প্রাথমিক পর্যায়েই চিহ্নিত করা যাবে সিলিকোসিস, পথ দেখালেন বাঙালি গবেষক

বর্তমান ভারতে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ২৫ লক্ষ। প্রতি বছর প্রাণ হারান লক্ষাধিক মানুষ। সিলিকোসিস— এমনই এক নিঃশব্দ ঘাতকের নাম। কিন্তু একুশ শতকে দাঁড়িয়েও এই রোগকে প্রাথমিক পর্যায়ে চিহ্নিত করার কোনো উপায়ই জানা ছিল না বিজ্ঞানের কাছে। এবার সেই পথই দেখালেন এক বঙ্গসন্তান। উপসর্গ দেখা দেওয়ার আগেই সিলিকোসিসকে শনাক্ত করার জন্য তৈরি করে ফেললেন বিশেষ কিট।

শ্যামসুন্দর নন্দী (Shyamsundar Nandi)। পুরুলিয়ার বড়াগ্রামের বাসিন্দা তথা মুম্বাইয়ের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ভাইরোলজির সহ-অধিকর্তার হাত ধরেই এবার বাজারে আসতে চলেছে সিলিকোসিস (Silicosis) র‍্যাপিড ডিটেকশন কিট। এক ফোঁটা রক্তের নমুনা বিশ্লেষণ করেই যা মুহূর্তে জানিয়ে দেবে কোনো ব্যক্তি সিলিকোসিসে আক্রান্ত হয়েছেন কিনা। মুম্বাই এনআইভি ছাড়াও এই গবেষণায় জড়িত ছিলেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ অকুপেশনাল হেলথ এবং মুম্বাই ল্যাবরেটরির গবেষকরা। সম্প্রতি এই গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে বিশ্বের প্রথম সারির বিজ্ঞান জার্নাল ‘নেচার সায়েন্টিফিক রিপোর্টস’-এ।

ক্রিস্টালাইজড সিলিকা বা সূক্ষ্ম স্ফটিকাকৃতি সিলিকনই এই রোগের মূল কারণ। যে-সকল অঞ্চলে বায়ুতে ধূলিকণার পরিমাণ বেশি, সেখানেই এই রোগের সর্বোচ্চ প্রভাব দেখা যায়। এই রোগে মূলত আক্রান্ত হন পাথর খাদান, সিমেন্ট কারখানার শ্রমিকরা। নিঃশ্বাসের সঙ্গে সিলিকার কণা ফুসফুসে গিয়ে নষ্ট করে দেয় রোগপ্রতিরোধকারীর কোষের কার্যক্ষমতাকে। যার ফলে, টিউবারকিউলোসিস কিংবা অন্যান্য ব্যাকটেরিয়া-ঘটিত রোগ সহজেই বাসা বাঁধতে পারে ফুসফুসে। আর যার পরিণতি হয় মৃত্যু। গত বছরের করা একটি জাতীয় সমীক্ষায় উঠে আসছে ভারতে সিলিকোসিস আক্রান্তদের গড় আয়ু মাত্র ৩৩ বছর। ফলত, এমন একটি রোগের সঙ্গে লড়াই করার অন্যতম একটি হাতিয়ার হয়ে উঠতে চলেছে এই কিট তাতে সন্দেহ নেই কোনো।

কিন্তু কীভাবে কাজ করে এই বিশেষ কিট? সিলিকার প্রভাবে ফুসফুসে একটি বিশেষ প্রোটিনের মাত্রা বাড়তে থাকে ক্রমশ। ‘সিসি১৬’ বা ‘ক্লারা সেল প্রোটিন’ নামে খ্যাত সেই সিরামটিই জানিয়ে দেবে কোনো ব্যক্তি সিলিকোসিসে আক্রান্ত কিনা। রক্তের নমুনায় প্রতি মিলিলিটারে এই সিরামের পরিমাণ ৬-৯ ন্যানোগ্রাম হলেই, তাকে প্রাথমিক পর্যায়ের সিলিকোসিস বলে চিহ্নিত করছেন বিজ্ঞানীরা। 

আরও পড়ুন
জৈবজ্বালানিতেই উড়বে বিমান, পথ দেখালেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত গবেষক

তবে সিলিকোসিস শুধুমাত্র ভারতেরই সমস্যা নয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হু-এর এপিডেমিওলজিক্যাল সমীক্ষা জানাচ্ছে পৃথিবীর ৩০-৫০ শতাংশ শ্রমজীবী মানুষই এই ঘাতক রোগের শিকার হয়ে থাকেন কখনো না কখনো। সিলিকোসিসকে নিয়ন্ত্রণে আনা গেলে আয়ত্তে আসবে আরও ৮টি এপিডেমিওলজিক্যাল রোগ। সেদিক থেকে দেখতে গেলে আগামীদিনে বাঙালি গবেষকের এই আবিষ্কার নতুন দিগন্ত খুলে দিল চিকিৎসাবিজ্ঞানের, তাতে সন্দেহ নেই কোনো…

আরও পড়ুন
জলবায়ু পরিবর্তনে বিচলিত তরুণ প্রজন্ম, বাড়ছে উদ্বেগ, জানাল গবেষণা

ছবি ঋণ-
ট্যুইটার

আরও পড়ুন
দৃষ্টিশক্তি ফেরাল জিন টেকনোলজি, বড়ো সাফল্য গবেষকদের

Powered by Froala Editor

More From Author See More

Latest News See More