কোভিড-যোদ্ধাদের মনোবল বাড়াতে নাচ সার্জেনদের, মানবিক দৃশ্য ঢাকায়

লম্বা একটা করিডোর। সেখানেই গানের তালে তালে নাচছেন তিন ব্যক্তি। পরনে নীল মেডিক্যাল শার্ট। তার ওপরে চাপানো অ্যাপ্রন। মুখ ঢাকা সার্জিকাল মাস্কে। হ্যাঁ, সকলেই স্বাস্থ্যকর্মী, চিকিৎসক। সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হল এমন দৃশ্যই। অকুস্থল, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ। কঠিন পরিস্থিতিতে কোভিড যোদ্ধাদের মনোবল বাড়াতে এমন অভিনব উদ্যোগ নিলেন তরুণ চিকিৎসকরা।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের সার্জেন শাশ্বত চন্দন সম্প্রতি তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে প্রকাশ করেন এমনই একটি ভিডিও। সেখানে দেখা যায়, তাঁর সঙ্গেই নৃত্যরত আরও দুই চিকিৎসক— কৃপা বিশ্বাস ও অনিকা হোসেন খানকে। ভিডিওতে দেখা যায়, তাঁদের এই নৃত্যশিল্প তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করছেন হাসপাতালের অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী ও রোগীরা।

ভারতের মতো শোচনীয় অবস্থা না হলেও, কোভিডের দ্বিতীয় তরঙ্গ বেশ জোরালো ধাক্কা দিয়েছে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকেও। রাতদিন এক করেই মহামারীর মোকাবিলায় নিজেদের উৎসর্গ করেছেন সেখানকার চিকিৎসকরা। তাঁদের সাময়িক মনোরঞ্জনের জন্যই এমন উদ্যোগ, জানাচ্ছেন চিকিৎসক শাশ্বত চন্দন।

উক্ত তিন চিকিৎসকই ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের কর্মরত সার্জেন। এই মহামারীর পরিস্থিতির সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ নেই তাঁদের ঠিকই, তবে তাঁদের ওপরেও কাজের চাপ নেহাত কম নয়। কোভিডের জন্য তো অন্যান্য রোগের চিকিৎসা থেমে থাকতে পারে না। নিজেদের কর্তব্যে তাই অনড় রয়েছেন তাঁরা। তার ফাঁকেই সামান্য অবসর খুঁজে নিয়ে এই উদ্যোগ চন্দনদের। খানিকটা মানসিক চাপ কমানোর উদ্যোগ কোভিডের চিকিৎসায় রত ফ্রন্টলাইনারদের। একাধিক সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে তাঁদের প্রতি বিশেষভাবে শ্রদ্ধাজ্ঞাপনও করেছেন শাশ্বত চন্দন। 

আরও পড়ুন
৯৬ শতাংশ সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে পারে ‘ডবল মাস্ক’, পরামর্শ চিকিৎসকদের

প্রকাশ্যে আসার পর, রীতিমতো ভাইরাল এখন এই ভিডিও। মনোমুগ্ধকর এই উদ্যোগকে কুর্নিশ জানাতে ভোলেননি সাধারণ মানুষও। কিছুদিন আগে ঠিক একইরকম দৃশ্য দেখা গিয়েছিল ভারতেও। বরোদার পারুল সেবাশ্রম হাসপাতালের খোদ কোভিড ওয়ার্ডেই পিপিই কিট পরেই নাচ-গানে মেতে উঠেছিলেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। উদ্দেশ্য কোভিড আক্রান্তদের মনোবল বাড়ানো। তাঁদের পাশাপাশি বাপ্পি লাহিড়ীর গানে বিছানায় শুয়ে তাল মেলাতে দেখা গিয়েছিল বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদেরও। 

আরও পড়ুন
নতুন ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধেও কার্যকর পুরনো প্রতিষেধকগুলি, জানালেন চিকিৎসকরা

শুধু শারীরিক চিকিৎসাই নয়, পাশাপাশি একই সঙ্গেই মনস্তত্ত্ব নিয়েও যেন সমানভাবে কাজ করে চলেছেন চিকিৎসকরা, তারই প্রত্যক্ষ প্রমাণ এইসব ঘটনা। গত বছর মহামারীর একেবারে শুরুর দিকে ইতালির একটি হাসপাতালে সমবেতভাবে ‘উই শ্যাল ওভার কাম’ শুনিয়েছিলেন চিকিৎসকরা। সেই কথাটাই যেন বার বার প্রতিফলিত হচ্ছে এই ধরনের একাধিক উদ্যোগ। কঠিন সময় যে ঠিক পেরিয়ে যাব আমরা, সেই আশ্বাসই দিচ্ছেন কোভিডযোদ্ধারা…

Powered by Froala Editor