করোনার ভারতীয় স্ট্রেন ‘গ্লোবাল কনসার্ন’, উল্লেখ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-র

অতিমারীর দ্বিতীয় তরঙ্গে বিপর্যস্ত ভারত। তবে এর প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছে দেশের বাইরেও। করোনা ভাইরাসের মিউট্যান্ট প্রজাতি বি-১.৬১৭-র সন্ধান প্রথম পাওয়া গিয়েছিল ভারতেই। এর মধ্যেই তা আন্তর্জাতিক স্তরে চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানাচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সোমবার সাংবাদিক সম্মেলনে সংস্থার কর্তারা এই নতুন প্রজাতিটিকে ‘গ্লোবাল কনসার্ন’ বলে উল্লেখ করেছেন। ফলে ভারতে দ্বিতীয় তরঙ্গের গ্রাফ নিম্নমুখী হলেও বিশ্বজুড়ে আশঙ্কা বাড়ছেই।

একই ভাইরাসের মধ্যে কোনো কোনো প্রজাতিকে ‘গ্লোবাল কনসার্ন’ হিসাবে চিহ্নিত করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এই চিহ্নিতকরণের কিছু মাপকাঠি আছে। বাকি প্রজাতিগুলির থেকে এর ভয়াবহতা কোনো একটি কারণে বেশি হতে হবে। হয় তার সংক্রমণের ক্ষমতা বাকিদের থেকে বেশি হতে হবে। এছাড়াও যদি এই প্রজাতিটি রোগীর অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটায় বা এর বিরুদ্ধে অনাক্রম্যতার হার যদি কম হয়, সেক্ষেত্রেও ‘গ্লোবাল কনসার্ন’-এর তকমা দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে চিকিৎসকদের মতে, অন্যান্য প্রজাতির থেকে বি-১.৬১৭ প্রজাতিটির সংক্রমণের হার অনেকটাই বেশি। ভারতের ক্ষেত্রেই তার প্রাথমিক প্রমাণ মিলেছে। তবে শুধুই ভারত নয়, ইতিমধ্যে পৃথিবীর আরও ৩০টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে এই নতুন মিউট্যান্ট স্ট্রেন।

ভারতের প্রতিবেশী দেশ নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপে যেমন ছড়িয়ে পড়েছে বি-১.৬১৭ স্ট্রেন, তেমনই ইন্দোনেশিয়া বা উত্তর কোরিয়াতেও ছড়িয়ে পড়েছে এই ভাইরাস। প্রতিটা দেশেই সংক্রমণের হার অত্যন্ত বেশি। যে ইন্দোনেশিয়া সাফল্যের সঙ্গে প্রথম তরঙ্গ মোকাবিলা করে আন্তর্জাতিক স্তরে প্রশংসা পেয়েছিল, দ্বিতীয় তরঙ্গ মোকাবিলায় প্রায় ব্যর্থ সে-দেশের প্রশাসনও। এর আগে ইংল্যান্ড, ব্রাজিল এবং দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে পাওয়া মিউট্যান্ট স্ট্রেনগুলিকেও ‘গ্লোবাল কনসার্ন’-এর স্বীকৃতি দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। তবে তা মূলত অনাক্রম্যতার হার কম হওয়ার কারণেই। ভারতের  স্ট্রেনটির ক্ষেত্রেও অনাক্রম্যতা কম বলেই আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকরা। তবে তার প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি। কিন্তু এর সংক্রমণের হার বাকি মিউট্যান্ট প্রজাতিগুলির চেয়েও বেশি।

ভারতে জনসংখ্যার ঘনত্ব অন্যান্য দেশের চেয়ে অনেক বেশি। তাছাড়া এদেশে ভ্যাকসিনেশন প্রক্রিয়াও চলছে যথেষ্ট ধীর গতিতে। এখনও পর্যন্ত ৩ শতাংশেরও কম ভারতীয় ভ্যাকসিনের দুটি ডোজ পেয়েছেন। দ্বিতীয় তরঙ্গে ভারতের শোচনীয় অবস্থার কারণ হিসাবে এই বিষয়গুলি উঠে এসেছে আগেই। কোনো যুক্তিকেই উড়িয়ে দিচ্ছে না বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। তবে তার চেয়েও বড়ো কারণ ভারতীয় মিউট্যান্ট প্রজাতির দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার ক্ষমতা। এদেশে দৈনিক সংক্রমণের হার ছিল প্রতি লক্ষে ২০ জন। অন্যান্য যে সমস্ত দেশে এই স্ট্রেন ছড়িয়ে পড়েছে, সেখানেও সংখ্যাটা প্রতি লক্ষে ১৫ জনের কম নয়। আর নেপালের সংক্রমণের হার ইতিমধ্যে প্রতি লক্ষে ২০ ছুঁতে চলেছে। সব মিলিয়ে এর ভয়াবহতা অনেকটাই বেশি। দেরিতে হলেও তা মোকাবিলার রাস্তা খুঁজছেন চিকিৎসকরা। এখন দেখার বিষয়, কত দ্রুত সমাধানসূত্র খুঁজে পাওয়া যায়।

আরও পড়ুন
প্রয়াত নেতাজির সহযোদ্ধা লালতি রাম, করোনা কেড়ে নিল আইএনএ সেনাধ্যক্ষকেও

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
সীমান্ত ছেড়ে, করোনা মোকাবিলায় এবার সামিল সামরিক চিকিৎসকরাও

More From Author See More