করোনা কেড়ে নিল প্রাণ, প্রয়াত ইতিহাসবিদ হরিশংকর বাসুদেবন

সরকারি পাঠ্যপুস্তকে ইতিহাস-বিকৃতির আর সমালোচনা করেন না হরিশংকর বাসুদেবন। তাঁর উদ্ধার করা কার্টুন একদিন পাঠ্যপুস্তক থেকে বাদ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। এমনকি মোদী সরকারের নানা শিক্ষানীতির সমালোচনাও করেছেন তিনি। তিনি চাইতেন সরকারের হস্তক্ষেপ ছাড়া নিরপেক্ষভাবে ইতিহাস শিখবে পড়ুয়ারা। সেই মানুষটিই আর নেই। করোনা ভাইরাস তাঁর জীবন কেড়ে নিয়েছে।

করোনা ভাইরাস প্রতিদিন অসংখ্য প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে। ভাইরাসের আক্রমণ থেকে বাদ যাচ্ছেন না বিভিন্ন জগতের কিংবদন্তি মানুষরাও। আর এই মারণ ভাইরাসের আক্রমণেই পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেন প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ হরিশংকর বাসুদেবন। সল্টলেকের সিডি ব্লকের বাসিন্দা এই ইতিহাসবিদ মে মাসের শুরুতেই জ্বরে আক্রান্ত হন। তাঁকে ভর্তি করা হয় বিধাননগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে। ৪ তারিখ পরীক্ষায় দেখা যায় তাঁর শরীরে করোনা ভাইরাস বাসা বেঁধেছে। আর তারপরেই শুরু হয় শ্বাসকষ্ট। অবশেষে শনিবার রাতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
মৃত্যুকালে হরিশংকর বাবুর বয়স হয়েছিল ৬৮ বছর। সলটলেকের বাড়িতে তিনি থাকতেন তাঁর স্ত্রী তপতী গুহ ঠাকুরতার সঙ্গে। তিনিও একজন স্বনামধন্য ইতিহাসবিদ। এই দুই ইতিহাসবিদের সংসারে এবার নেমে এল এক শূন্যতা।

হরিশংকরবাবুর শিক্ষালাভ অধিকাংশটাই বিদেশে। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ও তারপর পিএইচডির পর অবশেষে তিনি দেশে ফিরে আসেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার পাশাপাশি দেশের ও দেশের বাইরের নানা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত থেকেছেন তিনি। দিল্লির জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, লন্ডনের কিংস কলেজ, আমেরিকার কর্নেল ইউনিভার্সিটি এবং ইউক্রেনের কিভ ইউনিভার্সিটির সঙ্গে ছিল তাঁর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ। সেইসঙ্গে দেশের নানা সরকারি কমিটির সদস্যপদ অলংকৃত করেছেন তিনি। ২০০৫ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ সময় এনসিইআরটির সিলেবাস কমিটিতে ছিলেন তিনি।

শের ইতিহাস গবেষণার জগতে হরিশংকরবাবু একজন পথিকৃৎ। তাঁর হাত ধরে ইন্দো-রাশিয়ান সম্পর্কের বিষয়ে নানা গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা করেছে দেশের ইতিহাস গবেষণা সংস্থা। তাঁর লেখা বই, 'ইন দ্য ফুটস্টেপস অব আফানাসি নিকিটিন’ এবং ‘শ্যাডোস অব সাবস্ট্যান্স, ইন্দো রাশিয়ান ট্রেড অ্যান্ড মিলিটারি টেকনিক্যাল কর্পোরেশন’ ইতিহাসের এক অমূল্য সম্পদ। তাঁর মৃত্যুতে তাই শোকস্তব্ধ দেশের ঐতিহাসিকরা। শোকপ্রকাশ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ও।

Latest News See More