দুধের বদলে গরম জল খেয়ে অনুশীলন, অর্থাভাবের সঙ্গে লড়াই জাতীয় স্বর্ণজয়ীর

মাত্র কয়েক মাস আগের কথা। জাতীয় মিটে ২০০ মিটার স্প্রিন্টে সোনা এনেছিলেন তিনি। জায়গা করে নিয়েছিলেন সংবাদমাধ্যমের শিরোনামে। কিন্তু তারপর ক’জনই বা খোঁজ রেখেছেন তাঁর? সরকারের পক্ষ থেকে কতটুকু সুযোগ-সুবিধাই বা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে তাঁর কাছে? লোকেশ কুমার (Lokesh Kumar)। অর্থাভাবে এক কথায় অস্তিত্বের সঙ্গে সংগ্রাম করে চলেছেন জাতীয় স্বর্ণজয়ী স্প্রিন্টার (Sprinter)।

আঠারো বছর বয়সী লোকেশের জন্ম রাজধানী দিল্লিতে। ছোটো থেকেই বেড়ে ওঠা চরম দারিদ্রের মধ্যে। বাবা রিকশাচলক। যাত্রী মিললে তবে অর্থ আসে ঘরে। যাত্রী না পাওয়া গেলে দিনের শেষে তাঁকে ফিরতে হয় খালি হাতেই। সামান্য যেটুকু উপার্জন হয়, তা দিয়ে দিল্লির মতো শহরে তিন-তিনটে পেট চালাতে রীতিমতো নাভিশ্বাস ওঠে। ফলে, বাধ্য হয়ে পরিচারিকার কাজ করতে হয় তাঁর মাকে। আয় প্রতি মাসে মাত্র আড়াই হাজার টাকা হলেও, পরিবারের একমাত্র স্থায়ী উপার্জনের পথ সেটাই। গত এপ্রিলে কোভিডের তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ার পর বন্ধ হয়ে গিয়েছিল উপার্জনের সেই পথটুকুও। বিগত ছ’মাস কেটেছে সঞ্চয় ভাঙিয়েই। জমেছে ধার-দেনাও। কিন্তু সেই অর্থে কোনোরকম আর্থিক সাহায্য পাননি লোকেশ।


বাড়ির এই আর্থিক পরিস্থিতি প্রভাব ফেলছে তাঁর ক্রীড়াচর্চাতেও। পেশাদার খেলোয়াড় হতে গেলে যে ডায়েটের প্রয়োজন হয়, তার সিকিভাগও জোটে না লোকেশের কপালে। সেই সামর্থ্যই বা কোথায়? কোনো কোনোদিন সকালে অনুশীলনে যাওয়ার সময় দানাপানিও পড়ে না পেটে। কোচ ব্যক্তিগত উদ্যোগে যেটুকু ড্রাইফুট সরবরাহ করেন, ওইটুকুই। অনুশীলনের জন্য যাতায়াতের খরচও তো রয়েছে। তাই অর্থ বাঁচাতে দুধের বদলে গরম জলই সম্বল জাতীয় চ্যাম্পিয়নের। 

আরও পড়ুন
উপার্জনের দায়ে অটো চালাচ্ছেন জাতীয় স্তরের বক্সিং চ্যাম্পিয়ন

কিন্তু এভাবে কতদিন? শরীরই বা কতদিন সায় দেবে খাওয়াদাওয়ার অনিয়মকে? খেলার মাঠে প্রভূত সম্ভাবনা জাগিয়েও যেন ক্রমশ অন্ধকারের মধ্যেই ডুবে যাচ্ছেন লোকেশ। সম্প্রতি নীরজ চোপড়া টোকিও অলিম্পিকে স্বর্ণপদক আনার পর সাড়া পড়ে গিয়েছিল গোটা ভারতজুড়ে। উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছিল গোটা দেশের নাগরিকরা। সেই সাফল্যের উদযাপন করছি তো ঠিকই, কিন্তু তরুণ তারকাদের জন্য কি সেই পথ তৈরি করে দিতে পারছি আমরা? এই প্রশ্নই যেন ঘুরে ফিরে আসে বার বার। 

আরও পড়ুন
আর্থিক সংকটের মুখে স্কুলেই চাষাবাদ তামিলনাড়ুর শিক্ষকদের

অবশ্য এই গল্প শুধু লোকেশের নয়। লোকেশের মতোই বহু তরুণ তারকা স্রেফ অর্থাভাবেই হারিয়ে গেছেন খেলার মাঠ থেকে। নীরজের মতো কেউ কেউ ব্যক্তিগত দক্ষতায় প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে উঠলেও, সামগ্রিকভাবে দেশের ক্রীড়া পরিকাঠামো যে এখনও দুর্বল— তা বলার অপেক্ষা থাকে না। এই উদীয়মান প্রতিভাদের জন্য সরকার সামান্য উদ্যোগ নিলেও হয়তো বদলে যাবে আগামীদিনের ছবি। দীর্ঘ হবে অলিম্পিকের মতো প্রতিযোগিতায় পদকের তালিকা। কিন্তু সেই সুদিন আসবে কবে? উত্তর জানা নেই…

Powered by Froala Editor

More From Author See More

Latest News See More