প্রথম রেলপথের পরিকল্পনা করেছিলেন দ্বারকানাথ, আমরা কি মনে রেখেছি সেই কথা?

সালটা ১৮৪৩। যে সময়ের কথা বলা হচ্ছে, তখন কলকাতায় বাবু কালচার পুরোদমে শুরু হয়ে গেছে। বিলেত থেকে ফিরে এসে অন্যান্য অনেক অভিজাত পরিবারের মত স্বয়ং দ্বারকানাথ ঠাকুরও আসক্ত হয়ে পড়েছেন তাতে। বেলগাছিয়ার বাগানবাড়িতে রাতের পর রাত চলছে আমোদ-প্রমোদ, ফুর্তি। উঠছে মদের ফোয়ারা। ফলস্বরূপ ঈশ্বর গুপ্তের কটাক্ষের স্বীকার হতে হয়েছে তাঁকে। এমনকি, স্ত্রী দিগম্বরী দেবীর সঙ্গেও সম্পর্কের চূড়ান্ত অবনতি ঘটেছে এই কারণে।

রবীন্দ্র সরণি, যার আদি নাম চিৎপুর রোড, সেই রাস্তা ধরে কিছুদূর এগোলেই চোখে পড়বে দ্বারকানাথ ঠাকুরের গলি। ইতিহাসের পাতা ওল্টালে দেখা যাবে, এই গলির পাঁচ ও ছয় নম্বর বাড়ি ঊনবিংশ শতকে বাংলা তথা ভারতের সাহিত্য-সংস্কৃতির পীঠস্থান। তবে ঠাকুরবাড়ির সদস্যরা শুধুমাত্র গান কবিতা অর্থাৎ তথাকথিত সংস্কৃতি চর্চার মধ্যে নিজেদের আবদ্ধ রাখেননি। অন্তত ঠাকুরবাড়ির ইতিহাস কিন্তু সেই কথাই বলে। যে সময় ব্যবসা-বাণিজ্যের কথা শুনলেই বাঙালি দু-পা পিছিয়ে যেত, দ্বারকানাথ সেই সময়েই হাঁটলেন সম্পূর্ণ উল্টো পথে। তৎকালীন সময়ে দ্বারকানাথের জমিদারি বিস্তৃত হয়েছিল রাজশাহী, পাবনা পর্যন্ত। ইংরেজরা আমাদের প্রায় দেড়শো বছর ধরে পদানত করে রাখলেও, বাঙালির আধুনিকতা উন্মীলনের পথ প্রশস্ত হয় ইংরেজদের হাত ধরেই। দ্বারকানাথ এবার ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু করলেন সেই ইংরেজদের সঙ্গেই।

শোনা যায়, তাঁর ব্যবসার পরিধি এতটায় বিস্তৃত হয়েছিল যে, শহর এবং শহরতলি অঞ্চলেও তাঁর রীতিমতো প্রভাব পড়েছিল। বদল এসেছিল অঞ্চলগুলির অর্থনৈতিক কাঠামোতে।এমনকি তৎকালীন সময়ে মেডিক্যাল কলেজ হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠা এবং ভারত - ইংল্যান্ডের মধ্যে জাহাজ চলাচলেও তিনি যথেষ্ট পরিমাণে আর্থিক সাহায্য করেছিলেন।এর থেকেই বোঝা যায়, দ্বারকানাথের ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিধি কীভাবে বাড়ছিল।

১৮৪৫ সালে দ্বারকানাথ দ্বিতীয়বারের জন্য বিদেশ যাত্রা করলেন। মূল উদ্দেশ্য ছিল বায়ু পরিবর্তন। সমুদ্রযাত্রার মাঝে মিশরের পাশা মহম্মদের অতিথি হলেন দ্বারকানাথ। সেখানেই পরিকল্পনা হয় লোহিত সাগরের উপকূল থেকে ভূমধ্যসাগরের উপকূল পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের। যদিও দ্বারকানাথের অকালমৃত্যুর জন্য এই পরিকল্পনা কখনোই বাস্তবায়িত হয়নি।

আরও পড়ুন
ভারতের প্রথম ডাকঘর মেদিনীপুরের খেজুরিতে, সংরক্ষণের অভাবে ধুঁকছে সেই ইতিহাস

ঠাকুরবাড়ি বাংলার সাহিত্য-সংস্কৃতির ইতিহাসে সর্বদায় স্মরণীয় নাম।কিন্তু পাশাপাশি এও বাংলা ও বাঙালির ইতিহাসে এক ভিন্নতর নবজাগরণ। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ অবনীন্দ্রনাথের পাশাপাশি দ্বারকানাথের এই কীর্তিকে আজকের বাঙালি মনে রেখেছে কতটুকু?

আরও পড়ুন
হাবড়ার করোনা-জয়ী তরুণীর প্লাজমা দান, ইতিহাস তৈরি কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে

ঋণ - ঠাকুরবাড়ির জানা অজানা – সুমিতেন্দ্রনাথ ঠাকুর

আরও পড়ুন
২০৫ বছরের ইতিহাসের সাক্ষী, ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত কলকাতার সেন্ট অ্যান্ড্রু'জ চার্চের অংশ

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি পেল প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ ভ্যালিডিক্টোরিয়ান-কে, তৈরি হল ইতিহাস

More From Author See More