যুদ্ধের ব্যয় কমিয়ে বিনিয়োগ হোক পরিবেশ-সমস্যায়, দাবি নোবেলজয়ী বিজ্ঞানীদের

দুটি বিশ্বযুদ্ধ পেরিয়ে এসে আজও অস্ত্রহীন পৃথিবীর স্বপ্ন অলীকই থেকে গিয়েছে। শুধু তাই নয়, প্রতি বছর নানা দেশে সামরিক খাতে খরচও বেড়ে চলেছে। অন্যদিকে বর্তমান পরিস্থিতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা যে জলবায়ু পরিবর্তন, সেখানে উপযুক্ত বিনিয়োগের অভাবে থমকে যাচ্ছে নানা প্রকল্পই। এই বৈপরীত্য ঘোচাতে এবার এগিয়ে এলেন সারা পৃথিবীর অন্তত ৫০ জন নোবেলজয়ী (Nobel Laureates)। সেইসঙ্গে আরও বহু প্রথম সারির বিজ্ঞানী। সবাই মিলে সম্প্রতি পৃথিবীর প্রতিটা দেশের সরকারের কাছে একটি দাবিপত্র পেশ করেছেন। সামরিক খাতের খরচ (Military Spending) কমিয়ে সেই অর্থ পরিবেশ দূষণ মোকাবিলায় ব্যয় করার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

ইতালির পদার্থবিজ্ঞানী কার্লো রিভেলির উদ্যোগে প্রথম শুরু হয় সই সংগ্রহের কাজ। আর প্রথমদিকেই সেই দাবিপত্রে সই করেন ২০২০ সালের নোবেলজয়ী পদার্থবিজ্ঞানী রজার পেনরোজ। তাঁর সূত্র ধরেই অন্যান্য নোবেলজয়ী বিজ্ঞানীরাও এগিয়ে আসেন। শতাধিক সই সংগ্রহের পর প্রতিটা দেশের সরকারের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে দাবিপত্র। সেইসঙ্গে পরিসংখ্যান দিয়ে দেখানো হয়েছে, ঠিক কোন পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে সামরিক বিনিয়োগ কমানোর দাবি জানাচ্ছেন তাঁরা। সামরিক বিনিয়োগকে ‘এক বিরাট অপ্রয়োজনীয় খরচ’ বলেও উল্লেখ করেছেন তাঁরা।

কিছুদিন আগেই স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের বার্ষিক সমীক্ষার রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। তাতে দেখা গিয়েছে, ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সারা পৃথিবীতে সামরিক খরচ বেড়েছে প্রায় ২.৬ শতাংশ। শুধু তাই নয়, প্রতি বছরই এই পরিমাণ একটু একটু করে বেড়ে চলেছে। একের পর এক যুদ্ধের ভয়াবহতা দেখার পর অস্ত্র নামিয়ে রাখাই যে মানব সভ্যতাকে বাঁচানোর একমাত্র রাস্তা, সেটা স্পষ্ট উল্লেখ করেছেন বিজ্ঞানীরা। বিজ্ঞানীদের সঙ্গে এই দাবিতে সামিল হয়েছেন শান্তি আন্দোলনের বহু কর্মীও।

সামরিক বিনিয়োগের উদ্দেশ্য যে দেশের নিরাপত্তা নয়, সেটাও উল্লেখ করেছেন রিভেলি ও অন্যান্য বিজ্ঞানীরা। প্রতিটা দেশ যদি সামরিক খাতে সমানভাবে ব্যয় কমায়, তাহলে কোনো দেশেরই শক্তি হ্রাস বা বৃদ্ধি পায় না। তাই আগামী কয়েক বছর প্রতিটা দেশকেই বছরে ২ শতাংশ হারে সামরিক খরচ কমানোর অনুরোধ জানিয়েছেন তাঁরা। আর এই সঞ্চয়ের অর্ধেক জাতিপুঞ্জের জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার বিশেষ তহবিলে দান করার দাবিও রেখেছেন তাঁরা। বাকি অর্ধের অর্থও যাতে দেশগুলি নিজেদের মতো করে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় কাজে লাগায়, তাও নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এই সংকটের হাত থেকে মানবসভ্যতাকে বাঁচাতে না পারলে সীমান্তের নিরাপত্তা অর্থহীন হয়ে পড়ে।

Powered by Froala Editor