ঈর্ষাক্ষাৎকার: স্বপনকুমার ঠাকুর — দ্বিতীয় পর্ব

স্বপনকুমার ঠাকুরের জন্ম ১৯৬৫ সালে, পূর্ব-বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোট থানার বুঁইচি গ্রামে। পেশায় স্কুলশিক্ষক। কৌলাল অনলাইন ও কৌলাল পত্রিকার সম্পাদক। রাঢ়বঙ্গের আঞ্চলিক ইতিহাস ও লোকসংস্কৃতি নিয়ে নিয়মিত লেখালিখি করেন। রয়েছে একাধিক উল্লেখযোগ্য বই। বর্তমান কথোপকথনটি আবর্তিত হয়েছে তাঁর সম্পাদিত ‘বঙ্গে রামপূজা ও রামায়ণ সংস্কৃতি’ বইটিকে(প্রকাশসাল ২০২২) কেন্দ্র করে। কথোপকথনে স্বপনকুমারের সঙ্গী তন্ময় ভট্টাচার্য। আজ দ্বিতীয় ও শেষ পর্ব...

(প্রথম পর্বের পর)

তন্ময়— আমার একটা পর্যবেক্ষণের কথা বলি। কয়েকদিন আগে চন্দ্রকোণায় গিয়েছিলাম ক্ষেত্রসমীক্ষায়। সেখানে একটা জায়গা আছে, নাম ‘অযোধ্যা’। অযোধ্যার পাশ দিয়ে একটা খাল বয়ে গেছে, এককালে নদী ছিল। সেই নদীটার নামও সরযূ। স্থানীয় মানুষরাই নাম দিয়েছেন। আর, সেই অযোধ্যায় আছে রঘুনাথগড় ঠাকুরবাড়ি। যেখানে আজ থেকে ৬০ বছর আগেও রঘুনাথজীউ-এর রথযাত্রা হত এবং আশির দশক পর্যন্ত ওখানে তাঁর মূর্তিও ছিল। বিশাল দেউলাকৃতির মন্দির। এখন ভগ্নপ্রায়।

এখন, এই যে বাংলার মানুষজন বঙ্গ-সংস্কৃতির সঙ্গে রামের সম্পর্ক ক্ষীণ—এই নিয়ে তর্ক তোলেন, এখানে কি কোথাও ‘বঙ্গ-সংস্কৃতি’ বিষয়টা কলকাতা কেন্দ্রিক হয়ে যায়?

স্বপনকুমার ঠাকুর— একদম। যাঁরা বেসিক সংস্কৃতির চর্চা করেন, তাঁদের বক্তব্য অন্য হবেই। আমি আর্টিফিসিয়াল সংস্কৃতির কথা বলছি না, বাংলার কোর সংস্কৃতি যেটাকে বলা হয়— বাংলার কোর সংস্কৃতি কোনটা? এখন এটা নিয়েও কথা উঠবে। বাংলার কোর সংস্কৃতি হচ্ছে লোকসংস্কৃতি। এটাই হচ্ছে বেস। কারণ, শুধু ভারতবর্ষ নয়, গ্রামে গাঁথা পশ্চিমবঙ্গ। তাহলে আমাকে দেখতে হবে এর ভূমিটা কোথায়, গ্রাউন্ড লেভেলটা কোথায়। কে এই বঙ্গ-সংস্কৃতিকে ধরে রেখে দিয়েছে। আমরা যারা লেখাপড়া শিখে, তথাকথিত চাকরিবাকরি করি, তারা কিন্তু বঙ্গ-সংস্কৃতির একটা কৃষ্টিজাত রূপ ব্যবহার করি। সেটা অনেকক্ষেত্রে ব্যক্তিগত, অনেকক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ, পালিশ করা সামাজিক সংস্কৃতি। কিন্তু যাঁরা গ্রামের মানুষ, যাঁরা সেই হেরিডিটিটাকে, হেরিটেজটাকে ধরে রেখে দিয়েছেন শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে। সেটা কোর সংস্কৃতি নয় তো কোনটা কোর সংস্কৃতি? মুশকিল হচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গে যাঁরা তথাকথিত বুদ্ধিজীবী, তাঁরা মনে করেন, সেই সংস্কৃতিটা—মাটির সঙ্গে তাঁদের কোনো যোগ নেই বলে, তাঁরা ফিল্ড করেন না বলে তাঁদের একটা ভ্রান্তি হয়—এই ভ্রান্তিজনিত কারণে তাঁরা যে-মতগুলো গ্রহণ করেন, সেগুলো কিন্তু তাঁদের মতো করে এবং অনেক বেশি উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলেই আমার মনে হয়েছে।

আরও পড়ুন - ঈর্ষাক্ষাৎকার: অলোক সরকার — প্রথম পর্ব

তন্ময়— রাম বাঙালির কাছে বন্ধুসম হয়ে উঠেছেন—যদিও সব দেবদেবীই বাঙালির কাছে তেমনটা হয়ে উঠেছেন, রামও বাদ যাননি—কখনো ইয়ার্কিতে, ছড়ায়, এমনকি রায়বার পালা লেখা হয়েছে, রামায়ণের বাইরে ছোটো ছোটো পাঁচালিও লেখা হয়েছে, মানুষজন সন্ধেবেলা কথকঠাকুরের কাছে রামায়ণের পালা, রামায়ণ পাচালি শুনতেন। কিন্তু এই ব্যক্তিগত এবং ক্ষুদ্র সামাজিক চর্চার বাইরে রামচন্দ্র বাংলায় সর্বজনীন দেবতা হয়ে উঠতে পারেননি, আমরা কি এই দাবি করতে পারি? মানে অন্তরে হয়তো সেঁধিয়ে গেছেন, কিন্তু বৃহত্তর বহিঃপ্রকাশটা ঘটেনি!

স্বপনকুমার ঠাকুর— এটা নিয়ে বলতে গেলে, একটু অন্যরকমভাবে আমাকে বলতে হবে। আমাদের রাম-ভাবনাটা বহু প্রাচীনকাল থেকে আমাদের বাঙালিরা যে গ্রহণ করেছে, সে-বিষয়ে কোনো সন্দেহই নেই। কারণ আমি যদি মেয়েদের ব্রতকথা দেখি, সেখানে দশপুতুল ব্রতে শুধু রামায়ণটার কথাই বলা হচ্ছে— আমার রামের মতো বর চাই, লক্ষ্মণের মতো দেবর চাই ইত্যাদি ইত্যাদি। তাহলে মেয়েদের ব্রতকথার মধ্যে রাম ঢুকছেন, আমাদের সামাজিক ভাষার ক্ষেত্রে, বাগধারার ক্ষেত্রে, ভালো-মন্দ সবকিছুর মধ্যেই… যেমন, জগন্নাথ আমাদের তো খুব প্রিয় হয়েছেন। চৈতন্যদেবের হাত ধরে জগন্নাথ প্রিয়তর হয়ে উঠেছেন। সেই কারণে আমরা জগা-খিচুড়িও বলি, জগা বলে নামও দিই, ঠুঁটো-জগন্নাথ বলে ব্যঙ্গও করি। এটা থেকে প্রমাণিত হয়, আমাদের সম্পর্কের আধার অনেক বেশি। দুটো ক্ষেত্র ধরলে, তুলনা করলে বোঝা যাবে। এক—রামায়ণ এপিক, মহাভারতও এপিক। কিন্তু আপনি যদি গ্রামের মানুষের কাছে গিয়ে একটা সমীক্ষা করেন, তাহলে দেখবেন, সে মহাভারতের কাহিনি যত-না জানে, রামচন্দ্রের কাহিনি লোকগল্প, তার থেকে বেশি জানে।


তন্ময়— তার কারণ, রামের মধ্যে সে নিজেকে বেশি খুঁজে পায়। রামের পরিবারের মধ্যে নিজেদের ছায়া দ্যাখে।

স্বপনকুমার ঠাকুর— একদম। ওই যে, যে-কথাটি বলেছি। কেন রবীন্দ্রনাথ এত বড়ো মাপের লোক? তিনি তো ধরেছেন। তিনি একদম ভেতরটাকে গিয়ে ধরেছেন। একদম ঘরের কথাকে স্পর্শ করেছেন।


তন্ময়— এ-জন্যই বললাম, রাম রক্তের মধ্যে হয়তো সেঁধিয়ে গেছেন, কিন্তু তার বহিঃপ্রকাশটা ঘটেনি।

স্বপনকুমার ঠাকুর— এবার আমি আসি, রামচন্দ্র কেন দেবতা হল না বা প্রধান দেবতা হল না, সেই প্রসঙ্গে। কেন আমাদের অন্যতমভাবে রামভজনা এল না? কারণ, আমাদের যে টিউনিংটা এসেছিল রামচন্দ্রের, সেটা কিন্তু ভক্তিবাদের টিউনিং। এটা হচ্ছে বাঙালি ঘরানা…

আরও পড়ুন - ঈর্ষাক্ষাৎকার: অলোক সরকার — দ্বিতীয় পর্ব

তন্ময়— এখান থেকেই পরের প্রশ্নটা করি। আমার মনে হয়, তার উত্তরটাও পরবর্তী কথার সঙ্গে মিলে যেতে পারে। আমাদের উত্তর ভারতে তথাকথিত যে গো-বলয়, সেখানে যে রামভজনা বা রাম-উপাসনা, তার সঙ্গে বাংলার রাম-উপাসনা—এই দুইয়ের মধ্যে ফারাকটা আপনি কীভাবে দেখেন?

স্বপনকুমার ঠাকুর— এটাই বলতে চাইছি আমি। এই যে পতিতপাবন রামচন্দ্র, নবদূর্বাদলশ্যাম, তিনি প্রজাদের জন্যই করেন—এটা তো কৃত্তিবাস তৈরি করে দিয়েছিলেন। কৃত্তিবাসই তো বাঙালির এই ঘরানাটাকে সেট আপ করেছিলেন যুগের প্রয়োজনে। তিনি দেখেছিলেন, বাঙালি একটা আবেগধর্মী জাত। এই আবেগটা সাহিত্য, ভক্তি, গান—এগুলোর মধ্যে দিয়েই। রামায়ণকে তো আমরা গানই বলি। এই জিনিসটা তিনি করে দিয়ে গেছিলেন। এবার আমি যেটা বললাম, হয়তো রামচন্দ্র আর কৃষ্ণ— কৃষ্ণও তো কম যোদ্ধা নন। তিনিও কিন্তু শঙ্খ-চক্র-গদা-পদ্মধারী। এখন ব্যাপার হচ্ছে, একটু পরের দিকে দেখুন, দ্বিভুজ কৃষ্ণ। বাঁশি বাজাচ্ছেন। কোনোরকম অস্ত্র বা আয়ুধও তাঁর নেই। কৃষ্ণের এই মূর্তিই বাংলায় বেশি জনপ্রিয় হয়েছে, বিশেষ করে চৈতন্য-পরবর্তীতে সময় থেকে। রামচন্দ্রের মধ্যে তো সেটা দেখা যায় না। রামচন্দ্রের হাতে তির-ধনুক না দেওয়া হলে মহাকাব্যকে অপমান করা হয়। রামকে অপমান করা হয়। কারণ রামের হাতে তির-ধনুক থাকবে, এটাই তাঁর আয়ুধ। এমন একটা কৃষ্ণকে পেয়ে গেলাম, যার হাতে শুধু বাঁশি, কদমতলায় দাঁড়িয়ে আছেন—রাধা তো প্রথমে ছিলেন না, পরে ঢুকলেন। আর শ্রীকৃষ্ণের দ্বিতীয় যে রূপটা, সেটা পরকীয়াবাদের ওপর প্রতিষ্ঠিত হল বাংলায়। তাহলে এই দুটো যখন পেয়েই গেল, রামচন্দ্রকে আর নেওয়ার দরকার ছিল না তার।


তন্ময়— ঠিক। কিন্তু তারপরেও বাংলায় যতটুকু রামচন্দ্র এসেছেন—

স্বপনকুমার ঠাকুর— এসেছেন না বলে টিকে আছেন বলাই ভালো। কারণ অত বড়ো দুটো ধর্ম— বৌদ্ধ ধর্ম এবং জৈন ধর্ম যদি একেবারে লোপ পেয়ে যায়, সেখানে রামচন্দ্র এখনও টিকে আছেন, ক’টা মূর্তির পুজো হচ্ছে, কটা রথযাত্রা হচ্ছে— এটাই যথেষ্ট।


তন্ময়— তাহলে বাংলার ভক্তিবাদ এবং বাঙালির নিজস্ব মানসিকতা, বাংলার জল-হাওয়া—এইসব কারণেই গো-বলয়ের যে উগ্র-ক্ষত্রিয় রাম, তিনি বাংলায় এসে বন্ধুবৎসল হয়ে গেলেন?

স্বপনকুমার ঠাকুর— শুধু বন্ধুবৎসলই নয়, ধ্যানমগ্ন ঋষির মতো হয়ে গেলন। কারণ আমরা গুপ্তিপাড়ার যে মূর্তি দেখছি, শান্তিপুরের—তিনি তো ধ্যানমগ্ন! রামরাজাতলায় রাম বাঙালি, গোঁফওয়ালা। রামভক্তিবাদটাকে যদি কেউ আত্মসাৎ করে থাকেন, সেটা শ্রীচৈতন্যদেব করেছেন। রাম ও কৃষ্ণ—দুটোকেই আত্মসাৎ করেছেন। বৌদ্ধধর্মের মানুষরা যেমন ঢুকেছেন, তেমন জৈনরাও ঢুকেছেন। তা না-হলে, এত বড়ো দুটো ধর্ম, একেবারে মহাপ্লাবন, কী-করে সেগুলোর শেষ ভগ্নাংশ লোপ পেল? এত তাড়াতাড়ি র্যা পিড বিবর্তন হয়ে গেল? এটা একদিনে হয়নি। মূলত ওই টিউনগুলো একজায়গায় পেয়েছিল বলে করেছে।

আরও পড়ুন - ঈর্ষাক্ষাৎকার: বিশ্বজিৎ রায় — প্রথম পর্ব

তন্ময়— আমরা অনেকসময়ই দাবি করি যে, সংস্কৃতির দিক থেকে, মেধার দিক থেকে, চিন্তাভাবনার দিক থেকে বাকি ভারতের তুলনায় বাঙালি খানিকটা আলাদা। রাম যেখানে বর্তমান সময়ে রাজনীতির অস্ত্র হয়ে উঠছে, বাংলায় সেই রাম-রাজনীতি তেমন প্রভাব ফেলতে পারল না সে-কারণেই? বাঙালি রামকে উগ্র চোখে দেখে অভ্যস্ত নয় বলে?

স্বপনকুমার ঠাকুর— রাজনীতিটা যে কী, পশ্চিমবাংলার একটা উদাহরণ দিলেই বোঝা যাবে। একসময়, এই ১০-১২ বছর আগেও দেখেছি মমতাকে সবাই ব্যঙ্গ করত। সমাজের যাঁরা উচ্চাঙ্গের লোক তাঁরাও বলতেন ‘পাগলি’, অমুক-তমুক— তখন বুদ্ধদেববাবুর জমানা চলছে। সেই মমতাই এখন কলকাতার ব্র্যান্ড হয়ে গিয়েছেন। তাঁর কথা-বার্তা, তাঁকে নিয়েই সবকিছু। সুতরাং এটাই রাজনীতি। রাজনীতির সঙ্গে সংস্কৃতির কোনো যোগ আছে বলে আমি মনে করি না। রাজনীতি রাজনীতির পথেই হাঁটবে। রাজনীতিটা কারা কীভাবে করবে, সেটা তাঁদের ব্যাপার। কিন্তু রাজনীতিকরণ দিয়ে দেখলে আমার মনে হয়, এটা ভুল ভাবা হবে। বরং এটা বলা যেতে পারে, বাঙালি সর্বভারতীয় স্তরকে সবসময় গ্রহণ করেছে। কিন্তু অনেকটা পরীক্ষানিরীক্ষা করার পর নিজের মতো করে গ্রহণ করেছে।


তন্ময়— আচ্ছা, এই প্রশ্নটাই একটু অন্যভাবে করি। গত ১০ বছরে হঠাৎ রামচর্চার বা রামবন্দনার যে প্রাবল্য বাংলায় দেখা দিয়েছে, তার সঙ্গে বাংলার রামভজনার যে ইতিহাস, তার যোগসূত্র কতটুকু?

স্বপনকুমার ঠাকুর— আমি কোনোরকম যোগসূত্র খুঁজে পাইনি। গ্রাম-বাংলার সঙ্গে তার কোনো যোগ নেই। আজকে পশ্চিমবাংলায় রাতারাতি একেকটা বজরঙ্গবলীর মন্দির তৈরি হচ্ছে—এগুলোর সঙ্গে সংস্কৃতির কোনো যোগ নেই। আমার মনে হয়েছে, বাংলার মূল সাংস্কৃতিক ধারার রাজনীতিকরণ হচ্ছে। এগুলো আর কিছুই নয়।

আরও পড়ুন - ঈর্ষাক্ষাৎকার: বিশ্বজিৎ রায় — দ্বিতীয় পর্ব

তন্ময়— তার মানে কি বর্তমানের রাম বাংলার ঐতিহ্য থেকে বিচ্যুত, খানিকটা আরোপিত?

স্বপনকুমার ঠাকুর— হ্যাঁ, আরোপিত রাম। আর আমি তো কলকাতা শহরের অতকিছু চিনি না। ওইদিকে কী হচ্ছে, না-হচ্ছে আমি বলতে পারব না। কিন্তু গ্রাম লেভেলে আমি দেখেছি, রামচন্দ্রের নতুন করে মূর্তি তৈরি করা বা ওই বজরঙ্গবলীর মন্দিরের সঙ্গে বঙ্গসংস্কৃতির যোগ নেই। আর তাও কোথায় তৈরি হচ্ছে সেগুলো? যে-জায়গাগুলো মফস্সল ঘেঁষা, সেখানে। মূল গ্রামের মধ্যে কিন্তু এসবের কোনো প্রশ্রয় নেই।


তন্ময়— হনুমানকে বাংলার থেকে বিচ্যুত বলা চলে না। কারণ আপনি ধর্মমঙ্গলের কথা বললেন। তাছাড়াও অন্যান্য মঙ্গলকাব্য হনুমানের বীরত্ব, হনুমান বন্দনা ইত্যাদি। বাঙালি যেমন হনুমানকে নিয়ে ঠাট্টা করেছে, তেমনি তীব্র পুজো-আচ্চা না করলেও একটা ভক্তিভাব ছিলই, রামচন্দ্রের ভক্ত এবং বীর হিসাবে। বাঙালির সেই হনুমান-বন্দনা বা হনুমান-পুজোর ইতিহাসটা যদি সংক্ষেপে একটু বলেন।

স্বপনকুমার ঠাকুর— প্রথমে বুঝতে হবে এই হনুমান ব্যাপারটা কী। হনুমানটা এসেছে আমাদের পবনের সূত্রে। গ্রামীণ জনজীবনে আমি দেখেছি, কালবৈশাখীর ঝড় যখন ওঠে—গ্রামে অধিকাংশই তো মাটির বাড়ি—সেখানে ‘পবনপুত্র হনুমান তুমি বসো, বসো, বসো’ বলে একটি পিঁড়ি পেতে দেওয়া হয়। হনুমানের প্রতীক হিসাবে ঝড় তাহলে স্তিমিত হবে। এরকম একটা লোকবিশ্বাস রয়েছে। তারপর, হনুমানের আলাদা করে পুজো দেখেছি বর্ধমান জেলায়। সেখানে কিন্তু নরসিংহের রূপে পুজো হয় হনুমানের। মানে মুখটা হনুমানের কিন্তু বাকি শরীরটা মানুষের। এই নর-হনুমানের প্রতীক আমরা দেখেছি। তিন, অধিকাংশ গাঙ্গেয় এলাকায়, গ্রামে-গ্রামে প্রচুর হনুমান থাকে। সেখানে কিন্তু কেউ হনুমানকে আঘাত বা ক্ষতি সচরাচর করে না, সে যদি ফলও খায়, তাহলেও কিন্তু হাসিমুখে তাদের উপদ্রব মেনে নেয় মানুষ। তা যদি না হত। তাহলে কিন্তু এই প্রজাতিটা সবথেকে বেশি বিপন্ন হত। হনুমানের প্রতি যদি একটা দুর্বলতা না-থাকত ওই রামায়ণের সূত্র ধরে, পবনপুত্রের সূত্র ধরে…

আরও পড়ুন - ঈর্ষাক্ষাৎকার: সুপ্রিয় চৌধুরী — প্রথম পর্ব

তন্ময়— হনুমানের সঙ্গে মানুষ কি কোথাও একাত্ম বোধ করে? কারণ হনুমান রামের সবচেয়ে বড়ো ভক্ত এবং আমিও রামভক্ত…

স্বপনকুমার ঠাকুর— না, এইরকম আমি দেখিনি। তবে এটা দেখেছি যে, কোনো হনুমান যদি গ্রামে—আশির দশকে যখন ইলেকট্রিফিকেশন হতে থাকল গ্রামে—তখন হনুমানগুলো তো ওই পরিবেশের সঙ্গে ঠিক মিলছিল না, যার জন্য অনেকেই তড়িতাহত হয়ে মারা যেত। সেজন্য হনুমানকে একেবারে মানুষের মতো খাটিয়া বেঁধে হরিনাম সংকীর্তন করতে করতে নিয়ে গিয়ে সৎকার করা হত। এখান থেকে আপনি ধরতে পারেন, কোথাও একটা তার নিজস্ব এপের—মানে মানুষ এবং হনুমানের পরিবারের প্রতি—কোথাও যেন একটা অবচেতন মনে মানুষ তাদের প্রজাতিরই একটা অংশ বলে মনে করে। এটা আমি দেখেছি। আজও দেখি।


তন্ময়— তাহলে বঙ্গজীবনে হনুমান থেকে বজরঙ্গবলী এবং হনুমান চালিশার দিকে বেঁকে যাওয়া—এটা বাংলায় কীভাবে হল? গ্রামবাংলায় কী এই দৃশ্য দেখা যায়?

স্বপনকুমার ঠাকুর— না, গ্রামবাংলায় আমি বিশেষ কাউকে দেখিনি হনুমান চালিশা পড়েন। তবে হ্যাঁ, পড়ে। কোন ছেলেটা বা কোন মেয়েটা পড়ে? যে উত্তরপ্রদেশ বা ওই অঞ্চলে সোনা বা রুপোর দোকানে কাজ করে। সে বাড়ি এসেছে। সে হনুমান চালিশা পড়ার জন্য বলছে। সে বজরঙ্গবলীর ভক্ত হয়েছে। কিন্তু গ্রামীণ মানসিকতায়, গ্রামীণ সংস্কৃতির সঙ্গে হনুমান চালিশার প্রভাব আমি কখনো দেখিনি। প্রায় ৩০ বছরের অধিক হয়ে গেল, আজ পর্যন্ত আমার চোখে সেরকম উদাহরণ কোনো ঠেকেনি। কিন্তু ওই যে বললাম, যে-ছেলেটা জয়পুরে কাজ করে বা উত্তরপ্রদেশে কোনো একটা জায়গায় কাজ করে, বাড়িতে এসেছে সে, বলছে হনুমান চালিশা পড়ো, তাহলে এই হবে, ওই হবে। আর এখন তো মিডিয়ার যুগ। এখন তো সবারই হাতে ফোন। ফলে, দু-একটা জায়গায় হচ্ছে। কিন্তু মেইনস্ট্রিমের সঙ্গে, ওই যে বললাম কোর সিভিলাইজেশন, গ্রামীণ সংস্কৃতির সঙ্গে এর কোনো যোগ আমি দেখতে পাইনি।

আরও পড়ুন - ঈর্ষাক্ষাৎকার: সুপ্রিয় চৌধুরী — দ্বিতীয় পর্ব

তন্ময়— তাহলে কি আমরা বলতে পারি যে, বাংলার সেই হনুমান বা হনুমন্তের বজরঙ্গবলীর দিকে বাঁক নেওয়া—এটা পুরোটাই একটা বহিরাগত সংস্কৃতির সূত্রে?

স্বপনকুমার ঠাকুর— বহিরাগত এবং পুরোটাই নাগরিক প্রভাব বলেই মনে হচ্ছে। এবং আরও বেশি রাজনীতির প্রভাবযুক্ত এটা। সংস্কৃতি তো একটা নদীর মতো। সে তো সবসময় বয়ে চলবে। তার পরিবর্তন, পরিমার্জন, পরিবর্ধন, সংকোচন, বিয়োজন, বর্ধন সবসময় হচ্ছে। তবে মূল স্রোতটার দিকে আমাকে খেয়াল রাখতে হবে। মূল স্রোতটা কোনোদিকে বাঁক নিচ্ছে কিনা। নদীর মূল স্রোতটা কোনদিকে বা কোথা থেকে বয়ে আসছে— সেদিকে নজর দিতে হবে। এ-ধরনের সংস্কৃতি তো বহু বিবর্তিত হয়েছে। বহু সংস্কৃতি যুগে যুগে আসছে, পরিবর্তিত হচ্ছে। তবে মূল স্রোতের সঙ্গে এর কোনো যোগ আছে বলে অন্ততপক্ষে আমার কোনো পর্যবেক্ষণে ধরা পড়েনি।


তন্ময়— আপনার এই দীর্ঘ অভিজ্ঞতা এবং সমাজের এই পাল্টে যাওয়া—এই দিকটা নিয়ে আপনার কী মত? আমরা যেমন দেখি আজকাল শহর, মফস্সল, টাউন ইত্যাদিতে আর কিছু না-হলেও একটা ঝাঁ-চকচকে মন্দির বানিয়ে, একটা কমলা পাথরের বজরঙ্গবলীর মূর্তি বসিয়ে দেওয়া—এই যে একটা সংস্কৃতি নাগরিক অঞ্চলের আশেপাশে আবর্তিত হচ্ছে— সেটা কি ক্রমে গ্রামবাংলার দিকেও ধেয়ে যাবে অদূর ভবিষ্যতে?

স্বপনকুমার ঠাকুর— আমরা দেখতে পাচ্ছি, অনেক জায়গাতে গ্রামেও কিন্তু এখন একটা মন্দির তৈরির করার হিড়িক এসেছে। ঠিক যেমন মসজিদ তৈরি করারও হিড়িক এসেছে। গ্রামের অর্থনীতিটা অনেক বেশি পরিবর্তিত হয়েছে।


তন্ময়— এই নতুন মন্দিরগুলো কোন দেব-দেবীর?

স্বপনকুমার ঠাকুর— আমি সেটাই বলছি। প্রথম যেটা দেখার দরকার, সেটা হল গ্রামে কোন মন্দির তৈরি হয়েছে? সমষ্টিগতভাবে বারোয়ারি মন্দির। সেখানে ৮ লাখ, ১০ লাখ, ১৫ লাখ টাকা দিয়ে সমষ্টিগতভাবে যে মন্দিরগুলো তৈরি হচ্ছে বিভিন্নজনের থেকে চাঁদা নিয়ে, সেখানে কিন্তু গ্রাম্য দেবদেবীরাই জায়গা পাচ্ছেন। এই যেমন, গতবছর আমি একটি মন্দির উদ্বোধন করে এলাম, সেটা প্রায় ১৪ লক্ষ টাকা খরচা করে তৈরি করা হয়েছে। সেটার নাম হচ্ছে মালিহা চণ্ডী। অর্থাৎ চণ্ডী-নামাঙ্কিত গ্রাম।

আরও পড়ুন - ঈর্ষাক্ষাৎকার: কানাইপদ রায় — প্রথম পর্ব

তন্ময়— কোথায় এই গ্রামটা?

স্বপনকুমার ঠাকুর— এটা কেতুগ্রাম থানায়। তো তাদের একটা মাটির মন্দির ছিল। কিন্তু গ্রামে অর্থনৈতিক উন্নতি হওয়ার জন্য, এবং যেহেতু চারিদিক থেকে মন্দির তৈরি হচ্ছে, ফলে… কোথাও গ্রাম্যদেবী কালীর মন্দির, কোথাও আবার শিবের মন্দির। এক-একটা শিবের মন্দির হয়েছে ২৫ লাখ, ৩০ লাখ টাকা খরচ করে। মুর্শিদাবাদের এক গ্রামে গত সপ্তাহে গিয়েছিলাম, সেখানে যা কাঠের কাজ দেখে এলাম! অসাধারণ সব কাঠের কাজ করিয়েছে সেগুন কাঠ দিয়ে। ওই গ্রামেরই সব সেগুনগাছ কিনে নিয়ে এসেছে, সেগুলো দিয়েই শিল্পীকে দিয়ে করিয়েছে। এগুলো হচ্ছে। তো পুরনো যে মন্দিরগুলো ছিল, সেগুলোই… সে-জন্যই বলছি এখান থেকে বাঁকছে না, পরিবর্তন হচ্ছে না। এখন দেখা গেল, গ্রামের মধ্যে কোনো উড়তি ধনী ব্যক্তি হয়তো গ্রামের বাইরে কাজ করেন, তিনি যদি মন্দির করেন, তিনি তখন আলটপকা মন্দির করছেন। হয়তো একটা বজরঙ্গবলীর মন্দির করলেন, কিংবা হয়তো সাঁইবাবার মন্দির করলেন। তিনি যাঁর ভক্ত, তাঁর একটা মন্দির তৈরি করলেন। তার সঙ্গে গ্রামীণ ওই মূলস্রোতের কোনো মিল দেখিনি।


তন্ময়— পরের প্রশ্নটা আপনার বইটির বিষয় সম্পর্কে। লোকসংস্কৃতি নিয়ে আপনার দীর্ঘদিনের কাজ। আপনি নিজে একাধিক মৌলিক বইও লিখেছেন। আমাদের এই কথোপকথনে উঠে এল, আপনার নিজেরও বাংলার রামভজনা এবং রামপূজা নিয়ে দীর্ঘ ক্ষেত্রসমীক্ষা আছে। এই বইটি আপনি নিজে না-লিখে সম্পাদনার দিকে ঝুঁকলেন কেন

স্বপনকুমার ঠাকুর— আমি চাইছিলাম আমি গোটা ফিল্ড করে যাই। কারণ এটা গোটাটা একটা অকর্ষিত এলাকা। এইটা নিয়ে তেমন আমার চোখে তেমন ফিল্ডভিত্তিক কাজ ধরা পড়েনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফ থেকে যে-সমস্ত গতানুগতিক চর্বিতচর্বণ যে-সমস্ত পত্রপত্রিকা অধ্যাপকেরা লেখেন, তাঁদের গণ্ডি দেখি ওই সব কৃত্তিবাসী রামায়ণ আর মূল রামায়ণ— এটুকুই। তার বাইরে আর দেখি না। আমি ইচ্ছে করলে কাজটা নিজেই করতে পারতাম। কারণ আমার হাতে আরও প্রচুর তথ্য রয়েছে। ইচ্ছে আছে, পরে ওটার একটা সম্প্রসারিত অংশ নিজস্বভাবে লিখব। আপাতত দেখলাম আমার একার পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়, বিভিন্ন জেলায় বিষয়গুলো কীভাবে আছে। দরকার ছিল উপযুক্ত ক্ষেত্রসমীক্ষকদের তুলে নিয়ে আসা। কারণ তাঁদের দিয়ে যদি কাজটা আমি করাতে পারি, তাহলে আমার মনে হয়, এটা একটা বড়ো কাজ হবে এবং ভবিষ্যতের গবেষকদের কাছে একটা বার্তা যাবে—ক্ষেত্রসমীক্ষার যে কাজ প্রকৃতপক্ষে সেটা কালেক্টিভ ওয়ার্ক।


তন্ময়— এবার আমার শেষ প্রশ্ন। সার্বিকভাবে আপনার তিন দশকের রাম এবং রামায়ণচর্চা— তার পাশাপাশি এই কাজটা সম্পাদনা করতে গিয়ে, একজন বাঙালি প্রতিনিধি হিসাবে রামকে আপনি কীভাবে আবিষ্কার করেছেন?

স্বপনকুমার ঠাকুর— আমাদের যে পারিবারিক ঐতিহ্য, সেখানে দেখতাম, আমার বাড়িতে আমার দাদু পড়তেন, আমার দাদু পণ্ডিতমশাই ছিলেন, তিনি রামায়ণ পড়তেন, মহাভারত পড়তেন। আমার দিদিমা—তিনিও পড়তেন। ফলে, এই ক্লাসিক দুটোর প্রতি আমার আলাদা একটা টান তৈরি হয়। সেখানে রামচন্দ্রের গল্প, রামচন্দ্রের চরিত্র, সীতার চরিত্র, লক্ষ্মণের চরিত্র—এগুলো ছোটো থেকে যেমন পড়েছি, তেমন ভেতর থেকে তৈরি হয়েছে। রামচন্দ্রের মাটিয়ারির মেলায় গিয়েছি, সেখানে ছোটো দেখেই চর্যা দেখেছি। ফলে, বিভিন্ন মিশ্রণে করে আমার মনের মধ্যে রামচন্দ্র সম্পর্কে একটা ছবি তৈরি হয়। এবং যেহেতু আমি সাহিত্যের ছাত্র ছিলাম, মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্য ছিল আমার স্পেশাল পেপার, সেখানেও দেখেছি মুকুন্দ রামবন্দনা করছেন, ঘনরাম চক্রবর্তী-রূপরাম চক্রবর্তী রামবন্দনা করছেন। ফলে, তখন মনে হয়েছে, জিনিসটা ভুল নয়, যেটা ব্যাখ্যা করা হচ্ছে সেটা ভুল নয়, কারণ মধ্যযুগীয় সাহিত্যিকরা সবাই গ্রামের সন্তান ছিলেন।

আরও পড়ুন - ঈর্ষাক্ষাৎকার: কানাইপদ রায় — দ্বিতীয় পর্ব

তন্ময়— আপনার যৌবন মানে, অযোধ্যার রাম-মন্দির সংক্রান্ত বিতর্ক তখন তুঙ্গে। রাম অন্যরকমভাবে তখন আলোচনায়…

স্বপনকুমার ঠাকুর— অবশ্যই। ফলে, সেইসময় মনেও হয়েছে… কিন্তু রাজনীতি তো সব যুগেই আছে। কাকে নিয়ে যে কখন রাজনীতি হবে, তা বলা মুশকিল। এখন যেমন রামচন্দ্রকে নিয়ে হচ্ছে, অতীতে হয়তো বুদ্ধদেবকে নিয়েও হয়েছে। আগে হয়তো জৈন কোনো তীর্থঙ্করকে নিয়ে হয়েছে। তো আমরা যতই যা বলি না কেন, রাজনীতির বাইরে তো কেউ-ই নই আমরা। আমরা তো সমাজের মধ্যেকার লোক। সুতরাং তার একটা ঢেউ বা প্রভাব সবসময় অল্পবিস্তর মানুষকে প্রভাবিত করবেই, সমাজজীবনকে আন্দোলিত করবেই। কিন্তু ব্যক্তিগত সূত্রে রামযাত্রা, কেষ্টযাত্রা, রামায়ণ গান—ছোটো থেকে শুরু আসছি। আরেকটা যেটা বলার উচিত ছিল আগেই—রামযাত্রা, রামায়ণ গানের সঙ্গেই আমাদের গ্রামীণ বলয়ে একসময়ে বহুরূপী দেখানোর রেওয়াজ ছিল। আমরা যখন খুব ছোটো, তখন আমাদের গ্রাম থেকে পনেরো কিলোমিটার দূরে একটা গ্রামে শুধু বহুরূপীদেরই বাস ছিল। তো তারা আমাদের গ্রামে চলে আসত। সাজ-পোশাক পরে সাতদিন ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন চরিত্র ফুটিয়ে তুলত। তার মধ্যে একটি চরিত্র অবশ্যই থাকত। সেটা হচ্ছে বীর হনুমান। এই যে বীরের কনসেপশন, প্রথম বাঙালির কাছে যে দিয়েছিল, আমাদের শিশুমনের যে খোরাক জুগিয়েছিল, সেইটা কিন্তু হনুমান ছিল। এইটা কিন্তু প্রত্যেকটা গ্রামে গ্রামে তারা সাজপোশাক দেখাত, এবং প্রতিক্ষেত্রেই একটা ক্যারাক্টর থাকত বীর হনুমান।


তন্ময়— শুধু গ্রামে হয়তো না, আমরা যারা নব্বইয়ের দশকে জন্মেছি বা বড়ো হয়েছি, শৈশবে খেলাচ্ছলে রাম বা হনুমানের ভঙ্গি করে খেলা—সেটা একটা স্বাভাবিক সংস্কৃতিরই অঙ্গ ছিল।

স্বপনকুমার ঠাকুর— একদম। সবথেকে বড়ো কথা কী? হনুমান মানুষের কাছে খুবই প্রিয় হবে, সেটাই স্বাভাবিক। তার কারণ হচ্ছে, মানুষ যদি চোখের সামনে কোনো বন্য পশুকে নিয়মিত দেখে থাকে, সেটা হনুমান। মানুষ চোখের সামনে দেখছে, হনুমান তার বাড়ির ছাদে লাফ মারছে। এই যে হনুমানের এত উৎপাত—কখনো আলু খেয়ে নিচ্ছে, পেঁপে, আম—সবই। হইহই করে টিন বাজিয়ে তারপর তাড়ানো হয়। কিন্তু তার গায়ে হাত দেওয়া, মারা—এ-ধরনের মানসিকতা কোথাও দেখিনি। তাহলে হনুমান তো তার চোখের সামনেই সবসময়, কেন সে হনুমানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবে না? হ্যাঁ, কিন্তু তার মানে এই নয় যে হনুমানের পুজো সে করেছে বরাবর। সেটা আমি দেখিনি।

(সমাপ্ত)

অলঙ্করণ - অমর্ত্য খামরুই
অনুলিখন - শুভজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

Powered by Froala Editor