নিষিদ্ধ বইয়ের জাদুঘর, ইতিহাসের খণ্ডচিত্র ধরে রেখেছে এস্তোনিয়া

এস্তোনিয়ার রাজধানী তালিন শহর। এই শহরেরই রাস্তার ঘা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে রয়েছে একটি বাড়ি। আর পাঁচটা সাধারণ বাড়ির থেকে তাকে আলাদা করার উপায় নেই কোনো। তবুও বিশেষভাবে যে কোনো মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে বাধ্য হবে তাদের সদর দরজার পাশে টাঙানো একটি সাইনবোর্ড। তাতে লেখা রয়েছে ‘কিলাতুড কিরজানডাস’। যার বাংলা অর্থ করলে দাঁড়ায় ‘নিষিদ্ধ সাহিত্য’। হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন, মিউজিয়াম। এই অতিসাধারণ ছিমছাম বাড়িটিই সম্ভবত বিশ্বের একমাত্র নিষিদ্ধ বইয়ের জাদুঘর।

না, কোনো সরকারি উদ্যোগ নয়। এই মিউজিয়ামের নেপথ্যে রয়েছেন স্কটিশ স্কলার জোসেফ ম্যাক্সিমিলিয়ান ডানিগান। একার হাতেই এই জাদুঘর গড়ে তুলেছেন তিনি। স্কটল্যান্ডের বাসিন্দা হলেও পড়াশোনার জন্য দেশ ছেড়েছিলেন ডানিগান। গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চলচ্চিত্রে স্নাতকতা করার পর ডানিগান বেশ কিছুদিন কাটিয়েছেন চিনে। তারপর এস্তোনিয়ায় আস্তানা স্থাপন। বিগত পাঁচ বছর ধরে তালিনই তাঁর ঠিকানা। 

চিনে পড়ারশোনা ও গবেষণা করতে গিয়েই সেন্সরশিপ ও ফ্রিডম অফ স্পিচের মতো বিষয়গুলি বিশেষভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করে তাঁর। চিনের নিষিদ্ধ গ্রন্থ এবং বিভিন্ন চলচ্চিত্র নিয়ে শুরু করেন গবেষণা। তবে প্রশাসনের নজর এড়িয়ে খুব বেশি দূর এগোতে পারেননি তিনি। 

এস্তোনিয়ায় আসার পর, তালিন শহরে চলচ্চিত্রের জগতে কাজ করার পাশাপাশি নতুন করে গবেষণা শুরু করেন ম্যাক্সিমিলিয়ান ডানিগান। বিষয় সেন্সরশিপ। সেইসঙ্গে তাঁর নেশা হয়ে দাঁড়িয়েছিল বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নিষিদ্ধ গ্রন্থ এবং তাদের ইতিহাস সংগ্রহ করা। তার মধ্যে কোনো কোনো গ্রন্থ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল নিছকই যৌনতার জন্য। আবার কোনোটার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে রাজনৈতিক অভিসন্ধি কিংবা ঔপনিবেশিক শাসকের বিদ্রোহদমনের ইতিহাস। তবে শুধু নিষিদ্ধ বই-ই নয়, তার সঙ্গে কিছু দুর্মূল্য বই-ও সংগ্রহ করেছেন ডানিগান। যেগুলি বিভিন্ন সময়ে জনরোষের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। পোড়ানো হয়েছিল নানান বিক্ষোভের সময়। 

আরও পড়ুন
বইমেলায় কাউন্টার টেবিলে চড়ে অপেরা স্টাইলে গান ধরতেন পীযূষকান্তি সরকার

২০২০ সালের ডিসেম্বর মাস থেকেই নিজের ব্যক্তিগত এই রত্নভাণ্ডারের দরজা সকলের জন্য খুলে দেন ডানিগান। নিজের বাড়িতেই খুলে ফেলেন ছোট্ট মিউজিয়াম। তাতে প্রত্যেক বইয়ের সঙ্গেই তাঁর সৌজন্যে শোভা পাচ্ছে সংশ্লিষ্ট ইতিহাসও। প্রতি সপ্তাহান্তে শনি ও রবিবার খোলা থাকে এই ছোট্ট মিউজিয়াম। কিউরেটর হিসাবে স্বয়ং হাজির থাকেন তরুণ ডানিগান। তাঁর বিশ্বাস, যে কোনো বিষয়ে মুক্ত চিন্তা ও তার প্রকাশ মানবাধিকারের আওতায় পড়া উচিত। অথচ, সেখানে বাধা হয়ে দাঁড়ায় প্রশাসন। তাই একক প্রচেষ্টাতেই ছোট্ট একটি স্বপ্নরাজ্য গড়ে তুলেছেন তিনি…

আরও পড়ুন
বইমেলা ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন নারায়ণ সান্যাল, পরদিন ভেসে এল মৃত্যুসংবাদ

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
ভস্মীভূত বইমেলাকে মাত্র ৩ দিনে পুনর্জন্ম দিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য

Latest News See More