রক্তনালিতে 'বিষ' ছড়ায় করোনার স্পাইক প্রোটিন!

মূলত ফুসফুসেই হানা দেয় করোনাভাইরাস - এমন ধারণার ওপর ভিত্তি করেই এতদিন চিকিৎসা চলত কোভিডের। তবে কোভিড কোনো শ্বাসরোগ নয়, জানাল সাম্প্রতিক গবেষণা। সল্ক ইনস্টিটিউট অফ বায়োলজিক্যাল স্টাডির গবেষকরা এবার প্রমাণ দিলেন, কোভিড আসলে ভাস্কুলার ডিজিজ। শ্বাসযন্ত্রের পাশাপাশি রক্তনালি এবং মানুষের দেহ কোষেও ভয়ঙ্করভাবে প্রভাব বিস্তার করে করোনাভাইরাস। আর তার ঘাতক হাতিয়ার হল স্পাইক প্রোটিন।

গত ৩০ এপ্রিল সার্কুলেশন রিসার্চ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে এই গবেষণাপত্র। গবেষণাটিতে সল্ক-অধ্যাপকদের সঙ্গে জড়িত ছিলেন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরাও। গবেষণার মূল লক্ষ্য ছিল, কোভিডের কারণে শ্বাসযন্ত্রের পাশাপাশি আনুষঙ্গিক শারীরিক জটিলতার কারণ অনুসন্ধান। আর সেই কারণ খুঁজতে গিয়েই ধরা পড়ে স্পাইক প্রোটিনের ঘাতক চরিত্র। 

সাধারণত, অন্য যে কোনো ভাইরাস বাহক বা জিনের প্রতিস্থাপনের মাধ্যমেই ক্ষতিসাধন করে মানবদেহে। যেমন করোনাভাইরাস এক্ষেত্রে ব্যবহার করে তার আরএনএ-কে। তবে করোনার ক্ষেত্রে আরএনএ-র পাশাপাশি পৃথকভাবে ‘বিষক্রিয়া’ করে থাকে তার স্পাইক প্রোটিনও। যা মূলত আক্রান্ত করে রক্তনালিকে। ধমনী এবং শিরার এন্ডোথেলিয়াল কোষে ভয়ঙ্কর প্রভাব ফেলতে পারে স্পাইক প্রোটিন। এমনকি মাইটোকন্ড্রিয়ার আণবিক গঠনকেও স্পাইক প্রোটিন ভেঙে ফেলে পুরোপুরি। যার ফলে মৃত্যু হতে থাকে দেহকোষের। গবেষণার প্রধান অধ্যাপক উরি মনরো জানাচ্ছেন, কোভিডের কারণে অনেক সময় স্ট্রোক কিংবা একাধিক অঙ্গের ব্যর্থতার জন্য দায়ী এই ঘটনাই। সেই কারণেই কোভিডকে ‘ভাস্কুলার ডিজিজ’ হিসাবেই চিহ্নিত করছেন তাঁরা।

গত বছরের মাঝামাঝি সময় থেকেই প্রথম সারির গবেষকরা করোনার এই ঘাতক চরিত্রটির ব্যাপারে সন্দেহ করেছিলেন। তবে খাতায়-কলমে প্রমাণ মেলেনি কোনো। এবার সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীরা গবেষণাগারে বিস্তারিত পরীক্ষার মাধ্যমেই নিশ্চিত করলেন বিষয়টি। দিয়েছেন যথাযথ ব্যাখ্যাও। বিষয়টির পর্যাবেক্ষণের জন্য একটি সিউডোভাইরাসের উপরে আসল করোনাভাইরাসের স্পাইক প্রোটিন প্রতিস্থাপন করেছিলেন তাঁরা। অর্থাৎ, কৃত্রিম এই ভাইরাসের মধ্যে কোনো রোগবাহী জিনের অস্তিত্ব ছিল না। তারপর তা পরীক্ষাগারে প্রয়োগ করা হয় প্রাণীদেহে। কিন্তু জিনের অনুপস্থিতি সত্ত্বেও প্রাণীদেহের ফুসফুস এবং ধমনীতে ক্ষতি করে সিউডোভাইরাসটি। ক্ষতিগ্রস্ত কলার নমুনা পরীক্ষা করে গবেষকরা নিশ্চিত হন, এর জন্য দায়ী করোনার স্পাইক প্রোটিনই। 

এতদিন পর্যন্ত সঠিক ধারণা না থাকায়, স্বাস্থ্যক্ষেত্রে এড়িয়ে যাওয়া হত এই বিষয়টিকে। তবে যথাযথ প্রমাণ পাওয়ার পর এবার দ্রুত বদল আসবে চিকিৎসা পদ্ধতিতেও, জানাচ্ছেন গবেষকরা। স্পাইক প্রোটিনের সংক্রমণকে কীভাবে আটকানো যায়, সে-ব্যাপারে শুরু হয়েছে গবেষণা। সল্ক ও ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি প্রতিষেধকের অনুসন্ধানে নেমেছেন চিনের জিয়াং জিয়াটং বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরাও। সেই খোঁজ মিললে আগামীদিনে অনেকটাই আয়ত্তে আসবে মৃত্যুর হার, আশাবাদী গবেষকরা…

Powered by Froala Editor

More From Author See More

Latest News See More