কেরলের প্রথম রূপান্তরকামী চিকিৎসক, ভি. এস. প্রিয়ার হাত ধরে তৈরি হল ইতিহাস

পুরুষের পরিচয়েই করতে হয়েছে পড়াশোনা। একজন মহিলা হিসাবে বাঁচতে চাইলেও পরিবারের কথা ভেবেই নিজের সত্তার কথা জানাতে পারেননি তিনি। তবে আজ বদলেছে পরিস্থিতি। নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে মাথা উঁচু করে বাঁচার লড়াই চালাচ্ছেন ডঃ ভি. এস. প্রিয়া। সম্প্রতি কেরলের প্রথম রুপান্তরকামী চিকিৎসক হিসাবে স্বীকৃতি পেলেন তিনিই।

অবশ্য স্কুলের খাতায় তাঁর নাম লেখানো হয়েছিল জিনু শশীধরণ নামেই। পরবর্তীকালে নিজের নাম বদলে তিনি রাখেন ভি. এস. প্রিয়া। তবে এর মধ্যে রয়েছে লড়াইয়ের একটি দীর্ঘ অধ্যায়। কতদিনই বা নিজের পরিচয়কে গোপন করে রাখা যায়? প্রিয়াও চেয়েছিলেন একজন নারী হয়েই এই সমাজের বুকে বেঁচে থাকতে। তবে বাড়িতে নিজের সেই সিদ্ধান্তের কথা জানাতে গেলে যে দরকার পায়ের তলায় শক্ত মাটির।

স্কুলে পড়াকালীন সময় থেকেই তিনি চেয়েছিলেন শিক্ষক হতে। তবে বাবা-মা দু’জনেই জড়িত ছিলেন চিকিৎসার সঙ্গে। চেয়েছিলেন দুই সন্তানই যেন পেশা হিসাবে বেছে নেয় চিকিৎসকাকেই। কাজেই আয়ুর্বেদ, মেডিসিন এবং সার্জারি নিয়ে তিনি পড়াশোনা করেন ত্রিসুরের বিদ্যারত্নম কলেজ থেকে। বিএএমএস পাশ করার পর আরেক নতুন পরিস্থিতির চাপে পড়েন প্রিয়া। বাড়ি থেকে বারবার প্রস্তাব আসতে থাকে বিয়ের। সেখান থেকে ‘মুক্তি’ পাওয়ার জন্যই মেডিক্যাল প্রাকটিস ছেড়ে এমডি পড়তে মেঙ্গালুরুতে যান তিনি।

২০১৮ সালে এমডি’র কোর্স শেষ করার পরে, ত্রিপুনিথুরা সরকারি আয়ুর্বেদ মেডিকেল কলেজ এবং কান্নুরের সরকারী আয়ুর্বেদ কলেজে অতিথি অধ্যাপক হিসাবে কাজ শুরু করেন তিনি। সেইসঙ্গে বদলে যায় বাড়ির পরিস্থিতিও। নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে আত্মবিশ্বাস সঞ্চয় করে মা-বাবাকে তিনি জানান নিজের পরিচয়ের বিষয়ে। জানান, অস্ত্রোপচার করে লিঙ্গবদলের পরিকল্পনার কথাও। 

আরও পড়ুন
সন্তানের জন্ম দিতে পারেন রূপান্তরকামীরাও; ‘মাতৃত্বে’র নতুন সংজ্ঞা লিখছেন ড্যানি

তবে তাঁদের প্রতিক্রিয়া অপ্রত্যাশিত ছিল একেবারেই। প্রাথমিকভাবে খানিকটা অবাক হয়ে গেলেও একবাক্যেই মেনে নেন তাঁরা ডঃ প্রিয়ার সিদ্ধান্তকে। ২০১৮ সালের পর থেকে একাধিক সার্জারির হয়েছে তাঁর। এখনও বাকি রয়েছে দুটি অস্ত্রোপচার। এই পুরো চিকিৎসার ৯৫ শতাংশ খরচই যুগিয়েছেন তাঁর বাবা-মা। সঙ্গ দিয়েছেন গোটা লড়াইয়ে। 

আরও পড়ুন
প্রথম রূপান্তরকামী হিসেবে ভার্জিন পিকে পা, রূপকথার অন্য নাম সৌরভ কিট্টু

তবে এই পরিবর্তন কর্মক্ষেত্রে কেমন প্রতিক্রিয়া ফেলবে, তা নিয়েই উদ্বিগ্ন ছিলেন তিনি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং তাঁর রোগীদের সঙ্গেও আলাদা করে প্রিয়া কথা বলেছেন লিঙ্গ-পরিবর্তনের বিষয়ে। এই দায়কে নিজের সামাজিক কর্তব্য হিসাবেই মনে করছেন তিনি। কোভিডের আবহে দীর্ঘদিন একটানা কাজ করার পরে নিজের সার্জারির জন্য ডঃ প্রিয়া ছুটি নিয়েছেন বর্তমানে। ভয়েস থেরাপি এবং কসমেটিক সার্জারির পরই তিনি আবার হাত দেবেন চিকিৎসার কাজে। তবে এবার আর পূর্বপরিচয় নয়। একজন রূপান্তরকামী চিকিৎসক হিসাবে তিনি গায়ে জড়াবেন অ্যাপ্রন। 

আরও পড়ুন
রাজ্যের রূপান্তরকামীদের জন্য প্রথম ‘আস্তানা’ দক্ষিণ কলকাতায়

প্রিয়ার এই সাফল্য শুধু ইতিহাসই তৈরি করল না চিকিৎসা বিজ্ঞানে। অসংখ্য রূপান্তরকামীর কাছে প্রিয়াই এখন অন্যতম অনুপ্রেরণা। তিনি নিজেও আশাবাদী সমাজের বেড়াজাল ভেঙে আরও অনেকেই নিজের পরিচয়ের অধিকার পেতে এগিয়ে আসবেন এই লড়াইয়ে...

Powered by Froala Editor