মানুষের মতোই নেশায় অভ্যস্ত ডলফিন, অদ্ভুত চরিত্রে তাজ্জব বিজ্ঞানীরা

স্তন্যপায়ী তারাও। তবে মূলত সমুদ্রেই বসবাস তাদের। ডলফিন। স্তন্যপায়ী এই প্রজাতির বুদ্ধিমত্তা এবং বন্ধুত্বপূর্ণ স্বভাব চিরকালই অবাক করে মানুষকে। এবার প্রকাশ্যে এল তাদের আরও এক অদ্ভুত চরিত্র। ডলফিনের প্রাত্যহিক জীবনের বিস্তারিত মূল্যায়ন জানাল, একেবারে মানুষের মতোই নেশা করতে অভ্যস্ত তারা। ‘মাদক’-সেবনের পরে তাদের অদ্ভুত আচরণ ধরা পড়ল ক্যামেরায়।

২০১৩ সালের কথা। এক অভিনব উদ্যোগ নিয়েছিল বিবিসি ওয়ান। সামুদ্রিক কচ্ছপ, ডলফিন, বিভিন্ন মাছ এবং স্কুইডের দৈনিক জীবনযাপনের ওপর তথ্যচিত্র নির্মাণের উদ্যোগ। দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল পুরস্কারপ্রাপ্ত তথ্যচিত্র নির্মাতা জন ডাউনারকে। স্পাই ক্যামেরার মাধ্যমে তিনি ফ্রেম বন্দি করেছিলেন সেইসব ভিডিও। শুধুমাত্র ডলফিনের ওপরেই তিনি সংগ্রহ করেছিলেন ৯০০ ঘণ্টার ফুটেজ।

সেই ফুটেজের পর্যালোচনা এবং বিশ্লেষণের সময়েই ডলফিনদের অদ্ভুত আচরণ চিহ্নিত করেন প্রাণীবিদ রব পিলে। গোপন ক্যামেরায় তোলা সেই ভিডিও-তে ধরা পড়েছিল ‘পাফারফিস’ নামক একটি প্রজাতির মাছের দেহে হালকা কামড় বসিয়ে সমুদ্র ঘুরে বেড়াচ্ছে ডলফিন। তবে খুব বেশিক্ষণ না, মিনিটখানেক বাদেই দলের অন্য সদস্যের মুখে তারা তুলে দিচ্ছে সেই মাছ। বার বার আবর্তিত হচ্ছে এই প্রক্রিয়া। তবে গবেষক রব পিলে লক্ষ করেন, মাছটিকে মেরে ফেলার কোনো উদ্দেশ্যই নেই তাদের। 

এ ঘটনা রীতিমতো অবাক করেছিল তাঁকে। কারণ, সামুদ্রিক প্রজাতিদের মধ্যে অন্যতম বিষাক্ত একটি প্রজাতি হল ‘পাফারফিস’। এই মাছ আত্মরক্ষার জন্য দেহত্বক থেকে ক্ষণ করে ভয়ঙ্কর একটি বিষ। ‘টেট্রোডটক্সিন’ নামক সেই বিষ মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যেই মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে মানুষের কাছে। আর এমন একটি প্রজাতিকে মুখে নিয়ে খেলা করে চলেছে ডলফিনরা? অবাক হয়েছিলেন তিনি। তবে সেই ভুল ভাঙে পরে।

আরও পড়ুন
ড্রোনের ব্যবহার এবার ডলফিন সংরক্ষণেও, দৃষ্টান্ত তৈরি নিউজিল্যান্ডের

বার বার ভিডিও-র অধ্যায়নে চোখে পড়ে তফাৎটা। রব পিলে লক্ষ করেন, পাফারফিসে কামড় বসানোর কিছুক্ষণ পর থেকেই অদ্ভুত আচরণ করছে ডলফিনরা। একদিকে যেমন তারা উদ্দেশ্যহীনভাবেই ঘুরে বেড়াচ্ছে সমুদ্রের মধ্যে, তেমনই নিজেদের মধ্যেও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে ডলফিন। কখনো আবার সমুদ্রপৃষ্ঠে উঠে জলে নিজের প্রতিবিম্বও দীর্ঘক্ষণ ধরে পর্যবেক্ষণ করছে তারা। ডঃ রব পিলের বুঝতে অসুবিধা হয়নি, এই ঘটনার জন্য দায়ী পাফারফিসের বিষক্রিয়াই। আর যার কারণেই এমন ‘ট্রান্স’-পর্যায়ে বিচরণ তাদের।

আরও পড়ুন
তিমি এবং ডলফিনের মৃত্যুতে ঘাতক শব্দদূষণই, চাঞ্চল্যকর তথ্য জার্মান গবেষকের

বিস্তারিত গবেষণার পর সম্প্রতি সানডে ডেইলি পত্রিকায় এক সাক্ষাৎকারে পিলে জানান, সবটা জেনে বুঝেই এই বিষপান করে ডলফিন। এই ‘ট্রান্স’-পর্যায়ে যাওয়ার জন্য রীতিমতো আসক্ত তারা। আর সেই কারণেই ডলফিন পাফারফিস খুঁজে বেড়ায় সমুদ্রের তলদেশে। তবে সামান্য এই ‘মাদক সেবন’-এ সামান্যতম ভুলও ডেকে আনতে পারে মৃত্যুকে। তাই সচেতনভাবেই হালকা কামড়ে ডলফিনরা ধরে থাকে এই মাছকে। গিলে ফেলে না। যাতে সম্পূর্ণ বিষ না প্রবেশ করতে পারে শরীরে।

মানুষ ছাড়াও যে অন্যান্য প্রাণীরা অভ্যস্ত মাদকতার সঙ্গে, তার প্রমাণ মিলেছিল এর আগেও। মহুয়া খেয়ে ভাল্লুকের নেশা করার গল্প তো রীতিমতো পরিচিত ভারতে। তাছাড়াও আফ্রিকায় আমারুলা নামের একটি ফল খেয়ে নেশা করে হাতি, জিরাফ, বাঁদর-সহ একাধিক প্রাণী। তবে ডলফিন তথা সামুদ্রিক কোনো প্রাণীর শব্দকোষেও যে ‘নেশা’-র অস্তিত্ব রয়েছে তা সম্পূর্ণ অজানা ছিল মানুষের কাছে…

Powered by Froala Editor