লিটল ম্যাগাজিন নিয়ে কলকাতার উৎসাহে মুগ্ধ বাংলাদেশের হাসান রোবায়েত

না, তিনি কেবল বইমেলার মুখ নন। তিনি বাংলা ভাষার আত্মীয়। ঘনিষ্ঠ আত্মীয়। আর তাই সব বাধা পেরিয়ে সোজা পৌঁছলেন কলকাতা বইমেলায়। বাংলার কোনো এপার-ওপার মানি না আমরা। ভৌগোলিক যেটুকু যা অতিক্রমের, তা আসলে গেরস্তের কড়ানাড়া থেকে দরজা খোলার অপেক্ষাটুকু। আর সেই দরজা খুলে গেলেই আমরা রান্নাঘর পর্যন্ত অবাধে ঢুকে পড়ি, চায়ের জল বসাই বন্ধুর বাড়িতে।

হাসান, হাসান রোবায়েত। বাংলা কবিতায় এক উজ্জ্বল মুখ। সুদূর বাংলাদেশ থেকে ছুটে এসেছেন এপারে। বইমেলার ছোঁয়া নিতে। হাসান এবারের বইমেলার এক অন্যতম রঙিন মুখ। আন্তরিকতা তো থাকবেই, সঙ্গে থাকবে ঘোরাফেরা, থাকবে যা যা জানতে পারি না সচরাচর সেসব তাঁর থেকে জেনে নেওয়ার ইচ্ছা। আর সে সুযোগে প্রহর প্রশ্ন রাখল হাসানের কাছে। হাসিমুখে উত্তরও বয়ে এল এক আনোখা নদীপথে।

কলকাতার আন্তরিকতায় মুগ্ধ তরুণ কবি জানান, বইয়ের চেয়েও কাছের হয়ে উঠেছে এখানকার মানুষেরা। তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয় একুশে বইমেলার সম্পর্কে, সত্যিই কি কোনো মিল রয়েছে এই দুই মেলায়? তিনি বলেন, হ্যাঁ রয়েছে। রয়েছে কিছু পার্থক্যও। ঢাকার বইমেলায় স্টলের সংখ্যা এর চেয়ে কম। বাকি অনেক কিছুতেই মিলে যায় দুই বাংলার মানচিত্র।

হাসান লিটল ম্যাগাজিন প্যাভেলিয়নের ভিড় দেখে চমকে উঠেছেন। একই সঙ্গে গলায় হতাশার সুর শোনা গেছে তাঁর। ‘আমাদের ওখানে এমন দেখি না। ঢাকার লিটল ম্যাগ অলরেডি মারা গেছে!’ লিটল ম্যাগ প্যাভেলিয়ন থাকলেও মানুষের তেমন আনাগোনা নেই সেখানে, জানান তিনি। লিটল ম্যাগাজিনের এই জলজ্যান্ত ভাব ঢাকার মানুষ দেখেনি অনেকদিন।

প্রহর জানতে চায় দুই বাংলার যোগাযোগের কথাও। ক্রমশ কি তাদের কাছে টেনে আনছে ভাষা? কয়েক বছর আগেও যেখানে ওপারের তরুণ কবিদের নামও জানত না এপারের মানুষ, এখন তাঁদের এপারে বই হচ্ছে। অনেক পুরোনো বইয়ের ‘ভারতীয় সংস্করণ’ হচ্ছে। এ তো এক আশার আলো, নয় কি? এক কথায় সমস্তটাই মেনে নেন কবি। তিনি বলেন একসময় পশ্চিমবঙ্গে আল মাহমুদ ছাড়া কাউকে পাঠক চিনতই না। এখন বিষয়টা আর তেমন নেই বলেই মনে করা যায়। তবুও প্রয়াসের মতো একটি তরুণ প্রকাশনা নিজেরা উদ্যোগ নিয়ে বাংলাদেশের বারোজন কবির পুস্তিকা প্রকাশ করেছে, কাজেই যোগাযোগ ক্রমশই মসৃণ হয়ে উঠছে। এখন কলকাতার মানুষ চাইলে বাংলাদেশের সমকালীন কবিতার একটা প্রবাহ বুঝে নিতে পারবে বলেই মনে করেন হাসান।

বইমেলা আর মাত্র তিনদিন। তারপর আবার এইসব মুখের সঙ্গে দেখা হওয়ার অপেক্ষা প্রায় এক বছরের। আমরা চাইব এদের ছুঁয়ে ছুঁয়ে থাকতে। চাইব দুই বাংলার যোগাযোগ হাসানের নিঃশ্বাসের চেয়ে অনেক বেশি মসৃণ হয়ে উঠুক।

Latest News See More