নির্বিচারে কাটা হচ্ছে পাহাড়, বিপন্ন ঝাড়খণ্ডের সৌরিয়া পাহাড়িয়া উপজাতি

পাহাড়কে ঘিরেই তাঁদের জীবন চলে। উপজাতির নামটিও যেন সেই কথাটাই মনে করিয়ে দেয়। ঝাড়খণ্ডের (Jharkhand) রাজমহল (Rajmahal) পাহাড়ের গায়েই বসবাস সৌরিয়া পাহাড়িয়া উপজাতির (Shaurya Tribe)। সংরক্ষণের নিয়ম অনুযায়ী তাঁদের উন্নতির জন্য নানারকম প্রকল্পও নেওয়া হয়েছে। কিন্তু যখন পাহাড়ই বিপন্ন, তখন সেখানকার মানুষরাই বা নিরাপদ থাকেন কী করে? তাই রীতিমতো আতঙ্কেই দিন কাটাচ্ছেন ভূমিপুত্ররা।

জঙ্গলের মধ্যে প্রায় সকলেরই কাঁচা বাড়ি। আর তার অদূরেই দিনরাত চলছে পাহাড় কাটার কাজ। কখনো কখনো মাত্র ১ কিলোমিটার কিংবা ৫০০ মিটার দূরত্বে চলছে পাথর খোদাই। কানের কাছে ডিনামাইট ফাটার অসহ্য শব্দ তো রয়েছেই, এমনকি পাথরের টুকরোও ছিটকে এসে পড়ছে গ্রামের মধ্যে। একটু একটু করে দূষণের চাদরে ঢেকে যাচ্ছে চারদিক। এই অবস্থায় ছোটি পাচরুখি, আজমোরি প্রভৃতি গ্রামের মানুষদের বেঁচে থাকাই কঠিন হয়ে উঠছে। অনেকের বাড়িতেই বিদ্যুৎ নেই। কখনও বিদ্যুতের প্রয়োজনও হয়নি। কিন্তু দূষণের কবলে পড়ে বদলে যাচ্ছে আবহাওয়াও। নির্বিচারে পাহাড় কেটে ফেলায় নদীর গতিপথ বদলে যাচ্ছে। এখন আর পানীয় জলটুকুও পাওয়া যায় না সহজে।

অনিয়ন্ত্রিত পাথর খোদাইয়ের ফলে শুধু যে মানুষের বসবাস বিঘ্নিত হচ্ছে, তাই নয়। হারিয়ে যাচ্ছে ইতিহাসের সম্পদও। ভারতের সবচেয়ে প্রাচীন দুই পাহাড় আরাবল্লী এবং রাজমহল। ভূতাত্ত্বিকদের অনুমান, রাজমহল পাহাড়ের বয়স ৬৮ মিলিয়ন থেকে ১১৮ মিলিয়ন বছর পর্যন্ত হতে পারে। স্বাভাবিকভাবেই তার পাথরের ভাঁজে লুকিয়ে আছে অসংখ্য প্রাচীন জীবাশ্ম। অথচ দীর্ঘদিন সেইসব জীবাশ্ম সংরক্ষণের কোনো উদ্যোগই নেওয়া হয়নি। কয়েক বছর হল এএসআই-এর পক্ষ থেকে রাজমহল পাহাড়ের জীবাশ্ম সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু নির্বিচার খননের পর আর কতটুকুই বা উদ্ধার করা সম্ভব হবে?

রাজমহল পাহাড়ে মোট খনি এবং খাদানের সংখ্যা কত, তাও অস্পষ্ট। যেখানে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের নথিতে সংখ্যাটা ১৫০-এর বেশি নয়, সেখানে করবিভাগের খাতায় দেখা যাচ্ছে সংখ্যাটা অন্তত ৪০০। এর মধ্যে বেশ কিছু খাদান খাতায়-কলমে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে রয়েছে। তবে সেখানেও বে-আইনিভাবে খননকার্য চলছেই। এমনকি ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইবুনালও বারবার উদ্যোগ নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হয়েছে। মানুষের সীমাহীন লোভ এভাবেই প্রকৃতিকে বিপন্ন করে চলেছে, বিপন্ন হচ্ছেন অন্য এক অংশের মানুষও।

আরও পড়ুন
ভারত থেকে বিলুপ্তির পথে আরও একটি উপজাতি সম্প্রদায়

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
ঠোঁট ফুঁড়ে বসানো মাটির চাকতিই ‘অলংকার’ এই উপজাতি সম্প্রদায়ের!

More From Author See More