গল্পের নয়, রক্তের জন্য পাগল সত্যিকারের ড্রাকুলা থাকতেন এখানেই

ব্রান। পূর্ব ইউরোপের রোমানিয়ার প্রাচীন এক জনপদ। তবে বিখ্যাত না বলে বরং কুখ্যাতই বলা যায় জায়গাটিকে। কারণ পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন দুর্গের দেখা মেলে সেখানে। গা ছমছমে পরিবেশ। রোমানিয়ার নির্জন প্রান্তরের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা দুর্গটির দরজায় কড়া নাড়তে দু’বার ভাবতে বাধ্য করবে যে-কাউকেই। কারণ, ব্রানের এই দুর্গটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে ইতিহাসের স্বয়ং ড্রাকুলার নাম! ইতিহাসের নয়, বাস্তবের ভয়ঙ্কর ড্রাকুলা।

এককালে দুর্গটির বাসিন্দা ছিলেন অত্যাচারী শাসক তৃতীয় ভ্লাদ। নির্যাতনের নৃশংসতার জন্য যিনি পরিচিত ছিলেন ‘ভ্লাদ দ্য ইম্পেলার’ নামেও। পঞ্চদশ শতাব্দীতে ওয়ালাচিয়া অঞ্চলে নিজের কুখ্যাত শাসন চালিয়েছিলেন ভ্লাদ। বাবার স্মৃতি নিজের মধ্যে ধরে রাখতে, পিতা ড্রাকুলের নামে ভ্লাদ নিজের নামকরণ করেছিলেন, ড্রাকুলা। তবে এতটাই নৃশংস ছিলেন তিনি যে সারা ইউরোপে তার অত্যাচারের কাহিনি মুখে মুখে ফিরত।

কেমন ছিল ‘ড্রাকুলা’ ভ্লাদের অত্যাচারের পদ্ধতি? যে কোনও অভিযুক্তের মলদ্বার বা যোনি দিয়ে প্রবেশ করিয়ে দেওয়া হত শক্ত কাঠ বা ধাতুর একটি দণ্ড। কখনও তা হত কর্কশ, কখনও বা মসৃণ। যতক্ষণ না পর্যন্ত এই দণ্ডটি অভিযুক্তের মুখ, কাঁধ বা গলা দিয়ে বের হয়ে না আসত, ততক্ষণ চাপ দিয়ে প্রবেশ করিয়ে যাওয়া হত দণ্ডটি। কর্কশ দণ্ডের চাপে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে যেত শরীরের ভিতরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ। কখনও কখনও আবার বীভৎস মজা পেতে, মসৃণ ণ্ড ব্যবহার করা হত, যার উপরের দিকটি গোলাকার। অত্যাচারকে দীর্ঘায়িত করা হত এর মাধ্যমে, কারণ এতে সঙ্গে সঙ্গে শরীররের ভিতরের অঙ্গগুলি বিনষ্ট হত না। এই ক্ষেত্রে অভিযুক্ত মারা যাওয়ার জন্য বেশ কয়েক ঘণ্টা এমনকি কয়েক দিন অবধিও সময় লেগে যেত।

শুধুমাত্র সাধারণ মানুষই নয়, যদি কখনও কোনো অভিজাতও ভ্লাদের বিরোধিতা করতেন, তাহলে তাঁদের জন্যেও বজায় থাকত এই একই শাস্তি। অকথ্য নির্যাতন চলত কারাগারে। রক্ত দেখতে ভালবাসতেন ভ্লাদ। যদিও বিতর্কিত ভাবে, ভ্লাদের রক্তপিপাসা সম্পর্কে জানা থাকলেও তাঁর পক্ষে ছিলেন পোপ দ্বিতীয় পায়াস। শুধু তাই নয়, কঠোরভাবে শাসন ব্যবস্থা পরিচালনার জন্য রোমানিয়ার জাতীয় নায়ক হিসাবেও প্রশংসিত হতেন তিনি। বলা হত, ভ্লাদ না থাকলে যুদ্ধের সময় আক্রমণকারীদের হাত থেকে রক্ষা পেত না ওই অঞ্চলটি।

আরও পড়ুন
বাস্তবের জেমস বন্ড তিনি, এই গুপ্তচরকে দেখেই চরিত্রটি তৈরি করেছিলেন লেখক

অত্যাচারী শাসক না থাকলেও আজও সেই ভয়াবহ স্মৃতি জড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে ভ্লাদের সেই দুর্গ। বর্তমানে পৃথিবীর অন্যতম ভয়ানক ভুতুড়ে স্থান বলে পরিচিত জায়গাটি। ভ্লাদের নৃশংস অত্যাচারে যাঁরা প্রাণ হারিয়েছিলেন, প্রায়ই তাদের আত্মাদের আনাগোনার প্রমাণ নাকি মেলে সেখানে। অনেকেই দাবি করেছেন ভুতুড়ে কণ্ঠস্বর কিংবা পায়ের শব্দ শুনতে পাওয়ার। স্বয়ং ড্রাকুলার নাম জড়িয়ে আছে যেখানে, সেখানে অলৌকিক কিছু ঘটবে না, তাই বা হয় কী করে!

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
সামান্য কথাই বদলাতে পারে জীবন; আত্মহত্যা রুখতে লড়াই বাস্তবের ‘হেমলক সোসাইটি’র

More From Author See More

Latest News See More