আইনস্টাইনের ‘বাস্তবতা’-কে চ্যালেঞ্জ ভারতীয় গবেষকদের

কোয়ান্টাম পদার্থবিদ্যা অনুসারে কোনো নির্দিষ্ট পদার্থ একটি সময়ে একের বেশি স্থানে অবস্থান করতে পারে। না, কেবল তত্ত্বই নয়, তা পরীক্ষিত সত্যও। তবে কেবলমাত্র তা মাইক্রোস্কোপিক পদার্থের ক্ষেত্রেই বিবেচ্য বলে মনে করা হত এতদিন। আইনস্টাইন নিজেও সেই নিরিখেই দেখেছিলেন ‘বাস্তবতা’-কে (Reality)। জানিয়েছিলেন চাঁদের মতো বৃহত্তর কোনো বস্তু একই সময়ে দুটি ভিন্ন ভিন্ন অবস্থানে থাকতে পারে না। কোনো পর্যবেক্ষকের অনুপস্থিতিতেও তা সত্য। আইনস্টাইনের এই বাস্তবতাকেই এবার চ্যালেঞ্জ জানালেন একদল ভারতীয় গবেষক। দীর্ঘ দু’বছরের পরীক্ষার পর ইনইক্যুয়ালিটি (Inequality) নিয়ে নতুন তত্ত্ব দিলেন তাঁরা।

আদতে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এই বিতর্কের মূলে রয়েছে সনাতন পদার্থবিদ্যা এবং কোয়ান্টাম পদার্থবিদ্যার মতপার্থক্যে। সনাতন পদার্থবিদ্যা ও কোয়ান্টামের গণ্ডি ঠিক কতটা— তা নির্ধারণ করাই এতদিন একটা বড়ো চ্যালেঞ্জ ছিল গবেষকদের কাছে। মাইক্রোস্কোপিক কণাদের ক্ষেত্রে উপরিপাতিত হয় দুই পদার্থবিদ্যার তত্ত্বই। আর বৃহত্তর পদার্থদের ক্ষেত্রে? এবার সেই উত্তরই দিলেন রমন রিসার্চ ইনস্টিটিউটের অধ্যাপিকা উর্বশী সিনহা। 

হ্যাঁ, ভারতীয় গবেষকদের সাম্প্রতিক পরীক্ষালব্ধ ফল জানাচ্ছে, শুধুমাত্র মাইক্রোস্কোপিক পদার্থের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় কোয়ান্টাম। চাঁদের মতো বৃহত্তর বস্তুর ওপরেও তা সমানভাবে প্রযোজ্য। এবং পর্যবেক্ষকের উপস্থিতি সত্ত্বেও একাধিক স্থানে অবস্থান করতে পারে কোনো পদার্থ। 

১৯৮৫ সালে গবেষক অনুপম গার্গ এবং অ্যান্থনি লেগেট বাস্তবতা পরীক্ষার জন্য একটি বিশেষ অসমতা বা ইনইক্যুয়ালিটি নির্ণয় করেছিলেন। কোনো ঘটনা কোয়ান্টাম নাকি সনাতন পদার্থবিদ্যাকে অনুসরণ করছে— তারই নির্দেশ দেয় এই অসমতা। সাম্প্রতিক সময়ে একক ফোটন কণার ওপর লেগেট-গার্গের অসমতা পরীক্ষা করেই ভারতীয় গবেষকরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছান। দেখান, মাইক্রোস্কোপিক জগতেও লেগেট-গার্গের অসমতার উল্লেখযোগ্য বিচ্যুতি ঘটছে সনাতন পদার্থবিদ্যার ক্ষেত্রে। 

আরও পড়ুন
সবুজ বিপ্লবের নেপথ্যে তিনি, মরণোত্তর পদ্মভূষণ ভারতীয় গবেষকের

এই তত্ত্বের ওপরেই ভিত্তি করে ভারতীয় গবেষকরা দাবি করছেন বৃহত্তর পদার্থের ক্ষেত্রেও সমানভাবে প্রযোজ্য কোয়ান্টাম। সংশ্লিষ্ট গবেষণা ও তত্ত্বের গাণিতিক রূপায়নের সঙ্গে জুড়ে রয়েছেন তিন বঙ্গসন্তানও— কলকাতার বোস ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক দীপঙ্কর হোম, এনএন বোস সেন্টার ফর বেসিক সায়েন্সের অধ্যাপক ডঃ দেবাশিস সাহা এবং রমন রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পিএইচডি ছাত্র কৌশিক জোয়ারদার। সম্প্রতি, পিআরএক্স বিজ্ঞান পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে সংশ্লিষ্ট গবেষণাপত্রটি। আগামীদিনে পদার্থবিদ্যার ধারণাই বদলে যেতে পারে এই তত্ত্ব আরও বিস্তারিতভাবে প্রমাণিত হলে, এমনটাই মনে করছেন বিজ্ঞানীমহল…

আরও পড়ুন
হাত-পা বেঁধে ৩.৫ কিলোমিটার সাঁতার, ৬৬ বছর বয়সে রেকর্ড ভারতীয়ের

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
বিনামূল্যেই ইন্টারনেট পরিষেবা! পথ দেখাচ্ছেন ভারতীয় তরুণী