খরায় শুকনো জলাধার, প্রকাশ্যে এল প্রাচীন গ্রাম

আজ থেকে ৩০ বছর আগে সেখানে ছিল আস্ত একটি গ্রাম। তারপর সমস্তকিছু চাপা পড়েছে জলের তলায়। গ্রামের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে গড়ে উঠেছে আস্ত একটি জলাধার (Water Reservoir)। ঠিক ৩০ বছর পর জলের নিচ থেকে আবার মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে গ্রামের ধ্বংসস্তূপ (Ghost Village)। সম্প্রতি এমনই অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছে স্পেনে। ১৯৯২ সালে জলের নিচে চাপা পড়ে যাওয়া এসারেদো গ্রাম উঠে এসেছে নতুন করে। কারণ সাম্প্রতিক খরায় শুকিয়ে গিয়েছে জলাধারটি।

গোটা বিশ শতক জুড়ে সারা পৃথিবীজুড়ে কৃত্রিম জলাধার তৈরির হিরিক পড়ে গিয়েছিল। অবশ্য এর ফলে নদীর গতিপথ এবং স্বাভাবিক প্রাকৃতিক পরিবেশের যথেষ্ট ক্ষতি হয় বলে সচেতন করেছিলেন অনেক পরিবেশ বিশেষজ্ঞই। তবে জল সংক্রান্ত প্রশাসনিক ব্যবস্থার জন্য এইসব বাঁধ এবং জলাধার তৈরির প্রয়োজন ছিল। আর সেই কারণেই ১৯৯২ সালে তৈরি হয়েছিল স্পেনের অল্টো লিন্ডসো জলাধার। অন্য অনেক জলাধার তৈরির মতোই এই জলাধার তৈরির জন্যও মানুষকে বাস্তুচ্যুত হতে হয়েছিল। তবে ঘরবাড়ি বা অন্যান্য স্থাপত্য নিয়ে মাথা ঘামাননি কেউই। সেইসব স্থাপত্য চাপা পড়েছিল জলের নিচে।

এরপর গ্রামের মানুষ পুণর্বাসন নিয়ে চলে গিয়েছেন অন্যত্র। প্রতিবেশী গ্রামের বাসিন্দারাও ভুলে গিয়েছিলেন, তাঁদের পাশেই একসময় ছিল এসারেদো নামের একটি গ্রাম। তবে ৩০ বছর পর হঠাৎ অনাবৃষ্টি দেখা দিল গোটা অঞ্চলে। আর অল্টো লিন্ডসো জলাধারের জলের স্তরও ক্রমশ নিচে নামতে থাকল। বর্তমানে জলাধারটির মোট আয়তনের মাত্র ১৫ শতাংশ জল রয়েছে। আর সেই জলের উপরে মাথা তুলে উঠে এসেছে পুরনো গ্রামের ঘরবাড়ি এবং অন্যান্য স্থাপত্যের জীর্ণ ধ্বংসস্তূপ। আর এই দৃশ্য দেখতে ভিড় জমিয়েছেন স্পেনের নানা অঞ্চলের মানুষজন। প্রতিবেশী গ্রামের বাসিন্দাদের স্মৃতিও উস্কে দিচ্ছে সাম্প্রতিক ছবি।

কেউ খুঁজছেন কোনো পুরনো বন্ধুর বাড়ি। কেউ আবার খুঁজছেন তাঁদের আড্ডা দেওয়ার জায়গাগুলো। এক জায়গায় একটা পুরনো বাড়ির নিচে নাকি পাওয়া গিয়েছে কয়েক ক্রেট বিয়রের ফাঁকা বোতল। প্রতিবেশী গ্রামের বাসিন্দাদের ধারণা, সেই বাড়িটিতেই ছিল একটি ক্যাফে। তাঁদের অনেকেই আড্ডা দিয়েছেন যে ক্যাফেতে। আবার নতুন প্রজন্মের সদস্যরা দেখতে আসছেন, ৩০ বছর আগে কেমন ছিল তাঁদের গ্রামগুলির চেহারা? আর এই সমস্তকিছুর পিছনে রয়েছে একটি প্রাকৃতিক বিপর্জয়। প্রকৃতি যেন মনে করিয়ে দিচ্ছে, নিছক উন্নয়নের দোহাই দিয়ে শুধু প্রকৃতিকেই ধ্বংস করা হয়নি। সেইসঙ্গে উচ্ছেদ করা হয়েছে বহু মানুষকেও।

আরও পড়ুন
মধ্যপ্রদেশের এই গ্রামে আজও কথ্যভাষা সংস্কৃত

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
জীবনের থেকে মৃত্যু বেশি 'লাভজনক' গুজরাটের এই গ্রামে!