কফি খেলেই চাইতে হবে ক্ষমা, অমান্য করলে সলিলসমাধি কিংবা মুণ্ডচ্ছেদ!

মার্কিন সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছেন চিকিৎসকরা। তাঁদের দাবি, হ্যারিসন অ্যাক্ট প্রত্যাহার করতে হবে। নাহলে চিকিৎসা চালানো সম্ভব নয়। ১৯১৪ সালে এই হ্যারিসন অ্যাক্ট কার্যকর করা হয়। তার ঠিক ৫ বছরের মধ্যে মামলা গড়ায় সুপ্রিম কোর্টে। কিন্তু কী এই হ্যারিসন অ্যাক্ট? এই আইন অনুযায়ী আফিম এবং কোকেন বিক্রির জন্য সরকারের অনুমতি নিতে হবে। তবে আইনে অনুমতি নেওয়ার কথা বলা হলেও কার্যত এই দুই মাদকের ব্যবসা পুরোপুরি বন্ধ করে ফেলেছিল প্রশাসন। আর তার বিরুদ্ধেই চিকিৎসকরা মামলা করেছিলেন। শুনতে অবাক লাগলেও সবচেয়ে বেশি আফিম এবং কোকেন বিক্রি হত নানারকম ওষুধ তৈরিতে।

মাদক নিষিদ্ধকরণের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে এমনই নানা কাহিনি। এমনকি মাদকের সংজ্ঞাও বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশে বদলে বদলে গিয়েছে। মাদকের বিরুদ্ধে প্রথম আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ভেবেছিলেন অটোমন সাম্রাজ্যের সুলতান চতুর্থ মুরাদ। আর তিনি যে দ্রব্যটিকে নিষিদ্ধ করেছিলেন, তা হল কফি। শোনা যায় তিনি নাকি রাজকার্য ছেড়ে সাধারণ মানুষের পোশাক পরে রাস্তায় টহল দিতেন। নজর রাখতেন, কেউ কফি সেবন করছে কিনা। আর কাউকে কফি সেবন করতে দেখলেই বের করে আনতেন তরোয়াল। তবে জনশ্রুতি সম্পূর্ণ সত্যি না হলেও এটুকু সরকারি দলিল থেকে জানা যায় যে কফি পান করলে তিন ধরনের শাস্তির ব্যবস্থা ছিল। যদি কেউ একবার কফি পান করে, তাহলে সে শুধু ক্ষমা চাইলেই হবে। কিন্তু তারপরেও যদি কফি খেয়ে ফেলে, তাহলে আপাদমস্তক চামড়ার থলিতে মুড়ে সমুদ্রের জলে ফেলে দেওয়া হবে। এরপরেও যদি কেউ বেঁচে ফিরে আসতে পারে এবং আবারও কফি খায়, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে তার মুণ্ডচ্ছেদ করা হবে।

কফির বিরুদ্ধে অবশ্য শুধু অটোমনরাই আইন তৈরি করেননি। ক্যাথলিক খ্রিস্টান ধর্মমতেও কফি ছিল শয়তানের পানীয়। তবে তার পরেও মানুষ কফি সেবন করতে কসুর করত না। প্রশাসনিক শাস্তির কোনো ব্যবস্থা ছিল না। আর এই কফি পানের সংক্রমণ এতই ছড়িয়ে পড়তে শুরু করল, একদিন পোপ নিজেই চুমুক দিলেন কফির কাপে। ১৬০০ সালে পোপ অষ্টম ক্লিমেন্ট আপ্যায়ন করে নিলেন শয়তানের পানীয়কে। এরপরেও অবশ্য কফির বিরুদ্ধে মামলা শুরু হয়েছিল ইংল্যান্ডে। একটি মহিলা সংগঠনের উদ্যোগে শুরু হয়েছিল কফি বিরোধী প্রচার। কফি পানের জন্যই যে ইংল্যান্ডের আভিজাত্য হারাচ্ছে এবং আর কিছুদিনের মধ্যে যে ফ্রান্সের সঙ্গে ইংল্যান্ডের কোনো পার্থক্যই থাকবে না, এই ছিল বক্তব্য।

আবার ব্রিটিশরাই গোপনে চিনের মাটিতে ছড়িয়ে দিয়েছিল এক মারাত্মক নেশার বিষ। আফিম। উনিশ শতকের শুরুতে চিনে আইন করে আফিম সেবন নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু তাতে আফিম সেবন আটকানো যায়নি। ব্রিটিশরা মজা করে বলতেন, রাজা নিজেও লুকিয়ে আফিম সেবন করেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় আবার এই আফিমের নেশা ছড়িয়ে পড়ে ভারতীয় সেনাদের মধ্যে। ১৯১৬ সালে ব্রিটেনের কিছু সংবাদপত্রে বলা হয় বোম্বে পোর্টের সেনারা প্রত্যেকেই আফিমের নেশায় আশক্ত। যুদ্ধের মধ্যে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি আর। কিন্তু ১৯২০ সালেই বোম্বে বন্দরের সৈনিকদের সমস্ত রকমের নেশা করা বন্ধ করে দেওয়া হয়। অবশ্য এই আইনেও ভারতীয়দের মধ্যে প্রচলিত একটি নেশাকে ছাড় দেওয়া হয়েছিল। গাঁজা।

আরও পড়ুন
বিদেশি সিনেমা দেখলেই মৃত্যুদণ্ড! স্বৈরাচারের জাঁতাকলে উত্তর কোরিয়া

আইনিভাবে গাঁজার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা প্রথম নেওয়া হয় আমেরিকাতেই। ১৯৩৭ সালে গাঁজা বিপণনের উপর ট্যাক্স বসায় সরকার। আর তারপরেই আমেরিকাজুড়ে শুরু হয়ে যায় ঐতিহাসিক মাদকযুদ্ধ বা ড্রাগ-ওয়ার। তার সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায় আমেরিকার বর্ণসাম্য আন্দোলনও। এরপর পৃথিবীর নানা দেশে গাঁজা নিষিদ্ধ করা হলেও আবার সেই আইন শিথিল করার প্রক্রিয়াও শুরু হয়ে গিয়েছে। শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর যে কোনো মাদকই বর্জন করা উচিৎ। কিন্তু নিষিদ্ধ মাদকের সংজ্ঞাও যে সবসময় স্থির নয়।

আরও পড়ুন
ফায়ারিং স্কোয়াডে মৃত্যুদণ্ড, সাউথ ক্যারোলিনার খসড়া আইনে বিতর্ক...

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
মহামারীতেও অব্যাহত মৃত্যুদণ্ডের আদেশ, শীর্ষে মধ্যপ্রাচ্য