নসফেরাতু, শতকের উপান্তে এক ছায়াশরীর

“Let us chat together a moment, my friend! There are still several hours until dawn, and I have the whole day to sleep.”
— Max Schreck - Graf Orlok

বার্লিনের প্রাইমুস-পালাস্ট প্রেক্ষাগৃহে ১৯২২ খ্রিস্টাব্দের ১৫ মার্চ তারিখে, মানে ঠিক একশো বছর আগে একটা ছায়াছবি মুক্তি পেয়েছিল। যদিও এই ঘটনার দেড় সপ্তাহ আগে, ৬ মার্চ নাগাদ ঐতিহ্যবাহী বার্লিন জুলজিক্যাল গার্ডেন (বের্লিন জুলগিস্যার গার্টেন)-এর মার্মোস্যাল বা মার্বেল রুমে অনুষ্ঠিত হয় ঐ ছবির বিশেষ প্রিমিয়ার শো, যে প্রিমিয়ারে ঊনবিংশ শতকের বিড্যারমায়্যার আমলের কস্টিউম পড়ে আসার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল দর্শকদের। এমনকি এরও আগে খুব সীমিতভাবে নেদারল্যান্ডেও শো হয়েছিল কয়েকটা। যে চলচ্চিত্র নিয়ে এই উন্মাদনা, তার কাহিনির প্রেক্ষাপট লুকিয়ে আছে মধ্যযুগের পূর্ব ইউরোপের ইতিহাসকে ঘিরে প্রচলিত জনশ্রুতির মধ্যে। প্রাচীন রুমানিয়ান শব্দ ‘নসফেরাতু’, এই শব্দের অলিগলির মধ্যে লুকিয়ে আছে অশুভ এক সত্তার দ্যোতনা। লুকিয়ে আছে ক্রুসেড, বয়্যার সামন্তগোষ্ঠীর রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ আর নিরন্ন প্রজাদের আর্তনাদের দুঃস্বপ্নের ক্যানভাস।

পিছিয়ে যাওয়া যাক কয়েকটা বছর। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের জিঘাংসায় লাল হয়েছে ইউরোপের রণাঙ্গন। এর ওপর যুদ্ধশেষে মিত্রপক্ষের প্রতিহিংসাপরাণ ভার্সাই চুক্তির ফাঁসে অর্থনৈতিকভাবে একেবারে বিধ্বস্ত জার্মানি। ভাইমার রিপাবলিকের আমল। এর সামান্য আগে থেকেই জার্মান কৃষ্টিতে জন্ম নেয় এক নতুন ধরনের দার্শনিক বীক্ষণের, সময় যাকে চিহ্নিত করেছে ‘জার্মান এক্সপ্রেসনিজম’ নামে। এই নষ্ট সময়ের বর্ণালি এক আশ্চর্য অভিক্ষেপে প্রতিফলিত হয়েছিল এক্সপ্রেসনিস্ট বীক্ষায়। এই মতবাদের চিহ্ন সেই সময় ধরা পড়ছে অঙ্কনচিত্রে, নাটকের মঞ্চসজ্জায় এমনকি নতুন মাধ্যম চলচ্চিত্রে। ১৯২১ সালে নবীন পরিচালক ফ্রিডরিশ ভিলহেল্ম মূর্নাও আইরিশ লেখক ব্রাম স্টোকারের প্রখ্যাত ‘ড্রাকুলা’ উপন্যাস আর পূর্ব ইউরোপের কিছু লোকপরম্পরাকে কেন্দ্র করে এই ধারায় একটি ছবির পরিকল্পনা করলেন। ‘প্রাণা’ বলে এক প্রযোজনা সংস্থা রাজি হয় ছবিটার প্রযোজনার দায়িত্ব নিতে। এই সংস্থার উদ্দেশ্য ছিল অকাল্ট, অতিপ্রাকৃত ভয়কে কেন্দ্র করে সিনেমা তৈরি করার। এই ‘প্রাণা’ শব্দটার মধ্যেও প্রাচীন হিন্দু পুরাণের একটা চিহ্ন লুকিয়ে আছে। সংস্থার একজন অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা আলবিন গ্রাউ নিজে একজন অকাল্ট বিশ্বাসী শিল্পী এবং স্থপতি ছিলেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় একজন সার্বিয়ান কৃষকের বক্তব্য তাঁকে এই ছবি প্রযোজনা করতে অনুপ্রাণিত করে। ওই ভদ্রলোক গ্রাউয়ের কাছে দাবি করেছিলেন যে তাঁর বাবা একজন ভ্যাম্পায়ার, জীবন মৃত্যুর মাঝামাঝি রয়ে যাওয়া ধূসর এক অবয়ব। হেনরিক গ্যালিন নামে জন্মসূত্রে অস্ট্রিয়ান একজন অভিনেতা এবং চিত্রনাট্যকারকে দায়িত্ব দেওয়া হল চিত্রনাট্য লেখার জন্য। গ্যালিন এর আগে ‘দ্য স্টুডেন্ট অফ প্রাগ’, ‘দ্য গোলেম’ ইত্যাদি আইকনিক জার্মান এক্সপ্রেসনিস্ট ছবির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। লেখা হল চিত্রনাট্য। কিন্তু ব্রাম স্টোকারের উত্তরসূরিদের কাছ থেকে পাওয়া গেল না প্রয়োজনীয় অনুমতি। অগত্যা গ্যালিন গল্পকে এনে ফেললেন উত্তর জার্মানির কাল্পনিক বন্দর শহর উইসবর্গে। কাউন্ট ড্রাকুলা এই ছবিতে হলেন ‘কাউন্ট ওরলক’, জোনাথন হারকার রূপান্তরিত হলেন ‘টমাস হাটার’ চরিত্রে। কাহিনির মধ্যে ব্ল্যাক ডেথ অর্থাৎ মধ্যযুগের ইউরোপের প্লেগ মড়কের ছায়াও চলে এল। ছবির শিরোনাম হল ‘নসফেরাতু: আইন্ সিম্ফনি দেস্ গ্রাউওয়েনস্’ যার কাছাকাছি অর্থ আতঙ্কের ঐক্যতান। গ্যালিনের চিত্রনাট্যের মধ্যে দুঃস্বপ্নের একটা সিম্ফনিক ইমারত নির্মানের হাতছানি রয়েছে। রয়েছে ভয়ের মধ্যেও এক উত্যুঙ্গ নান্দনিকতার প্রতিবিম্ব। এর সঙ্গে যোগ দিয়েছিল পরিচালক মূর্নাও-এর নান্দনিক দর্শন। ছোট স্টুডিওর অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতার জন্য বাজেট ছিল অল্প। এই কারণে ক্যামেরাম্যান ফ্রিৎজ আর্নো ভাগনারের জন্য বরাদ্দ হয়েছিল একটাই ক্যামেরা। পরিচালক মূর্নাও ছবির চিত্রনাট্যকে নিবিষ্টভাবে অনুসরণ করেছিলেন এমনকি স্ক্রিপ্টের টাইপ করা পাতার মধ্যে হাতের লেখায় ক্যামেরা পোজিশন এবং লাইটিং এর নির্দেশকেও পালন করেছিলেন যতদূর সম্ভব। যদিও একসময় আশ্চর্যজনকভাবে হারিয়ে যাওয়া চিত্রনাট্যের প্রায় বারোটা পাতার স্ক্রিপ্টকে আবার নতুন করে লিখেছিলেন মূর্নাও নিজেই। এর মধ্যে ছবির শেষ দৃশ্যে সূর্যের আলোতে ধ্বংস হয়ে যাওয়া কাউন্ট ওরলকের দৃশ্যটাও ছিল। ন্যারেটিভের একটা ছন্দ ধরে রাখার জন্য মূর্নাও শ্যুটিং এর সময় মেট্রোনোম ব্যবহার করেছিলেন। এই ছবির আবহসংগীতও ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যা ওই ভয়ের সিম্ফনিকে সঠিক রূপদান করার লেইট মোটিফ হিসেবে কাজ করবে। বার্লিন প্রিমিয়ারের সময় ব্যবহৃত হান্স আর্ডম্যানের মূল আবহ বহুদিন ধরেই আর পাওয়া যায় না। তারপর গত এক শতাব্দী ধরে বিভিন্ন সংগীত পরিচালক এই ছবির নানা কাট, নানাবিধ সম্পাদিত সংস্করণে সুর সংযোজনা করেছেন।  আর্ডম্যানের স্বরলিপির সামান্য উদ্ধার পাওয়া অংশ তাঁরা তাঁদের সুরে আত্তীকরণ করেছিলেন বলেই জানা যায়। 

ছায়াছবির এক মূল পোস্টার 

 

আরও পড়ুন
গল্পের নয়, রক্তের জন্য পাগল সত্যিকারের ড্রাকুলা থাকতেন এখানেই

ড্রাকুলা উপন্যাসের মূল কাহিনির আনঅথরাইজড সংস্করণ হিসেবেই এই ছবিকে অনেকে চেনেন কারণ প্রথম জার্মান সংস্করণের ইন্টারটাইটেলে ড্রাকুলা উপন্যাসের উল্লেখ ছিল সূত্র হিসেবে। যদিও মূল উপন্যাসের সঙ্গে এর বেশ কিছু লক্ষণীয় অমিল আছে। ড্রাকুলার মত ওরলক নিজে কিন্তু নতুন কোন ভ্যাম্পায়ার সৃষ্টি করতে পারেনি, ড্রাকুলা সূর্যের আলোতে ক্ষতিগ্রস্থ হয় কিন্তু সেই রশ্মিতে ওরলক সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়। 

আরও পড়ুন
হেমেন রায়ের ড্রাকুলা, পিশাচ-কাহিনি এবং আরও

এই ছবির ফিল্ম টেকনিক পরবর্তীকালে অসংখ্য কৃতী পরিচালককে উদ্বুদ্ধ করেছিল ভয়ের আবহের ফিল্ম ব্যাকরণ তৈরি করতে। এর মধ্যে আলফ্রেড হিচকক অন্যতম, যিনি এই এক্সপ্রেসনিস্ট শৈলির নানা আঙ্গিক ব্যবহার করেছিলেন তাঁর ছবির মধ্যে। ১৯৭৯ সালে প্রখ্যাত জার্মান পরিচালক ভার্নার হেরজগ এই ছবির একটা দ্বিভাষিক (জার্মান – ইংরেজি) রঙিন সবাক সংস্করণ নির্মাণ করেন যেখানে ক্লাউস কিন্সকি ওই ভ্যাম্পায়ারের চরিত্রে অভিনয় করেন। লক্ষণীয় যে এখানে ভ্যাম্পায়ার হলেন ড্রাকুলা, ওরলক নয়। এই ছবিটাও তার নির্মাণ গুণে খুবই প্রশংসিত হয়েছিল। মূল ছবিতে ওই ভূমিকায় অভিনয় করা ম্যাক্স স্রেককে নিয়ে কিছু অদ্ভুত ধারণার বিনির্মান করা হয়েছিল ২০০০ সালে নির্মিত 'শ্যাডো অফ দ্য ভ্যাম্পায়ার’ ছবিতে।  

আরও পড়ুন
বইটিতে ফ্রানৎস কাফকা-কে তুলনা করা হয় ড্রাকুলা-র সঙ্গে!

ভার্নার হেরজগ পরিচালিত নসফেরাতু ছায়াছবির পোস্টার

 

ড্রাকুলা উপন্যাসের মূল কাঠামো যাকে ঘিরে তিনি এক ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব। রুমানিয়ার সুপ্রাচীন ‘বাসারাব’ বংশের একটি শাখা ‘ড্রাকুলেস্তি’বা ‘ড্রাকুলিয়া’। এই বংশেরই উত্তরাধিকারী প্রিন্স তৃতীয় ভ্লাদ (১৪৩১-১৪৭৭)। জীবিতকালেই যিনি একাধারে বিখ্যাত এবং অন্যদিকে অতি ঘৃণিত হয়েছিলেন। মৃত্যুর পরে তাঁর নামের সাথে ৎসেপেশ শব্দ জুড়ে যায় ইংরেজি পরিভাষায় যাকে ইম্পেলার বলা হয়। এই শব্দটা এসেছিল ভ্লাড ড্রাকুলিয়ার বিচিত্র আর নারকীয় শাস্তির পদ্ধতি থেকে। শত্রুদের শরীর অনেকটা আমাদের দেশের শূলে চড়ানোর মতো একটা বিশাল বর্শায় গেঁথে পথের ধারে উন্মুক্ত প্রদর্শনের আদেশ দিতেন তিনি। এর উদ্দেশ্য ছিল ভয় ধরানো, সাধারণ মানুষ কোনো বিদ্রোহের কথা কল্পনাতেও যেন না আনে। ১৪৫৯ সাল, ক্যাথলিক খ্রিস্টান জগতের অধীশ্বর পোপ দ্বিতীয় পায়াস তুর্কি অটোমানদের বিরুদ্ধে  ডাক দিলেন এক নতুন ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধের। এখনকার মতো মধ্যযুগের সেই সময়েও ধর্ম আর রাজনীতির মিলিত গাঁটছড়ায় নানা নেপথ্য নাটকের পালা চলত। এছাড়া পূর্ব ইউরোপে বয়্যার নামের সামন্ত শ্রেণিরাও তখন এই উত্থান পতনের এক উল্লেখযোগ্য ক্রীড়নক। রাজনীতির এই দাবা খেলায় সেই সময় এগিয়ে এলেন তৃতীয় ভ্লাদ। তিনি তখন হ্বালাচিয়ার (রুমানিয়ান উচ্চারণ ‘হ্বালাহিয়া) শাসনভার গ্রহণ করেছেন। সেই সময় অটোমান সুলতান দ্বিতীয় মাহমুদ ইউরোপের দক্ষিণের এক বিস্তৃত অঞ্চল দখল করে নিয়েছিলেন। তিনি ভ্লাদের কাছে দাবি করে বসলেন এক বিরাট অঙ্কের উপঢৌকন। যদিও গুপ্তচরদের কাছ থেকে সুলতান ঠিকই পাচ্ছিলেন দানিয়ুব নদীর তীর ঘেঁসে ভ্লাড ড্রাকুলিয়ার গোপন সাম্রাজ্য বিস্তারের খবর। এই খবরে উত্তেজিত হয়ে সুলতান পাঠালেন তার বিশ্বস্ত সেনাপতি হামজা বে কে, উদ্দেশ্য ভ্লাড কে সমূলে ধ্বংস করা। এদিকে ভ্লাডও ছিলেন রাজনীতির খেলায় নিপুণ। হামজা বে যখন দানিয়ুবের বাম তীর ঘেঁষা শহর জোর্জোর উত্তরদিকে একটা সরু গিরিবর্ত্ম পেরোচ্ছিলেন তখন ভ্লাদের বিশাল বাহিনী এক অতর্কিত আক্রমণ করে বসে। এই পরিকল্পনা এতই সাবধানতার সাথে হয়েছিল যে দুর্দান্ত তুর্কি অটোমান গুপ্তচরেরাও কিছুই জানতে পারেনি আগে। হ্বালাচিয়ার সৈন্যরা চারিদিক থেকে ঘিরে ধরে তুর্কি দের। প্রায় সমস্ত তুর্কি  সেনারাই ধরা পড়ে, পরে যাদের ওই একই ভাবে— মানে বল্লমের মধ্যে গেঁথে হত্যা করা হয়। পদমর্যাদার গুরুত্বের জন্য হামজা বের শরীরকে গেঁথে ফেলা হয়েছিল সবচেয়ে লম্বা বল্লমের মধ্যে!

ভ্লাদ ড্রাকুলিয়ার মৃত্যু নিয়ে অনেকগুলো ধারণা আছে। প্রাচীন কিছু পুঁথি থেকে পাওয়া যাচ্ছে যে তুর্কি সেনাদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে করতে যুদ্ধক্ষেত্রেই তিনি প্রাণ দেন আর তাঁর মৃতদেহ ঘিরে ছিল বিশ্বস্ত মল্ডাভিয়ান দেহরক্ষীদের শব। আবার কিছু ঐতিহাসিক মত অনুযায়ী কিছু বিশ্বাসঘাতক বয়্যারই তাঁকে হত্যা করে। মোটামুটিভাবে প্রামাণিক ধারণামতে ১৪৭৬ সালের ডিসেম্বর এর শেষ নাগাদ তাঁকে হত্যা করা হয় বুখারেস্ট আর জোর্জোর মাঝামাঝি কোথাও। অটোমান ইতিহাস যদিও বলে যে তুর্কি সেনারাই তার মুন্ডচ্ছেদ করে। সেই মাথা আবার মধুর মধ্যে সংরক্ষণ করে পাঠানো হয়েছিল কনস্তান্তিনোপল বা এখনকার ইস্তাম্বুলে এই মৃত্যুর সত্যতা প্রমাণ করার জন্য। 

ছায়াছবির এক আইকনিক এক্সপ্রেসনিস্ট ফ্রেম

 

স্থানীয় লোককাহিনির প্রেক্ষিতে ভ্লাদের চরিত্র কখনও উজ্জ্বল আবার কখনও তীব্র কালিমালিপ্ত। জার্মান এবং রাশিয়ান বিবরণের মধ্যে তথ্যগত অনেক মিল থাকা সত্ত্বেও অমিলটাও প্রকট। তার যাবতীয় ক্রুরতাকে স্বীকার করে নিয়েও রাশিয়ান স্লাভ জনশ্রুতি আর লোককাহিনীতে ভ্লাদ ড্রাকুলিয়াকে এক দক্ষ শাসক এবং বিরাট যুদ্ধ-কুশলী নেতা হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। শত্রুদের নিষ্ঠুরতার প্রতিরোধে যাকে হতে হয়েছে ক্রুর, দেখাতে হয়েছে সমান বা আরও বেশি মাপের নিষ্ঠুরতা। রুমানিয়ার জনমানসে আবার সেই সময় থেকেই তিনি এক দেশপ্রেমিকের মর্যাদা পেয়ে আসছেন। এক সত্যিকারের নায়ক যিনি একাধারে তুর্কি আক্রমণ প্রতিহত করেছেন আবার অসৎ, ধনী বয়্যারদের সাম্রাজ্য বিস্তারের লোভ থেকে দেশকে বাঁচিয়েছেন নিশ্চিত গৃহযুদ্ধ থেকে। এই বিরোধী চরিত্র চিত্রণে চার্চের রাজনীতিও এক বিরাট ভূমিকা পালন করছে। মনে রাখা দরকার পূর্ব ইউরোপে যখন রাশিয়ান বা রুমানিয়ান অর্থোডক্স চার্চের রাজত্ব তখন পশ্চিম ইউরোপ রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করছে পবিত্র রোমান সাম্রাজ্য। ১৯৭৯ সালে ভ্লাদকে নিয়ে যে চলচ্চিত্র তৈরি হয়েছিল রুমানিয়ায় সেখানেও এই স্বদেশপ্রেমিক ছবিটাই উঠে আসে। এই চলচ্চিত্র আবার সেসেস্কুর সরাসরি আদেশে নির্মিত হয়। মনে করা হয় যে তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস লেখার উপাদান হিসেবে ব্রাম স্টোকার মূলত পশ্চিম ইউরোপের মানে জার্মান বা হাঙ্গেরিয়ান জনশ্রুতির ওপরেই নির্ভর করেছিলেন যেখানে ভ্লাদ ড্রাকুলিয়া প্রায় বাইবেল বর্ণিত ‘শয়তান’। আশ্চর্য এরই ঠিক বিপরীত ছবি পুবে। যেখানে সে এই খ্রিস্টান রাজত্বকেই ‘বর্বর’দের হাত থেকে বাঁচাচ্ছে। 

এই একবিংশ শতাব্দীতেও নসফেরাতু ছবির ফ্রেমে প্রতিফলিত সেই ইতিহাস বা উপকথার চরিত্রকে নিয়ে আমাদের কৌতূহল একতিলও কমেনি। চারিদিকের ধ্বংসলীলায় মাঝে মাঝে যখন মনে হয় যে এই ভাঙাচোরা সভ্যতার নোঙর হয়ত আর বেশিদিন বয়ে যাওয়া যাবে না তখন আমাদের বোধের গ্রিনরুমে উঁকি দেয় ‘ড্রাকুলিয়া’ বা পরিচিত শব্দ-বন্ধনীতে ‘ড্রাকুলা’ নামের এই ছায়াশরীর।

Powered by Froala Editor