ঈশ্বর তোমাকে নৃত্যের জন্যই গড়েছেন

শঙ্কর সরণি - ২০
আগের পর্বে

প্যারিসের বুকে একটি বেশ বড়ো বাড়িতে এসে উঠলেন উদয়শঙ্কর। সঙ্গে পরিবার এবং দলের সকলে। একদিকে নিচের তলার হলঘরে চলত নৃত্য-গীতের মহরা। আবার মা হেমাঙ্গিনীর হাতের ছোঁয়ায় প্যারিসের বুকেই গড়ে উঠেছিল একটি বাঙালি গেরস্থালি। উদয়শঙ্করের ফিরে আসার প্রতীক্ষায় ছিলেন সিমকি। তিনি অচিরেই দলে যোগ দিলেন। কিছুদিনের মধ্যেই লন্ডন থেকে ফিরলেন বিষ্ণুদাস শিরালী। অন্যদিকে তিমিরবরণ, কেদারশঙ্কর তো আছেনই। এই সময়েই সেতার বাজানোর জন্য ১০ বছরের রবিশঙ্করকে ডেকে নিলেন তিমিরবরণ। কিছুদিনের মধ্যেই মঞ্চে নতুনভাবে আত্মপ্রকাশ করল উদয়শঙ্করের দল। বাদ্যযন্ত্রীদেরও মঞ্চের মধ্যেই জায়গা করে দিলেন উদয়। আর নৃত্যের চঞ্চলতা সেদিন ছড়িয়ে পড়েছিল মঞ্চের বাইরেও।

অমলাশঙ্করের কথা দিয়েই শুরু হয়েছিল আমাদের কথা বলা। আজ আবার সেইখানে ফেরবার পালা। ২৭ জুন ১৯১৯, অমলার জন্ম। বাংলাদেশের যশোরে। গ্রামের গা-ঘেঁষে বইত নদী, সেই বাটাযোড় ছিল তাঁর গ্রাম। ছিল সহজ, অনাবিল এক গ্রামীণ জীবন। নিরাভরণ কিন্তু পরিপূর্ণ। অনাড়ম্বর কিন্তু আনন্দময় এক জীবন। বাবা অক্ষয় নন্দী পেশায় স্বর্ণব্যবসায়ী। কিন্তু প্রখর আদর্শবাদী। মেয়েদের উন্নতি সাধনে তাঁর ভাবনা ছিল বিচিত্র। তাঁর প্রগতিশীলতা শুধু তত্ত্বকথায় নয়, বাস্তবমুখী ছিল তার প্রয়োগ। নব্য আধুনিকতার বিপ্লবকে আটকে রাখেননি বই-পত্র আর কাগজে-কলমে। তার নিরীক্ষা চলত সংসারের গণ্ডির ভেতর থেকেই। শ্রীঅরবিন্দের শিষ্য ছিলেন। দেশসেবা ছিল জীবনের মন্ত্র। ‘মাতৃমন্দির’ নামে মেয়েদের জন্য সম্পাদনা করতেন এক পত্রিকা। তাঁর স্বপ্ন ছিল দেশের মেয়েরা আত্মনির্ভর হোক। ছ্যাতলা-পরা দস্তুরের বাইরে দাঁড়িয়ে দেখুক জীবনকে। কার্পণ্যকে এতটুকু প্রশ্রয় না-দিয়ে, ঘরকন্নার বাইরেও, খুঁজে নিক নিজেদের ভেতরের শক্তিটুকুকে।

অমলার তখন এগারো। কালো মেয়ে। বিয়ের আসন্নবেলায় রূপ-রঙ গড়ন-বরণ ধরে চুলচেরা মত-মন্তব্যে জেরবার হবে মেয়েটা। অর্থহীন হা-হুতাশ আর আকারে-ইঙ্গিতে গঞ্জনার সঙ্গে গাঁঠছড়ায় তার জীবন কাটুক, তেমনটা মঞ্জুর ছিল না অক্ষয় নন্দীর। ঠিক করলেন, এবার ব্যবসার কাজে বিদেশ গেলে অমলাকে সঙ্গে নেবেন। ভর্তি করে দেবেন ইংল্যান্ড বা সুইটজারল্যান্ডের কোন নামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। সেখানে থেকে পড়াশোনা করে অমলা স্বাধীনভাবে দেখতে শিখুক নিজের জীবনকে। বাবা জিজ্ঞেস করলেন, ‘অমল বিলেত যাবি?’ কোথায় বিলেত জানে না অমলা। বললে, ‘যাব। বিলেতে কোথায় যাব বাবা?’ অক্ষয় বললেন, ‘প্যারিস।’ অমলা জানতে চাইলে, ‘সে কি পারস্য দেশে?’ অক্ষয় হাসলেন মৃদু।

১৯৩১-এ প্যারিসের ইন্টারন্যাশানাল কলোনিয়ন এক্সপোজিশন থেকে নিমন্ত্রণ এল অক্ষয় নন্দীর। কর্নওয়ালিশ স্ট্রিটে তাঁর ছিল ইকোনমিক জুয়েলারি ওয়ার্কস নামে মস্ত দোকান। স্বর্ণ-অলংকার তো গেলই। কিন্তু বিদেশ যাবার বেলা বড়ো বড়ো কাঠের বাক্সে খই ভরে অক্ষয় সঙ্গে নিলেন দেশের হরেক হাতের কাজ। তখনকার দিনে সেসব জিনিসের মূল্য কে বুঝত? তিনি বুঝেছিলেন। বিদেশে সেসবের কদর হয়েছিল খুব। অক্ষয় স্থির করলেন, বিদেশে কাজে ব্যস্ত হয়ে যাবার আগে অমলাকে দেখাবেন ইউরোপ। এত এত দেশ, তার মানুষ-জন, শিক্ষা-সহবত, ধরন-ধারণ নিয়ে অমলা দেখুক বিপুলা এই পৃথিবীটাকে। মানুষের বানানো হীন-গণ্ডির চেয়ে সত্যি পৃথিবীটা আর জীবনের ক্ষেত্র, যে কী উজার বিস্তৃত, জানুক তাও। ১৯৩১-এর ৩ এপ্রিল শুরু হল যাত্রা।      

প্যারিস ইন্টারন্যাশনাল কলোনিয়াল এক্সপোজিশন, ১৯৩১।

 

আরও পড়ুন
নৃত্য সেদিন পেরিয়ে গেল মঞ্চের সীমা

সে যাত্রায় মোট আড়াই বছর বিদেশে ছিলেন অমলা। তার মধ্যে একবছর ছিলেন বাবার সঙ্গে। ফিরে এসে মাত্র চোদ্দো বছর বয়সে, সেই অভিজ্ঞতা নিয়ে, বাবার উদ্যোগেই লিখেছিলেন বই, ‘সাত সাগরের পারে’। রবীন্দ্রনাথ, অবনীন্দ্রনাথ থেকে নেতাজি সুভাষচন্দ্র সে বই পড়ে সবাই জানিয়েছিলেন স্নেহাশিস। লেখনীর গুরুত্ব স্বীকার করেছিল আনন্দবাজার পত্রিকা থেকে শনিবারের চিঠি সকলেই।

আরও পড়ুন
উদয় প্যারিসে ফিরছেন তাঁর নিজের তৈরি দল নিয়ে

অমলার সঙ্গে আসার অনেক আগেই ইউরোপ মন দিয়ে দেখেছিলেন অক্ষয়। ১৯২৪-এ প্রথমবার গ্রেট ব্রিটেন ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিয়ে বই লিখেছিলেন, ‘বিলাত ভ্রমণ’। কিন্তু কন্যাকে দেখাতে সে পথে পুনরায় ঘুরলেন তিনি। কিন্তু সেটা বড়ো কথা নয়। যা গুরুত্বপূর্ণ তা হল, সমস্ত যাত্রায় একটা বিষয় অত্যন্ত সচেতন রইলেন অক্ষয়। তাঁর পূর্ব পরিচয় যেন কোনোভাবে ব্যাহত না-করে বালিকার বিস্ময়কে। ফলত, তাঁর আনন্দ-আহ্লাদ-আগ্রহকে তিনি মেলতে দিলেন তার মতো করে, সম্পূর্ণত। নিরানব্বুইটা মিউজিয়ম দেখেছিলেন অমলা, সেন্ট পিটার, ম্যাদেলিন, নতরদাম গির্জা, রোমের কলোসিয়াম, গ্যারিবল্ডির স্মৃতিস্তম্ভ, মিলানের ক্যাথিড্রাল, আল্পস পর্বত আরো কত কত জায়গায় হই-হই ভ্রমণ। তারমধ্যে গ্রেভাঁ আর লুভ তো আছেই।

আরও পড়ুন
মাইহারে অসম্পূর্ণ রইল তিমিরবরণের শিক্ষা

একবার হল এক ঘটনা। যখনই সুযোগ ঘটেছে সে গল্প বলতে ছাড়েননি কখনও। গ্রেভাঁ মিউজিয়মে সব মোমের মূর্তি। আনা পাভলোভা, চ্যাপলিন, লেনিন তো আছেনই, কিন্তু সেই বিভুঁইয়ে এক্কেবারে খদ্দর চাদর গায়ে, গীতা হাতে নিজের দেশের মানুষ গান্ধিকে দেখে অমলা একেবারে আটখানা। সব দেখে শুনে ক্লান্ত, গিয়ে বসলেন সোফায়। বেশ কিছুক্ষণ বসে খেয়াল করলেন, পাশের বৃদ্ধ ভদ্রলোক খবর কাগজ পড়তে-পড়তে কখন ঢুলে পড়েছেন। মাথাখানি ঢলে পড়েছে অন্যপাশে। সৌজন্যবশত মাথাখানা যত্ন করে তুলে দিতে গিয়ে কী কাণ্ড। আশেপাশে সবাই ফেটে পড়ল অট্টহাসিতে। সে যে মোমেরই মূর্তি। লজ্জার এক শেষ। অপ্রস্তুত-হাসিটুকু মুখে নিয়েই ধীর পায়ে বাইরে এসে দাঁড়ালেন খোলা হাওয়ায়। দরজার দুপাশে দাঁড়িয়ে দুই প্রহরী। জড়তা কাটাতে ভাব জমালেন বাইরে দাঁড়িয়ে-থাকা এক প্রহরীর সঙ্গে। যেই-না বাড়ালেন হাত, ইস, বুঝলেন সেই ভুলেরই পুনরাবৃত্তি। কেউ জানতে পারেনি ভেবে যেই ফেলবেন স্বস্তির শ্বাস, অমনি জগৎ-ভুবন মাতিয়ে হেসে উঠলে উল্টোদিকের প্রহরী।

আরও পড়ুন
সুরের ঝরনাধারার নির্জনে ছিল এঁদের বাস

প্যারিস ইন্টারন্যাশনাল কলোনিয়াল এক্সপোজিশনে ভারতীয় স্টলের সজ্জা, ১৯৩১।

 

ইউরোপে পথে-ঘাটে বাবার সঙ্গে স্বচ্ছন্দ ঘুরে বেড়াতেন অমলা। শাড়ি পরিহিতা। এক ঢাল চুল। হাসি-খুশি-চঞ্চল। পরদেশি এই মেয়েকে দেখে ফরাসিতে অনেকেই ফিসফিস করত, ‘ত্রে জোলে। ত্রে জোলে।’ অমলা স্থির করলে, তার মানে নির্ঘাৎ, কালো মেয়ে। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, সে কথার অর্থ হল, ‘খুব সুন্দর’। চেয়ে দেখবার যেমন থাকে একটা দৃষ্টিকোণ, তেমন থাকে চেয়ে দেখবার প্রস্তুতিও। অমলা সেদিন টের পেলে।

অমলার ফরাসি ভাষা শিক্ষার জন্য অক্ষয় ঠিক করে দিলেন এক শিক্ষয়িত্রী। তিনি ছিলেন ভারি অদ্ভুত গোছের। প্রথম কদিন বই-পত্র বর্ণ-হরফ চিনিয়ে-টিনিয়ে তিনি থামলেন। তারপর, অক্ষয়ের অনুমতি নিয়ে, রোজই অমলাকে নিয়ে তিনি বেড়িয়ে পড়তেন এখান-ওখান। ভাষা তো বই-তে থাকে না, থাকে মানুষের চলায়-বলায়। দরকারে-অদরকারে-আচম্বিতে। হাবে-ভাবে-নিশ্চুপেও।

একদিন গেলেন শহর থেকে একটু দূরে। আঙুরের খেত পেরিয়ে, আঁকা-বাঁকা সাঁকোয়। হলুদ হলুদ লম্বা ঘাস-জঙ্গলের মাটি ফুঁড়ে দাঁড়িয়ে আছে এক দুর্গ। তার পাশেই ছোট্টো একটা বাড়ি। বাড়িতে সবাই কী সুন্দর। তাতে একরত্তি কী অপূর্ব এক মেয়ে। সারাদিন করে চলেছে বকমবকম। ফরাসি ছাড়া সে কিচ্ছুটি বোঝে না। এক গঙ্গা কথা সে বলেছে অমলাকে। সেই প্রথম চিনচিনিয়ে উঠছে ব্যথা, ওই একরত্তি কী শুধোয় তাকে। চিরদিনের মিশুকে অমলা। খানিক সময় বইতে খেয়াল হল, অমলাও কখন ধরেছেন খেই। ফরাসিতেই বলে চলেছেন অনর্গল। এরপর থেকে শুরু হল নিয়ম মতো পাঠ। ভাবের মধ্যে ভাষার জন্মের পর শিক্ষক তাঁকে চেনালেন, জ্ঞানের মধ্যে ভাষায় বুনটটিকে। অক্ষয় নন্দী নির্দেশ দিলেন   অমলাকে এবার চলতে হবে একা-একা। সঙ্গে দিলেন ছোট্টো-ছোট্টো কাজ। ব্যাঙ্কে অথবা দোকান থেকে টুকিটাকি আনতে। একা-একা এসব কাজের ভার পেয়ে অমলা খুশি হতেন খুব। সন্তানের চরিত্র গঠনে স্বাধীনতা আর দায়িত্বের ওতপ্রোত যোগটি কী আশ্চর্য সহজতায় গেঁথে দিলেন অক্ষয়। 

প্যারিস ইন্টারন্যাশনাল কলোনিয়াল এক্সপোজিশনে অক্ষয় নন্দীর প্রাপ্ত পদক, ১৯৩১।

 

ইন্টারন্যাশানাল কলোনিয়াল এক্সপোজিশনের ইন্ডিয়ান প্যাভেলিয়নে অক্ষয় নন্দীর স্টল অধিকার করল প্রথম স্থান।  সোনা-রুপোর পাতে ফুল-কুঁড়ি ফুটিয়ে তোলা গয়না। ইয়েলোব্রোঞ্জ। জয়পুরি পাথর আর বর্মার রুবি দিয়ে ঘন বুনটে ঠাসা গলা-ভরা চন্দ্রহার। তার সঙ্গে খাগড়ার প্রসিদ্ধ বাসন-কোসন, মুর্শিদাবাদের হাতির দাঁতের তৈরি রকমারি জিনিস। লোকজন নেড়ে-চেড়ে একেবারে তাজ্জব বনে যায়। এ জিনিস তারা চোখে দেখেনি কখনও। তর সয় না জিনিস বিক্রি হতে।

এগজিবিশনে পৃথিবীর নানান দেশের কোনো ভাবনাকে কেন্দ্রে রেখে, করা হত প্রদর্শনীর বন্দোবস্ত। সেইসঙ্গেই থাকত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও ব্যবস্থা। সেইখানেই ভারতীয় নৃত্যের দায়িত্বে ছিলেন নিয়তা-নিয়কা। ওরিয়েন্টাল ড্যান্সে তাঁর ছিল অশেষ দক্ষতা। ইউরোপে আমেরিকায় তাঁর নৃত্য অর্জন করেছিল ভূয়সী প্রশংসা। ওরিয়েন্টাল নৃত্য তথা ভারতীয় সংস্কৃতি নিয়ে তাঁর ছিল অগাধ জিজ্ঞাসা। সারাদিন স্টলে বাবার সঙ্গে থাকা ঋজু, সংযত অথচ বিচিত্র মানুষের সঙ্গে আদান-প্রদানে সহজ আন্তরিক অমলাকে আগেই ভালো লেগে ছিল তাঁর। নৃত্যের অনুষ্ঠানের জন্য নিয়তা-নিয়কা অমলাকে চাইলেন অক্ষয়ের কাছে। অক্ষয় রাজি হলেন।

মহা চিন্তায় পড়লেন অমলা। এর আগে তেমনভাবে নাচ তো কখনও দেখেননি তিনি। গ্রামে যাত্রা দলে ছেলেরা মেয়ে সাজত। চুল পরে গাইত, ‘এসো গো মা, বাগবাদিনী/ বীণাপাণি শ্বেতবরণী’। বৃন্দাবনে একবার দেখেছিলেন হোলি নৃত্য। উৎসবের দিনে পল্লীবালারা মেতে উঠত আনন্দে। সেই আনন্দই প্রকাশ পেয়েছিল অপরূপ নাচ হয়ে। আর দাক্ষিণাত্য ভ্রমণের সময় দেখেছিলেন দেবদাসী নৃত্য। মন্দির প্রাঙ্গণে উন্মুক্ত আকাশের নীচে, সে নাচ অপার্থিব হয়ে ধরা পড়েছিল তাঁর চোখে।

অমলাশঙ্করের লেখা তাঁর ইউরোপ ভ্রমণকাহিনির সাম্প্রতিক  সংস্করণের প্রচ্ছদ।

 

নিয়তা-নিয়কা অমলার কাছে জানতে চাইলেন, তাঁর দেশের মেয়েরা কেমনভাবে কলসি কাঁখে জল বয়ে আনে? দেবতার জন্য কেমনভাবে সাজায় নৈবেদ্য? ঈশ্বরের কাছে তাঁদের প্রণতির চেহারাটাই বা কেমন হয়? ইউরোপীয় নৃত্যে গুরুত্ব পায় পায়ের গতি। কিন্তু ভারতীয় নৃত্যের বৈশিষ্ট্য হাত আর অঙ্গের ভঙ্গিমায়। নিজের এতটুকু জীবনে, কতটুকুই বা নৃত্যের সঙ্গে পরিচয়, তবু সেইটুকু সম্বল করেই অমলা নাচলেন। যার-পর-নাই খুশি হলেন নিয়তা-নিয়কা। নিয়তার কাছে নৃত্য অনুশীলনে তাঁর শরীরের গঠন হয়েছিল সুন্দর। পায়ের ওপর দক্ষতা বেড়েছিল বিস্তর। ছোট্টো দল নিয়ে নিয়তা-নিয়কা তৈরি করলেন বুদ্ধের আরতি, হোলি, শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে সখীদের নৃত্য, বিষ্ণুমন্দিরে দেবদাসী নৃত্য। নিয়তার কৃষ্ণ নৃত্যে অমলাকে নাচতে হত ছোট্টো একটি ঢোল নিয়ে। অমলার সেই নৃত্য দেখে প্রশংসা করলেন খোদ প্রাক্তন ফরাসি প্রেসিডেন্ট মসিঁয়ে ডুমার।

নিয়তা-নিয়কা অমলাকে ভালোবেসেছিলেন খুব। বলতেন, ‘ঈশ্বর তোমাকে নৃত্যের জন্যই গড়েছেন, অমলা।’ নিয়তা-নিয়কার আরো একটি শিক্ষার কথা কখনও ভোলেননি অমলা। তিনি বলেছিলেন, ‘মনের মাঝখানে সবসময় আনন্দকে ধরে রাখতে হয়। ওই আনন্দই তো সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে প্রকাশ পায় নৃত্য হয়ে।’

মাঝে-মাঝে স্টলের এদিক-সেদিক ঘুরে বেড়াতেন অমলা। হঠাৎ একদিন দেখতে পেলেন, উরিবাব্বা, একদল ভারতীয়। কোট-প্যান্ট পরিহিত। কী সুন্দর সকলে। এতজন ভারতীয়কে একসঙ্গে দেখতে পেয়ে ভারি আনন্দ বোধ করলেন অমলা। জানতে চাইলেন, ‘are you from India?’ ঘাড় নেড়ে একজন বললেন, তাঁর নাম উদয়শঙ্কর। 

Powered by Froala Editor