জীবনের থেকে মৃত্যু বেশি 'লাভজনক' গুজরাটের এই গ্রামে!

আহমেদাবাদ শহর থেকে ৪৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ছোট্ট একটা গ্রাম। সব মিলিয়ে প্রায় হাজার তিনেক মানুষের বসবাস সেখানে। দিনগুছা। হ্যাঁ, সাম্প্রতিক সময়ে প্রতিটা সংবাদপত্রেই কমবেশি উঠে এসেছে এই গ্রামের নাম। সপ্তাহ খানেক আগের কথা। কানাডা-যুক্তরাষ্ট্র সীমান্তে -৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় তুষারপাতে জমে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছিলেন ৪ ভারতীয় শরণার্থী। হ্যাঁ, তাঁরা দিনগুছারই (Dingucha) বাসিন্দা। তবে এই দুর্ঘটনা গোটা দেশে সাড়া ফেলে দিলেও, দিনগুছার মানুষদের অভিমত শেষ পর্যন্ত পরিত্রাণ মিলল জগদীশ প্যাটেলের পরিবারের। 

মৃত্যুতেই পরিত্রাণ! কথাটা চমকে ওঠার মতো হলেও, গুজরাটের (Gujarat) এই গ্রামের বাসিন্দাদের বিশ্বাস এমনটাই। এমনকি জীবনের থেকে মৃত্যুই তাঁদের কাছে বেশি লাভজনক! কিন্তু এমন ব্যতিক্রমী চিন্তাভাবনার কারণ কী? এই উত্তর খুঁজতে, নজর দিতে হবে দিনগুছার আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতিতে। 

দিনগুছায় মূলত প্যাটেলদের বাস। আর তাঁদের মূল জীবিকা কৃষিকাজ। পাশাপাশি বাসিন্দাদের একটা বড়ো অংশ কাজ করেন বিভিন্ন স্থানীয় কল-কারখানায়। কিন্তু বিগত কয়েক দশকে উত্তরোত্তর সমস্ত সামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি হলেও, বাড়েনি তাঁদের উপার্জনের অঙ্ক। দিনে প্রায় ১৪ ঘণ্টা হাড় ভাঙা খাটুনির পর হাতে আসে হাজার আটেক টাকা। আজকের বাজারে দাঁড়িয়ে সেই অর্থ দিয়ে আদৌ কি সংসার চালানো সম্ভব? তার ওপরে বন্ধ হয়ে গেছে একাধিক সরকারি প্রকল্পও। 

এই কঠিন থেকে কঠিনতর হতে থাকা আর্থিক পরিস্থিতির কারণেই ক্রমশ দিনগুছা থেকে পলায়নের পথ খুঁজছেন সেখানকার বাসিন্দারা। একের পর এক অবৈধ অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালাচ্ছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। বিশ্বাস সেখানে গেলে অন্তত করে খাওয়ার মতো অর্থ উপার্জন করতে পারবেন তাঁরা। সন্তানরা পাবেন উচ্চশিক্ষা। কেননা, গুজরাটের এই গ্রামে স্কুল থাকলেও তাতে ভালো শিক্ষক নেই কোনো। গ্র্যাজুয়েট কিংবা পোস্ট গ্র্যাজুয়েট হয়ে কে-ই বা মাত্র ৮ হাজার টাকায় পড়াতে চায় এমন প্রান্তিক গ্রামে পড়ে থেকে? 

আরও পড়ুন
ইতালির গ্রাম হয়েও মাতৃভাষা ভিন্ন, কী রহস্য লুকিয়ে এই বিচিত্র ‘প্রদেশে’?

দিনগুছায় কোনো শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরেই যেন লেখা হয়ে যায় তাদের ভাগ্যলিপি— হয় দারিদ্রে একটা সময় মরবে তারা, নয় দেশ ছেড়ে শরণার্থী হবে প্রথম বিশ্বের দেশে। কানাডা সীমান্তে দুর্ঘটনার শিকার হওয়া জগদীশ প্যাটেলও দেশ ছেড়েছিলেন তেমনভাবেই। অনেকের মতোই তাঁরও পরিকল্পনা ছিল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভালো কলেজে সন্তানদের পড়াশোনা করিয়ে দেশে ফিরবেন তিনি। কিন্তু সেখানে পৌঁছানোর আগেই থেমে গেল গোটা পরিবারের স্পন্দন।

আরও পড়ুন
বিষাক্ত জলের বন্যায় ভেসে গিয়েছে গ্রাম, বিপন্ন ব্রাজিলের উপজাতিরা

না, এতকিছুর পরেও এই ঘটনা বিন্দুমাত্র নজর কাড়েনি সরকারের। আর গ্রামবাসীদের কাছে জগদীশের দেহ ফিরিয়ে আনাও সামর্থ্যের বাইরে। কানাডাতেই যেন হিন্দু মতে তাঁর পরিবারের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়— এটুকুই চাইছেন দিনগুছার বাসিন্দারা। এমনকি জগদীশের নিজের আত্মীয়সজনরাও। আর শরণার্থীর মৃত্যুর ক্ষতিপূরণ হিসাবে যে সামান্য অর্থ সাহায্য মিলবে সরকারের পক্ষ থেকে, তা দিয়ে কয়েকটা দিন দু’বেলা ভাত জুটবে তাঁর বৃদ্ধা মা এবং পরিবারের অন্যান্য মানুষদের। সত্যিই জীবনের থেকে মৃত্যুও এই গ্রামে লাভজনকই বটে…

আরও পড়ুন
শিল্পপতিদের ঠেকাতে গোটা গ্রামকেই রঙে মুড়েছেন তাইওয়ানের বৃদ্ধ

Powered by Froala Editor

More From Author See More

Latest News See More