শতাব্দী পেরিয়ে আন্টার্কটিকায় ডুবে-যাওয়া জাহাজের খোঁজ

আজ থেকে প্রায় একশো বছর আগের কথা। ১৯১৫ সাল। আন্টার্কটিকায় (Antarctica) পাড়ি জমিয়েছিলেন কিংবদন্তি অভিযাত্রী ও গবেষক স্যর আর্নেস্ট শ্যাকেলটন (Ernest Shackleton)। তবে হিমশীতল মেরু অঞ্চলেই ঘটে গেল ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা। টাইটনিকের মতোই সমুদ্রে লুকিয়ে থাকা হিমবাহের সঙ্গে সংঘর্ষে ডুবল শ্যাকেলটনের জাহাজ (Ship) ‘এনডিউরেন্স’। কোনো মতে প্রাণে বেঁচেছিলেন জাহাজের ২৮ জন নাবিক ও গবেষক। এক শতাব্দী পেরিয়ে এসে, আজও খোঁজ মেলেনি সেই তার ধ্বংসাবশেষের। তবে খুব বেশিদিন আর বাকি নেই ঐতিহাসিক সেই জাহাজের সন্ধান পেতে। সম্প্রতি এমনটাই দাবি করলেন একদল বিজ্ঞানী। 

লার্স বার্গম্যান, ডেভিড মার্ন্স এবং রবিন স্টুয়ার্ট— এই তিন গবেষক ও ভূতাত্ত্বিকের নেতৃত্বেই এবার হতে চলেছে ‘এনডিউরেন্স অভিযান’। এই প্রথম নয়, এর আগেও একাধিকবার চেষ্টা চলেছে ঐতিহাসিক জাহাজটির অনুসন্ধানে। তবে লাভ হয়নি কোনোবারেই। এবারেও কি ব্যর্থ হবে গবেষকদের প্রচেষ্টা? কীসের ভিত্তিতেই বা অনুসন্ধানে নামছেন তাঁরা? 

এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে ফিরে যেতে হবে ১৯১৫ সালের ২১ নভেম্বর দিনটিতে। এই দিনেই ঘটেছিল সেই ঐতিহাসিক দুর্ঘটনা। গবেষণার সমস্ত নথি হারিয়ে গেলেও প্রধান নাবিক ফ্র্যাঙ্ক ওয়ার্সলির দৌলতে রক্ষা পেয়েছিল জাহাজের নেভিগেশনের কাগজপত্র। জাহাজ ছাড়ার সময় বুদ্ধি করেই সেসব নিজের সঙ্গে রেখে দিয়েছিলেন ফ্র্যাঙ্ক। 

সেই নথি থেকেই জানা যায়, ৬৮ ডিগ্রি ৩৯ মিনিট দক্ষিণ ও ৫২ ডিগ্রি ২৬ মিনিট পশ্চিমে ঘটেছিল সেই দুর্ঘটনা। তবে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে একাধিকবার অনুসন্ধানের পরেও ‘এনডিউরেন্স’-এর চিহ্নমাত্র মেলেনি। কারণ, তৎকালীন সময়ে তারার অবস্থানের ওপর নির্ভর করেই দিক ঠিক করতেন নাবিকরা। পাশাপাশি ক্রোনোমিটার ও অন্যান্য যন্ত্র সেইসময়ে ততটাও উন্নত ছিল না। 

আরও পড়ুন
ফের পণ্যবাহী জাহাজে আটক সুয়েজ খাল, ফিরল এভারগ্রিনের স্মৃতি

তবে এই জটিল ধাঁধাঁর সমাধান খুঁজে বার করেছেন তিন ভূতাত্ত্বিক। তৎকালীন সময়ের দিক নির্দেশক মাত্রাগুলির সঙ্গে অত্যাধুনিক স্টারম্যাপের তুলনা করে চিহ্নিত করেছেন সংশ্লিষ্ট দুর্ঘটনাস্থলটি। পাশাপাশি বিবেচনা করা হয়েছে সমুদ্রস্রোতের কথাও। সবমিলিয়ে, ওয়ার্সলির লিপিবদ্ধ অঞ্চল থেকে কয়েক কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত ঐতিহাসিক জাহাজটির ভগ্নাবশেষ। এমনটাই অভিমত গবেষকদের। এই নতুন স্থানটিতেই অনুসন্ধান চালাবেন গবেষকরা। 

আরও পড়ুন
দু’সপ্তাহ জ্বলার পর ডুবল রাসায়নিক কার্গো জাহাজ, বিপর্যয়ের মুখে শ্রীলঙ্কা

তবে সেই কাজ যে খুব একটা সহজ নয়, তা বলাইবাহুল্য। কারণ বরফের চাদর ভেদ করে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩ হাজার মিটার গভীরে অনুসন্ধান চালাবেন গবেষকরা। এবং সবটাই অনুমান ভিত্তিক। এখন দেখার এই রোমাঞ্চকর অভিযানে গবেষকদের সাফল্য আসে কিনা…

আরও পড়ুন
পরিত্যক্ত জাহাজে চার বছর নিঃসঙ্গবাস, অবশেষে মুক্তি নাবিকের

Powered by Froala Editor