আবারও ধর্মঘট, দাবিপূরণ ও মূল ভূখণ্ডে রাজবন্দিদের প্রত্যাবর্তন

‘কালাপানি’ আন্দামান - ১৮
আগের পর্বে

ইন্দুভূষণের আত্মহত্যা আর উল্লাসকরের পাগল হয়ে যাওয়া জেলের বন্দিদের প্রতিবাদে আবার অগ্নিসংযোগ করল। পরিশ্রম থেকে অব্যাহতি, মেলামেশার স্বাধীনতার দাবিতে আবার শুরু হল ধর্মঘট। কঠিন থেকে কঠিনতম শাস্তি দিয়েও দমানো গেল না তাঁদের। জেল কর্তৃপক্ষ তাঁদের মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে বাইরে কাজে পাঠাল। ননীগোপালকে রাখা হল জেলেই। কথা বলা, পোশাক পরা বন্ধ করে দিলেন তিনি। উলঙ্গ হয়েই দিন কাটাতে লাগলেন জেলে। শুরু হল একক অনসন। অসুস্থও হয়ে পড়লেন তিনি। ৭২ দিন পর শেষ পর্যন্ত সঙ্গীরা বুঝিয়ে তাঁর অনসন ভাঙাল। তারপর…

আগস্ট  ১৯১৩। এক বাঙালি কয়েদি লালমোহন সাহা জেল কর্তৃপক্ষকে খবর দিল যে বিপ্লবীরা বাইরে বোমা তৈরির কারখানা বানিয়েছে। নানা ধরনের গুজব ছড়াতে লাগল দ্রুত। বিপ্লবীরা নাকি খুব শিগগিরি পোর্ট ব্লেয়ার ধ্বংস করে সবাইকে জেল থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে সরকারি স্টিমারে করে পালিয়ে যাবে। কর্তৃপক্ষ হুঁশিয়ার হয়ে গেল। চারদিকে তন্ন তন্ন করে বোমার খোঁজ চালানো হল, সেলগুলিতে তল্লাশি চালানো হল। সে সময় বাইরে যে সমস্ত রাজবন্দিরা কাজ করছিলেন তাঁদের জেলে ফিরিয়ে আনা হল। কলকাতা থেকে বিশেষ অভিজ্ঞ পুলিশ অফিসার এবং বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞরা এসে হাজির হল। যে সমস্ত বিপ্লবীরা কিছুদিনের জন্য স্বাধীনতা ভোগ করছিলেন, তাঁরা সে অধিকার হারালেন, আবার তাঁদের সেলে আবদ্ধ করা হল।

অক্টোবর ১৯১৩। গভর্নর জেনারেলের কাউন্সিল মেম্বার স্যার রেজিনাল্ড ক্র্যাডক নিজে থেকে সবকিছু খতিয়ে দেখতে আন্দামানে এলেন। তাঁর এই পরিদর্শনের খবর গোপন রাখা হলেও, রাজবন্দিদের কাছে খবর ঠিক পৌঁছে গেল। বীরেন্দ্রচন্দ্র সেন, উপেন্দ্রনাথ ব্যানার্জী, ননীগোপাল, নন্দগোপাল, হোতিলাল ভার্মা এবং পুলিনবিহারী দাশ জেল কর্তৃপক্ষের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ক্র্যাডকের সঙ্গে দেখা করে জেল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে নালিশ জানালেন। ক্র্যাডক সাহেব রাজবন্দিদের সমস্ত কথা বেশ মন দিয়ে শুনলেন। সবাই মনে করলেন, বাঃ বেশ একজন ‘কাপ্তেন’ পাকড়ানো গেল, এবার যাহোক একটা কিছু সুব্যবস্থা হবে। তাঁর কাছে এবার সবাই দুঃখের ঝাঁপি খুলে বসলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেখানে হাজির হলেন তৎকালীন চিফ কমিশনার, ডগলাস। তিনি নিজ মূর্তি ধরে ক্র্যাডক সাহেবের সামনেই বলে বসলেন, “তোমরা বাহিরে রাজদ্রোহের পরামর্শ করিতেছিলে।”

রাজবন্দিরা বললেন, “তাই যদি আপনার ধারণা, তো প্রথমে যখন আপনাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম আমাদের বাইরের কাজ থেকে ফিরিয়ে আনা হল কেন, তখন ভালো মানুষ সেজে ‘জানি না’ বলেছিলেন কেন?  আর সে কথা বলবার পরে যদি আমাদের অপরাধের প্রমাণ পেয়ে থাকেন, তো প্রকাশ্য আদালতে আমাদের বিচার করতে এত সঙ্কোচ বোধ করেন কেন?”

স্যার রেজিনাল্ড মুখ টিপে হাসতে হাসতে উত্তর দিলেন – “কী জানো, এসব কথার প্রমাণ হয় না।”

আরও পড়ুন
সেলুলারে প্রতিবাদ, ধর্মঘট ও ভুখা হরতাল

ননীগোপালও তাঁর সমস্ত ইতিহাসের বিবরণ দিলেন। মহামান্য ক্র্যাডক সাহেব তার উত্তরে বললেন – “তুমি সরকারের শত্রু, তোমাকে মারিয়া ফেলা উচিত ছিল।”

ননীগোপাল উত্তর দিলেন, “তাই যদি উচিত, তো আইন-আদালতের এই ঠাট সাজিয়ে রেখে বৃথা পয়সা খরচ কেন? কাজটা সংক্ষেপে সেরে নিলেই তো হয়!”

আরও পড়ুন
ইন্দুভূষণের আত্মহত্যা এবং উল্লাসকরের উন্মাদগ্রস্ততা

প্রায় মাসখানেক পর ক্র্যাডক ফিরে গেলেন কিন্তু রাজবন্দিরা এই কিছুদিন আগে যে সমস্ত সুবিধা পেয়েছিলেন যা বোমা সংক্রান্ত রটনার পর কেড়ে নেওয়া হয়েছিল, তা আর ফিরিয়ে দেওয়া হল না। এবার বিপ্লবী রাজবন্দিরা তিনদফা দাবি পেশ করল জেল কর্তৃপক্ষের কাছে। এই দাবিগুলি হল – ১) রাজনৈতিক বন্দি হিসাবে তাঁদের প্রথম শ্রেণির বন্দির  মর্যাদা দিতে হবে; ২)  যদি তাঁদের সাধারণ বন্দি হিসাবেই দেখা হয় তাহলে সাধারণ বন্দিরা যে সমস্ত সু্যোগ সুবিধা পায়, যেমন তার মধ্যে একটা সাধারণ কয়েদিদের মাঝেমধ্যে বাইরে থেকে আসা আত্মীয়-পরিজনদের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়, সেই সুবিধা তাঁদের ক্ষেত্রেও চালু করতে হবে এবং ৩) তাঁদের সাজার বাকি সময় কাটাবার জন্য ভারতীয় জেলে বদলি করতে হবে যাতে সেখানে তাঁরা জেলের সমস্ত সুযোগ সুবিধা পান এবং তাঁদের ভালো ব্যবহারের জন্য সাজার মেয়াদ কম (রেমিশন) হয়।

জেল কর্তৃপক্ষ তাঁদের দাবিতে কর্ণপাত না করাতে মার্চ ১৯১৩-তে আবার একটা ধর্মঘটের প্রস্তুতি নেওয়া হল। এই ধর্মঘট শুরু হলে আবারও বিভিন্ন শাস্তি নেমে আসল রাজবন্দিদের ওপর। হাতকড়ি, পায়ে বেড়ি, শিকল, দাঁড়া হাতকড়ি থেকে খাবারের পরিমাণ কমিয়ে দেওয়া সব ধরনের খাঁড়া নেমে এল ধর্মঘটিদের ওপর। এতকিছুর পরেও ধর্মঘট চলতে থাকল। ননীগোপাল আবারও ভুখা হরতাল শুরু করলেন। প্রায় দেড় মাস এভাবে অনশন চালানোর পর আবার তাঁকে নাকের ভেতরে রবারের নল ঢুকিয়ে দুধ খাওয়ানো শুরু হল। ননীগোপালের চেহারা ভেঙে গিয়ে কঙ্কালে পরিণত হল। ননীগোপালকে দাঁড়া হাতকড়িতে বেঁধে এক সপ্তাহ ঝুলিয়ে রাখা হলেও তিনি নতি স্বীকার করলেন না। তাঁর অবর্ণনীয় যন্ত্রণার সাথী হতে চেয়ে এবার ছয়-সাতজন রাজবন্দিও অনশন ধর্মঘট শুরু করে দিলেন। সবার ওপরেই বিভিন্ন ধরনের শাস্তির খাঁড়া নেমে এল। ধীরে ধীরে অন্য সকলে অনশন করা থেকে বিরত হলেও ননীগোপাল আরো কিছুদিন তা চালিয়ে গেলেন। তাঁর শরীর তখন একেবারেই ভেঙে গেছে। পরে তাঁর বন্ধুবান্ধবরা বুঝিয়ে রাজি করিয়ে অবশেষে তাঁকে অনশন থেকে বিরত করল। ধর্মঘট চলতে থাকল। অবশেষে এপ্রিল ১৯১৪-তে ভারত সরকার এই রাজবন্দিদের সম্পর্কে একটা সিদ্ধান্তে এল। সেই সিদ্ধান্ত অবশ্য আন্দামানে এসে পৌঁছাল মে ১৯১৪-তে। ধর্মঘট তখনও চলছে।

আরও পড়ুন
সেলুলারে প্রথম হরতাল

ব্রিটিশ সরকারের নির্দেশে এবার জেল কর্তৃপক্ষ রাজনৈতিক বন্দিদের সঙ্গে সমঝোতায় এল এবং ধর্মঘট তুলে নেওয়া হল। জেল কর্তৃপক্ষ একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে জানাল –

    যে সমস্ত রাজনৈতিক বন্দিদের কয়েক বছরের সাজা হয়েছে, তাঁদের ভারতীয় জেলে বদলি করা হবে এবং সেখানে তাঁরা সাজার মেয়াদ কমানোর সুযোগ পাবেন।
    যে সমস্ত রাজনৈতিক বন্দিদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে, তাঁদের চোদ্দ বছরের জন্য বন্দিজীবন কাটাতে হবে এবং তার পরে তাদের হাল্কা কাজ করার স্বাধীনতা দেওয়া হবে। তবে তা নির্ভর করবে জেলে তাঁদের স্বভাব ও আচরণের ওপর।
    চোদ্দ বছর কারাজীবনে বন্দিদের সুখাদ্য ও ভালো পোশাকের জোগান দেওয়া হবে। জেলে পাঁচ বছর অতিবাহিত করলে তাঁদের নিজেদের রান্না করার সুবিধা দেওয়া হবে এবং মাসিক ভাতা বারো আনা থেকে বাড়িয়ে এক টাকা করা হবে।

আরও পড়ুন
যমরাজার কারাগারে

উপরোক্ত ঘোষণা ছাড়াও রাজনৈতিক বন্দিদের জন্য আরো কিছু সুবিধা দেবার কথা বলা হল। সেগুলি হল –

    রাজনৈতিক বন্দিরা যদি ভদ্র ব্যবহার করে তাহলে তাঁদের কঠোর সাজার হাত থেকে মুক্তি দেওয়া হবে।
    তেল পেষাইয়ের মতো কঠিন কাজ থেকে অব্যাহতি দিয়ে তাঁদের হাল্কা ধরনের কাজে নিযুক্ত করা হবে।
    সরকার অনুমোদিত বই তাঁদের পড়তে দেওয়া হবে।
    মাঝে মাঝে তাঁদের কাজ থেকে ছুটি দেওয়া হবে।
    সাধারণ কয়েদিদের মতো কিছু সুবিধা, যেমন পোশাক এবং চিঠি লেখা ও চিঠি পাওয়ার সুবিধা দেওয়া হবে।
    শাস্তি প্রদানের ক্ষেত্রেও সাধারণ কয়েদিদের মতো সুবিধা দেওয়া হবে, এক্ষত্রে চাবুক দিয়ে মারা বন্ধ করা হবে। এবং
    যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত বন্দিরা যদি ভালো ব্যবহার করেন তবে চোদ্দ বছর পর তাঁদের মুক্তি দেবার বিষয় ভাবা হবে।

ধর্মঘটিদের দাবি মেনে যাঁরা মেয়াদি সাজাপ্রাপ্ত, তাঁদের মূল ভূখণ্ডে, ভারতবর্ষের জেলে ফেরত পাঠানো শুরু হল। যে ‘মহারাজ’ জাহাজে করে রাজবন্দিরা ‘কালাপানি’ খাটতে এসেছিলেন, সেই জাহাজেই তাঁরা ফিরে চললেন  মাতৃভূমির উদ্দেশ্যে। ২৩ মে ১৯১৪ কলকাতার উদ্দেশ্যে এবং ১৮ জুন ও ১০ সেপ্টেম্বর, ১৯১৪ মাদ্রাজের উদ্দেশ্যে তিনদফায় সমস্ত মেয়াদি রাজবন্দিদের আন্দামান থেকে ফিরিয়ে নেওয়া হল দেশের বিভিন্ন জেলে। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বন্দিরা – আলিপুর বোমা মামলায় দণ্ডিত – বারীন্দ্র কুমার ঘোষ, হেমচন্দ্র দাস, উপেন্দ্রনাথ ব্যানার্জী, রাজেন্দ্রপুর ট্রেন ডাকাতির অপরাধে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত সুরেশ চন্দ্র সেন, ঢাকা ষড়যন্ত্র মামলার যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত পুলিনবিহারী দাশ এবং নাসিক ষড়যন্ত্র মামলার তিন যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত সাভারকার ভ্রাতৃদ্বয় এবং যোশী মুক্তি পেলেন না। তবে তাঁদের জন্য কিছু সু্যোগ-সুবিধা ঘোষণা করা হল। এঁরা এখন থেকে দলবদ্ধভাবে নিজেরা নিজেদের জন্য রান্না করে খেতে পারবেন আর এঁদের প্রেস, গ্রন্থাগার এবং মানচিত্র অঙ্কনের মতো হাল্কা কাজ দেওয়া হবে।

এই চোদ্দজন রাজবন্দিদের পোশাকেও পরিবর্তন এল। এঁরা এখন চিরাচরিত হাফপ্যান্ট, হাফস্লিভ কুর্তা ছেড়ে সাধারণ বাইরের কয়েদিদের মতো কাপড় ও পুরো হাতওয়ালা কুর্তা পরতে পারবেন এবং মাথায় কাপড়ের পাগড়ি জড়াতে পারবেন। শর্ত দেওয়া হল তাঁরা যদি ভালো ব্যবহার করেন, ধর্মঘট না করেন এবং জেল কর্তাদের সঙ্গে ঝগড়া না করেন তাহলে দশ বছর সাজা খাটার পর তাঁদের আরো কিছু সু্যোগ-সুবিধা দেওয়া হবে। 

বারীনকে প্রথমে বেতের কারখানার তত্ত্বাবধানের ভার দেওয়া হল, হেমচন্দ্রকে পুস্তকাগারের অধ্যক্ষ করা হল আর উপেন হলেন ঘানি ঘরের মোড়ল। কঠিন পরিশ্রমের হাত থেকে মুক্তি পেলেন তাঁরা। এখন তাঁরা নিজেদের জন্য রান্না করে নিতে পারেন। সকাল ১০টা থেকে ১২টার মধ্যে রান্না ও খাওয়া শেষ করে নেবার কথা,  কিন্তু ওই অল্প সময়ের মধ্যে সব কাজ সেরে নেওয়া অসম্ভব দেখে তাঁরা সাধারণ ভাণ্ডারা (পাকশালা) থেকে ভাত ও ডাল নিতেন, তরকারিটা নিজেদের মনোমত রেঁধে নিতেন। এর ফলে প্রতিদিন কচু-ঘেঁচুর তরকারি খাওয়া থেকে অব্যাহতি পেলেন। রাঁধবার জন্য জেল থেকে কিছু কিছু তরকারি নেওয়া হত, তবে তার মধ্যে চুবড়ি আলু আর কচুই প্রধান। কাজেই বাজার থেকে মাঝে মাঝে অন্য তরকারি আনিয়ে নেওয়া হত।  সরকারি নিয়মানুযায়ী মাসিক বেতন ছিল বারো আনা। এঁরা শারীরিকভাবে দুর্বল ছিলেন বলে জেলের কর্তৃপক্ষ প্রত্যেককে বারো আউন্স করে দুধ দিয়ে তার আংশিক মূল্য বাবদ আট আনা কেটে নিতেন। বাকি চার আনার ওপর নির্ভর করে সংসারযাত্রা নির্বাহ করতে হত। কিছুদিন পরে জেলের মধ্যে একটা ছাপাখানা স্থাপন করে বারীন্দ্রের ওপর তার তত্ত্বাবধানের ভার দেওয়া হল। সেই সময় সুপারিন্টেন্ডেন্ট সাহেব প্রত্যেককে মাসিক পাঁচ টাকা করে ভাতা দেবার জন্য চিফ কমিশনারের কাছে সুপারিশ করেন। পাঁচ টাকার নাম শুনে চিফ কমিশনার আঁতকে উঠলেন। কয়েদির মাসিক ভাতা পাঁচ টাকা!  আরে বাপু, তাহলে ইংরেজরাজ ফতুর হয়ে যাবে। অনেক লেখালেখির পর মাসিক এক টাকা বরাদ্দ হল।

বারীন, উপেন, হেমচন্দ্ররা এবার তাঁদের রান্নাঘরের পাশে একটা সবজি বাগান বানালেন। ‘ছোট পুদিনার ক্ষেত দেখা দিল; তাহার পর দুই-চারিটি লঙ্কা গাছ, এক-আধটা বেগুন গাছ ও কুমড়ো গাছও আসিয়া জুটিল।’ এসব ব্যাপার দেখে জেলার মাঝে মাঝে তাড়া করে আসতেন, কিন্তু সুপারিন্টেন্ডেন্টের মনের এক কোণে তাঁদের ওপর একটু দয়ার আবির্ভাব হয়েছিল। তিনি এ সমস্ত ব্যাপার দেখেও দেখতেন না। জেলারের প্রতিবাদের উত্তরে তিনি বললেন – “এরা যখন চুপচাপ করে আছে, তখন এদের আর পিছু লেগো না।” এরকম দয়া দেখানোর একটা কারণও ছিল।  জেল কর্তৃপক্ষের আটঘাট বন্ধ রাখার শত চেষ্টা সত্ত্বেও মাঝে মাঝে দেশের খবরের কাগজে তাঁদের কীর্তিকাহিনী প্রকাশ হয়ে পড়ত। তাতে তাঁদের মেজাজটা প্রথম প্রথম বিলক্ষণই উগ্র হয়ে উঠত কিন্তু শেষে অনেকবার ঠেকে ঠেকে তাঁরাও শিখেছিলেন যে রাজবন্দিদের বেশি ঘাঁটিয়ে লাভ নেই।

Powered by Froala Editor