মানসিক শান্তি পেতেই ‘অজ্ঞাতবাস’, ৫ মাস পরে তাঁবুতে হদিশ মহিলার

যুক্তরাষ্ট্রে উটা প্রদেশের সল্টলেক সিটি। পাঁচ মাস আগে এই শহর থেকেই নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন এক মহিলা। ডায়েরি করা হয়েছিল থানায়। তবে তন্নতন্ন করে খুঁজেও, তাঁর কোনো সন্ধান পাননি গোয়েন্দারা। সম্প্রতি উটার ডায়মন্ড পার্ক ক্যানিয়নের কাছে খুঁজে পাওয়া গেল তাঁকে। সেখানে ছোট্ট তাঁবুর খাঁটিয়ে, বিগত মাসগুলিতে একান্তেই দিন কাটিয়েছেন তিনি।

জানা গেছে গত নভেম্বর মাসের ২৫ তারিখ হঠাৎই নিখোঁজ হয়ে যান বছর সাতচল্লিশের ওই মহিলা। যোগাযোগ করতে না পেরে, তাঁর আত্মীয়রা দ্বারস্থ হন পুলিশের কাছে। সেই মতো শুরু হয়েছিল তদন্তও। প্রাথমিকভাবে, সল্টলেক সিটি থেকে ৪০ মাইল দূরে একটি পার্কিং-এ পরিত্যক্ত অবস্থায় খুঁজে পাওয়া যায় তাঁর গাড়ি। তবে সেখান থেকে কোনো সূত্রই খুঁজে পাননি মার্কিন গোয়েন্দারা। সন্দেহ করা হয়েছিল হয়তো তিনি অপহৃত হয়েছেন। অনেক খোঁজাখুঁজির পর হালও ছেড়ে দিয়েছিল পুলিশ প্রশাসন।

প্রতি বছরেই গ্রীষ্মকালে উটা প্রদেশের এই পার্কের সংস্কার প্রকল্প নেয় মার্কিন বনদপ্তর। তার জন্য সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রাখা হয় পর্যটকদের প্রবেশও। সম্প্রতি সেই সংস্কারকার্যের জন্যই পূর্ব-প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন বনদপ্তরের আধিকারিকেরা। ড্রোনের মাধ্যমে খতিয়ে দেখা হচ্ছিল উপত্যকায় কোনো পর্যটক রয়ে গেছেন কিনা। সেই অনুসন্ধান করতে গিয়েই তাঁরা সন্ধান পান ওই মহিলার। তবে তিনি যে বিগত কয়েকমাস নিখোঁজ, তা সনাক্ত করতে পারেননি তাঁরাও। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করার পর প্রশাসনের নজরে আসে বিষয়টি। তখনই জানা যায় তাঁর পরিচয়।

উটার প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, নিখোঁজ হওয়ার সময় সামান্য কিছু খাবার ছিল তাঁর সঙ্গে। পরবর্তীতে জঙ্গল থেকেই খাদ্য সংগ্রহ করেছেন তিনি। পানীয় হিসাবে ব্যবহার করেছেন নদীর জল। বর্তমানে তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ রয়েছেন বলেই জানাচ্ছে প্রশাসন। দুর্বলতা কিংবা ওজোন হ্রাসের মতো ঘটনা ঘটেনি তাঁর ক্ষেত্রে। শরীরে মেলেনি কোনো ক্ষতের চিহ্নও। আরও কিছু রুটিন পরীক্ষার পরেই তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

আরও পড়ুন
বিশ্বের সামনে তুলে ধরেছেন মুক্তিযুদ্ধের ছবি, পরে নিজেই নিখোঁজ হয়ে গেলেন জহির রায়হান

কিন্তু হঠাৎ এমন নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়া কেন? পুলিশকে দেওয়া তাঁর বিবৃতি অনুযায়ী, মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়েই এমন অজ্ঞাতবাসের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি। সামান্য খাবার এবং তাঁবু নিয়েই নিরুদ্দেশ হয়ে গিয়েছিলেন। মহিলার এই ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তের প্রশংসাই করেছেন পুলিশের আধিকারিকরা। মহিলার সঙ্গে শেষ পর্যন্ত যোগাযোগ করে উঠতে পেরে রীতিমতো উচ্ছ্বসিত তাঁরা। জানানো হয়েছে, আইনবিরুদ্ধ কোনো কাজ করেননি তিনি। বরং, এই ধরনের ঘটনায় অনেকেই বেছে নেন আত্মহননের পথ। সেখানে দাঁড়িয়ে এক অনন্য দৃষ্টান্ত তৈরি করেছেন মার্কি প্রৌঢ়া। পুলিশের কর্মকর্তারা অনুমতি দিয়েছে, হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর চাইলে তিনি আবার ফিরে যেতে পারেন তাঁর নির্জন ক্যাম্পে। সাধ্যমতো সাহায্য পৌঁছে দেওয়ার আশ্বাসও দিয়েছেন তাঁরা।

আরও পড়ুন
জাদু করে মঞ্চে ‘হাজির’ করতেন নিরুদ্দেশ নেতাজিকে, চোখ বেঁধে বাইক চালিয়েছেন কলকাতার রাস্তায়

“যেন খোঁজা আমার শেষ/ হলেম যে নিরুদ্দেশ/ সাথে করে শুধু হৃদয়টাই”। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই ঘটনা যেন মনে করিয়ে দিচ্ছে মহীনের ঘোড়াগুলির বহু পুরনো এই গানের কথাই। কখনো কখনো নিঃসঙ্গতাই হয়তো এনে দিতে পারে অভিপ্রেত শান্তি। তারই জীবন্ত প্রমাণ এই মার্কিন মহিলা…

আরও পড়ুন
জলে ডোবা নিরুদ্দেশ ব্যক্তির হদিশ দিল প্রিয় পোষ্যই

Powered by Froala Editor