তিমি এবং ডলফিনের মৃত্যুতে ঘাতক শব্দদূষণই, চাঞ্চল্যকর তথ্য জার্মান গবেষকের

এক নিরব ঘাতকের নাম হল শব্দদূষণ। শ্রবণশক্তি হারানো থেকে শুরু করে মাইগ্রেন, মানসিক চাপ, এমনকি হৃদ-আক্রান্তের মত ভয়ঙ্কর রোগের দিকে মানুষকে ঠেলে দিতে পারে শব্দদূষণ। তবে মনুষ্যসৃষ্ট এই দূষণ শুধু যে মানুষের কাছেই দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে না এমন না। সামুদ্রিক প্রাণীদের ওপরেও ভয়ঙ্কর রকম প্রভাব ফেলছে শব্দদূষণ। ঠেলে দিচ্ছে মৃত্যুর দিকে। সাম্প্রতিক ঘটনায় উঠে এল এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য।

জার্মানির হ্যানওভার ইউনিভার্সিটি অফ ভেটেরিনারি মেডিসিনের এক গবেষক সম্প্রতি জানালেন এই কথা। গবেষক ডঃ মারিয়া মরেল গবেষণা চালাচ্ছিলেন ডলফিন ও তিমিদের শ্রবণশক্তির ওপরে। আর সেখান থেকেই উঠে আসে এই তথ্য।

তিমি বা ডলফিনের মত সামুদ্রিক স্তন্যপায়ীদের জৈবিক ক্রিয়াকলাপ অনেকটাই নির্ভর করে শ্রবণের ওপরেই। খাদ্যের খোঁজ থেকে শুরু করে স্ব-প্রজাতির মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন, এমনকি সমুদ্রে চলাফেরার জন্যেও শ্রবণশক্তির ওপরেই ভরসা করতে হয় এই প্রাণীদের। তাই শ্রবণ ইন্দ্রিয়ের কোনো ক্ষতি পরবর্তীকালে বিপজ্জনক প্রভাব ফেলে তাদের ওপরে। 

ডঃ মারিয়া সমুদ্রতটে ভেসে আসে মৃত তিমি এবং ডলফিনদের ‘কান’ নিয়েই শুরু করেছিলেন এই গবেষণা। পরীক্ষার ফলাফলই আসে আশঙ্কাজনক। মারিয়া লক্ষ করেন অধিকাংশেরই, প্রায় সমস্তক্ষেত্রেই মৃত্যুর আগে নষ্ট হয়েছে শ্রবণশক্তি। মারিয়া জানান, যে কোনো কম্পাঙ্কের শব্দই নানান ভাবে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। এই গবেষণার প্রথম কাজই ছিল সেই কম্পাঙ্কের পরিসরটা চিহ্নিত করা, যারা ক্ষতিগ্রস্ত করে শ্রবণশক্তিকে। তারপর তিনি খোঁজ চালান সেই কম্পাঙ্কের উৎসগুলিকে।

আরও পড়ুন
ইন্দোনেশিয়ার সমুদ্রতটে উদ্ধার দশটি বিশালাকার মৃত তিমি, স্থানীয়দের প্রচেষ্টায় একটি ফিরল সমুদ্রে

গবেষক মারিয়া জানাচ্ছেন যে কোনো ধরণের শব্দের সংস্পর্শে একটানা বেশিক্ষণ থাকাই বিপজ্জনক এই প্রাণীদের ক্ষেত্রে। উৎসের খুব বেশি কাছে থাকলে শ্রবণশক্তি পুরোপুরিই লোপ পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কম্পাঙ্কের নিরিখে মারিয়া দেখেন সিসমিক বিস্ফোরণ, পাইল ড্রাইভিং, সোনার কিংবা সমুদ্র তটে উইন্ডমিলের আওয়াজও ব্যাপক ক্ষতি করে এই সামুদ্রিক স্তন্যপায়ীদের। 

আরও পড়ুন
মন্দারমণির সমুদ্রতটে ৩৬ ফুট লম্বা তিমির মৃতদেহ, স্থানীয়দের মধ্যে চাঞ্চল্য

ক্ষতিকর কম্পাঙ্কের প্রভাবে বিশেষ কিছু কোষের মধ্যে বিকৃতি দেখা যায়। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাল্টাতে থাকে সেই ক্ষতও। শ্রবণইন্দ্রিয়ের এই কোষের মাইক্রোস্কোপিক ভিউ-ই নির্ধারণ করে দেয় আঘাতের সময়। বা বলা ভালো কখনও প্রচণ্ড শব্দে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের শ্রবণশক্তি। সেখান থেকেই মারিয়ার সামনে উঠে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রাণীগুলির শ্রবণশক্তি লোপ পেয়েছে মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগে। 

আরও পড়ুন
আজকের সাহারা মরুভূমিই ছিল পৃথিবীর ভয়ঙ্করতম স্থান; ঘুরে বেড়াত হাঙর, ডাইনোসর

প্রতিবছরই পৃথিবী জুড়ে সামনে আসে কয়েক হাজার ডলফিন এবং তিমির মৃত্যু। সমুদ্রতটে ভসে আসতে দেখা যায় জলচর স্তন্যপায়ীদের বিশালাকার দেহ। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তদন্ত করে দেখা যায় জাহাজের ধাক্কায় কিংবা অন্য কোনো দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে তাদের। সত্যি হয়েও সবটুকু সত্যি নয় সেই রিপোর্টগুলি। মারিয়ার গবেষণা প্রমাণ দিল তারই। আসলে মানুষের ক্রিয়াকলাপ, শব্দদূষণই মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে এই সামুদ্রিক প্রাণীদের। আর শ্রবণশক্তি হারানোয় তাই নিয়ন্ত্রণ হারিয়েই ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনার মুখোমুখি হচ্ছে তিমি এবং ডলফিনরা...

Powered by Froala Editor