ফায়ারিং স্কোয়াডে মৃত্যুদণ্ড, সাউথ ক্যারোলিনার খসড়া আইনে বিতর্ক...

পৃথিবীর যে-কোনো দেশে আজও অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। তবে তার পদ্ধতি বিভিন্ন রকম। এবার আমেরিকার দক্ষিণ ক্যারোলিনা স্টেটের নতুন আইন অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ডের নতুন ব্যবস্থা হিসাবে ফায়ারিং স্কোয়াডকেই বেছে নেওয়া হয়েছে। বন্দুকধারী বাহিনীর সামনে নিরস্ত্র অপরাধী দাঁড়িয়ে থাকবে। আর তার দিকে ধেয়ে আসবে একের পর এক গুলি। এভাবে মৃত্যুদণ্ড দেওয়াকেই স্বীকৃতি দিতে চলেছে দক্ষিণ ক্যারোলিনা। এই আইন কার্যকর হলে আমেরিকার চতুর্থ স্টেট হিসাবে ফায়ারিং স্কোয়াডকে স্বীকৃতি দিতে চলেছে সাউথ ক্যারোলিনা।

ইতিমধ্যে সাউথ ক্যারোলিনা সংসদের এই প্রস্তাবিত আইনকে ঘিরে যথেষ্ট বিতর্ক উঠেছে। রিপাবলিকান হাউসের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন ডেমোক্র্যাটরা। পাশাপাশি সাধারণ নাগরিকদের একাংশও এই মধ্যযুগীয় প্রথা মেনে নিতে পারছেন না। তবে সংসদের পক্ষ থেকেও যথেষ্ট যুক্তি দেওয়া হয়েছে। দীর্ঘদিন আমেরিকায় মৃত্যুদণ্ডের পদ্ধতি হিসাবে প্রচলিত ছিল ইলেকট্রিক চেয়ার। অপরাধীকে ধাতব চেয়ারে বসিয়ে তাতে বিদ্যুৎ সংযোগ করে দেওয়া হত। এখনও আইনত সেই পদ্ধতি বহাল থাকলেও ক্রমশ এর পরিবর্তে ল্যাথার ইনজেকশনের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ডের প্রথা চালু হতে থাকে। ১৯৯৫ সালে সাউথ ক্যারোলিনায় এই পদ্ধতি চালু হয়। আইনে বলা হয় অপরাধী নিজেই স্থির করবেন তিনি মৃত্যুদণ্ডের জন্য কোন পদ্ধতি বেছে নেবেন। ফলে ইলেকট্রিক চেয়ারের যন্ত্রণাদায়ক পদ্ধতির বদলে সকলেই বেছে নিয়েছে ল্যাথার ইনজেকশন পদ্ধতিকেই। কিন্তু এর মধ্যেই বাজারে এইধরণের ককটেল ইনজেকশনের যথেষ্ট আকাল দেখা দিয়েছে। তাছাড়া নির্মাতা কোম্পানিগুলিও মৃত্যুদণ্ডের জন্য ওষুধ বিক্রি করতে রাজি নয়। এই পরিস্থিতিতে বিকল্প পদ্ধতি হিসাবেই ফায়ারিং স্কোয়াডকে বেছে নেওয়ার কথা জানিয়েছে সংসদ।

অবশ্য ডেমোক্র্যাটরা দাবি করেছিলেন, ল্যাথার ইনজেকশন পদ্ধতি বাতিল করতে হলে ইলেকট্রিক চেয়ারকেই একমাত্র পদ্ধতি হিসাবে ফিরিয়ে আনা হোক। যদিও আইন নির্মাতারা দাবি করেছেন, ইলেকট্রিক চেয়ারে মৃত্যু হয় অত্যন্ত ধীর গতিতে। দীর্ঘ সময় ধরে যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়। এর চেয়ে ফায়ারিং স্কোয়াডের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া অনেক কম যন্ত্রণার। তাছাড়া অপরাধী নিজের কৃতকর্মের উত্তর পাবেন সরাসরি। আমেরিকার বাইরে চিন, ইরান, উত্তর কোরিয়া, কাতারের মতো দেশে এই পদ্ধতি চালু আছে। তাছাড়া আমেরিকার মিসিসিপি, ওকালহোমা এবং উটাহ প্রদেশেও বিগত কয়েক বছরের মধ্যে এই পদ্ধতি চালু হয়েছে। তবে সাউথ ক্যারোলিনায় এই আইন কার্যকর হতে এখনও সেনেটের অনুমোদন নেওয়া বাকি। অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতেই বলা হয়েছিল, মৃত্যুদণ্ডের সমস্ত আইন বাতিল করা হবে। এখনও অবধি বাইডেন সেই বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না নিলেও এই আইন কার্যকর হওয়ার আগেই আমেরিকায় মৃত্যুদণ্ডের প্রথা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
মহামারীতেও অব্যাহত মৃত্যুদণ্ডের আদেশ, শীর্ষে মধ্যপ্রাচ্য