মহামারীতেও অব্যাহত মৃত্যুদণ্ডের আদেশ, শীর্ষে মধ্যপ্রাচ্য

মহামারীর হানায় থমকে গিয়েছে গোটা বিশ্ব। কম-বেশি সব দেশেই পড়েছে লকডাউনের আঁচ। কিন্তু এই লকডাউনের জন্য তো আর বিচার ব্যবস্থা থেমে থাকতে পারে না। তাই অব্যাহত ছিল শাস্তিদানের প্রক্রিয়া। কোনো কোনো ক্ষেত্রে যার পরিণাম মৃত্যুদণ্ডও। সম্প্রতি, গত এক বছরের সেই রিপোর্ট প্রকাশ করল আন্তর্জাতিক সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। আর সেই তথ্য জানাচ্ছে, ২০২০ সালে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরী করা প্রথম পাঁচটি দেশের মধ্যে চারটিই মধ্যপ্রাচ্যের।

মানবাধিকার গোষ্ঠীটির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, গত একবছরে বিশ্বব্যাপী মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে ৪৮৩ জনকে। আর তার মধ্যে ৮৮ শতাংশ ঘটনাই ঘটেছে ইরান, মিশর, ইরাক আর সৌদি আরবে। বিষয়টিকে নির্মম বলেই চিহ্নিত করছে অ্যামনেস্টি। 

অবশ্য এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়নি চিন, উত্তর কোরিয়া এবং ভিয়েতনামের তথ্য। তার কারণ রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা। সেই তথ্য মিললে অবশ্য, পুরো চেহারাই বদলে যেত পরিসংখ্যানের। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন শুধু চিনেই প্রতিবছর মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় কয়েক হাজার মানুষকে। একই ছবি উত্তর কোরিয়াতেও। এমনকি কিম জং-উনের রাজত্বে কোথাও কোথাও বিচার ছাড়াই মৃত্যুর আদেশ দেওয়া হয় অভিযুক্তদের।

তবে এই তিন দেশের কথা বাদ দিলে, সামগ্রিকভাবে গত বছরের তুলনায় ২৬ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে মৃত্যুদণ্ড ঘোষণার প্রবণতা। ২০১৫ সালের নিরিখে তা কমেছে ৭০ শতাংশ। মধ্য প্রাচ্যে সৌদি আরব, ইরান-সহ বেশ কয়েকটি দেশে মৃত্যুদণ্ডের সংখ্যা নিম্নমুখী হলেও; এক ধাক্কায় তা বৃদ্ধি পেয়েছে মিশরে। শুধু মিশরেই কার্যকরী হয়েছে ১০৭টি আদেশ। যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ৩০০ শতাংশ বেশি। এবং আশ্চর্যজনকভাবে অধিকাংশ আদেশের পিছনেই কারণ হিসাবে লুকিয়ে রয়েছে রাজনৈতিক রেষারেষি।

আরও পড়ুন
টুইটার ব্যবহার করে একের পর এক হত্যা, জাপানের কুখ্যাত সিরিয়াল কিলারকে মৃত্যুদণ্ড

অন্যদিকে উন্নত দেশগুলির মধ্যে ট্রাম্প জমানার শেষের দিকে আমেরিকাতেও মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে ১০টি ক্ষেত্রে। যার ফলে প্রায় ১৭ বছরের দীর্ঘ ক্লিনচিট ভেঙেছে যুক্তরাষ্ট্র। ভারত, ওমান, তাইওয়ান এবং কাতারেও ফাঁসির আদেশ অবাক করেছে বিশেষজ্ঞদের।

আরও পড়ুন
‘ভালো লাগে তাই খুন করি’, ধরা পড়েও নির্বিকার সিরিয়াল কিলার

মৃত্যুদণ্ড যে নৃশংস একটি বিচার প্রক্রিয়ার দৃষ্টান্ত— সেই বিষয়েই বার বার জোর দিচ্ছে অ্যামনেস্টি। বরং মৃত্যুর পরিবর্তে দীর্ঘ কারাবাসের সাজা প্রদানেই উৎসাহী আন্তর্জাতিক সংস্থাটি। মৃত্যুদণ্ড ঘোষণার মাধ্যমে বিচার ব্যবস্থা ও অভিযুক্তের মধ্যে যে কোনো তফাৎ থাকে না, সেই কথাই উল্লেখ করেছেন অ্যামনেস্টির সেক্রেটরি জেনারেল আনিয়েস কালামার। তাঁর দাবি, করোনার এই কঠিন পরিস্থিতিতে এমন নিষ্ঠুরতা আরও বেশি আঘাত এনেছে মানবাধিকারে। এ-কথা সত্যিই যে, মহামারীর কারণে বহু বহু বন্দিদের মুক্তি দেওয়া হয়েছে সংক্রমণের আশঙ্কা থেকে। শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই নয়, একাধিক দেশে দেখা গেছে এমন কর্মসূচি। সেখানে দাঁড়িয়ে মৃত্যুদণ্ডের দিকে কেন নমনীয় হল না প্রশাসন? এই প্রশ্নই ঘুরে ফিরে আসছে অ্যামনেস্টির রিপোর্ট কেন্দ্র করে…

আরও পড়ুন
সমকামিতার ‘অপরাধে’ অকথ্য নির্যাতন, মিশরের পুলিশের নিন্দায় সরব বিশ্ব

Powered by Froala Editor