ভয়াবহ ভাঙন রূপনারায়ণে, সচেতনতা বাড়াতে পথনাটক তরুণদের

“এখানে নদী তীরবর্তী অঞ্চলে গাছ নেই কোনো। সেইসঙ্গে বিগত নদীর গা ঘেঁষে অসংখ্য হোটেল এবং বাড়ি নির্মাণ হয়েছে। পরিবেশবিজ্ঞানের সাধারণ জ্ঞান থেকেই বলা যায়, ভাঙন অবধারিত।”

বলছিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক, সমাজকর্মী এবং ‘হৃদি-পল্লব’ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্ণধার সৌম্যদীপ দাস। কথা হচ্ছিল কোলাঘাটের (Kolaghat) রূপনারায়ণ (Roopnarayan River) নদীর ভাঙন নিয়ে। কয়েকদিন আগে নদী তীরবর্তী দেনান অঞ্চলের ফাটল লক্ষ করেছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। প্রাথমিকভাবে সে-ফাটল দেখে বোঝা যায়নি ভয়াবহ বিপদ আসন্ন। তবে দিন তিনেক আগে রাতারাতি প্রায় ৩০ ফুট বসে যায় সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের মাটি। 


হ্যাঁ, পরিবেশের ওপর সভ্যতার আগ্রাসনই দায়ী এই ঘটনার জন্য। এবং এও নিশ্চিত যে, পরিবেশের উপর অত্যাচার বন্ধ না হলে এমন ঘটনা বা দুর্ঘটনার প্রকোপ ক্রমশ বাড়তে থাকবে আগামীতে। তাই সাধারণ মানুষকে সচেতন করতেই গতকাল পথে নামল কোলাঘাটের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘হৃদি-পল্লব’। সচেতনতামূলক প্রচারের হাতিয়ার করে নিল পথনাটিকাকেই। উল্লেখ্য, বিগত কয়েক বছর ধরেই স্থানীয় শিশুদের নিয়ে পরিবেশরক্ষা এবং অন্যান্য নানান সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কাজ করে আসছে সংশ্লিষ্ট সংগঠনটি। 

আরও পড়ুন
ভাঙনেও ফুরোয়নি স্মৃতি, স্থানের নামেই বেঁচে আছে ধর্মতলার 'চ্যাপলিন'

গতকাল কোলাঘাটেরই দুটি পৃথক পৃথক অঞ্চলে— মাতঙ্গিনী হাজরা এবং ক্ষুদিরাম মূর্তির পাদদেশে মঞ্চস্থ হল ‘হৃদি-পল্লব’-এর পথনাটক ‘ভাঙনের মুখোমুখি আমরা’। নাটকটির মূল ভাবনা সমাজকর্মী ও নাট্যকর্মী সৌম্যদীপের। তিনি ছাড়াও অভিনয় করেছেন তাঁর আরও তিন সহকর্মী— ঋত্বিক রায়, সোমা তেওয়ারি, গোবিন্দ মণ্ডল। 

আরও পড়ুন
দৈত্যাকার হিমবাহের ভাঙন অ্যান্টার্কটিকায়, আয়তনে কলকাতার প্রায় দেড়গুণ

“বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ, মৃত্তিকাদূষণ— সমস্ত ক্ষেত্রগুলিকেই কোরিওগ্রাফির মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি আমরা। তবে নাটকের মূল বিষয় ছিল গাছ লাগানো। নদীর দুই ধারে যে আট্টালিকা নির্মাণ হয়ে চলেছে, সে ব্যাপারে মানুষকে সচেতন করা ছিল মূল লক্ষ”, জানালেন সৌম্যদীপ। কথায় কথায় জানা গেল, বিগত পাঁচ বছরে রূপনারায়ণের পাড় সংলগ্ন অঞ্চলে অন্ততপক্ষে পাঁচগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে হোটেল এবং বিভিন্ন রিসর্টের সংখ্যা। নদীর ওপরেই পিলার দিয়ে গড়ে উঠেছে পার্ক। জানা গেল, নাব্যতা কমতে কমতে নদীর মাঝে চড় পড়ে গেছে। বলার অপেক্ষা থাকে না, এইসব কর্মকাণ্ডই ক্রমাগত প্রভাবিত করে চলেছে রূপনারায়ণের গতিপথকে। আর নিজের খেয়ালেই যেন সভ্যতার ওপর ‘প্রতিশোধ’ নিচ্ছে প্রকৃতি। 

আর প্রশাসন? এই দুর্ঘটনাকে শুধু প্রাকৃতিক বিপর্যয় হিসাবেই চিহ্নিত করছেন তাঁরা। না, নদী তীরবর্তী অঞ্চলে ‘অবৈধ’ নির্মাণ আটকানো জন্য নেওয়া হয়নি কোনো ব্যবস্থাও। সৌম্যদীপের কথায়, “আমরা অনেক আগেই বুঝতে পেরেছিলাম এই ধরনের একটা কিছু ঘটতে পারে। আমরা নদীর তীরে সার দিয়ে গাছ লাগিয়েছিলাম। কিন্তু প্রশাসন একেবারেই এই ব্যাপারে নিঃস্পৃহ।”

তবে এখানেই শেষ নয়। আগামীতে কোলাঘাটের অন্যান্য অঞ্চলে আবার পথনাটিকার আয়োজন হবে বলেই জানালেন সৌম্যদীপ। আশার কথা এই যে, এই ব্যস্ততার মাঝেও কিছু মানুষ দাঁড়িয়ে দেখছেন এই পথনাটিকা। আত্মস্থ করছেন ‘হৃদি-পল্লব’-এর দেওয়া সামাজিক বার্তা। একদিনে না হলেও, তাঁদের এই উদ্যোগ ধীরে ধীরে জনমত তৈরিতে সক্ষম হবে, তাতে সন্দেহ নেই কোনো…

Powered by Froala Editor