টাকার অভাবে রাত কেটেছে বাসট্যান্ডেও, সেদিনের কিশোর আজ স্বর্ণপদকজয়ী বিজ্ঞানী

প্রতাপ এন এম, ভারতের ড্রোন বিজ্ঞানী নামে পরিচিত। বানিয়েছেন ৬০০-র উপর উন্নত প্রযুক্তির ড্রোন। জাপান, জার্মানি সহ নানা দেশ থেকে পেয়েছেন স্বীকৃতি। তবে কর্নাটকের প্রত্যন্ত গ্রামের ছেলে প্রতাপের বিজ্ঞানী হয়ে ওঠার যাত্রাপথ সহজ ছিল না। কৃষক পরিবারের ছেলে প্রতাপ বড়ো হয়ে জমিজমার দেখাশুনা করবে, এই ছিল পরিবারের ইচ্ছে। সেই ইচ্ছের তাগিদে অনেক ছোট থেকেই চাষের ক্ষেতে যেতে হত প্রতাপকে। আর সেখানে বসে যখন আকাশে চিল উড়তে দেখত, তখন কৈশোরের মন কল্পনায় ভেসে যেত আকাশে।

তারপর একদিন টিভিতে ড্রোন উড়তে দেখল সে। কিন্তু ড্রোন বানানোর কারিগরি সে শিখবে কোথায়? না আছে তার স্মার্টফোন, না আছে ইন্টারনেট। বাবা-মাকে না বলে সে কাজ নিল স্থানীয় একটি সাইবার ক্যাফেতে। প্রতিদিন ঘর ঝাড়ু দেওয়ার বিনিময়ে ৪৫ মিনিটের জন্য ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পেত প্রতাপ। এইভাবে ধীরে ধীরে ড্রোন তৈরির কৌশল তো সে শিখল, কিন্তু যন্ত্রপাতি জোগাড় করবে কোথায়? ইলেকট্রিক মিস্ত্রিদের ফেলে দেওয়া যন্ত্রপাতি জোগাড় করে কাজ শুরু করে প্রতাপ। এর মধ্যেই স্নাতক স্তরের পড়াশুনোর জন্য চলে যায় মহীশূর। সেখানে একটি কোচিং ক্লাসে পড়ানো শুরু করে। আর সেখান থেকে উপার্জিত টাকা দিয়ে কিনতে থাকে ড্রোন তৈরির সরঞ্জাম। ঘর ভাড়া দিতে না পারায় রাত কাটাতে হয় বাসস্ট্যান্ডে। কিন্তু হাল ছাড়েনি প্রতাপ।

প্রতাপের উৎসাহ দেখে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন কলেজের অধ্যাপক নব্যশ্রী বি। ধীরে ধীরে নিজের আবিষ্কারকে উন্নত করতে থাকে প্রতাপ। জাতীয় স্তরের নানা প্রদর্শনীতে অংশ নেয়। আর এইভাবেই একদিন সুযোগ আসে জাপানে 'ইন্টারন্যাশনাল রোবোটিক এগজিবিশন'এ অংশ নেওয়ার। তখন ২০১৭ সাল। প্রতাপের বয়স মাত্র ১৮। মায়ের সোনার গয়না বিক্রি করে বিমানের টিকিট কাটে প্রতাপ। সেই তার প্রথম বিদেশযাত্রা। সেখানে প্রতাপের সঙ্গেই এসেছে বিশ্বের ১২০টা দেশের প্রতিনিধি। তাদের আদব কায়দা, সাবলীল ইংরেজি দেখে নিজেকে তুচ্ছ মনে হয় প্রতাপের। তবুও হাল ছাড়ে না। ২০ দফায় সবিস্তারে নিজের তৈরি ড্রোনের প্রযুক্তি দেখায় সে। আর সেখানেই স্বর্ণপদক জয় করে নেয় প্রতাপ। তারপর জার্মানির অ্যালবার্ট আইনস্টাইন ড্রোন প্রদর্শনীতেও পায় স্বর্ণপদক।

তারপর দুবছরে ৮৪টি দেশ ঘুরেছে প্রতাপ। কীভাবে প্রতিকূল পরিবেশে ড্রোন ব্যবহার করা যায়, সে-বিষয়ে বক্তৃতা দিয়েছে। সম্প্রতি কর্ণাটকের দক্ষিণভাগে বন্যার সময় পুলিশ কর্তৃপক্ষকে ত্রাণের কাজে সহায়তা করে প্রতাপের ড্রোন। বিভিন্ন দেশ থেকে প্রাপ্ত পুরস্কারের টাকায় ব্যাঙ্গালুরুতে সে তৈরি করেছে একটি অ্যারোস্পেস গবেষণা কেন্দ্র। সেখানেই সে এখন গবেষণা করছে।

একসময় যেসব আত্মীয়-প্রতিবেশীরা প্রতাপের বিজ্ঞানী হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে হাসিঠাট্টা করত, তারাই এখন সাধুবাদ জানায়। আর এই সময় প্রতাপের মনে পড়ে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এ পি জে আব্দুল কালামের কথা। তার কথা ভেবেই প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও স্বপ্ন দেখার সাহস দেখিয়েছে প্রতাপ।