সার্ফরোসি কি তামান্না আব হামারে দিল মে হ্যায়

'কালাপানি' আন্দামান— ৩৩
আগের পর্বে

১৯২৮ সালের ১৭ নভেম্বর মারা গেলেন লালা লাজপত রাই। তাঁর মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতেই এবার তৎপর হয়ে উঠলেন বিপ্লবীরা। ডিসেম্বর মাসেই একটি আলোচনাসভার আয়োজন করল এইচএসআরএ। ভগৎ সিং, সুকদেব, রাজগুরু, চন্দ্রশেখর আজাদ-সহ একাধিক বিপ্লবী এগিয়ে এলেন লাহোর সুপারিটেন্ডেন্ট স্কটকে হত্যা করার জন্য। স্কটের আগমন বার্তা জানান দেওয়ার দায়িত্ব পড়ল জয়গোপালের ওপর। কিন্তু তিনি চিনতেন না স্কটকে। ফলত, ভুল সংকেতে বিপ্লবীদের গুলিতে মারা গেলেন স্যন্ডার্স। শাসকদের সতর্কবার্তা দিয়ে পোস্টারও ছাপলেন বিপ্লবীরা। এরপর ভগৎ সিং-দের পালানোর পালা লাহোর থেকে। দুর্গাদেবী ভগৎ সিং ও রাজগুরুকে নিয়ে চলে এলেন কলকাতায়। অন্যদিকে চন্দ্রশেখর আজাদ পরিচয় লুকিয়ে ভিড়ে গেলেন মথুরাগামী তীর্থযাত্রীদের দলে। তারপর...

৮ এপ্রিল, ১৯২৯। নয়া দিল্লির লেজিস্লেটিভ অ্যাসেম্বলিতে বেলা সাড়ে বারোটার সময় স্যার জর্জ শ্যুস্টার ‘পাব্লিক সেফটি বিল’এ যে ভাইসরয়কে বিশেষ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে সে সম্পর্কে ঘোষণা করতে উঠবেন। এই বিলে যে কোনো সন্দেহজনক ব্যক্তিকে বিনা বিচারে ‘দেশদ্রোহী’ তকমা দিয়ে আটক করার ক্ষমতা দেওয়া হবে। ইতিমধ্যে শিল্পে শ্রমিকদের ধর্মঘটকে নিষিদ্ধ করে ‘ট্রেড ডিসপিউটস বিল’ পাস হয়ে গেছে। বেলা এগারোটার একটু আগে খাঁকি জামা ও শর্টস পরে ভিজিটার্স  পাশ হাতে দোতলায় অতিথিদের গ্যালারিতে ঢুকলেন ভগৎ সিং এবং বটুকেশ্বর দত্ত। গ্যালারিতে সেদিন বেশ ভিড়। বিভিন্ন গণ্যমান্য অতিথিদের মধ্যে বসেছিলেন স্যার জন সাইমন, যাঁর বিরুদ্ধে কিছুদিন আগে বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন ভগৎ সিং। কাউন্সিল কক্ষে সেদিন উপস্থিত অন্যান্য জাতীয় নেতাদের মধ্যে মতিলাল নেহেরু, মহম্মদ আলী জিন্নাহ, এন সি কেলকার এবং এম আর জয়াকার।  শ্যুস্টার যেখানে দাঁড়িয়েছিলেন সেই জায়গাটিকে লক্ষ করে পরপর দুটি বোমা ছুঁড়লেন  ভগৎ সিং এবং বটুকেশ্বর দত্ত। তাঁদের লক্ষ্য শ্যুস্টারকে হত্যা করা ছিল না, ছিল ব্রিটিশ সরকারকে বিপ্লবীদের শক্তি সম্পর্কে জানান দেওয়া। সারা অ্যাসেম্বলিতে তখন হইচই পড়ে গেছে। ভগৎ এবং বটুকেশ্বরের ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’ এবং ‘সাম্রাজ্য কা নাশ হো’ শ্লোগানে কেঁপে উঠছে অ্যাসেম্বলি চত্বর।  এরপর তাঁরা অ্যাসেম্বলিতে প্রচারপত্র ছড়িয়ে দিয়ে নিজেরা স্বেচ্ছায় ধরা দিলেন।

৭ মে, ১৯২৯ দিল্লির এডিএম আদালতে ভারতীয় পেনাল কোডের ৩০৭ নং ধারা এবং এক্সপ্লোসিভ অ্যাক্টে  মামলা নথিভুক্ত হল। শুনানি শুরু হল জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে। ভগৎ সিং এবং বটুকেশ্বর দত্তের হয়ে মামলা লড়লেন  আসফ আলী। জুন মাসের ১২ তারিখে এক সপ্তাহের কম সময়ে মামলার রায় ঘোষিত হলে উভয়কে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হল। এরপর জুনের ১৪ তারিখে লাহোর ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্ত হিসাবে ভগৎ সিংকে মিয়ানওয়ালি জেলে  এবং  বটুকেশ্বর দত্তকে লাহোর বোরস্টাল জেলে নিয়ে যাওয়া হল। জেলে যাবার পরদিন থেকে দু জায়গাতে ভগৎ সিং এবং বটুকেশ্বর, নিজেদের মধ্যে নেওয়া পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রাজনৈতিক বন্দির মর্যাদার দাবিতে অনশন ধর্মঘট শুরু করলেন।  এরপর ১০ জুলাই, ১৯২৯ লাহোর ষড়যন্ত্র  মামলা শুরু হওয়ার কিছুদিন আগে ভগৎ সিংকে লাহোর জেলে নিয়ে আসা হল। তখনও ভগৎ সিং অনশন ধর্মঘট চালিয়ে যাচ্ছেন। এই জেলে তাঁর সঙ্গে দেখা হল উধম সিংয়ের, যিনি তাঁকে বলেছিলেন যে একদিন তিনি লন্ডনে যাবেন এবং জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের অন্যতম অপরাধী হিসাবে তৎকালীন পাঞ্জাবের লেফটেন্যান্ট গভর্নর, মাইকেল ও ডায়ারকে হত্যা করবেন। (এই কথা তিনি রেখেছিলেন ভগৎ সিং শহিদ  হয়ে যাবার নয় বছর পর, ১৩ মার্চ, ১৯৪০-এ লন্ডনের কক্সটন হলে ডায়ারকে হত্যা করে।) ভগৎ সিংয়ের অনশন ধর্মঘটে  উদ্বুদ্ধ হয়ে বিভিন্ন জেলের অন্যান্য রাজনৈতিক বন্দিরাও অনশন ধর্মঘটে যোগ দিলেন। সারা দেশে জেলের ভেতরে রাজনৈতিক বন্দিদের ওপর অত্যাচারের নানা কাহিনি ঘুরতে লাগল এবং তার সঙ্গে যখন যুক্ত হল তাঁদের অনশনের খবর তখন নানা জায়গায় সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ধ্বনিত হতে লাগল। মতিলাল নেহেরু জেলের ভেতরে রাজবন্দিদের দুর্দশা নিয়ে সরকারের নিন্দা করলেন, জওহরলাল নেহেরু জেলে গিয়ে ভগৎ সিং এবং অন্যান্য ধর্মঘটিদের সঙ্গে দেখা করলেন। মহম্মদ আলী জিন্নাহ সেন্ট্রাল অ্যাসেম্বলিতে ভারতীয় রাজবন্দি এবং ইউরোপীয় সাধারণ বন্দিদের মধ্যে যে আকাশ পাতাল পার্থক্য করা হয়, তাই নিয়ে প্রশ্ন তুললেন। কিন্তু রাজবন্দিদের দাবিকে মান্যতা না দেবার প্রশ্নে সরকার অনড়। বন্দিরাও অনশন ধর্মঘট তুলে নিতে রাজি নয়। নিজেদের তেজ অক্ষুণ্ণ রাখতে বিভিন্ন সলিটারি সেল থেকে ভেসে আসে গান – কাভি উও দিন ভি আয়েগা, কে যাব আজাদ হাম হোঙ্গে। এরপর কখন না জানি কোনো একজনের শুরু করা সেই গান সমবেত সঙ্গীতে রূপ নিয়ে নেয়।  

ভগৎ সিং এবং বটুকেশ্বর দত্ত

 

যতীন্দ্রনাথ দাস, যাঁর সঙ্গে ভগৎ সিংয়ের পরিচয় হয় কলকাতায় এবং যিনি পরে এইচআরএসএ’তে যোগ দিয়ে বিপ্লবীদের বোমা তৈরি করতে শেখান, তিনিও তখন ভগৎ সিং’দের সঙ্গে লাহোর ষড়যন্ত্র মামলার আসামি হিসাবে লাহোর জেলে বন্দি। তিনি মনে করতেন, অনশন ধর্মঘট এক সাংঘাতিক লড়াই; গুলির যুদ্ধে বা ফাঁসির দড়ি গলায় নিয়ে মৃত্যুর  থেকেও এটি অত্যন্ত কঠিন। তিনি তাঁর  কমরেডদের বোঝানোর চেষ্টা করলেন,  যে দাবিতে অনশন ধর্মঘট করা হয়, তা না পেয়ে কোনো কারণে মাঝপথে যদি অনশন ছেড়ে দিতে হয় তাহলে তা বিপ্লবীদের মর্যাদার পরিপন্থী হয়। তাঁর সাবধান বাণীতে কেউ কান দিলেন না, সবাই অনশন করবেনই এই জেদ বহাল রাখতে দেখে যতীন নিজেও অনশনে যোগ দিলেন। অবশেষে ১৪ সেপ্টেম্বর,  ১৯২৯ দীর্ঘ ৬৩ দিন অনশন ধর্মঘটে থেকে শহিদ  হলেন যতীন্দ্রনাথ দাস। সুভাষচন্দ্র বসু অত্যন্ত আঘাত পেলেন যতীন দাসের মৃত্যু সংবাদে। তিনি যতীনের মরদেহ কলকাতায় নিয়ে আসার জন্য ৬০০ টাকা পাঠালেন।

আরও পড়ুন
বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক

যতীন দাসের মৃত্যুর খবরে সারা দেশ যেন মর্মান্তিক এক আঘাতে চুপ করে গেল, সারা দেশ শোকস্তব্ধ। বিকেল ৪-টের সময় বোরস্টাল জেল থেকে যতীন দাসের মরদেহ নিয়ে শোকমিছিল শুরু হলে সারা লাহোর শহর যেন ভেঙে পড়ল। শোকমিছিল স্টেশনের পথে এগোতে শুরু করলে যতীন দাসকে শ্রদ্ধা জানিয়ে একে একে দোকানপাট বন্ধ হতে লাগল। এরপর যে যে স্টেশন দিয়ে যতীনের শবদেহবাহিত ট্রেনটি লাহোর থেকে কলকাতার দিকে এগোতে লাগল, প্রায় সমস্ত স্টেশনে প্রচুর মানুষ যতীন দাসকে শ্রদ্ধা জানাতে কাপড় দিয়ে মাথা ঢেকে মাথা নত করে দাঁড়িয়েছিল। মরদেহ কলকাতায় এসে পৌঁছালে সরকারি রিপোর্ট অনুযায়ী সেদিনের শেষযাত্রায় পাঁচ লক্ষ মানুষের সমাগম হয়েছিল। বেসরকারি মতে মরদেহ যখন হাওড়া স্টেশনে এসে পৌঁছাল তখনই সেখানে অন্তত পক্ষে ছয় লক্ষ লোকের জমায়েত হয়েছিল। কোনো বড়ো রাজনৈতিক দলের নেতা নয়, সেইসময়ে জনসংখ্যার নিরিখে এই জনসমাগম একজন বিপ্লবীর কাছে কতটা সম্মানের তা উপলব্ধি করলে আজও গায়ে কাঁটা দেয়।  

আরও পড়ুন
হিন্দুস্তান সোস্যালিস্ট রিপাব্লিকান অ্যাসোসিয়েশন

যতীন দাসের মৃত্যুতে পাঞ্জাব লেজিস্লেটিভ অ্যাসেম্বলি থেকে দুজন পাঞ্জাবি নেতা, মহম্মদ আলম এবং গোপীচাঁদ ভার্গব পদত্যাগ করলেন। মতিলাল নেহেরু সেন্ট্রাল অ্যাসেম্বলিতে মুলতুবি প্রস্তাব আনলেন এবং সরকারকে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় নিন্দা করলেন। জওহরলাল নেহেরু তখন কংগ্রেসের সভাপতি হিসাবে অনশন ধর্মঘটের বিরুদ্ধে বিবৃতি দিলেন। এর আগে সমস্ত জেলগুলিতে রাজবন্দিদের ন্যায্য দাবিতে যে অনশন ধর্মঘটের ঢেউয়ে সারা দেশের যুবসমাজ আন্দোলিত হচ্ছিল, তা কখনই গান্ধীজি মন থেকে মেনে নিতে পারেননি। কংগ্রেস যখন তাদের বুলেটিনে সেন্ট্রাল অ্যাসেম্বলি হলে বিলি করা ভগৎ সিং এবং বটুকেশ্বর দত্তের হ্যান্ডবিল ছাপতে চেয়েছিল, তাতেও প্রবল আপত্তি জানান গান্ধীজি।

আরও পড়ুন
স্বরাজ ভাবনার পুনরুত্থান

যতীন্দ্রনাথ দাস

 

আরও পড়ুন
অসহযোগ এবং খিলাফত আন্দোলন

লাহোর ষড়যন্ত্র মামলা চলাকালীন সমগ্র আদালত চত্বর ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’ ধ্বনিতে কেঁপে উঠত। বিপ্লবীরা আদালত কক্ষে প্রবেশ করতেন সমবেত কণ্ঠে দেশাত্মবোধক গান গাইতে গাইতে –

সার্ফরোসি কি তামান্না আব হামারে দিল মে হ্যায়
দেখনা হ্যায় জোর কিতনা বাজুয়া-ই-কাতিল মে হ্যায়…
ওয়াক্ত্ আনে দে বাতা দেঙ্গে তুঝে ইয়ে আসমান
হাম আভি সে কেয়া বাতায়ে, কেয়া হামারে দিল মে হ্যায়।

আদালতের বিচারে ভগৎ সিংরা জানতেন কী রায় হবে। সবটাই যে সাজানো, মিথ্যে মামলা। তাঁরা কাঠগড়াকে বেছে নিয়েছিলেন তাঁদের রাজনৈতিক মঞ্চ হিসাবে। একদিন তাঁরা সেখানে কাকোরি ট্রেন ডাকাতিতে যুক্ত বিপ্লবীদের অভিবাদন জানিয়ে বক্তব্য রাখলেন। ২১ জানুয়ারি, ১৯৩০। লেনিনের জন্মদিনে বিপ্লবীরা প্রত্যেকে আদালতে এলেন লাল  স্কার্ফ  জড়িয়ে। বিচারক তাঁর আসন গ্রহণ করার সঙ্গে সঙ্গে শ্লোগান উঠল – ‘সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক, ‘সংগ্রাম দীর্ঘজীবী হোক’, ‘লেনিনের নাম চিরঅক্ষয় হোক’, ‘সাম্রাজ্যবাদ নিপাত যাক’ এবং ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’। ক্রমশ পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে লাহোর ষড়যন্ত্র মামলার খবর ছড়িয়ে পড়তে লাগল। এটাই তো ভগৎ সিংরা চাইছিলেন। কানাডা, জাপান এবং আমেরিকা থেকে মামলা লড়ার জন্য এইচএসআরএ’র তহবিলে অনুদান আসতে লাগল। এমনকি পোল্যান্ড থেকেও এক ভদ্রমহিলা অনুদান পাঠালেন। ভারতীয়দের মধ্যে মতিলাল নেহেরু, রফি আহমেদ কিদোয়াই এবং যুক্তপ্রদেশের একটি ছোটো রাজ্যের রাজা কলাকারার মাঝেমধ্যে আদালতে উপস্তিত থেকে বিপ্লবীদের প্রতি সহমর্মিতা পোষণ করতেন।

ট্রাইব্যুন্যাল গঠনের পরে একদিন ১২ মে, ১৯৩০ আদালত কক্ষে ট্রাইব্যুনালের প্রধান কোল্ডস্ট্রিমের সামনে শ্লোগান উঠল ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’। কোল্ডস্ট্রিম শ্লোগান থামানোর নির্দেশ জারি করলেন। কিন্তু স্লোগান আরও বেড়ে গেল। এবার কোল্ডস্ট্রিম ক্ষেপে গিয়ে পুলিশকে আদালত কক্ষ খালি করতে নির্দেশ দিলেন। আদালত কক্ষ থেকে সবাইকে, এমনকি  প্রেসের সাংবাদিকদেরও বের করে দেওয়া হল। এরপর কোল্ডস্ট্রিম পুলিশকে নির্দেশ দিলেন (যা ট্রাইব্যুনালের অন্যতম সদস্য বিচারপতি, হিল্টন সই করলেন) প্রত্যেক বন্দিকে হাতকড়া পরিয়ে আদালত থেকে বের করে নিয়ে যেতে। বিচারকদের নির্দেশে পুলিশ আসামিদের কাটরায় যেখানে ভগৎ সিংরা বসে ছিলেন তাঁদের হাতকড়া পরাতে গেলে, বিপ্লবীরা আপত্তি জানান, এরপর উভয়পক্ষে মারপিট বেঁধে যায়। ওই কাটরা থেকে পুলিশ তাঁদের বের করে এনে আদালতের মধ্যেই বিচারপতিদের সামনে বেধড়ক লাঠি দিয়ে পেটায়। অনেক বিপ্লবী মারাত্মক আহত হন। সেদিন আদালত চত্বরে বিপ্লবীদের পুলিশ দিয়ে মারার ঘটনার নির্দেশ জারি করা অন্যতম বিচারপতি হিল্টনকে এরপর ট্রাইব্যুনালের প্রধান করা হয়। এতে আপত্তি জানিয়ে বিপ্লবীরা আদালত বয়কট করা শুরু করলেন।  

ইতিমধ্যে সাহারানপুর এবং লাহোরে পুলিশ প্রচুর বোমা, পিস্তল এবং কার্তুজ উদ্ধার করেছে। শূধুমাত্র ম্যাকলয়েড রোডে ভগবতীচরণের বাড়ি থেকেই উদ্ধার হয়েছে বাইশটি বোমা।  ফণীন্দ্রনাথ ঘোষ, জয়গোপাল এবং হংসরাজ ভোরা বিল্পবীদের বিরুদ্ধে রাজসাক্ষী হতে রাজি হয়ে গেলে অভিযুক্তদের অনুপস্থিতিতেই বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত এগোতে থাকে।  ফণীন্দ্রনাথ ঘোষের বক্তব্য আবদ্ধ থাকে কীভাবে বিভিন্ন স্থানীয় বিপ্লবীরা মিলে এইচএসআরএ গঠন করে তার মধ্যে। অন্যদিকে জয়গোপাল স্যন্ডার্স হত্যায় লাহোরে মোজাং রোডের গোপন ডেরায় কীভাবে বিপ্লবীরা মিলিত হয়ে স্কট হত্যার পরিকল্পনা করেন, স্কট হত্যার পরে যে পোস্টার লাহোর শহরের দেয়ালে সাঁটা হয় সেটা কে লিখেছিলেন থেকে শুরু করে তার আগে কীভাবে তাঁরা পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক লুঠ করে সমস্ত ঘটনার বিবরণী পেশ করে। ৫ মে, ১৯৩০-এ শুরু হয়ে ১০ সেপ্টেম্বর, ১৯৩০-এ শুনানি শেষ হল। পুরো বিচারপ্রক্রিয়া এখানে একপাক্ষিক এবং রায় যেন পূর্বনির্ধারিত। শেষ পর্যন্ত ৭ অক্টোবর ট্রাইব্যুনাল মামলার রায় দিল। এই রায়ে অজয় ঘোষ, যতীন্দ্রনাথ সান্যাল এবং দেশ রাজ প্রমাণাভাবে ছাড়া পেলেন, কিশোরীলাল, মহাবীর সিং, বিজয় কুমার সিংহ, শিব বর্মা, ডঃ গয়া প্রসাদ, কমলনাথ তিওয়ারী এবং জয়দেবের যাবজ্জীবন, কুন্দনলালের সাত বছরের জন্য আন্দামানে দ্বীপান্তর এবং ভগৎ সিং, সুকদেব ও রাজগুরুর ফাঁসির আদেশ হল। অন্তিম রায়দানের দিনে কোনো অভিযুক্তই আদালতে হাজির হননি। বিকেলে জেলের ভেতরেই তাঁদের হাতে লিখিত আদেশ এসে পৌঁছাল।

Powered by Froala Editor