ফ্লয়েড-হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত পুলিশ আধিকারিকের হাজতবাস

ঠিক এক মাস আগের কথা। মার্চের ১৪ তারিখে ঘোষিত হয়েছিল জর্জ ফ্লয়েড মামলার রায়। ফ্লয়েডের পরিবারকে বড়ো অঙ্কের আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষিত হয়েছিল বিচারে। আর তার পরেই কার্যত আগুন জ্বলে উঠেছিল মার্কিন প্রদেশ জুড়ে। শুধু অর্থের ওপরেই কি তবে দাঁড়িয়ে রয়েছে সম্পূর্ণ বিচারপ্রক্রিয়া? এই তীব্র সমালোনার সামনে নত হয়ে পুনরায় মামলার খাতা খুলেছিল আদালত। সম্মিলিত সেই আন্দোলনের জেরেই এবার বিচার পেলেন জর্জ ফ্লয়েড। গতকাল শাস্তির আদেশ দেওয়া হল অভিযুক্ত পুলিশ অফিসার ডেরেক শভিনকে।

মোট তিনটি ধারায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে ডেরেককে— নরহত্যা, সেকেন্ড ডিগ্রি মার্ডার এবং থার্ড ডিগ্রি মার্ডার। যার ফলস্বরূপ কয়েক দশক কারাবাস করতে হতে পারে তাঁকে। বিগত তিন সপ্তাহ ধরেই চলছিল এই বিচার প্রক্রিয়া। পুরো বিচার প্রক্রিয়ার মধ্য যাতে স্বচ্ছতা থাকে, তার জন্য বিশেষ প্রোটোকলও নিয়েছিল মার্কিন প্রশাসন। বেছে নেওয়া হয়েছিল ১২ জন বিচারককে। তাঁদের নিজেদের মধ্যেও সরাসরি যোগাযোগ ছিল না কোনো। হোটেলের আলাদা আলাদা ঘরে বসেই তাঁরা অংশ নিয়েছিলেন যুক্তি-তর্কে। এমনকি বিচাপতিদের পরিচয়ও প্রকাশ্যে আনেনি মার্কিন সরকার।

টানা একদিন ধরে বিচার চলার পরে গতকাল সামনে আসে চূড়ান্ত রায়। সব মিলিয়ে প্রায় ৪৫ জন প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ান এবং ভিডিও ফুটেজের বিশ্লেষণের মাধ্যমেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানাচ্ছেন মার্কিন শাসন ব্যবস্থা। তবে শুনানির সময় কোনো বক্তব্যই পেশ করেননি অভিযুক্ত পুলিশ অফিসার ডেরেক শভিন।

এদিন রায় ঘোষণার পরই রাস্তায় নামেন উচ্ছ্বসিত জনতার ভিড়। জর্জ ফ্লয়েড স্কোয়ারে জমায়েত হন আন্দোলনকারীরা। শ্রদ্ধা জানানো হয় তাঁকে। রায় ঘোষণার পর ব্যক্তিগতভাবে ফ্লয়েডের পরিবারের সঙ্গে ফোন কথা বলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও। সহমর্মিত জানান তিনি।

আরও পড়ুন
পুলিশের গুলিতে নিহত কৃষ্ণাঙ্গ যুবক, ফের বর্ণবিদ্বেষে রক্তাক্ত জর্জ ফ্লয়েডের শহর

তবে মার্কিন ইতিহাস দেখতে গেলে, পুলিশি কর্মকর্তাদের দোষী সাব্যস্ত হওয়ার ঘটনা বিরল। অনেকক্ষেত্রে পুলিশ আধিকারিকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলেও, শেষ পর্যন্ত বিচার পান না তাঁরা। আর সেই দিক থেকেই এক নতুন ইতিহাস লিখল যুক্তরাষ্ট্র। এই রায় আগামীতেও মার্কিন বিচারব্যবস্থায় প্রভাব ফেলবে বলেই অনুমান আইন বিশেষজ্ঞদের। কৃষ্ণাঙ্গ বিদ্বেষ ও বর্ণবাদ সংক্রান্ত ক্ষেত্রে পুলিশি সহিংসতার ঘটনাও আয়ত্তে আসবে বলেই আশাবাদী তাঁরা। এমনকি পুলিশি শক্তি প্রয়োগের ক্ষেত্রেও বেশ কিছু বদল আসতে পারে নিয়ম-নীতিতে। এখন দেখার এই পরিবর্তন সত্যিই কতটা কার্যকরী হয় বর্ণবাদের শিকার হওয়া মার্কিন সমাজ ব্যবস্থায়…

আরও পড়ুন
২.৭ কোটি মার্কিন ডলারের ক্ষতিপূরণ, ‘বিচার’ পেলেন জর্জ ফ্লয়েড?

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
জর্জ ফ্লয়েডের অন্তিমযাত্রায় সঙ্গ দিলেন প্রতিবাদীরা, শোকজ্ঞাপন গোটা আমেরিকার