করোনা প্রতিরোধে নিজস্ব প্রশাসনিক ব্যবস্থা, নজির গড়ছে হিমাচলের উপজাতি সম্প্রদায়

দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা যেমন বাড়ছে, তেমনই প্রশ্ন উঠছে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে। ইতিমধ্যেই বহু রাজ্যে আংশিক লকডাউন শুরু হয়ে গিয়েছে। তবে সেইসমস্ত নিয়ম কতটা গুরুত্ব দিয়ে পালন করা হচ্ছে, তা নিয়েও বিতর্ক থেকে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে হিমাচলপ্রদেশের কাজা মহকুমার স্থানীয় উপজাতি সম্প্রদায়ের মানুষদের নিজস্ব উদ্যোগ এক বিরল দৃষ্টান্ত তৈরি করে। অতিমারীর মোকাবিলা করতে গ্রামবাসীরা নিজেরাই তৈরি করেছেন নিজেদের প্রশাসনিক ব্যবস্থা। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, স্যানিটাইজেশন, এমনকি কোয়ারেন্টাইন পদ্ধতি সবই চলছে নিজস্ব নিয়মে। আর এই অভিনব উদ্যোগের কারণেই সারা দেশের থেকে এখনও কাজা মহকুমার দৃশ্যটা অনেকটাই আলাদা। সংক্রমণ সেখানে প্রায় দাঁত ফোটাতে পারেনি।

কয়েক মাস আগেই হিমাচলের স্থানীয় সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রামলাল মার্কণ্ড রাজ্য পরিদর্শনে যান। কিন্তু কাজা মহকুমায় পা রাখার আগেই তাঁকে ফিরে আসতে হয়। কারণ এখানে গ্রামবাসীদের কড়া নিয়ম, বাইরে থেকে যেই আসুক তাকে আগে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন পিরিয়ড কাটাতে হবে। তার জন্য কোয়ারেন্টাইন হাউসের ব্যবস্থাও করেছেন গ্রামবাসীরাই। আর এই নিয়ম সকলের জন্যই সমানভাবে প্রযোজ্য। তাই কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকেও সেখানে ঢুকতে গেলে এই নিয়ম মেনেই যেতে হবে। এই ঘটনার পরেই কাজা মহকুমার কথা ছড়িয়ে পড়ে। শুধুই বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইন ব্যবস্থা নয়, রাজ্যের মধ্যে প্রথম বৃহৎ স্তরে স্যানিটাইজেশন প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছিল এই কাজা মহকুমা থেকেই। এমনকি প্রত্যেক গ্রামবাসীর জন্য আছে ১৪ দিন পরপর র্যা পিড টেস্টের ব্যবস্থাও।

হিমাচল প্রদেশের স্পিতি ভ্যালির নিকটবর্তী এই অঞ্চলের অর্থনীতি প্রায় পুরোটাই নির্ভর করে পর্যটনশিল্পের ওপর। তবে বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইন ব্যবস্থার কারণে প্রায় কোনো পর্যটকই সেখানে প্রবেশ করছেন না। রাজ্যের অন্যান্য প্রান্তের সঙ্গেও যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন। শুধু নির্মাণশিল্পের প্রয়োজনে কিছু শ্রমিক আসছেন বিহার, ঝাড়খণ্ড বা নেপাল থেকে। তাঁদের জন্যও রয়েছে একই ব্যবস্থা। এর জন্য মজুরি বেশি লাগলেও সেটুকু মানিয়ে নিতে রাজি গ্রামবাসীরা। কিন্তু একের পর এক মানুষের অসহায় মৃত্যু তাঁরা মেনে নিতে পারবেন না। ইতিমধ্যে এই অভিনব ব্যবস্থায় যে সাফল্য মিলেছে, তাও স্পষ্ট। এখনও অবধি গোটা মহকুমায় মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৬৫১। এর মধ্যে ৬১১ জনই সুস্থ হয়ে উঠেছেন। কোভিডে মৃত্যু হয়েছে মাত্র ৩ জনের। সরকার বা প্রশাসনের অপেক্ষায় না থেকে সাধারণ মানুষ যে নিজেরাই নিজেদের নিরাপত্তার দায়িত্ব তুলে নিতে পারেন, সেই কথাই প্রমাণ করছেন কাজা মহকুমার গ্রামবাসীরা।

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
করোনার ভারতীয় স্ট্রেন ‘গ্লোবাল কনসার্ন’, উল্লেখ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-র