বেলতোড় থেকে কলকাতার ভাড়া বাসায়। ছবি বিক্রির টাকা যামিনীবাবু রাখতেন চশমার খাপে। এই তথ্য আমায় দিয়েছেন আমার পিতৃদেব অমরনাথ রায়। অমিয় বলতেন এইসব কথা।

আরও পড়ুন
শুকুত – জিহ্বান্তরে আড়-বেগুন

১৯৩৪-৩৫-৩৬ এর বাগবাজার।
উত্তর কলকাতা, গঙ্গা, কাছেই থিয়েটার পাড়া, কুমারটুলি। 'ভঙ্গ-কুলীন' নয়, সত্যিকারের 'কুলীন - কলকাতা'।
বাগবাজারের সেই মহেন্দ্র বসু লেনেই তারানাথ ন্যায় তর্কতীর্থ (রায়) এর পরিবার৷ 'দর্শন' চতুষ্পাঠী। তারানাথ নব্যন্যায়ের ভারত বিখ্যাত পণ্ডিত। তারানাথ, তাঁর স্ত্রী সরযূবালা দেবী, দুই কন্যা- শৈল আর কল্যাণী, অকাল প্রয়াত ভাই - সহোদর অম্বিকানাথ রায়ের বিধবা স্ত্রী শিবানী রায় আর অম্বিকানাথ- শিবানীর দুই সন্তান- কন্যা কিরণপ্রভা, যাকে অম্বিকানাথ আদর করে 'কিন্নি', 'কিন্নি' বলে ডাকতেন, আর পুত্র অমরনাথ - যার ডাক নাম - 'খোকা'। তারানাথের একটি পুত্র সন্তান অতি অকাল প্রয়াত।
সেই সময় জন্ম নেওয়া বহু হিন্দু বাঙালি পুং-সন্তানের নামই রাখে 'খোকা'। মেয়ের নাম 'খুকু'।
খোকা আটমাস গর্ভে থাকার সময় প্রয়াত হন অম্বিকানাথ, সম্ভবত খুন করা হয় তাকে, সে ভিন্ন কাহিনি৷ সরযূবালা-তারানাথের সর্বশেষ সন্তান কুলদাপ্রসাদ (পতা) র তখনও জন্ম হয় নি।

আরও পড়ুন
বর্মা বার্মা বার্মিজ

বিধিবা শিবানীর চান্দ্রায়ণ হচ্ছে। প্রায়শ্চিত্ত।  সম্পূর্ণভাবে ব্যাধি মুক্তি অথবা শরীর যাওয়ার ক্রিয়া নাকি এই পদ্ধতি। বাঙালি হিন্দু তার পারলৌকিক ক্রিয়ায় তিল-কাঞ্চন, বৃষোৎসর্গ, চন্দনধেনু, তোরণ রাখে।
শ্রাদ্ধে সবচেয়ে কম খরচ তিল-কাঞ্চন, তোরণে সবথেকে বেশি ব্যায় - চন্দনধেনুতে।
অমরনাথ জননী শিবানী অনেকদিন ধরেই ভুগছেন। ঘুসঘুসে জ্বর, কাশি, আরও নানা উপসর্গ - হিন্দু বাঙালি পাশ্চাত্য বৈদিক ব্রাহ্মণ ঘরের প্রায় বাল বিধবা। একবেলা পাথরের থালায় আতপ তন্ডুল। সঙ্গে কাঁচকলা সেদ্ধ। সৈন্ধব না করকচ লবণ। চিনি বলতে কাশীর চিনি। নয়ত আখের গুড়।
৭ আষাঢ়ের অম্বুবাচি, প্রতিবছর। তিন দিনের প্রায় নির্জলা নির্যাতন। মাসে দুটো নির্জলা একাদশী৷ মাছ-মাংস-ডিম-- সব দূরে, বৈধব্যের সঙ্গে সঙ্গে। সেই সঙ্গে মসুর ডাল, পুঁইশাক, যে দোকানে সিঙারা- কচুরি - নিমকি হয়, সেই ময়রার মিষ্টি বাদ। হাঁস অর্ধেক ডিম চেহাররা ক্ষীরের মিষ্টি।
ঘ্যাঁচ কাটা লোহার কড়াইয়ে রন্ধন -- নিষেধ।

আরও পড়ুন
কাতান ব্লেড হয়ে গেলে

গঙ্গাজলে রান্না। হায় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর!
শিবানী অসুস্থ।
তাঁর কি থাইসিস, প্লুরিসি, যক্ষা? ক্ষয়রোগ - ক্ষয়কাশ। তিনি ক্রমশ ছোট হয়ে যাচ্ছেন, এই বিবরণ অমরনাথের কাছে শোনা। তখন তিনি সাঁইত্রিশ -আটত্রিশ বড়জোর। শিবানীর চিকিৎসা হেরম্ব কবিরাজ করেন। তিনি বাগবাজারের অতিবিখ্যাত কবিরাজি চিকিৎসক। শিবানীর অ্যালোপাথি ওষুধ নিষিদ্ধ, কারণ এইসব 'আসুরিক', 'সাহেবি' দাওয়ায় মুরগির ডিমের নির্যাস ও অনান্য বিহু নিষিদ্ধ দ্রব্য থাকার সম্ভাবনা প্রচুর। ফলে অ্যালোপাথি চিকিৎসা নিষেধ।
চান্দ্রায়ণে যার চান্দ্রায়ণ করা হবে, তাঁকে এসে বসতে হয় 'পূজা' স্থলে৷ একাধিক ব্রাহ্মণ, পণ্ডিত উপস্থিত সেখানে পৌরহিত্য কর্মের জন্য৷ 'পুরের হিত করেন যিনি, তিনি পুরোহিত' - এরকম একটা আপ্ত বাক্য তখন, এখন - সব সময়েই কথা হিসেবে ছড়ানো থাকলেও  দান-দক্ষিণা, তৈজসপত্র - বাসনকোসন - থালা, গ্লাস, বাটি, পিলসুজ-পিদিম, আসন, অম্বুরীয়, মধুপর্কের বাটি, চাল -আলু - কাঁচকলার ভুজ্জি,  দানের ধুতি-শাড়ি সবই রয়েছে। সঙ্গে দানের গামছাও।

পেতলের পিলসুজের ওপর পেতলেরই প্রদীপ অগ্নিময়। ধূপ, দীপ৷
নরসুন্দর উপস্থিত আছেন ধারাল ক্ষুর নিয়ে। তাঁরও নতুন বস্ত্র, গামছা, আলাদা দক্ষিণা। কথায় আছে না, 'খরা-বামুন-বান - দক্ষিণা পেলে যান'।
শিবানী রায়ের মস্তক মুণ্ডন হল। তিনি ন্যাড়া হলেন। ঢাকা মানিকগঞ্জের পাটগ্রামে অম্বিকানাথের প্রয়াণের পর তাঁকে মস্তক মুণ্ডন করতে বলা হয়েছিল। এবার আবার।
খুব কাঁদলেন শিবানী৷ খুব কাঁদলেন। ফুঁপিয়ে- দু চোখ দিয়ে ধারা। বছর দশ -এগারোর অমরনাথ সবটা দেখলেন। দেখলেন কিরণপ্রভা।
তাঁরা দুই ভাই-বোন তীব্র কষ্টানুভূতিতে গেলেন মায়ের ন্যাড়া মাথা দেখে। শিবানী চান্দ্রায়ণের ফল পেলেন হাতে হাতে। মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই তিনি মারা যান। হয়তো লক্ষ্মীপূর্ণিমা - আশ্বিনের কোজাগরী নিশির কোনো একটা সময়।  সেটা ১৯৩৬, দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ - 'সেকেন্ড গ্রেটওয়ার' আসতে তখনও বছর তিনেক দেরি। অমরনাথ রায় তখন বছর বারোর।

অলংকরণ - প্রণবশ্রী হাজরা

Powered by Froala Editor