‘বরাবর লড়াকু মানসিকতাই দেখেছি সুশান্তের মধ্যে’, বলছেন সহ-অভিনেতা ডঃ কৌশিক ঘোষ

“যারা ওঁর ছবিগুলো দেখে উৎসাহিত হয়েছেন, তাঁরা ভেঙে পড়বেন না। বরং অনুপ্রেরণা পাবেন যে, সুশান্ত যে ভুলটা করেছেন, সেটা যেন তাঁরা না করেন। পরবর্তীকালে এই পরিস্থিতিতে লড়াই করার রসদ যোগাবে এই দুঃসংবাদ।”

বলছিলেন ডঃ কৌশিক ঘোষ। চট করে নামে হয়তো চিনতে পারা যাবে না তাঁকে। কিন্তু এই বাঙালি ডাক্তার সুশান্তের সহ-অভিনেতাও। একটি নয়, দু-দুটি সিনেমায় সুশান্ত সিং রাজপুতের সঙ্গে অভিনয় করেছেন তিনি। ‘ডিটেকটিভ ব্যোমকেশ বক্সী’ ও ‘এম এস ধোনি – অ্যান আনটোল্ড স্টোরি’। 

সুশান্তের আকস্মিক মৃত্যুসংবাদে স্তম্ভিত ডঃ ঘোষও। কেবলমাত্র ৩৪ বছর বয়সে এমন চলে যাওয়ার জন্য নয়। বরং সামনে থেকে দেখা সুশান্ত সিং রাজপুতের সঙ্গে এই ঘটনাকে একেবারেই মেলাতে পারছেন না তিনি। জানালেন, “অত্যন্ত কর্মোদ্যমী, উৎসাহী এবং পজিটিভ ছিলেন সুশান্ত সিং। ছিলেন অত্যন্ত খোলা মনের। অনেকেই ইন্ট্রোভার্ট হন, কাজে চুপ করে থাকেন। প্রকাশ করেন না নিজেদের। সেকরম কোনো অন্ধকার দিক ছিল না তাঁর ব্যক্তিগত চরিত্রে। বরং পিছিয়ে পড়লেও লড়াকু একটা মানসিকতাই প্রবলভাবে ছিল তাঁর মধ্যে।”

কৌশিকবাবুর মতে, নিজের কাজে সবসময়ই একশো শতাংশ দেওয়ার চেষ্টা করতেন সুশান্ত সিং রাজপুত। এখন প্রশ্ন, সেখান থেকেই কি শুরু মানসিক চাপের? হওয়াটা খুব একটাও অস্বাভাবিক নয়। যেখানে একজন তাঁর কাজে ১০০ শতাংশ সততা, নিষ্ঠা, প্রচেষ্টা দিচ্ছে; সেই ক্ষেত্রে সফলতার প্রশ্ন উঠলে হতাশার জন্ম নেওয়াটাও স্বাভাবিক। ‘ড্রাইভ’-সহ সাম্প্রতিক কয়েকটি সিনেমা ফ্লপ করার জন্য অনেকেই আঙুল তুলেছিলেন তাঁর অভিনয়ের দিকে। এমনকি সিনেমাগুলি প্রকাশের পর কেউ কেউ যোগাযোগও রাখেননি তাঁর সঙ্গে।

আরও পড়ুন
অবসাদ কাটিয়ে উঠতেই হবে আমাদের, মৃত্যুতে এই বার্তাই কি দিলেন সুশান্ত?

তবে এর ঠিক উল্টোদিকও রয়েছে। হতে পারে এখন কাজের চাপ না থাকাটাও ডিপ্রেশনের একটা কারণ। লকডাউনে সক্রিয় একজন অভিনেতার গত দু-তিন মাস বাড়িতে বন্দিদশা, কাজ করতে না পারাটাও কি মানসিক চাপ তৈরি করেনি? এবং এসবের পাশাপাশিই একাকিত্ব। মুম্বাইয়ের মতো জায়গায় একাই থাকতেন সুশান্ত সিং রাজপুত। সেখানেও কি বেড়ে উঠেছিল বিষণ্ণতা, ব্যক্তিগত জীবনের হতাশা ভাগ করে নেওয়ার অভাব? 

আরও পড়ুন
৬ দিন আগেই আত্মহত্যা করেছিলেন সুশান্তের প্রাক্তন ম্যানেজার দিশা সালিয়ন

তাঁর শেষ কিছু ট্যুইটে আভাস পাওয়া যায় অবসাদের। জিলেটের একটি বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপনকে উল্লেখ করে লিখেছিলেন, “পুরুষদেরও আবেগ থাকে। কান্না পুরুষদের দুর্বলতা নয়, বরং সাহস।” উঠে এসেছিল ১৬ বছর বয়সে হারানো মায়ের কথাও, “চোখের জলে ঝাপসা হচ্ছে স্মৃতির দেরাজ/ অনন্ত এক হাসির মত স্বপ্ন আসে/ আর এই দুইয়ের মাঝেই ভাসতে থাকে জীবন।”

আরও পড়ুন
প্রেসিডেন্সিতে ‘রেকি করতে’ আচমকা ঢুকলেন সুশান্ত, আড্ডা জমালেন হোস্টেলের ঘরে বসে

তাঁর এই আকস্মিক আত্মহত্যায় কি হেরে গেল তাঁর অভিনীত চরিত্ররাও? কে জানে! ডঃ ঘোষ বললেন, “রবিন উইলিয়ামসের ছবিগুলোতে সবসময় হাসির খোরাক বা পজিটিভ এনার্জির অভিপ্রকাশ ছিল। তাঁর মৃত্যুর পরে আমেরিকার সাইক্রিয়াটিস্টরা মনে করেছিলেন, তাঁর মতো হাসি-খুশি মানুষ যদি অবসাদের শিকার হয়ে থাকেন, তবে প্রত্যেকের দরকার নিজেদের মানসিক অবস্থার যত্ন নেওয়া।”

এসবই তুলে দিয়ে যায় প্রশ্ন। আদৌ বদলাবে তো সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি? অবসাদে ভোগা মানুষটির যত্ন নিতে শিখব তো আমরা? ভাবিত সুশান্ত সিং রাজপুতের সহ-অভিনেতাও। অপেক্ষা দিনবদলের। দেখা যাক...

Powered by Froala Editor

More From Author See More